আমার ক্রাশ পর্ব-০৬

0
1698

#আমার ক্রাশ
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান মা বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হচ্ছে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে।
“মা তুলি জিসান কই? ওদের দেখছি না
” কি জানি
“তুলিকে বলে দিও আমি গেছি। বাচ্চা মেয়ে
” ঠিক আছে। তুই সাবধানে যাস
সায়ান গাড়িতে বসে অবাক
“তুমি এখানে?
” শুধু ও না আমিও
তুলি ব্যাক ছিটে বসে আছে আর জিসান পেছনের।
“তুমি কি ভেবেছিলে জামাই আমারে রাইখা সিঙ্গাপুর যাইবা তাও আবার ওই খালাম্মার সাথে আর আমি এটা হতে দেবো
” আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো তুমি তুলি।
“হুমমমম। এবার চলো হানিমুনটাও সেরে আসবো
জিসান কাশি দেয়। সায়ান হাত দিয়ে চুল টানে।
” তোমাদের তো পাসপোর্ট ভিসা নেই
সায়ান বিজয়ীর হাসি দিয়ে বলে। জিসান তুলি পাসপোর্ট ভিসা বের করে দেখায়। সায়ান বিরক্ত হয়ে গাড়ি চালানো শুধু করে।

মনাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। মনা লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির কাছে এসে
“হেলো বেবি এতো লেট করলে কেনো কখন থেকে ওয়ের করছি

মনা গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে আসতে গিয়ে তুলিকে দেখে
” সায়ান এ এখানে কেনো? (পেছনে তাকিয়ে) জিসানও। সায়ান তুমি একটা কাজে যাচ্ছো।
“আমিও সেটাই বলছি আমরা একটা কাজে যাচ্ছি সেখানে খালাম্মা কেনো যাবে
তুলির কথায় মনা দ্বিগুন রেগে যায়।
মনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ান বলে
” মনা গাড়িতে বসো এমনিতেই লেট হয়ে গেছে আরও দেরি হলে ফ্লাইট টা ধরতে পারবো না
“বসবো কোথায়?
” পেছনে জায়গা আছে তো
তুলি দাঁত কেলিয়ে হাসে মনা ফুসতে ফুসতে পেছনে জিসানের পাশে বসে।

“জানো মনা খালাম্মা থুক্কু আপু আমি তো আসতেই চাইছিলাম না সায়ান জোর করে নিয়ে এলো। কি বলতো আমাকে ছাড়া দুই মিনিট থাকতে পারে না। বাড়িতেও সব সময় আমার আচল ধরো ঘুরে। বললাম তো মনা খালাম্মা যাচ্ছে তো আমি না গেলাম কি বললো জানো বললো মনা যাচ্ছে তো কি হয়েছে তোমাকেও যেতে হবে। তুমি না গেলে হানিমুন করবো কার সাথে।
তুলির কথা শুনে সায়ানের কোমায় যাওয়ার উপক্রম। মনার তো গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। জিসান শিশ বাজিয়ে বলে
” তোর মতো এতো কিউট মেয়েকে ভালো না বেসে থাকা যায় বল। কতো কিউট তুই তাইতো ব্রো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
মনা তো ফুলে ফুলে লুচি হয়ে যাচ্ছে।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“তুলি
” ওহহহ জামাই এখন না এখানে ওরা আছে
তুলি লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে। সায়ান মনা জিসান অবাক
“এখন না মানে কি? মনা বলে
” জামাই রোমাঞ্চ করতে বলছে তাই বললাম এখন না
“কখন বললাম 😡(সায়ান)
তুলি সায়ানের গাল টেনে বলে
” আমার জানটা লজ্জা পেয়েছে।

“তুই একটা জিনিসই মাইরি
জিসান মনে মনে বলে।

অবশেষে সিঙ্গাপুর পৌঁছে যায়। এয়ারপোর্টা ঘুরে ঘুরে দেখছে তুলি। সবাই কেমন গোছানো। তুলি ফোনের স্কিনে একবার নিজের চেহারা দেখে। ঠিক পেতনি পেতনি লাগছে। মনা তো ছোট একটা ড্রেস মাঘায় সানগ্লাস ভাবসাব ই আলাদা। আর তুলি ফকিন্নির মতো এসেছে।

” কেনো যে এভাবে আসতে গেলাম। এবার সবাই আমাকে পাগল ভেবে ঢিল ছুড়বে। আর মনাকে দেখো হাটু বের করে আমার রাশরে ইমপ্রেস করতেছে। আমিও কম যায় না আমিও ছোট ড্রেস পরবো। তখন দেখবো জামাই কি করে আমার থেকে চোখ ফেরায়।

জিসান তুলির মুখের সামনে তুরি বাজায়

“কি ভাবছিস এতো
” ভাবছি মনা আপু থুক্কু খালাম্মার মতো ড্রেস পরবো
“কস কি?😱
” হুৃমমম কিনে দে না
“টাকা নাই তো
” ও জামাই। তুলি সায়ানকে ডাকে। সায়ান এগিয়ে আসে
“কি
” টাকা,দেন
“কেনো
” মনা খালাম্মার মতো ড্রেস কিনবো
“কেনো?
” হাটু বের না করলে তো আবার আপনি ইমপ্রেস হবেন না
“তুমি একটা পাগল
” জানি টাকা দেন
“ওই ড্রেস কিনতে হবে না
” আমি কিনবো
“যা ইচ্ছে করো
সায়ান টাকা দেন। জিসান তুলি শপিং মলে চলে যায়।

তিনটা রুম বুক করেছে জিসান। একটা জিসানের জন্য আর একটা মনার জন্য আর অন্যটা তুলি সায়ানের জন্য।
” সায়ান আমি একা একটা রুমে থাকতে পারবো না। মনা ন্যাকামী করে বলে
সায়ান কিছু বলবে তার আগেই তুলি বলে
“তাহলে তোমার সাথে থাকার জন্য একটা কাজের লোক খুঁজে দেই।
” আমি কাজের লোকের সাথে ঘুমাবো😡
“তাহলে কি আমার জামাইয়ের সাথে ঘুমাবে না কি যতসব
” সায়ান তুমি কিছু বলবে না
“ও কি বলবে
মনা সায়ানের হাত ধরে। তুলি টেনে সায়ানকে সরিয়ে নেয়। জিসান পুরো সিনটা ভিডিও করছে।
” তুলি এসব হচ্ছে কি? (সায়ান)
“কি হচ্ছে বুঝতে পারছেন না তাই না। আমি একটা জিনিস বুঝি না আপনি কোথাও গেলে বা পোষ্ট বা কমেন্ট করলে ‘মেয়েরা ছাবুন ছাবুন কইরা ধরে কেন’
” এই মেয়ে কি বলে (মনা)
“আপনার বুঝতে হবে না,খালাম্মা। জামাই চলো
তুলি সায়ানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।

” এভাবে টেনে আনলে কেনো?
“তো কি কোলে করে আনবো না কি যতসব
” 🥺
“এমনভাবে তাকাইয়ো না গো খুন হয়ে যাবো😘
” তুমি ওইভাবে ঠোঁট বাঁকা,কইরো না
“কেনো গো
” হার্ট অ্যাটাক করবো তো
“আমি আছি তো
” সেটাই তো টেনশনের
“আচ্ছা আপনাকে ইমপ্রেস করবো কিভাবে?
” পারবা না
“অবশ্যই পারবো যদি আপনি আমার দিকে ভালো করে দশ মিনিট তাকান
” ওতো সময় নাই
“মনার,জন্য সময়,আছে তো
” অবশ্যই সি ইজ মাই লাইফ লাইন
তুলি কিছু না বলে৷ বেলকনিতে চলে যায়।

“জোর করে সব করা যায় কিন্তু কারো মন জয় করা যায় না। আর যদি তার মনে অন্য কেউ থাকে তাহলে তো কোনোভাবেই তার মনে জায়গা করা পসিবল না। সম্ভব না জেনেও আমরা তার পেছনে পরে থাকি। তার একটু এটেনশন পাওয়ার জন্য আমরা কতোকিছু করি৷ কিন্তু সেই মানুষ টা দিন শেষে একটু খোঁজ ও নেয় না। কেমন আছি জানতেও চায় না। তবু্ও আমরা ভালোবেসে যায়। তাকে ভালো রাখতে চায়৷ হয়ত এটাই ভালোবাসা।

তুলির চোখে পানি চলে আসে। হাতের উল্টো পিঠে মুছে ফেলে
” সায়ানের মনে অন্য কেউ থাকতে পারে কিন্তু আমার মনে সায়ান ছাড়া কেউ নেই। সায়ান পারমানেন্টলি আমার হয়ে গেছে। কেউ আমার থেকে সায়ানকে আলাদা করতে পারবে না। ওই খালাম্মার কাহিনি তো আমি এখানেই শেষ করবো।
তুলি নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেয়।

“তুমি চেঞ্জ করবে না।
তুলি একপলক সায়ানের দিকে তাকায়।
” আপনি ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দেন।
“পাগল হইছো
” হুমমম আপনার প্রেমে
“তুমি কেনো বুঝো না
” আপনি কেনো বুঝেন না আমি আপনার বউকে
“আমি মনাকে খুব ভালোবাসি
” মদ খামু
“হোয়াট
তুলি রুমে ঢুকে মদের বোতল বের করে চুমুক দেয়। জিসানকে দিয়ে আনিয়েছিলো রাতে পার্টি করবে বলে।
” আরে করছো কি
তুলি ঢকঢক করে পুরো বোতল শেষ করে। সায়ান মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“ভালোবাসেন না তাই না? কেনো বাসেন না? আমি কি দেখতে খারাপ? বলুন।
তুলি সায়ানের দিকে এগোচ্ছে আর বলছে সায়ান পিচ্ছোচ্ছে।
” খুব ভালো লাগে তাই না আমাকে কষ্ট দিতে? আমাকে কাঁদাতে ভালো লাগে
সায়ান বিছানায় বসে পরে। তুলি সায়ানের ওপরে পরে যায়।
“তুলি তুমি
” আমি ঠিক আছি। ভালোবাসি আপনাকে
“আমাকে যেতে দাও আমি লেবুর শরবত নিয়ে আসি।
” মদের নেশা তো কেটে যাবে কিন্তু আপনার নেশা কাটাবো কি করে? বলুন না
“পরলাম আরেক ঝামেলায়
সায়ান বিরবির করে বলে। তুলি বমি করে দেয় সায়ানের ওপরে। সায়ান তুলিকে কোলে তুলি বাথরুমে চলে যায়। তুলি কল ছেড়ে দেয়
” এটা কি করলে😡
তুলি সায়ানের ঠোঁটে আঙুল দেয়
“কোনো কথা না।
” ঠান্ডা লেগে যাবে তো
তুলি শক্ত করে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে। সায়ানের কেনো জানি তুলিকে সরাতে ইচ্ছে করছে না। তুলি বুকে মাথা রাখাতে সায়ানের খুব শান্তি লাগছে। বুকের ভেতরো একটা শিতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত ভালো লাগছে। এই ভালো লাগার নামই বোধহয় ভালোবাসা।
“তুলি চেন্জ করতে হবে তো
তুলি বুক থেকে মাথা তুলে। সায়ান তুলির দিকে তাকায়। গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট দুটো কাঁপছে তুলির। হয়ত ঠান্ডায়। সায়ানের খুব ছুঁয়ে দিতে মন চাইছো। কিন্তু সাহস হচ্ছে না। অবশেষে সব ভাবনা বাদ দিয়ে তুলির ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট জোড়া এগিয়ে দেয় সায়ান।
(তারপরের টুকু কাল বলবোনি🥱🥱)

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে