আমার তোমাকে প্রয়োজন পর্ব-০৩

0
1120

#আমার_তোমাকে_প্রয়োজন💖
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_3

কপি নিষিদ্ধ ❌

আহাদকে দেখা মাএই ঐশীর ভয় বেড়ে গেল ও ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলো।

আহাদ হাতে করে খাবারের ট্রে নিয়ে এসেছে,ও ঐশীর বেডের পাশে রাখা চেয়ারটায় বসে।
তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসলাম,
তোমার এখন কেমন লাগছে?

ঐশী ভয়ে কিছু বলছে না চুপটি করে বসে আছে।

কি হলো বললে না যে?

আব হ্যাঁ ভালো লাগছে।

ভয়ের কিছু নেই আমার সার্ভেন্ট তোমার ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়েছে,তোমার শাড়ী তো ভিজে গিয়েছিল তাই ড্রেস চেঞ্জ করতে হয়েছে।

আমি এখানে কি ভাবে এসেছি?

আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি,যাও আগে ফ্রেস হয়ে কিছু খেয়ে নাও তারপর কথা বলবো।

ঐশী মাথা নেড়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসে।

বিছানার কাছে আসতে কার্পেটে পা বেজে পড়তে নিলে আহাদ ধরে ফেলে,ঐশী খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখেছে,
ও ভেবেছে ও পরে যাবে,কিন্তু নিজেকে হাওয়ায় অনুভব করতেই ও চোখ মেলে তাকায়,আহাদ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল,আহাদের সাথে চোখাচোখি হতেই ঐশী হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
সরি।

ইটস ওকে,বসো খেয়ে নাও।

না না আমি কিছু খাবো না।

তা বললে তো হবে না তোমাকে খেতে হবে এমনিতেও তুমি উইক,কাল রাত থেকে কিছু খাওনি তাই আমি কোনো এক্সকিউজ শুনবো না বসে চুপচাপ খেয়ে নাও।

আহাদের কথার উপর ঐশী আর কোনো কথা বলতে পারে না ও যেয়ে বিছানায় বসে।

আহাদ খাবারের উপর থেকে ঢাকনা সরিয়ে দিচ্ছে।
ঐশী ভদ্রতার খাতিরে বলে,
আপনি খেয়েছেন?

আহাদ মুচকি হেসে “না” বলে।

তাহলে আমার সাথে খেয়ে নিন।

সমস্যা নেই তুমি খাও।

ঐশী খাচ্ছে না,ওকে খেতে না দেখে আহাদ বুঝতে পেরেছে ঐশী খেতে ইতস্তত বোধ করছে।
তাই সার্ভেন্টকে কল করে ওর খাবার উপরে নিয়ে আসতে বলে।
একটু পর সার্ভেন্ট দরজায় নক করে আহাদ ভেতরে আসতে বলে,উনি খাবার রেখে চলে যান।

এবার খেতে পারো।

অাহাদের কথা শুনে ঐশী খাওয়া শুরু করে,ঐশীকে খেতে দেখে আহাদও খাওয়া শুরু করে।
খাওয়ার মাঝে আহাদ বলে,
আচ্ছা ঐ ছেলেগুলোকে তুমি চেনো?

জ্বী না,ওরা এলাকার বখাটে ছেলে।

তুমি বৃষ্টির রাতে বাহিরে কি করছিলে?

আসলে আমি টিউশন পড়াই কাল তো ভার্সিটির ইভেন্ট অনেক লেট করে শেষ হয়েছে তাই আমার ভার্সিটি থেকে বের হতে দেরি হয়ে যায়,ওদের পড়াতে চাইনি বাট ওদের আজ পরীক্ষা ছিল তাই পড়াতে যেতে হয়েছে,পড়ানো শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক লেট হয়ে যায়,তখন বৃষ্টিও পড়তে শুরু করে রাত বাড়ছিল অনেকখানি ভিজেও গিয়েছিলাম তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ভিজে ভিজে বাড়ি যাবো,কিন্তু ঐ গলিতে আসতেই ওরা আমাকে দেখে ফেলে আর,

আর তোমাকে ধরার জন্য তাড়া করে।

হুম,থ্যাঙ্ক ইউ,আপনি যদি আমাকে কাল না বাঁচাতেন তাহলে,

হুসস রিলেক্স কিছু হতো না,আর থ্যাঙ্ক ইউ দিতে হবে না
আহাদের ফিসফিস করে বলে,
আমি তোমাকে নয় আমার জীবনকে বাঁচিয়েছি।

কিছু বললেন?

না কিছু বলিনি তুমি খেয়ে নাও।

আর খাবো না।

কি বলো তুমি তো কিছুই মুখে দাওনি।

আসলে খেতে ভালো লাগছে না।

হুম শরীরে জ্বর তো তাই খেতে ভালো লাগছে না।

আহাদ চেয়ার থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে মেডিসিনের বক্স থেকে দুটো ট্যাবলেট নিয়ে ঐশীর কাছে আসে।

নাও মেডিসিন গুলো খেয়ে নাও।

এগুলো কিসের মেডিসিন?

জ্বর ও মাথা ব্যাথার,নাও খেয়ে নাও।
ঐশী আহাদের হাত থেকে মেডিসিন নিয়ে খেয়ে নেয়।

আব আসলে আমি বাসায় যাবো।

হ্যাঁ যাবে,আগে কিছুক্ষণ রেস্ট করো।

না আসলে আম্মু টেনশন করবে,আর আমার ফোনটাও রাস্তায় পরে গিয়েছিলো তাই ফোন বন্ধ পেয়ে আম্মু হয়তো টেনশন করছে,আমাকে যেতে হবে।

আচ্ছা চলো।

আমি একা যেতে পারবো আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।

আমি তোমাকে একা ছাড়ছি না,আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি আমিই তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো।

আচ্ছা।

চলো।

ওরা রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসে।
আহাদ ঐশী গাড়িতে উঠে বসে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়,ঐশীদের বাড়ির কাছে আসতেই ড্রাইভার গাড়ি থামায়,ঐশী দরজা খুলে বের হয়।
আহাদ ওর দিকে একটা শপিং ব্যাগ বাড়িয়ে দেয়,
তোমার শাড়ি।

ঐশী ব্যাগটা হাতে নেয়।
থ্যাঙ্ক ইউ আমার হেল্প করার জন্য।

ওয়েলকাম।

ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যায়।
ঐশী আহাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়,ওদের গাড়ি চোখের আড়াল হতেই ঐশীর বাড়ির ভেতরে চলে আসে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঐশী,কলিংবেলে চাপ দিতেই আমেনা দরজা খুলে দেয় ঐশীকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে।
আহ আম্মু কাঁদছো কেন?

তুই কোথায় ছিলি মা,আমার খুব ভয় ও টেনশন হচ্ছিল,সারাটা রাত আমি দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি,তোর ফোনও বন্ধ ছিলো।

আচ্ছা ঘরে চলো বলছি আর কান্না বন্ধ করো।

আমেনা ঐশীকে ছেড়ে দেয়,ঐশী দরজা লাগিয়ে হল রুমে চলে আসে,আমেনাকে সোফায় বসিয়ে নিজেও ওনার সামনে বসে।
এবার বলো তো মা তুমি সারারাত কোথায় ছিলে,আর তোমার গায়ে এ পোশাক কেন?

আসলে আম্মু কাল আমি আমার বান্ধবীর বাসায় ছিলাম।

বান্ধবী?
কিন্তু ভার্সিটিতে তোমার কোনো ফ্রেন্ড নেই?

আম্মু কলেজের ফ্রেন্ড,বাচ্চাদের পড়ানো শেষ করে বাসায় আসার সময় ওর সাথে দেখা হয়,ও আমাকে জোর করে ওর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো,আমার শাড়ি ভিজে গিয়েছিল তাই ও ওর ড্রেস দিয়েছে আমাকে,
এটা ওর ড্রেস।

তোমার কোন ফ্রেন্ড এটা?
ওর নাম কি?

রিতা।

ওহ রিতা।

হ্যাঁ আম্মু।

শুনো মা কাল ওদের বাসায় ছিলে ঠিক আছে কিন্তু আর কখনো রাতে কারো বাসায় যাবে না,জানোই তো এখন দিন কাল খারাপ যেকোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে,তাই সাবধানে চলবে ঠিক আছে।

আচ্ছা।

যাও রুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে আসো।

হুম।

ঐশী ওর রুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জোরে শ্বাস নেয়।

ওর এতক্ষণ মনে হচ্ছিলো ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে।
অনেক কষ্টে আহাদের সামনে নিজেকে শক্ত রেখে কথা বলেছে,আহাদকে দেখলেই ওর ভয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়,আজ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছে ও।

ঐশীর একটা বিষয় ভেবে খারাপ লাগছে আজ প্রথম বার ও ওর আম্মুকে মিথ্যে কথা বললো,অবশ্য মিথ্যে না বললেও হতো না ও যদি সত্যি কথা বলতো তাহলে হিতের বিপরীত হয় যেতো।

ও যখন ওর ভাবনায় মশগুল ছিল তখনই নিচ থেকে আমেনার চিৎকার ভেসে আসে,ঐশীর বুক কেঁপে উঠে,
ও দরজা খুলে দৌড়ে আমেনার রুমে চলে যায়।
ঐশী যেয়ে দেখে আমেনা বুকে হাত দিয়ে ব্যাথায় আর্তনাদ করেছে।

আম্মু আম্মু কি হয়েছ তোমার?

আমেনা ব্যাথায় কথা বলতে পারছে না।

ঐশী দ্রুত মেডিসিনের বক্স থেকে ব্যাথার ঔষধ বের করে আমেনাকে খাইয়ে দেয়।
বেশ কিছুক্ষণ পর আমেনার বুকের ব্যাথা কমতে শুরু করে।
আম্মু এখন ব্যাথা কমেছে?

হুম কমেছে।

কাল তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাবো।

দরকার নেই মা বাঁচবো আর কয়দিন শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার দরকার নেই।

কি বলো এসব,আমি তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো আর তুমি চুপচাপ যাবে।

আচ্ছা তুমি যাও ড্রেস চেঞ্জ করে আসো।

আচ্ছা।

ঐশী রুম থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে এসে রান্না ঘরে চলে যায়,দুপুরের রান্না করে আমেনার সাথে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে,
ঐশী রেডি হয়ে ভার্সিটিতে যায়।
আজ প্রথম ক্লাসটা হবে না তাই ঐশী ক্যাম্পাসে বসে পড়ছে,ঐশীর ভিষণ মাথা ব্যাথা করছে,এখন একটু চা পেলে ভালো হতো মাথা ব্যাথা কমতো।
মামা একটা চা দিয়েন তো।

মা মাএ চা বসিয়েছি চা হতে সময় লাগবে।

ঐশী মাথা চেপে ধরে,কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখে।
চোখ খুলতেই সামনের চেয়ারে আহাদকে দেখতে পায়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে