আজ তার বিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষের পথে। আরো আগে শেষ করতেই পারতাম, জীবনে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হওয়াতে অনার্সের পর পোস্ট গ্রাজুয়েশনের শখ জাগলো। দর্শনের মতন বিষয় যেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পড়েন কিনা, ওই ফিল্ডের চাকরি পাওয়া সম্ভব নয় কখনো। যে কেউ বুঝবে, এর থেকে বোধহয় বিসিএসের প্রেপ নেয়াটা দরকার ছিল বেশি। তবে সত্য বলতে একসময়, দর্শন বিষয়টা ভালো লাগতো। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে একটা বিষয় নিজে আবিষ্কার করেছিলাম। জীবনে যদি কোনো বিষয়ে কোনো ভালো লাগা থাকে, তবে সে বিষয়ে একটা ডিগ্রি নেয়ার চেষ্টা করার দরকার, শখের মৃত্যু ঘটানোর প্রয়োজন আছে বৈকি ।
আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা বেশ রোমাঞ্চকর। গিটার, টিএসসির চা, গুটিকয়েক প্রেম, মারিজুয়ানা, ঘন ঘন ট্যুর আর সেমিস্টার এক্সামের আগে রাত জেগে পড়া ~ সবই ছিল। আর দর্শনের ছাত্রদের অসাংবিধানিক নিয়ম হলো বড়ো চুল রাখা হলেও, আমার চুলগুলো বেশ ছোটই ছিল। আর প্রেম গুলো ডিপার্টমেন্টের মধ্যেই বেঁধে ছিল, এ প্রেম করার এক বিশেষ অসুবিধা হলো, এদের শ্রী আরো অনেক দিন দেখা লাগে, অনেক দিন।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দ্বিতীয় বছরের পরে একটা মেয়েকে ভালো লেগে যাওয়ায়, আর এ দুঃখ নিয়ে তেমন ভাবা লাগেনি। মেয়েটার নাম, ধ্রুপবতী। ও পড়তো আবার সোসোলজিতে, অনেক জানতো। দেখা হয়েছিল ভার্চুয়াল জগতে, তা থেকেই ঘটনা গহীনে যেতে খুব সময় লাগেনি। কবিতা লিখে প্রথম ওকে ভালোবাসার জানান দিয়েছিলাম, আমাকে অবাক করে কবিতা লিখেই প্রত্যুত্তর দিয়েছিলো সে।
একদম মিডিওকর প্রেমগুলোর মতন ছিল আমাদের প্রেমজীবন, শুধু কবিতাগুলো যেন আলাদা করে রেখেছিলো আমাদেরকে সবার থেকে। বারবার আমি ওর চুল গুলো নাড়িয়ে দিতাম, আর লাইব্রেরিতে বই পড়ার সময় ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম বেশি সময়। ভালোবাসাটা মোবাইল স্ক্রিনের বাইরেও ছিল, তা হোক ঘাসের বুকে ওর কোলে শুয়ে থেকে কিংবা কপালে চুমু খেতে থাকাতে।
ওহ হ্যা, আজ ওর বিয়ে।
পাত্র আমার একদমই পছন্দ নয়। ওরও মনে হয় না খুব একটা পছন্দ হয়েছে। তবু প্রতিবাদ কেন করছে না কোনো ধারণা নাই। ও এভাবে একদম বেশ প্যাসিভ ছিল, ওর জন্যে আমার এক প্যাকেট মার্লবোরো থেকে দিনে তিনটা সিগারেটে নামতে হয়েছে। এইভাবে আরো কত কিছুতে কত ভাবে বকাঝকা করতো। প্রতিবাদী মেয়ে তবু ভাগ্যের কাছে অসহায় !
তবে সুখ মাপার যদি কোনো স্কেল থাকতো, আমি বোধয় আজ দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী হতাম। এর পর থেকে আর ওকে প্রেমিকা বলে পরিচয় দিতে হবে না। এতে বিশেষ কোনো সুখ আছে কিনা জানিনে, তবে সহধর্মিনী বলতে পারাতে আছে নিশ্চয়ই !
ওহ হ্যা, আজ আমারও বিয়ে…