আমার সংসার পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
2034

#আমার_সংসার
#লেখিকা_ DI YA
#পর্ব_০৭
#সমাপ্ত

সকাল ৮ টায় বাসার কলিংবেল বাজায়। আয়েশা ভাবে তার বাবা এসেছে। আয়েশা সকাল থেকেই তৈরি হয়ে বসে আছে। আর জান্নাতকেও আয়েশা রেডি করে নিয়েছে। তাই গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই বাইরের দৃশ্য দেখে আয়েশা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,

হাহ আমার সংসার। তা আর আমার নেই। আজ থেকে তা অন্য একজনের সংসার। আসলে বাসার কলিংবেল বাজায় আসিফ। দরজা খুলেই আয়েশা দেখে আসিফ আর আসিফের পাশে রয়েছে একটা অপরিচিত মেয়ে। দুজনের জামাকাপড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা বিয়ে করে এসেছে। আসিফের পরণে একটি লাল পাঞ্জাবি আর মেয়েটির পরণে রয়েছে সাদা লাল সংমিশ্রণের জামদানি শাড়ি। তারপর আসিফ আর মেয়েটি ঘরে ভিতর ঢুকে পরলো। আমি কিছু বলিনি। কারণ আমি তো জানিই এদের সম্পর্ক । তো প্রশ্ন করে কিই না হবে। যদি উত্তরটা নিজেরই জসনা থাকে। আমি চুপচাপ ওখান থেকে চলে আসতে যাব তখন জান্নাত বললো,

বাবা এই আন্টি টা কে? আর উনি এরকম বউ সেজেছে কেন?তুমি এরকম এত সকালে পাঞ্জাবি পরেছো কেন? – জান্নাত

আসিফ নিশ্চিুপ

জানো বাবা মা আমাকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠিয়ে তৈরি করছে। আজ নাকি আমরা নানুবাসায় যাব।আমি কতবার বললাম বাবা আসুক তারপর আমরা তিন জনে মিলে যাবো। মা আমার কোনো কথাই শুনলো না – জান্নাত গাল ফুলিয়ে বললো

আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। তাই আমি বলে উঠলাম,

জান্নাত শোনো মা তুমি আর তাকে বাবা বলবা না। আঙ্কেল বলবা – আয়েশা

ওমা এটা আবার কেমন কথা আম্মু? আমি বাবাকে আঙ্কেল বলবো কেন ? এটা তো আমার বাবা। আর বাবাকে তো আঙ্কেল বলেনা – জান্নাত

বলতে হবে মা কারণ এরপর থেকে আমি আর তুমি নানুবাসায়ই থাকবো। আর কোনোদিন ও এখানে আসব না – আয়েশা

কেন মা – জান্নাত

এই যে আন্টি টাকে দেখছো। আসিফের পাশে থাকা তার নতুন স্ত্রীকে ইশারা করে বললাম। এটা হচ্ছে তোমার আঙ্কেলের নতুন বউ। বুঝলা আজকে থেকে তুমি আর আমি একসাথে থাকব।আর৷ আঙ্কেল আলাদা বুঝলা – আয়েশা

আসিফ কিছু না বলে মেয়েটিকে নিয়ে তাদের রুমে চলে গেলো। আসিফের চেহারা অনেকটা বিষন্ন লাগছিল। আমি এত না ভেবে জান্নাতকে নিয়ে আবার রুমে চলে আসলাম। তার কিছু ক্ষণ পর বাবা এসে আমাদের নিয়ে গেলো। জান্নাত আমার সেই কথা শোনার পর নিরব হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম জান্নাতকে এসব বলব না।কিন্তু পরিস্থিতি টাই এখন এমন।কিছু করার নেই।ভালোই হয়েছে জান্নাত আজকে এসব জেনে গিয়েছে। আজকে না জানলে হয়তো জান্নাতের মনে এসব প্রশ্ন থেকেই যেতো। যে প্রশ্ন গুলোর সম্মুখীন আমার প্রতিনিয়ত হতে হতো। আমরা খুলনা থেকে ঢাকা ভিতরে ঢুকে যাওয়ার পর আমি বাবাকে বললাম,,

বাবা – আয়েশা

হুম মা বল। কি হয়েছে ? – নীলয় রহমান

বাবা আসলে আমি বাসায় যাব না। আমার মন সায় দিচ্ছে না বাবায় যাবার জন্য। আমি বাসায় যান না বাবা। অন্য কোনো জায়গায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দাও – আয়েশা

হুম মা। আমি নিজেই এটা ভেবে রেখেছি। এত কিছুর পর তোর আর নীলিমার মুখোমুখি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তোর নামে উত্তরায় আমাদের একটা ফ্ল্যাট আছে। তুই এখানেই থাকবি শীঘ্রই আমি তোর থাকার জন্য ভালো একটা জায়গার বন্দবস্ত করে ফেলবো চিন্তা করিস না – নীলয় রহমান

হুম ঠিক আছে। আচ্ছা বাবা তুমি এত ভাল কেন।কি করে একটা এতিম মেয়ের জন্য এতকিছু করতে পারো তাও নিজের স্ত্রীর বিরুদ্ধে গিয়ে – আয়েশা

ধুর পাগলি কে বলেছে তুই এতিম। তুই হলি আমার মেয়ে। নীলয় রহমানের মেয়ে তুই। তোর বাবা আর আমি দূরসম্পর্কের ভাই ছিলাম।কিন্তু আমরা অনেক ভাল বন্ধু ছিলাম।আমাদের সম্পর্ক আপন ভাইয়ের থেকে কম ছিল না। সবকিছু ঠিকই চলছিল। কিন্তু সবকিছু এক ঝড়ে তছনছ হয়ে যায়।ও আমার হাত ধরে বলেছিল,

ভাই আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস।নিজের মেয়ের মত বুকে আগলে রাখিস। দেখে রাখিস আমার পরিটাকে।

জানিস নিজের বন্ধু কম ভাই বেশি মানুষটাকে হারিয়ে আমি নিজেই একরকম ডিপ্রেশনের ভিতরে ছিলাম।পরে তোর কথা ভেবে নিজেকে সামলাই।নীলিমা প্রথম থেকেই তোকে মানতে পারতো না।কিন্তু খুব একটা খারাপ আচরণ ও করতো না। তাই আমি কিছু বলতাম না।কিন্তু ও যে এত খারাপ একটা পরিকল্পনা মনে পুষে রেখেছিল এটা আমি ঘূর্ণাক্ষরেও তের পাইনি। আজকে আমি যদি একটু সতর্ক থাকতাম তোকে নিয়ে। তাহলে হয়তো এমন দিন তোদের জীবনে আসতো না। পারলে মাফ করে দিস তোর এই বাবাটাকে – নীলয় রহমান

আরে বাবা এখানে তো তোমার কোনো দোষ নেই। তুমিও তো পরিস্থিতির স্বীকার। – আয়েশা

কিন্তু আমি যতদ্রুত সম্ভব আসিফ আর নীলিমার শাস্তির ব্যবস্থা করব – নীলয় রহমান

না বাবা তুমি এসব কিছু করবেনা – আয়েশা

কেনো? ওরা তোর সাথে এত জঘন্য একটা কাজ করলো। আর তুই বলছিস ওদের শাস্তি না দিতে – নীলয় রহমান

বাবা ভাল মন্দের বিচার আল্লাহ করবে।আমি শুধু তার দরবারে নিজের অভিযোগ গুলোকে জমা রাখবো।আমি জানি আমি কখনো নিরাশ হবো না – আয়েশা

আচ্ছা তোর কথাই হবে। আমি কিছু করবনা। কিন্তু কালকে থেকে তুই অফিসে আসবি। আর জান্নাতকেও এখানের ব্রেস্ট স্কুলে ভর্তি করে দিব। – নীলয় রহমান

তারপর নীলয় রহমান আয়েশাকে তার ফ্ল্যাটে রেখে চলে গেলো। ফ্ল্যাটে আয়েশা জান্নাত আর একটা কাজের লোক আছে। তার নাম রহিমা চাচী। বাসাটা মোটামুটি অনেকটাই বড়। আমি আর জান্নাত রহিমা চাচী মিলে পুরো বাসাটা সাজিয়ে গুছিয়ে নিলাম।তারপর ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রহিমা চাচী তার রুমে চলে গেলো। আমি আর জান্নাত রুমে এসে শুয়ে পরলাম।

চোখের পলকে সময় চলে যায়। কত তারাতাড়ি আরো একটা বছর চলে গেলো। এখন আলহামদুলিল্লাহ আমি আর জান্নাত অনেক ভালই আছে। আমাদের বিজনেস টা এখন আমি নিজেই দেখাশোনা করি। জান্নাত ও এখন অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে।কিন্তু ও আসিফের নামই এখন শুনতে পারেনা। ও বলে,

বাবা হলে সে কখনো এমন করতে পারতোনা আমার সাথে । তার জন্য আমি কাউকে কোনোদিন বাবা ডাকতে পারবনা। এই রকম মানুষকে ভালোবাসা তো দূরে থাক ঘৃণা করতে আমার রুচিতে বাঁধে বুঝলে মা।আর এখন তাকে ছাড়া আমরা দিব্বিই আছি বরং আগের থেকে আরো ভাল আছি। – জান্নাত

আসলে মেয়েটির কথা শুনে মনেই হয়না ও এইটুকু একটা পিচ্চি। পুরো বড়দের মত কথা বলে। আমি ওকে দেখলে আরো লড়ে যাবার শক্তি পাই। আমাকে আর জান্নাতকে অনেকবার শুনতে হয়েছে ওর বাবা কে? আমার স্বামি কই? আমরা একা কেন থাকি? অনেক সমালোচনাও শুনতে হইছে। তাতে কি লোকের কথা এখন আর গায়ে মাখি না। কারণ এদের কাজই হচ্ছে সমালোচনা করা। কিছু দিন আগে শুনেছিলাম আসিফ আর তার স্ত্রীর ডিভোর্স হয়ে গেছে। ডিভোর্স ওর স্ত্রীই ওকে দিয়েছে। কারণটা ছিল আসিফের চাকরি চলে যায় এক কারণে।আর তারপর থেকেই সংসারে অশান্তি। এক সময় তার স্ত্রী অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। এভাবেই একসময় ডিভোর্স হয়ে যায়। হয়তো এটাই আসিফকে দেওয়া প্রকৃতির শাস্তি ছিল। আর মা ও এখন কোমায় আছে। ৮ মাস আগে একটা এক্সিডেন্টে মা কোমায় চলে যায়। আজকে হয়তো গল্প টা ভিন্ন হলেও পারতো। কিন্তু এটাই আমার ভাগ্যে ছিল। তাও দিনশেষে জান্নাত আর আমি ভালই আছি।

সমাপ্তি 🥰
( গল্প টা সত্যি ছিল। গল্পের ঘটনা টাও বাস্তবই ছিল)
সরি রিচেক করা হয়নি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে