অভিমান হাজারো পর্বঃ১৭

0
1945

অভিমান হাজারো পর্বঃ১৭
আফসানা মিমি

ওয়্যারড্রোব ঘাঁটাঘাটি করে কিছু একটা খুঁজছে স্পন্দন। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে অতশী তার কাছ থেকে বড় কোন সত্যি লুকাচ্ছে। যা কিনা স্পন্দনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বেশ কদিন যাবৎ অতশীর বিহেভিয়ার, শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে মনে বেশ খটকা লাগছে। সেদিন অপ্রত্যাশিত ভাবে অতশীর কারো সাথে ফোনে কথা বলার সময় তার কিছু কথা আবছা শুনেছে। তাকে নাকি কখনোই এ সত্যিটা জানানো যাবে না। তবে কোন সত্যিটা তা স্পন্দন শত ভেবেও কোন কূলকিনারা পাচ্ছে না। আবার তাদের বাসায় রাতে ঘুমানোর আগে তার অগোচরে বেশ কয়েক জাতের ঔষধ সেবন করতে দেখেছে সে। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার পর অতশী সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে বিষয়টা। তাতেই যেন তার সন্দেহটা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। তাকে সঠিক সত্যিটা খুঁজে বের করতেই হবে। এবং তা যত দ্রুত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

একেবারে নিচের ড্রয়ারের কাপড়ের নিচে একটা ফাইল খুঁজে পেল স্পন্দন। আপাতত তার ফাইল পড়ার সময় নেই তাতে কী লেখা না লেখা। কোন রিপোর্ট আছে কিনা তা দেখতে হবে। ফাইলটা খুলে তার ভিতর দুই তিনটা রিপোর্ট দেখতে পেল। তার মধ্য থেকে একটা খুলে শুধু উপরের নামটাই দেখতে পেল। পেশেন্টের নামের জায়গায় লেখা ‘Sayra Atashee’. পুরো রিপোর্টটাতে চোখ বুলানোর আগেই কে যেন খপ করে কেড়ে নিল রিপোর্টটা। তড়াক করে চোখ তুলার পর দেখে অতশী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে রিপোর্টটা শক্ত করে মুঠো করে ধরে। স্পন্দন শুধু অতশীর বাহ্যিক রূপটাই দেখতে পেল। ভিতরে ভিতরে তার কী চলছে স্পন্দনের ধারনার বাইরে। হাত, পা, সারা শরীর এমনকি হৃদপিণ্ডটা সুদ্ধ প্রচণ্ড গতিতে কাঁপছে। কয়েকটা মুহূর্তের জন্য তার মনে হচ্ছিল যেন আত্মাটা খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। নিজের ভিতরের অস্থিরতার জন্য অতশীর অবস্থাটা এই মুহূর্তে চোখে পড়লো না স্পন্দনের। অবাক কণ্ঠে সে বললো

—“কী হলো অতশী? দেখতে দাও আমাকে রিপোর্টটা। এভাবে কেড়ে নিলে কেন? দেখি দাও।”
আমতা আমতা করে অতশী বললো
—“তুমি দেখে কি করবা? এটা বাবার রিপোর্ট। আমি রেখে দিচ্ছি।” বলেই চলে যেতে নিচ্ছিল। স্পন্দন ওর বাহু ধরে টেনে বললো
—“কিন্তু আমি তো স্পষ্ট দেখেছি এটাতে তোমার নাম লেখা। মিথ্যে বলছো কেন?”
অতশী থতমত খেয়ে গেল। এবার কী বলবে সে!
—“হ্যাঁ, আমারই হবে বোধহয়। ছোটবেলায় একবার আলট্রাসনো করেছিলাম। সেটারই রিপোর্ট এটা।” মিথ্যে বলে কোনমতে কাটাতে চায়লো কথাটা। কিন্তু স্পন্দন কোমর বেঁধে নেমেছে যেন।
—“আচ্ছা তাহলে বাকি দুইটা রিপোর্ট দাও দেখি কার রিপোর্ট ওগুলো।”
—এগুলো বাবার রিপোর্ট।”
সরু চোখে চেয়ে স্পন্দন বললো
—“বাবার রিপোর্ট তোমার কাছে কেন? আর কিসের রিপোর্ট? কী হয়েছিল বাবার?”
মিথ্যে বলতে বলতে অতশী খাবি খেয়ে যাচ্ছে। এতো মিথ্যে অতশী স্বেচ্ছায় কখনো বলেনি কাউকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বাধ্য করছে এটুকু মিথ্যে বলতে। নয়তো এতোদিনের প্ল্যান সব গড়বড় হয়ে যাবে তার।
—“বাবার হার্টের সমস্যা আছে। সেটারই রিপোর্ট এটা।”
—“কিন্তু তা তোমার কাছে কেন?” ভ্রু কুঞ্চিত করে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি মেলে জানতে চায়লো স্পন্দন।
—“এ..এমনিই। রাখতে দিয়েছিল আমাকে। আমি যাই। বাবা বোধহয় ডাকছে আমাকে।” বলেই দ্রুত পা ফেলে চলে যাচ্ছিল। পিছন থেকে স্পন্দনের কথা শুনে পা দুটো আপনাতেই থেমে গেল অতশীর। স্পন্দনের দিকে ধীরে ধীরে ঘুরে তাকালো অতশী। কিন্তু চোখে চোখ মেলাতে ব্যর্থ সে। স্পন্দন আবারো কথাটা উচ্চারণ করলো
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

—“আমার অজান্তে এমন কোন কাজ কোরো না যাতে পরবর্তীতে তা জানতে পারলে সেটা আমার কষ্টের কারণ হয়। যদি কিছু লুকিয়ে থাকো তাহলে শুধু এটুকুই মনে রেখো তা মোটেও সুখকর হবে না কারো জন্য। কখনো যদি খালি একবার জানতে পারি যে আমার কাছ থেকে কোন বড় সত্য লুকিয়েছো তাহলে তুমি জাস্ট ভাবতেও পারবা না আমি কী করবো। তাই আগেভাগেই বলে রাখছি যা-ই কোরো আর বলো না কেন ভেবেচিন্তে কাজ আর কথা বলবা সবসময়। কথায় আছে না! ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।’ এমন কোন কাজ কোরো না যাতে পরে পস্তাতে হয়।”

কথাগুলো এক নাগারে বলে শেষ করে আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না স্পন্দন। গটগট করে দ্রুত পা ফেলে রুমের বাইরে চলে গেল সে। অতশীর নড়চড় করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে। অসাড়ভাবে সেখানেই ফ্লোরে বসে পড়লো ধপ করে। নেত্র তার অশ্রুসিক্ত হয়ে এলো ভবিষ্যতের আগাম পরিস্থিতির কথা ভেবে। শিউরে উঠতে লাগলো ক্ষণে ক্ষণে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে বিরামহীন ভাবে অশ্রুবিসর্জন দিতে লাগলো নিঃশব্দে। কান্নার দমকে অঙ্গ তার কেঁপে কেঁপে উঠছে খানিক বাদে বাদে। প্রকৃতি তো জানে তার কান্নার কারণ। তাই প্রকৃতিও অতশীর সাথে তাল মিলিয়ে বারিধারা ঝরাতে প্রস্তুত হয়ে গেল।

সামিরের অস্বস্তি হচ্ছে, প্রচুর অস্বস্তি। এভাবে একটা মেয়ে সারাক্ষণ ড্যাবড্যাবিয়ে চেয়ে থাকলে অস্বস্তি হবে না! কিন্তু সে এর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। অরুনিমা কেন এভাবে তার দিকে সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকে! চোখে চোখ পড়ার সাথে সাথেই নজর ফিরিয়ে নেয় লজ্জাবনত হয়ে। আবার একটু পর পরই আড়চোখে দেখছে তাকে। এ দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষণ বসে থাকা যায় না। কেমন যেন কাঁটার মতো গায়ে বিঁধছে তার। তবুও কেন যেন তার চোখ বারবার মেয়েটার দিকেই যাচ্ছে। কথায় আছে না নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি সবার আকর্ষণ থাকে বেশি! ব্যাপারটা সেরকমই হয়েছে। অথচ সে চায়ছে না মেয়েটার দিকে তাকাতে। তবুও অজ্ঞাতসারে চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে। সে এখানে আর বসে না থেকে ছাদে চলে গেল। লাবণ্যর কথা মনে পড়ছে প্রবলভাবে। যতই ভাবছে লাবণ্যর কথা আর ভাববে না। তবুও কিছুতেই যেন মাথা থেকে সরানো যাচ্ছে না কালকের দুইটা ঘটনা। মস্তিষ্কে যেন একেবারে পার্মানেন্টলি গেঁথে গেছে। অস্থিরভাবে পায়চারি করতে লাগলো ছাদের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত। একটা মেয়েলি কণ্ঠ শুনে হাঁটা থামিয়ে চকিতে ঘুরে তাকালো। দেখলো অরুনিমা দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ভিতরে কেমন যেন অপ্রস্তুত বোধ করতে লাগলো সামির।

—“ভাইয়া আপনি কী কোন টেনশনে আছেন?” সামিরের ঘোর কাটলো অরুনিমার প্রশ্নে।
—“না না টেনশনে থাকবো কেন?” কোনমতে দৃষ্টি ঘুরিয়ে জবাব দেয় সামির। এ মেয়ে এখানে কেন? তার কাছে কী চায়?
—“তাহলে এভাবে যে অস্থিরচিত্তে পায়চারি করছেন! কোন প্রবলেম হয়েছে কী?” বেশ আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করে অরুনিমা।
—“না আসলে এমনিতেই।” অরুনিমার আগ্রহ দেখে সামির বেশ অবাক হচ্ছে। তবে কিছু বলতেও পারছে না।

অরুনিমার এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য হলো সামিরকে তার মনের অনুভূতির সাথে পরিচয় করানো। সে ধুকে ধুকে মরতে চায় না। না বলে ধুকে ধুকে মরার চেয়ে বলে দেওয়াটা অনেক ভালো। এতে করে স্বস্তি না পেলেও সাময়িক শান্তি পাওয়া যায়। নয়তো ভিতরটা কুরে কুরে খেতেই থাকে। সবসময় একটা টেনশনে দিন পার করতে হয়। বলে দিলে না জানি কী রিয়েক্ট করে! যদি রিজেক্ট করে দেয় মুখের ওপর! তাই সেই ভার সহ্য করে বয়ে বেড়াবার চেয়ে বলে দেওয়া সমীচীন মনে করে অরুনিমা। ইতস্তত করে অরুনিমা বলার চেষ্টা করে।

—“ভাইয়া আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।”
একবার অরুনিমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো
—“হ্যাঁ, বলো কী বলবে?”
অরুনিমা মনে মনে সাহস জুগিয়ে রুদ্ধশ্বাসে বলে ফেলে
—“আমি আপনাকে ভালবাসি।”
সামির থমকালো। অবাক হলো বেশ খানিকটা। অপ্রস্তুত বোধ করতে লাগলো। জিহ্বা ভারী হয়ে আসলো যেন। অরুনিমার দিকে একবার তাকিয়ে অস্থিরভাবে এদিক সেদিক দৃষ্টি ঘুরাতে লাগলো। অরুনিমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও যেন তার অস্বস্তিতে কাঁটা কাঁটা হয়ে আসছে সর্বাঙ্গ। মেয়েটাকে কিছু একটা বলা উচিৎ। আবেগের বশবর্তী হয়ে ভালবাসার কথা শুধু বলে দিলেই হয় না। তাছাড়া সে অন্য একজনকে ভালবাসে। মেয়েটাকে বুঝানো উচিৎ। অরুনিমার দিকে তাকালো কিছু বলার জন্য। কিন্তু সে দেখলো ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে তার দিকে মেয়েটা। ভারী অস্বস্তিকর ব্যাপার স্যাপার।

—“দ্যাখো অরুনিমা…..”
তার কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে হঠাৎ অরুনিমা কিছুটা লজ্জা পাওয়ার ভঙিতে বলে উঠলো
—“আপনি আমাকে অরু নামে ডাকলে আমি কিছু মনে করবো না।
সামির বিষম খেলো। কী অবলীলায় কথাটা বলে ফেললো অরুনিমা! বেশ কয়েকবার কেশে গলা পরিষ্কার করে ভেঙে ভেঙে বললো
—“দ্যাখো অরুনিমা, আমার কথাটা মন দিয়ে শুনো। আবেগের বশবর্তী হয়ে হুট করে কোন কাজ বা কথা বলা কোনটাই সুফল বয়ে আনে না। যখন তোমার মাঝে ম্যাচিউরিটি আসবে তখন তুমি বুঝবে এখন যা বলছো তা কতটা ভুল ছিল। পরে তা ভেবে পস্তাতে হবে তোমার। তুমি যথেষ্ট ছোট। আমি তোমার চেয়ে না হলেও ৫-৬ বছর সিনিয়র হবো। এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি অন্যকাউকে ভালবাসি। সো এসব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।”

‘আমি অন্যকাউকে ভালবাসি’ কথাটা শুনে অরুনিমার বুকের ভিতরটায় খচ করে উঠলো। ইশ! যদি তাকে এভাবে বলতো যে আমিও তোমাকে ভালবাসি!’ চোখ তার সিক্ত হতে চায়ছে কিন্তু সে নিজেকে সামলে উত্তর দিল
—“আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। ১৯ চলে এখন। বিয়ে করার পারফেক্ট টাইম এটা। কারো কারোর ৪০ বছর বয়স হলেও তার মাঝে ম্যাচিউরিটি আসে না। আর কেউ কেউ ১৫ বছর বয়সেও বেশ ম্যাচিউরড হয়ে যায়। সেটা ডিপেন্ড করে একমাত্রই তার মনের ওপর। আর তাছাড়া আপনি আমার ১০ বছরের সিনিয়র হলেও আমার কোন প্রবলেম নাই। আমি ঠিক মানিয়ে নিব।”
সামির বিস্ময়ে হতবাক। কয়েক সেকেন্ড মুখে কথা জুগালো না তার। ধাতস্থ হয়ে ধমক দিয়ে বললো
—“কি মানিয়ে নিবা তুমি? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? আর য়্যু লস্টেড য়্যুর মাইন্ড? মাথা থেকে এসব পাগলামি চিন্তাভাবনা ডিলিট করো। আর দুই দিনেই কি করে ভালবাসা হয়ে যায় আমি ভেবে পাচ্ছি না।” শেষ কথাটা বেশ অবাক হয়েই বললো সামির।

অরুনিমা একটু মুচকি হেসে সামিরের দিকে তাকিয়ে বললো
—“কারো প্রতি ভালবাসার অনুভূতি জন্ম হতে একটা সুন্দর মুহূর্তই এনাফ। সুন্দর মুহূর্ত বলছি এই কারণে যে ভালবাসা জিনিসটাই সুন্দর। তাই ভালবাসলে সব মুহূর্তই রঙীন হয়ে যায়। ভালবাসা জিনিসটা ঘটা করে প্রস্তুতি নিয়ে হয় না। জাস্ট হয়ে যায় চোখের পলকে। আপনি টেরও পাবেন না কখন ভালবাসার বীজটা আপনার বুকের ভিতর কুঁড়ি হয়ে জন্ম নেয়। আস্তে আস্তে সেই কুঁড়িটা কখন যে বেড়ে চারা হয়ে বৃহদাকার গাছে রূপ নেয় ডালপালা গজিয়ে তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। যখন ভালবাসার মানুষটাকে হঠাৎই চোখের সামনে দেখবেন হৃদপিণ্ডটা তখন লাফাতে থাকে ক্ষিপ্রগতিতে। আর বুকের ভিতরের সেই ধুকপুক শব্দই বলে দিবে আপনার অজান্তেই বিপরীতপক্ষের মানুষটাকে কতটা ভালবেসে ফেলেছেন আপনি। সারাক্ষণ তার দিকে অপলক চেয়ে থাকতেও দ্বিধা বোধ করবেন না। বরং যতক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন ততক্ষনই সারা দেহ মন জুড়ে একটা প্রশান্তির বাতাস অনুভব করবেন। বুকের রক্ত ছলকে উঠবে তার দিকে তাকালেই। কেমন একটা মাদকতা টের পাবেন শিরায় শিরায়। ঘোর লেগে যাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে। আর মনে মনে বিড়বিড় করবেন ‘ইশ! সময়টা যদি এখানে থমকে যেত!’ দিনকে দিন তার প্রতি আপনার ভালবাসা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আপনি উপলব্ধিও করতে পারবেন না তখন কখন আপনি এতোটা ভালবেসে ফেলেছেন নিজের অজান্তে। আর আমি আপনাকে দুইদিনেই ভালবাসিনি। প্রায় আট মাস যাবৎ আপনাকে আমি ভালবাসি। দিন দিন আপনার প্রতি আমার ভালবাসাটা বেড়ে এই অবধি এসেছে। এখন আমি ডেস্পারেট হয়ে যাচ্ছি আপনার ভালবাসার জন্য। মনে হচ্ছে যেন দম বন্ধ হয়ে মারা যাব আমি। তাই বলে দিলাম আমার মনের সকল অনুভূতির কথা। এতো তাড়াতাড়িই বলতে চাইনি আমি। কিন্তু আমি কী করবো! মনের সাথে যে পেরে উঠছিলাম না। তাই বলেই দিলাম। এতে করে আপনি আমাকে বেহায়াও ভাবতে পারেন। বাট আই ডোন্ট কেয়ার। ভালবাসলে একটু বেহায়া হতেই হয়। নয়তো ভালবাসার মানুষটাকে নিজের করা যায় না।”

শেষ কথাটা শুনে বেশ চমকে উঠলো সামির। এরকম একটা কথা-ই সে লাবণ্যকে বলেছিল। তাছাড়াও অরুনিমার কথাগুলো শুনে বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে সামির। কত সুন্দর করে গুছিয়েই না কথাগুলো বললো সে! তার লাবণ্যকে ভালবাসার আরো আগে থেকে অরুনিমা তাকে ভালবাসে! ভাবতেই অবাক হতে হচ্ছে বারবার। মেয়েটার বয়স কম হলেও কথাগুলো শুনে বেশ ম্যাচিউরড মনে হচ্ছে। যেন চোখের পলকেই বেশ বড় হয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে তো সম্ভব না এটা। সে সত্যিই লাবণ্যকে অনেক ভালবাসে। তাকে ছাড়া অন্যকারো কথা ভাবতেও পারে না সে। কিন্তু মেয়েটাকে কী করে বুঝাবে সে কথা যে ভালবাসা জোরের জিনিস না। ভিতর থেকে অনুভব করতে না পারলে জোর করে সম্ভব না এটা। অরুনিমা বোধহয় সামিরের মনের কথাটা বুঝতে পারলো কোনভাবে। কাষ্ঠহেসে শেষ কথাটা বললো
—“তবে ভাববেন না আমি আপনাকে জোর করবো। জোর করে সব পাওয়া গেলেও ভালবাসা আদায় করা যায় না। সেটা বোধহয় আপনার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে বলে আমার মনে হয় না।”
বলেই এলোমেলো পা ফেলে চলে গেল অরুনিমা। আর সামিরকে রেখে গেল হতভম্ব অবস্থায়।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে