উদাসীনী পর্ব-০৩

0
405

#উদাসীনী (৩)
লেখনীতে – Ditipriya Roy

আমাকে ভালো”বাসার মতো মানুষে’র খুব অভাব। কিন্তু নূরের সাথে দেখা হয়ে মনে হলো আমার কাছে আর একজন ভালোবাসা’র মানুষ বেড়ে গেলো। নূরের কথা গুলো শুনেই বুঝেছি মি’শু’কে একটা মেয়ে তাই বলে সবার সাথে না। যেমন ফারহান স্যার’কে ভয় পায়। নূর আমাকে নিঃসংকোচে সব কথাই বলছে।” উদাসী আপু আমি আর পড়বো না, তোমাকে আমি আমাদের পুরো বাড়ি ঘুরে দেখাবো। ভয় পেয়েও না আমাদের বাড়ির লোক”জন খুব ভালো। বিশেষ করে আমার মা আর দাদি।”

–হয়তো এটাও ভাবছো, নূর তুমি এতো কথা বলো কেনো। তাহলে এটারো আমি জাবাব দিয়ে দিচ্ছি তোমাকে। এই বাড়িতে শুধু আমি একাই পুচকু মেয়ে। আমার বড় আপু পড়া’লেখা’র জন্য বাইরে থাকে। সময় কাটানোর মতো মানুষ নেই। আম্মুর সাথে বেশি ক্ষণ
কথা বললে বলবে, নূর কানের কাছে এসে পকপক করিস না। স্কুলের স্যার পর্যন্ত বলে, নূর তুমি একটু বেশি কথা বলো।ভাইয়াও তো বলে নূর তুই বেশি কথা বলিস। এই কথা গুলো শুনতে শুনতে আর ভাল লাগে না।” নূরের কথা গুলো শুনে এসে হেসে দেই।

–সত্যি নূর তুমি একটু বেশি কথা বলো। নিজের মস্তিষ্ক টাকে একটু তো বি’শ্রা’ম নিতে দেও।

–কেনো রাতে যে আমি ঘুমাই, মস্তিষ্ক প্রচুর শান্তি পায়। চলো তো তুমি আমার সাথে, আমরা আগে ছাদে যাব।” ছাদে উঠেই আবার বলতে শুরু করে দিলো, আপু এদিকে আসো এই দেখো আমি ফুলের গাছ লাগিয়েছি ফুল ফুটেছে। এদিকে ফলের গাছ লাগিয়েছে, ফল ধরেছে। আপু আচার খাবে?

–না না দরকার নেই চলো আমরা নিচে যাই।” ছটফট করছো কেনো তুমি, খাও না আচার গুলো আমার আম্মু বানিয়েছে। তুমি এখানে দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি।”

–নূরের এই ছোট ছোট পাগলামি গুলো দেখে চোখে আর অশ্রু গুলো ধরে রাখতে পারলাম না। নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো। মায়ের কাছে আবদার করতাম,” মা আমাকে একটু আচার বানিয়ে দিবে। মা বানিয়ে দিতো,এই ভাবে রোদে শুকাতে দিয়ে বসে থাকতাম।” ওড়না দিয়ে অশ্রু গুলো মুছে নিলাম। পিছন থেকে নূরের মা এসে বললো,

–উদাসী তুমি কি কান্না করছো।” না না আন্টি আমি ঠিক আছি। আসলে চোখে কিছু পড়েছিলো তাই আর কি।” আচ্ছা ঠিক আছে মা।” ফারহান তোমার কাপর তোলা শেষ হয়েছে। নিচে এসো খেতে দিবো।”

–আন্টির কথা শুনে পিছনে তাকালাম। স্যার আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। ছাদের চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া উচিৎ ছিলো।”

–মামিকে মিথ্যা বললে কেনো?”

–স্যারের প্রশ্নের কি জবাব দিবো বুঝতে পাচ্ছি না। স্যার চুপ থাকতে দেখে বললেন, দেখো আমি তোমার স্যার ভয় পাবে এটা স্বাভাবিক তাই বলে এতো ভয়। মুখ দিয়ে তো একটা বাক্য উচ্চারণ করতে পাচ্ছো না।

–না মানে স্যার, আন্টিকে তো সেরকম ভাবে চিনি না।

–বুঝলাম মামি কে চেনো না। সত্যি কথা বললে হাজার টা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। কে কি ভাববে এসব কিছুর জন্য মিথ্যা বলা তাই তো।”

–আমি বিস্ময় দৃষ্টিতে স্যারের দিকে তাকালাম, তিনি আমার দিকে দৃষ্টি করেই আছে। স্যার আমার কথা গুলো বুঝলো কি করে।”

–আমি বুঝলাম কি করে এটাই ভাবছো। ইচ্ছে থাকলে সব কিছুই জানা সম্ভব। আবার এটা বলো না কিভাবে জানলাম।” কথা গুলো বলেই নিচে চলে গেলো। নূর এসে আচার গুলো আমার হাতে দিলো। দুজনে বসে খেয়ে নিচে চলে যাই। আন্টিকে বললাম, আন্টি আমি তাহলে যাই।

–ওমা সে কি না খেয়ে চলে যাবে। প্রথম বার এলে, না খেয়ে যেতে দিবো না। আন্টি হাত ধরে জোর করে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গেলেন। আমার সাথে নূর আর নূরের দাদি এসে পাশে বসে। একটু পর স্যার এসে সামনে চেয়ারে বসলেন।”

— আন্টি এসে বললেন, নিঃসংকোচে খেয়ে নেও।ক্ষীণ হেসে খেতে শুরু করলাম। খাবার সময় এক বারো মুখটা তুলি নি। খাওয়া শেষ করে আন্টিকে বলে, বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। রাস্তায় আনমনে হেঁটে যাচ্ছি, সামনেই একটা দোকান। সেখানে কিছু বকাটে ছেলে ছিলো। সাথে একটা চেনা মুখো দেখতে পাই।
আমাকে দেখতেই ছেলে গুলোর সাথে বাজে কথা বলছে। ইচ্ছে করছে মাথা টা ফাটিয়ে দিতে। আমিও চুপ চাপ চলে এলাম।”

–বাড়িতেই এসে বাবার ঘরে গেলাম। বাবা তোমার শরীর ঠিক আছে তো। বাবা প্রত্যুত্তরে কিছু না বলেই কাশতে শুরু করলো। বুকটা চেপে ধরে আছে ব্যাথা উঠে গেছে।” বাবা তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।তোমার যক্ষা টা বেড়ে গেছে একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া লাগতো। বাবা চলো তোমায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।”

–লাগবে না মা আমি ঠিক আছি। কথা টা বলেই আবার কাশতে শুরু করলো। বুঝতে পেরেছি বাবা যাবে না জোড় করেই নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমি একা করে নিয়ে যাবো।”

–উদাসী একটু পর তো সন্ধ্যা হয়ে আসবে। তাই আজকে আর না যাই, আগামীকাল না হয় নিয়ে যাস।
আমাকে একটু পানি দে।

–বাবা কে পানি দিয়ে ঘরে গিয়ে পড়তে বসলাম। ১ঘন্টার মতো পড়ার পর হটাৎ জানালায় টোকা দেওয়ার মতো শব্দ পেলাম। এতো দিন তো এ রকম শব্দ শুনি নি আজকে তবে, ব্যাপার টা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। মনে হচ্ছে জানালার পাশে কেউ আছে। ভয় ভয় করে বাবা কে ডাকলাম।” বাবা তুমি খাবে না তোমাকে তো ওষুধ খেতে হবে। কথা টা বলেই বিছানা থেকে নেমে গেলাম। বাবা কে খাইয়ে দিয়ে এসে বিছানার বসলাম। মনের মধ্যে খুদ খুদ করছে, তাই জানালর পাক দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। কাউকে দেখতে পেলাম না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, আবার পড়তে বসলাম। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না।

–কলেজে যাওয়ার সময় হাসি সাথে ছিলো। গল্প করতে করতে দুজনে যাচ্ছি। কালকের ছেলে গুলো কে দেখলাম তাস খেলছে। আমাকে দেখে হাসা শুরু করে দিলো। ওদের দিকে গুরুত্ব না দিয়েই হাসির সাথে গল্প করতে লাগলাম। কিন্তু রাতের কথা মনে উঠতেই ছেলে গুলোর কথা মনে পড়ছে। হয়তো কাল রাতে এই ছেলে গুলোই গিয়ে ছিলো। কিন্তু পরে তো আর কাউকে দেখতে পেলাম না। হয়তো আমার সন্দেহ ভুল।” হাসি ধাক্কা দিয়ে বললো,

–কি রে উদাসী,আমার কথা শুনছিস তো।

–হাসির ধাক্কায় মাটিতে পরে যাই। আমার পরে যাওয়া দেখে হাসি খিলখিল করে হাসছে। ” কি রে ভেটকি মাছ এতো জোড়ে কেউ ধাক্কা দেয়।”

–তা কি করবো, এতো কথা বললাম তুই শুনলি না। কি যেনো ভেবেই যাচ্ছিস।” মনের মধ্যে কথা টা চেপে রাখতে পারলাম না। হাসিকে কালকের কথা বলেই দিলাম। ” হাসি কথা গুলো শুনেই বলে,বিষয় টা ভাবার কিন্তু ভুত ছিলো না তো।”

–হাসির গায়ে কিল বসিয়ে দিলাম বললাম, তুই আমার বান্ধবী নাকি শত্রু বলতো। আমি চিন্তায় বাঁচিনা আর উনি আমাকে ভুতের ভয় দেখাচ্ছে। দেখ হাসি আমি কিন্তু সিরিয়াস।

–আচ্ছা আচ্ছা আমি তো মজা করছিলাম। আমার কি মনে হয় জানিস, আজকের রাত টা দেখ যদি আজকেও ওই রকম হয় তাহলে কেউ ছিলো। আর তুই একটু সাবধানে থাকিস। কথা বলতে বলতে কলেজে এসে যাই।

–অলকের সাথে ক্লাস রুমে বসে আছি। তিনটা ক্লাস শেষ, জানালের পাশ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। ধান খেত গুলো দেখতে বেশ ভালোই লাগে। কাকতাড়ুয়া গুলো ধান খেতের মাঝে, পাখি গুলো তাদের ডানায় বসে আছে। এই দৃশ্য দেখে গান বলেই ফেললাম,

–ধন ধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা। ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি। ও সে সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি। ”

–ক্লাসে হাত তালি দেওয়ার শব্দ শুনে ঘুরে তাকালাম।
ফারহান স্যার দাঁড়িয়ে আছে,রুমের স্টুডেন্টরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার লজ্জায় মাটি তলে যেতে ইচ্ছে করছে, মাথা নত করে আছি। স্যার আমার উদ্দেশ্য বললেন, আমাদের সুন্দর একটা মুহুর্ত দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি তো অনেক সুন্দর গান বলতে পারো।”অলক টুপ করে বলে উঠে, হ্যাঁ স্যার ওর কন্ঠ অনেক সুন্দর। গান বলে, তবে খুব কম।

–সবাই বই বের করো হোমওয়ার্ক দেওয়া ছিলো সবার খাতা জমা দিয়ে দেও। সবাই এক এক করে জমা দিয়ে দিলাম। তারপর কিছু পড়া বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু আমি বুঝতেই পারছি না। সাহস করে বলতেও পাচ্ছি না। স্যার বার বার করে বলছে সবাই কি বুঝেছো। না বুঝলে বলো আমি বুঝিয়ে দিবো।”

–বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। ” উদাসীনী তুমি কি বুঝেছো? মাথা ঝুকিয়ে বললাম, না। তিনি আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন, চুপ করে ছিলে কেনো?
মুখ ফুটে বলতে হবে।” কথা বলার সাথে সাথে বেল বেজে উঠল। ” আজকে বই সাথে করে নিয়ে আসবে।
“ঠিক আছে স্যার।”

–কলেজ ছুটি হওয়ার পর বাড়িতে গেলাম। কাজ শেষ করে বই গুছিয়ে নিলাম, বাবার ঘরে গিয়ে বললাম, বাবা আমি স্যারের বাড়ি যাচ্ছি। এখানে সব কিছু রেখে দিলাম, দরকার হলে নিয়ে নিও। ওখান থেকে এসে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।”

–ঠিক আছে রে মা, সাবধানে যাস। ” ঠিক আছে বাবা।”

–নূর আমাকে দেখে দৌড়ে আসে।” মিষ্টি আপু তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি আজকে মায়ের সাথে সন্দেশ বানিয়েছি।” খুব ভালো কথা।” হুম তুমি রুমে যাও আমি ছাদ থেকে আসছি।”

–ডাইনিং রুমে কেউ ছিলো না। রান্না ঘর থেকে আন্টি ডাকছে মদিনাকে মানে কাজের মেয়ে। কিন্তু তাকে দেখতেও পেলাম না। তাই রুমে ব্যাগটা রেখে আমি গিয়ে আন্টি কে বললাম, আন্টি আপনাকে সাহায্য করে দিবো। ”

–না মা লাগবে না, মদিনা করে দিবে।” ওকে তো দেখলাম না, মনে হয় ছাদে গেছে। আপনার হাতেও তো আটা লেগে আছে।”

–কফি বানিয়ে রাখলাম, ভাবলাম মদিনা আছে। তাই আটা গুলো খুমার করছি। ” আমাকে দিয়ে দিন, কাকে দিতে হবে।”.তোমার স্যারকে দিয়ে আসো।” আচ্ছা আন্টি।” দরজা ধাক্কা দিলাম সারা শব্দ না পেয়ে ভিতরে ঢুকে গেলাম। টেবিলে কফির কাপ টা রাখতেই ওয়াশরুম থেকে স্যার বেরিয়ে এলেন। স্যার দিকে দৃষ্টি যেতেই,এমন অবস্থায় দেখবো ভাবতেও পারি নি। জোড়ে চিৎকার দিবো তখনি স্যার এসে মুখ চিপে ধরলেন।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে