উইল ইউ ম্যারি মি? পর্ব-০৭+০৮

0
1191

#উইল ইউ ম্যারি মি?
পর্ব–৭ ও ৮
® Fareen Ahmed

প্রীতি কথাটা শুনার পর বেশ কিছুক্ষণ চুপ রইল। ধাক্কাটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা। তারপর অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল,” আপনি কি সত্যি বলছেন আন্টি? এটা কিভাবে সম্ভব? আশরাফ তো একবারও আমাকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনি।”
আরোহী মৃদু হাসলেন। না সূচ মাথা নেড়ে বললেন,” বলবে না তো। কারণ এই কথা সে নিজেও জানে না।”
” মানে?”
” মানে আশরাফ এখনও জানে না যে ফ্লোরা সুইসাইড করেছিল৷ এই ব্যাপারটা ওকে এখনও বিশ্বাস করানো যায়নি। তাই কল্পনায় ফ্লোরার সাথে ও কথা বলে, ফ্লোরাকে নিয়ে ভাবে। ও মনে করে ফ্লোরা এখনও আমাদের সাথেই আছে।”
” তাহলে আপনারা ওকে এটা বোঝাচ্ছেন না কেন? ফ্লোরা যে মারা গেছে এটা ওকে বলে দিলেই হয়।”
” বলা সম্ভব না। স্পেশালিস্টের মতে, আশরাফ যতদিন জানবে ফ্লোরা জীবিত ততদিনই সে ভালো থাকবে। কিন্তু একবার যদি তার মস্তিষ্ক এটা বুঝতে পেরে যায় যে ফ্লোরা মারা গেছে! সে আর কখনও ফিরে আসবে না! তাহলে এটা সহ্য করতে না পেরে আশরাফ ব্রেইন স্ট্রোক করে ফেলবে। তার মস্তিষ্ক থেকে অনিয়ন্ত্রিত রক্তক্ষরণ শুরু হবে। এমনও হতে পারে যে সে সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেল।”
প্রীতি মুখে হাত দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। এ কেমন ভয়ংকর ভালোবাসা? আরোহী প্রীতির কাঁধে হাত রেখে বললেন,” জানি আশরাফের মুখে ফ্লোরার নাম তুমি সহ্য করতে পারছো না। কিন্তু বিশ্বাস করো, আশরাফ ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এসব করছে না। এটাই তার রোগ।”
” এই রোগের কি কোনো চিকিৎসা নেই আন্টি?”
” আছে তো। চিকিৎসা চলছে। কিন্তু দুইবছরেও কোনো উন্নতি দেখলাম না।”
” আন্টি, ফ্লোরা কেন সুইসাইড করেছিল?”
” আশরাফ তোমাকে ফ্লোরার বাবা-মায়ের সমস্যার কথা বলেনি?”
” হ্যাঁ বলেছে। অনেকবারই বলেছে।”
” ওই প্রবলেমটা নিয়েই ফ্লোরা খুব ডিপ্রেসড ছিল। আর ডিপ্রেশন থেকেই সুইসাইড। তাছাড়া তোমার আঙ্কেলও ফ্লোরাকে খুব বেশি পছন্দ করতেন না। ফ্লোরার সাথে মেলা-মেশা করার জন্য একবার আশরাফকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন।”
প্রীতির নিজেকে স্তব্ধ লাগছে। এজন্যই আশরাফ ওইভাবে প্রীতির কাছে ফ্লোরার বাবা-মায়ের ঝামেলা মেটানোর জন্য অনুরোধ করতো। বার-বার বলতো ফ্লোরার কষ্ট কমিয়ে দিতে। এখন প্রীতির কাছে সবকিছু স্পষ্ট হচ্ছে।
প্রীতি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” কিন্তু এর সাথে আমার আর আশরাফের বিয়ের কি সম্পর্ক আন্টি? ওর মতো পেশেন্টকে আপনারা বিয়ে কেন দিতে চাইছেন? ও তো ফ্লোরার জায়গায় কাউকে সহ্য করতে পারবে না। ওকে কি ওর মতো ছেড়ে দেওয়া উচিৎ না? যেভাবে থাকতে চায় ভালো থাকুক। আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠুক। তারপর না হয় আপনারা ওর বিয়ের কথা ভাববেন।”
” বিয়ের সাথে ওর সুস্থ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই মা। ওকে সুস্থ করা আদৌ সম্ভব কি-না এটাই তো আমরা নিশ্চিত নই। আমরা শুধু এমন একজনকে চাই, যে সবসময় আমার ছেলের পাশে থাকবে। ওর খেয়াল রাখবে, বন্ধুর মতো আগলে রাখবে। আশরাফের পেশেন্টদের নিঃসঙ্গ থাকতে দেওয়া যায় না। তাই আমরা একটি বিশ্বাসযোগ্য ভালো মেয়ের খোঁজ করছিলাম। অনেকের সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু কেউ দুইদিনের বেশি সহ্য করতে পারেনি। তুমি পেরেছো। এক সপ্তাহ ধরে বন্ধুর মতো ওর পাশে আছো। তোমাকে দেখে আমি ভরসা পেয়েছি। মনে হয়েছে তুমিই যে কাজটা খুব ভালো করে পারবে। আর আশরাফও খুব জলদি তোমার সাথে মিশে গেছে। এতো সহজে ও কারো সাথে মেশে না।”
আরোহীর হাতটা এখনও প্রীতির কাঁধে। শেষ কথাগুলো শুনে প্রীতি ভ্রু কুঞ্চিত করে কাঁধের হাতটা সরিয়ে দিল। রাগান্বিত স্বরে বলল,” এর মানে? আপনারা কি আমাকে বিয়ে দিতে চাইছেন নাকি চাকরি?”
” কাইন্ড অফ চাকরিই বলতে পারো!”
প্রীতির ধৈর্য্যের বাঁধ এবার সত্যিই ভেঙে গেল। আশ্চর্য, সে কি এতোই ফেলনা? গরীব হয়েছে বলে কি তার মতামত নেওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই! আশরাফের পরিবারকে সে আলাদা ভেবেছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে, সবাই এক। পৃথিবীর সকল পয়সাওয়ালা মানুষ একই রকম। আরোহী বললেন,” তুমি তো এতোদিন ভালোই ছিলে। হঠাৎ করে এখন কি হলো যে বিয়েটা ভাঙতে চাইছো?”
প্রীতি গরম হয়ে বলল,” আবার জিজ্ঞেস করছেন আমি কেন বিয়ে ভাঙতে চাইছি? এতোবড় সত্যি জানার পর বিয়ে ভাঙবো না তো কি করবো? নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন আন্টি, আপনি হলে কি বিয়েটা করতেন?”
” জানি না। হয়তো করতাম হয়তো না! কিন্তু তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আশরাফের অসুস্থতার কথা তুমি প্রথমবার জেনেছো?”
” প্রথমবারই তো জানলাম। এর আগে কি আপনারা আমাকে বলেছেন? জানানোর প্রয়োজন মনে করেছেন? ধোঁকা দিয়ে বিয়েটা দিতে চাচ্ছিলেন।”
আরোহী এবার ক্ষীপ্ত হলেন।
” কি আবোলতাবোল বলছো? ধোঁকা দিলাম মানে? তোমার সাথে নাফিসা আপা আর জেরিন এই ব্যাপারে আলোচনা করেনি?”
” ওরাও এই ব্যাপারে জানে?”
প্রীতি যেন আকাশ থেকে পড়ল। আরোহী জোর গলায় বললেন,” সবাই সব জানে। তুমি নিজেই তো বলেছো তোমার মাসে মাসে এক লক্ষ ডলার আর একটা উচ্চ পরিচয় লাগবে। তাহলেই তুমি আশরাফের সাথে সারাজীবন থাকতে রাজি।”
প্রীতির মাথায় কিছু আসছে না। এসব সে কবে বলল? টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করার আগে তার মৃত্যু হোক। প্রীতি কাঁদতে শুরু করেছে। আরোহী নরম কণ্ঠে বললেন,” আই এম স্যরি। এভাবে বলতে চাইনি। কিন্তু তুমি ভাবতেও পারবে না তোমার প্রতি আমি কতটা কৃতজ্ঞতাবোধ অনুভব করেছিলাম। নাফিসা আপার কাছে শুনেছিলাম তোমার নাকি মা নেই। ভেবেছি আমি তোমার মা হবো। তোমাকে মেয়ের মতো যত্নে আগলে রাখবো। বিশ্বাস করো, আশরাফ তোমাকে একদম জ্বালাবে না। শুধু মাঝে মাঝে ফ্লোরার গল্প বলবে। তোমার কাজ আশরাফকে হাসি-খুশি রাখা। ওকে একদম কাঁদতে দিবে না। বিনিময়ে তোমাকে আমি আমার সব দিয়ে দিবো।”
প্রীতি চোখ মুছতে মুছতে হালকা হেসে বলল,
” টাকা-পয়সার প্রতি আমার কোনো দূর্বলতা নেই আন্টি। আমার শুধু একটাই দূর্বলতা হলো আমি কারো কষ্ট সহ্য করতে পারি না। কেউ আমার কাছে কেঁদে-কেটে কিছু চাইলে আমি কখনও নিষেধ করি না। যতক্ষণ মানুষটির মুখে হাসি না ফুটবে ততক্ষণ চেষ্টা চালিয়েই যাবো। এটাই আমি।”
আরোহী মিষ্টি করে হাসলেন। প্রীতির গাল দু’টো আলতো করে চেপে ধরে বললেন,” আমি জানি তো মা। তোমাকে দেখেই বুঝেছি। তুমি খুব চমৎকার একটি মেয়ে। সবচেয়ে আলাদা। এজন্যই তোমাকে আমার ঘরে চাই।”
প্রীতি কঠিন মুখে বলল,” কিন্তু আপনার অনুরোধ আমি রাখতে পারবো না আন্টি। এটা অসম্ভব।”
আরোহী বিপর্যস্ত কণ্ঠে বললেন,
” কেন?”
” আশরাফকে খুশি করার ক্ষমতা মহান আল্লাহ আমাকে দেননি। যদি আমি তার পাশে থাকি তাহলে সারাজীবন আমাকে তার কষ্ট দেখতে হবে। আমি সেই কষ্ট মেনে নিতে পারবো না। আমি আনন্দবিলাসী মেয়ে। চোখের পানি দেখলে যার বুক দুরুদুরু করে সে সারাজীবন কিভাবে কষ্টের সাথে বাস করবে আন্টি? এই কাজ আমার পক্ষে সম্ভব না। ”
আরোহী হাহাকার করে কিছু বলতে নিচ্ছিলেন। প্রীতি সেই সুযোগ দিল না। নিজেই কথা বলতে থাকল,” কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন, যদি আশরাফকে ভালো রাখার বিন্দুমাত্র উপায় থাকতো তাহলে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করতাম। মানুষকে ভালো রাখতে প্রীতি ভালোবাসে। তবে আসল ব্যাপার হচ্ছে, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যায় না। ফ্লোরার প্রতি আশরাফের যে গাঢ় অনুভূতি আমি দেখেছি তা বিলীন করার এতো ক্ষমতা আমার নেই। আমাকে মাফ করবেন প্লিজ।”
প্রীতি এই কথা বলে আর এক মুহূর্তও থামল না। দ্রুত দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আরোহী হতাশ হয়ে বিছানায় বসে রইলেন। তার চোখ দিয়ে বাহিত হচ্ছে দুঃখের স্রোত।

প্রীতি ঘর থেকে বের হতেই আশরাফের সামনে পড়ে গেল। আশরাফকে হঠাৎ দেখে ভয়ে চমকে উঠল প্রীতি। আশরাফ হাসিমুখে বলল,” হেই প্রিটি, কেমন আছো? এতোরাতে আমাদের বাসায় কি করছো? আচ্ছা, ভালোই হয়েছে। ফ্লোরা তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিল। তোমার ব্যাপারে আমি সব বলেছি ওকে। ও খুব খুশি হয়েছে জানো? কালকেই তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে। তুমি আন্টি-আঙ্কেলের সাথে কথা বলে তাদের ঝামেলাটা মিটিয়ে দিতে পারবে না? ওরা যেন ডিভোর্স না করে। তাহলে ফ্লোরা খুব কষ্ট পাবে, খুব!”
প্রীতি কি বলবে বুঝল না। তার কি উত্তর দেওয়া উচিৎ? সরাসরি কি বলে দিবে যে সে আজ বাংলাদেশ ফিরে যাচ্ছে? আর কখনও তাদের দেখা হবে না! কিন্তু এটা বললে যদি আশরাফ তাকে যেতে না দেয়? আশরাফ মোবাইল নিয়ে ফ্লোরার নাম্বার ডায়াল করছে। হেসে বলল,” ফ্লোরাকে ফোন করে জানাই তুমি এসেছো। তোমার কথা শুনলেই ও খুশি হয়ে যাচ্ছে। খিলখিল করে হাসছে। ওর হাসিমাখা কণ্ঠ সুন্দর! তুমি শুনলে অবাক হয়ে যাবে। দাঁড়াও, এখনি শোনাচ্ছি।”
আশরাফ মোবাইল কানে দিয়ে রেখেছে। ওই পাশ থেকে একটা যান্ত্রিক কণ্ঠ স্পষ্টস্বরে জানান দিচ্ছে কল নট রিচেবল। সেই যান্ত্রিক কণ্ঠকে অবজ্ঞা করেই আশরাফ কথা বলে যাচ্ছে। যেন সত্যিই ফ্লোরার সাথে কথা বলছে। সে বুঝতে পারছে না যে ফোনের ওই পাশে কেউ নেই! আজ বিকালেও প্রীতি প্রত্যাশা করছিল আশরাফ আর ফ্লোরার মতো ভালোবাসা যেন তার জীবনেও আসে। কিন্তু এখন প্রীতি আর সেই প্রত্যাশা করছে না। বরং এমন সর্বনাশা ভালোবাসা কারো জীবনে কখনোই না আসুক। যে ভালোবাসা সবকিছু ধ্বংস করে ছাড়ে সেই ভালোবাসার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রীতি এক দৌড়ে ছুটে চলে এলো আশরাফের সামনে থেকে। লিভিং রুমে এসে বাবার হাত ধরল। চোখমুখ মুছে কান্না সামলে বলল,” বাবা চলো আমরা বাড়ি যাই।”
প্রমথ সরফরাজ সাহেবকে বিদায় জানালেন। তিনি অনুরোধ করলেন, অন্তত আজরাতে এখানে থাকার জন্য। সকালে তিনিই প্রীতিদের ফ্লাইটে তুলে দিবেন। কিন্তু প্রীতি রাজি হলো না। এই কষ্টমহল থেকে সে মুক্তি চায়।
আশরাফ লিভিং রুমে যতক্ষণে এসেছিল ততক্ষণে প্রীতিরা বের হয়ে গেছে। আশরাফ বাবাকে জিজ্ঞেস করল,” বাবা, প্রিটি চলে গেল কেন?”
সরফরাজ হাসার চেষ্টা করে বললেন,” ওর বাংলাদেশে একটা জরুরী কাজ পড়ে গেছে। তাই ওরা দেশে ফিরে যাচ্ছে।”
” দেশে ফিরে যাচ্ছে? ওরা কি আর আসবে না?”
” আসবে তো। নিশ্চয়ই আসবে। একমাস পর আসবে।”
আশরাফ একটু চিন্তা করল, একমাস তো খুব বেশি দেরী হয়ে যাবে। ততদিনে ফ্লোরার কষ্ট আরও বেশি বেড়ে যাবে। প্রীতির আসার আগেই যদি সে সুইসাইড করে? না,না আশরাফ আবার ফ্লোরাকে সুইসাইড করতে দেবে না। কিছুতেই না। প্রীতিকে আটকাতে হবে। আশরাফ দৌড়ে দরজার কাছে গেল। চিৎকার করে ডাকল,” প্রিটি!”
সাউন্ড প্রুফ ঘরের বাহিরে আশরাফের চিৎকার প্রীতির কানে গিয়ে পৌঁছাল না। আশরাফ বাহিরেও বের হতে পারছে না। রাতের বেলা তার বাড়ির বাহিরে বের হওয়া নিষেধ। দরজা লক করা থাকে। চাবি থাকে সরফরাজ সাহেবের কাছে।
প্রীতি বাবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল,” এবার দেশে ফিরে আমি খুব মন দিয়ে লেখাপড়া করবো আব্বু। একটা ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হবো। একদিন আমি খুব ভালো কিছু করবো। বিয়ের কথা কিন্তু আর কোনোদিন আমাকে বলবে না তুমি। মনে থাকবে?”
প্রমথ সাহেব শুধু মাথা নাড়লেন। তিনি গভীর মনোযোগে কিছু ভাবছেন। প্রীতি বলল,” কি হয়েছে আব্বু তোমার?”
” সরফরাজ ভাই বোধহয় আমাকে কিছু বলতে চাইছিলেন।”
” কি বলতে চাইছিলেন?”
” শোনার সুযোগটাই তো পেলাম না। এর আগেই তো তুই এসে হাত ধরে বললি চলো বাড়ি যাই।”
প্রীতি মুচকি হেসে বলল,” একদম ঠিক করেছি।”
” তোর চোখে পানি কেন মা?”
” এটা খুশির অশ্রু আব্বু। তোমাকে ছেড়ে আর যেতে হচ্ছে না। আমার চেয়ে খুশি আজ এই পৃথবীতে কেউ নেই।”
প্রমথ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,” আমার মা!”

চলবে

®Fareen ahmed

#উইল_ইউ_ম্যারি_মি?
পর্ব–৮

” হারানো দিনের মতো, হারিয়ে গেছো তুমি। ফেরারী সুখের মতো পালিয়ে গেছো তুমি…”
গানটা কোথাও বাজছিল। প্রীতি দাঁড়িয়ে আছে বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায়। এই সময় বাসে প্রচন্ড ভীড় থাকে। আজ কড়া রোদ। প্রীতি মাথায় ছাতা ধরে রেখেছে। পেছন থেকে নওশাদের ডাক শোনা গেল। প্রীতি পেছন ফিরে দেখল নওশাদ দৌড়ে আসছে। তার কপাল, গায়ের শার্ট ঘামে ভিজে একাকার। হাঁপাতে হাঁপাতে এসে প্রীতির সামনে থামল নওশাদ। প্রীতির চোখ ছলছল করছিল। নওশাদকে দেখে দ্রুতই মুছে নিয়েছে। তবুও নওশাদ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,” তুমি কি কাঁদছো প্রীতি?”
প্রীতি খুব সুক্ষ্মতার সাথে এড়িয়ে বলল,
” কই না তো! ধুলো চোখে এসে লেগেছে। তাই বোধহয় চোখ লাল দেখাচ্ছে। তুমি কোত্থেকে এলে?”
” ভার্সিটি থেকে। তুমি তোমার নোটবুক ফেলে এসেছিলে।”
নওশাদ ব্যাগ থেকে নোটবুক বের করে প্রীতির হাতে দিল। প্রীতি অবাক হয়ে বলল,” এইটুকু একটা জিনিস দেওয়ার জন্য তুমি এতোদূর থেকে এসেছো? কালকে দিলেও হতো।”
এই কথায় নওশাদ অপ্রস্তুতভাবে হেসে উঠল। ওই হাসিতে লজ্জামিশ্রিত ছিল। প্রীতি বুঝল না নওশাদ লজ্জা কেন পাচ্ছে! সে হেসে বলল,
” থ্যাংকস বাই দ্যা ওয়ে।”
” নোটবুকটা ভালো করে দেখে নিও। সব ঠিক আছে কি-না। বায়।”
নওশাদ নোটবুক ঠিক করে দেখার কথা বলল কেন? প্রীতি সাথে সাথেই নোটবুকটা খুলে উল্টে-পাল্টে দেখল। আর যা ভেবেছিল তাই। নওশাদ রঙিন কলম দিয়ে লিখে রেখেছে,” তোমাকে লাইট গ্রিনে সুন্দর লাগে। তবে ডীপ গ্রিনে আরও ভালো মানাতো! আচ্ছা প্রীতি, তুমি সবসময় মনখারাপ করে থাকো কেন? তুমি কি জানো, হাসলে তোমাকে কত সুন্দর লাগে?”
প্রীতি আবার তাকাল নওশাদের দিকে৷ নওশাদ ততক্ষণে হাওয়া। নোটবুকটা ভাজ করে প্রীতি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সে আগেই বুঝতে পেরেছিল যে নোটবুক ফেলে আসেনি। নওশাদই চুরি করেছে। আর এখন নোটবুক দেওয়ার বাহানায় প্রীতির পেছন পেছন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেছে। সে এখান থেকে যাবে না। আশেপাশেই থাকবে৷ যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রীতি বাসে উঠছে। এই ছেলে একটা বদ্ধ উন্মাদ!
গানটা এখনও বাজছে। প্রীতির পুনরায় কান্না আসতে চাইছে। গানের কথাগুলো এতো হৃদয়খচিত কেন? মনে পড়ে যায় নিউইয়র্ক শহরের ব্যস্ত রাস্তাটির কথা। দামী রেস্টরন্ট, কফিশপ আর ধ্বংসাত্মক সেই ভালোবাসার কাহিনী। কেমন আছে মানুষটা? ছয়মাস কেটে গেছে!
প্রীতি বাসে উঠল। নোটবুকটা ব্যাগে ভরে রাখার সময় নজরে পড়ল টিফিনবক্স। এটা নওশাদের টিফিনবক্স। আজ প্রীতি লাঞ্চের সময় মাঠে ঘুরাঘুরি করছিল। ক্যান্টিনে সে যায়নি৷ তার কাছে খাওয়ার টাকা ছিল না আবার বাড়ি থেকে টিফিনও আনতে পারেনি। বাবার শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। তাই প্রীতিই বাবাকে রান্না-বান্না করতে নিষেধ করেছে। প্রীতিই ভার্সিটি শেষে বাড়ি ফিরে রান্না করবে। নওশাদ মনে হয় বুঝতে পেরেছিল ব্যাপারটা। তাই নিজের টিফিনবক্স দিয়ে বলল তার মা নাকি প্রীতির জন্য বিরিয়ানী পাঠিয়েছেন। প্রীতি জানে কথাটা মিথ্যে। তবুও সে টিফিনবক্স নিয়েছে। না নিলে নওশাদ কষ্ট পেতো। এই ছেলের মনটা আবার খুব নরম। তুচ্ছ কারণে কষ্ট পায়। মেয়েদের মতো কেঁদে বুক ভাসায়। যে কারণে প্রীতি রাগ করে তাকে কখনও কিছু বলতেও পারে না। তবে নওশাদের সাথে পরিচয় নিয়ে প্রীতির একটা মজার ঘটনা আছে।
সেদিন ছিল শুক্রবার। প্রীতি এসেছে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা দিতে। সিট পড়েছিল বাংলা কলেজে। নওশাদেরও সেখানেই সিট। দু’জন একই বেঞ্চে বসেছে। প্রীতি জানে তার প্রিপারেশন ভালো নেই। চান্স পাওয়া তার জন্য স্বপ্ন। প্রশ্ন যদি একেবারে পানির মতো সহজ হয় তবুও তার চান্স হবে কি-না সন্দেহ। এদিকে বাবা খুব আশা নিয়ে বসে আছেন। মেয়ে চান্স পাবেই।
হলে ঢোকার পর প্রীতির একটু খারাপ লাগছিল। বাবাকে বিদায় দেওয়ার সময় সে লক্ষ্য করেছে, বাবার চোখে তাকে নিয়ে অনেক আশা! চান্স না পেলে সেই আশা ভেঙে যাবে৷ বাবা দুঃখ পাবেন। প্রীতি বাবাকে দুঃখ দিতে চায় না। পাশেই বসেছিল নওশাদ৷ খুব খুশি মনে নিজের সাফল্যের গল্প শোনাচ্ছিল প্রীতিকে। বুয়েটের প্রিলিতে টিকে গেছে। রিটেন এক্সাম হয়ে গেলে সে চান্স পাবে নিশ্চিত। তার স্বপ্ন ট্রিপল ই নিয়ে পড়ার। এক কথায় টপ স্টুডেন্টের যে সংজ্ঞা তার সব নওশাদের মধ্যে আছে। প্রীতির দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চেহারা দেখে নওশাদ প্রশ্ন করে,” এনি প্রবলেম?”
প্রীতি চাপা স্বভাবের। নিজের প্রবলেম সে শেয়ার করেনি। তবে নওশাদ বুঝে নিয়েছিল। প্রশ্ন পাওয়ার পর নওশাদ খুব হেলা-ফেলা করে উত্তর দাগিয়েছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার তেমন ইচ্ছে তার নেই। এই পরীক্ষা তার জন্য খেলা। কিন্তু প্রীতির জন্য লড়াই। নওশাদ প্রীতিকে এমসিকিউতে খুব হেল্প করল। ধরতে গেলে নওশাদের থেকে সাহায্য নিয়ে সবকয়টা এমসিকিউতে প্রীতি উতরে গেল। সে কখনও ভাবেনি ভর্তি পরীক্ষায় এভাবে তাকে কেউ সাপোর্ট দিবে৷ এরপর এলো রিটেনের সময়। যেহেতু প্রীতি নওশাদের সাহায্যে এমসিকিউ দাগিয়েছে তাই নওশাদ যে বিষয়গুলো নির্বাচন করেছিল প্রীতিও সেগুলোই নির্বাচন করেছে। রিটেনেও তাকে সেসব লিখতে হলো। কিন্তু প্রীতি ম্যাথে দূর্বল ছিল। ধরতে গেলে সে ম্যাথ পারেই না। এইচএসসি’র আগে শেষবার ম্যাথ প্র্যাকটিস করেছিল। তারপর আর ধরা হয়নি। এক্সাম শেষ হতে মাত্র আর দশমিনিট বাকি। প্রীতি সব মোটামুটি এনসার করেছে। কিন্তু ম্যাথ ছুঁয়েও দেখেনি। নওশাদ তা জানতে পেরে বলল,” প্লিজ ম্যাথ এনসার করো প্রীতি। নাহলে তো তুমি চান্স পাবে না।”
মনে হলো প্রীতির চান্স পাওয়া নিয়ে নওশাদের ব্যাকুলতাই বেশি৷ প্রীতি হেসে বলল,” আমি চান্স পাবো না এটা আগেই জানি। আর ম্যাথ তো আমি পারি না। কিভাবে এনসার করবো?”
” তোমাকে অবশ্যই চান্স পেতে হবে।ম্যাথ পারো না মানে? এদিকে দাও আমি দেখছি।”
নওশাদ ঝট করে নিজের সাথে প্রীতির খাতা অদল-বদল করে নিল। প্রীতি ভয়ে অস্থির হয়ে বলল,” ওমা, কি করছো এটা? ধরা পড়লে আমরা দু’জনই এক্সপেল হবো।”
নওশাদ আঙুলের ইশারায় বলল চুপ থাকতে। অতঃপর প্রীতির খাতায় সবগুলো ম্যাথের এনসার ফটাফট লিখতে লাগল। তার লেখার স্পিড দেখে মনে হচ্ছিল অংকগুলো বুঝি তার মুখস্ত। এভাবেই শেষ হলো ভর্তি এক্সাম৷ রেজাল্টের দিন প্রীতি নিশ্চিত ছিল চান্স হবে না। কারণ নিজের যোগ্যতায় সে কিছুই লেখেনি। যা লিখেছে সব নওশাদের সাহায্য নিয়ে। এদিকে প্রমথ সাহেব আগেই রসগোল্লা, লাড্ডু কিনে এনে রেখেছেন। মেয়ে চান্স পেলে পুরো পাড়ায় বিতরণ করবেন। এসব দেখে প্রীতির কান্না এসে যাচ্ছিল। সেদিন সার্ভার খুব ডাউন ছিল। প্রীতি রেজাল্ট জানতে পারল দুপুর দুইটায়। আশ্চর্যজনকভাবে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে তার পজিশন ছিল সাতশো একুশ। প্রীতি খুশিতে কেঁদে ফেলেছিল। প্রমথ পুরো পাড়ায় মিষ্টি বিতরণ করে সবাইকে গর্বের সাথে সুখবর জানালেন। সারাদিন বাবা-মেয়ে খুশিতে অকারণেই হেসেছে। যেদিন প্রীতি ভর্তি হতে যাবে সেদিন ঠিক করেছিল বুয়েটেও একবার ঘুরে আসবে৷ যদি নওশাদের সাথে দেখা হয়ে যায়! তাকে একটা থ্যাংকস অন্তত দেওয়া দরকার। নওশাদ যেটা প্রীতির জন্য করেছে সেটা কেউ কখনোই করে না। কিন্তু ভর্তির দিন ইউনিভার্সিটিতেই সরাসরি নওশাদের সাথেই দেখা হয়ে যায় প্রীতির। নওশাদ বুয়েটে ভর্তি হয়নি। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ট্রিপল ই নিয়ে ভর্তি হয়েছে৷ তার পজিশন ছিল দুইশো বিশ। অথচ বুয়েটেও সে স্ট্যান্ড করেছিল। ট্রিপল ই সাবজেক্ট অনায়াসে পেয়ে যেতো। তবুও এই ছেলে কেন বুয়েট ছেড়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এলো তা মোটেও প্রীতির বোধগম্য হলো না। প্রীতি ভর্তি হয়েছিল ফার্মাসীতে। একদিন জানতে পারল নওশাদও নাকি নিজের সাবজেক্ট বদলে ফার্মাসীতে চলে এসেছে। প্রীতর ডিপার্টমেন্টে। নিজের ক্লাসে নওশাদকে দেখে প্রীতি হতবাক!
বাস কন্ট্রাক্টর গলা উঁচিয়ে ডাকছে,” এইযে ম্যাডাম, ভাড়াটা দেন৷ কোথায় নামবেন?”
প্রীতি ভাবনায় ছেদ পড়ল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল তার স্টপেজ এসে গেছে। প্রীতি উদগ্রীব হয়ে বলল,” এখানেই আমি নামবো মামা।”
” তাইলে জলদি নামেন। ভাড়া দেন আগে।”
প্রীতি ভাড়া দিয়ে বাস থেকে নামল। দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে। গোসল সেরে রান্নাও করতে হবে৷ বাবাকে বলেছিল দোকান থেকে পাউরুটি আর কলা নিয়ে খেতে। বাবা নিশ্চয়ই খাননি। এখনও না খেয়ে আছেন। প্রীতির বাড়ি গিয়ে প্রথম কাজ হলো বাবাকে ধমক দিয়ে খাওয়ানো।
কলিংবেল চাপল প্রীতি। বাবা হাসিমুখে দরজা খুললেন।
” আয় মা। ভেতরে আয়। তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
” কি সারপ্রাইজ বাবা? তুমি এতো খুশি কেন?”
” সারপ্রাইজটা দেখলে তুইও খুশি হবি।”
প্রীতি বাবার সাথে হাসতে হাসতে বেডরুমে এসে দেখল জেরিন বসে আছে। জেরিনকে দেখেই চেহারা কালো হয়ে গেল প্রীতির। প্রমথ সাহেব আনন্দিত কণ্ঠে বললেন,” চমকটা কেমন ছিল? তোকে সারপ্রাইজ দিতে এই পাগলী আটলান্টিক মহাসাগর পার করে এসেছে। একেই বলে আত্মার টান৷ তোরা গল্প কর। আমি চুলায় রান্না বসিয়েছি।”
প্রমথ হাসতে হাসতে রান্নাঘরে চলে গেলেন। তিনি তো জেরিনের প্রতারণার কথা জানেন না৷ প্রীতি আজও বলতে পারেনি। বাবা জেরিনকে মেয়ের মতো দেখতেন। এসব জানলে কষ্ট পাবেন বলে। জেরিন প্রীতিকে জড়িয়ে ধরতে এলেই প্রীতি দূরে সরে গেল। ভ্রু কুচকে বলল,” আমার বাড়িতে আসার সাহস তোর কিভাবে হলো?”
” তুই আমার ফোন ধরিস না। আমাকে সবজায়গায় ব্লক করে রেখেছিস। তাই উপায় না পেয়ে ডিরেক্ট ফ্লাইটে উঠে চলে এসেছি। প্লিজ রাগ করে থাকিস না বোন। যদিও আমার অপরাধ নেই তাও আমি ক্ষমা চাইছি তোর কাছে। প্রয়োজনে ক্ষমা চাইবো।”
” এতোবড় অপরাধ করেও বলছিস তোর অপরাধ নেই? শুধু পায়ে ধরে কেন? মাথা ঠুকে মাফ চাইলেও আমি তোকে মাফ করতে পারবো না। প্লিজ তুই চলে যা জেরিন।”
” তুই ভুল বুঝছিস আমাকে।”
” ভুল নয়, ঠিকই বুঝেছি। বরং তুই এখন এসেছিস আমাকে ভুল বোঝাতে।”
জেরিন এগিয়ে এসে গলায় হাত চেপে বলল,” আই সুয়্যের আমার কোনো দোষ ছিল না। আশরাফ ভাইয়ের অসুস্থতার কথা আমি জানতাম না বিশ্বাস কর। মা আমাকে কিছুই বলেনি। তাকে আমি বিয়ে করতে চাইনি শুধুই আতিফের জন্য। আর মাও সেটা মেনে নিয়েছিল। কারণ মা সব জানতো। তোর সাথে আমার ভালো ফ্রেন্ডশীপ। আমি যদি সত্যিটা জেনে যাই তাহলে তোকে বলে দিবো। এজন্যই মা আমার কাছে সব গোপন করেছিলেন। তুই ওখান থেকে চলে আসার পর আমি তোর সাথে কানেক্ট হওয়ার কত ট্রাই করেছি জানিস? আমি বুঝতে পেরেছিলাম নিশ্চয়ই তুই আমার উপর রেগে আছিস। কিন্তু রাগের কারণটাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিছুদিন আগে আশরাফ ভাইদের বাসায় গিয়েছিলাম৷ তখন আরোহী আন্টির থেকে সব জানতে পেরেছি।”
কথাগুলো শোনার পর প্রীতি কিছুটা ঠান্ডা হলো। তার মনে হচ্ছে জেরিন সত্যিই বলছে। প্রীতি শান্ত হয়ে বিছানায় বসল। জেরিন হাঁটু গেঁড়ে প্রীতির সামনে বসে বলল,” আমার কথা বিশ্বাস কর প্রীতি। আমি তোর ক্ষতি চাইবো এটা তুই ভাবলি কেমন করে? আমি না তোর বেটার হাফ?”
প্রীতি আচমকা জড়িয়ে ধরল জেরিনকে। অস্থির হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,” আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলান সেদিন। আমার মন ভেঙে গিয়েছিল।”
” আমি জানি। তোর জায়গায় আমি হলে আমিও কষ্ট পেতাম।”
প্রীতি বেশ কিছুক্ষণ ধরে কাঁদল৷ কান্নার মাধ্যমে এতোদিনের জমানো কষ্টগুলো বের করে দিচ্ছিল যেন। জেরিন বিরক্ত হয়ে বলল,” হয়েছে এবার কান্না বন্ধ কর। এতোদূর থেকে তোর কান্না দেখতে আসিনি আমি। নে চোখ মোছ। খচ্চর কোথাকার!কাঁদতে কাঁদতে নাকের পানিও বের করে ফেলেছে।”
প্রীতি হাসতে হাসতে টিস্যুপেপার দিয়ে চোখ মুছল। তারপর জিজ্ঞেস করল,” আশরাফ এখন কেমন আছে?”
আশরাফের কথা শুনে জেরিনের চেহারা অন্ধকার হয়ে গেল। কিছু একটা ভেবে সে দীরশ্বাস ছাড়ল। তারপর বলল,” ভালো নেই।”
প্রীতির ভেতরটা হাহাকার করে উঠল। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলল,” কেন?”
” সারাক্ষণ তোর নাম নিচ্ছে। আগে ফ্লোরা-ফ্লোরা করতো। আর এখন খালি প্রিটি-প্রিটি করে। তাকে বুঝিয়ে রাখা হচ্ছে তুই কিছুদিন পরেই ইউএসএ আসবি। এই অপেক্ষাতেই সে দিন গুণছে। প্রীতি, তুই কি একবার যাবি আমার সাথে নিউইয়র্কে? প্লিজ চল না। ”
প্রীতি কঠোর গলায় বলল,” কখনোই না।”

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে