আমার বাবা একজন উচ্চশিক্ষিত লোক ছিলেন।

0
644

আমার বাবা একজন উচ্চশিক্ষিত লোক ছিলেন। তিনি পিএইচডি করেছিলেন, স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানিতে পড়াশোনা করেছিলেন। জীবনে প্রচুর আয় করেছেন কিন্ত তারপরও তাকে সারাজীবন অর্থনৈতিকভাবে লড়াই করতে হয়েছে। খুব সাদামাটা মধ্যবিত্তের জীবন ছিল আমাদের। আমাদের তিন ভাইবোনকে তিনি প্রচুর উপদেশ দিয়েছিলেন। আমি আর আমার বোন বাবার সব উপদেশ মেনে চলতাম। বাবার উপদেশ মেনে দুজনেই সফল হয়েছি। উচ্চশিক্ষিত হয়ে আমার বোন অস্ট্রেলিয়াতে স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করে সেখানেই স্বামীসহ বসবাস করছে আর আমি একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চপদে আছি। কিন্ত এতকিছুর পরও অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দুজনকেই বেশ লড়াই করতে হয়।

অথচ আমার জমজ ভাই বিজয় করেছে ঠিক উল্টো। এসএসসির পর আর পড়াশোনাই করেনি। পাড়ার বখাটে ছেলেদের সাথে মিশে এলাকার বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়ল, তারপর একদিন বাবার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাইল , তখন ওর বয়স মাত্র ২৪। বাবা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিগ্গেস করলেন-

– টাকা দিয়ে কি করবি?

– ব্যাবসা করব, বাবা। এই টাকা দিয়ে আরও অনেক টাকা বানাব।

– দেখ্, অর্থের মোহ কিন্ত সব দুষ্কর্মের মূল।

– না বাবা, টাকার অভাব হলো সব দুষ্কর্মের মূল।

বাবার উপদেশের বিরুদ্ধে আমি কিছুই চিন্তা করতে পারতাম না অথচ বিজয় বাবার প্রতিটা কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করত।

– দেখ আমিও ধনী হওয়ার দৌড়ে সামিল হতে পারতাম। কিন্ত আমি টাকার ব্যাপারে আগ্রহী নই।

– কিন্ত আমি আগ্রহী কারন টাকাই শক্তি। আমি শক্তিশালী হতে চাই।

– দেখ বাবা, আমরা গরীব। টাকা নিয়ে আমরা ঝুঁকি নিতে পারি না।

– কিন্ত বাবা, ঝুঁকি না নিলে যে ভাগ্য খুলে না। টাকা জিনিসটাই হলো বিনিয়োগের জন্য, সম্পদ গড়ার জন্য।

– সেক্ষেত্রে আমাদের এই বাড়িটাই তো সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ আর বৃহত্তম সম্পদ।

– ঘর হলো একটা বোঝা। যাদের জন্য আপনি ঘর বানিয়েছেন তারা কি এই ঘরে থাকবে?

এরকম পুরোপুরি বিপরিতমুখি কথা-বার্তা চলতে চলতে বাবা একসময় ধৈর্যহারা হয়ে গেলেন। রেগে বললেন-

– তোদের জন্য, সন্তানদের জন্যই আমি ধনী হতে পারিনি, সবসময় ওদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে চেয়েছি। আর আমার সন্তান হয়ে তুই আজকে ধনী হতে চাস্?

– হ্যা। কারন আমার সন্তানদের জন্যই আমাকে ধনী হতে হবে।

-বাহ্, এখনই সন্তানদের জন্য চিন্তা! ভালভাবে পড়ালেখা করলে তো একটা ভাল কোম্পানিতেই চাকরি করতে পারতি।

– না, আমি ভালোভাবে এমনকিছু করব যাতে ভাল ভাল কোম্পানি কিনতে পারি।

সেইদিনই বিজয় বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। বন্ধুদের সাথে মেসে থেকে পাশের এলাকাতে একটা মিষ্টির দোকান দিল। তারপর একদিন বাসায় বিদায় নিতে এলো, চট্টগ্রাম চলে যাবে বলে। চট্টগ্রামে ও একটা গার্মেন্টস দিল। সেই শুরু, এখন বিজয় বাংলাদেশের তরুণ সফল ব্যাবসায়ীদের একজন। আজ ওকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। আমরা পুরো ফ্যামেলি এসেছি সেই অনুষ্ঠানে। পুরস্কার নিয়ে বিজয় বলছিল ওর সাফল্যের সূত্র।

– ধনীরা ধনী হওয়ার, গরীবেরা গরীব থাকার ও মধ্যবিত্তের রিনে জর্জরিত থাকার অন্যতম কারন হলো অর্থের বিষয়টি বাসায় শিখানো হয়, স্কুলে নয়। পিতামাতার কাছ থেকে আমরা বেশিরভাগ এ বিষয়ে শিখি। স্কুল শিক্ষা সংক্রান্ত ও পেশাগত দক্ষতার প্রতি নজর দেয়, কিন্ত অর্থনৈতিক নয়। আমাদের উচিত সন্তানদের অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষা দেয়া, তাহলেই দেশে উদ্দোক্তা তৈরি হবে, ক্লার্ক নয়।

আসলেই তো। অর্থের ব্যাপারে আমি তো একটা জিনিসই শিখেছি, মাস শেষে বেতন তোলা আর বিভিন্ন খাতে খরচ করা। আমরা আসলে চিন্তায় গরীব বলেই গরীব। চিন্তাটাকে আগে ধনী করতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে