অবেলায় তোমার আকাশে পর্ব-১০

0
1318

#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_১০
#লেখিকা_N_K_Orni

বৃষ্টি এসব দেখে ভ্রু কুচকে মনে মনে বলে উঠল,

— এই শ্রাবণ স্যারটা আবার কে?

সে নিরাকে ডেকে বলল,

— হেই নিরা। এই শ্রাবণ স্যারটা আবার কে?

— এই কলেজেরই একজন স্যার অনেক রাগী। কেমন যেন একটা? চেহারা যেমন সুন্দর ব্যবহার ঠিক ততোটাই খারাপ। ওনার সামনে ছোট খাটো ভুল মানেই মহাপাপ। আমার তো মনে হয়, বাসায় বউয়ের সাথে ঝগড়া করে আসে। আর সেই রাগ এসে আমাদের উপর ঝাড়ে।

নিরার কথা শুনে বৃষ্টির ভ্রু কুচকে এলো। সে মনে মনে বলে উঠল,

— অভ্র ভাইয়াও তো খারুশ স্যারের বিষয়ে এটাই বলেছিল। এই শ্রাবণ স্যারই খারুশ স্যার নয়তো? হতেও পারে? বর্ণনা তো মিলেই যাচ্ছে। যা খুশি হোক তাতে আমার কি? আমি সাবধান থাকলেই হলো।

বৃষ্টি মনে মনে এসব ভাবছিল। তাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে পাশ থেকে নিরা বলে উঠল,

— কি এতো ভাবছিস? তুই তো নতুন। তাই জানিস না ওই স্যারের জন্য আমরা কতো প্যারায় থাকি? একদিন ক্লাস কর তুইও বুঝবি।

নিরা এসব বলছিল তখনই একজন ক্লাসে ঢুকল। সবাই তাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। সবাইকে দাঁড়াতে দেখে বৃষ্টিও দাঁড়াল। বৃষ্টি মনে মনে বলে উঠল,

— তার মানে এটাই খারুশ স্যার থুক্কু শ্রাবণ স্যার।

স্যার সবাইকে বসতে বললেন। সবাই সাথে বসে পড়ল। বসার পর বৃষ্টি নিরার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,

— এটাই কি শ্রাবণ স্যার?

বৃষ্টির কথা শুনে নিরা মাথা নাড়িয়ে ছোট করে বলল,

— হু।

— ওহহ।

তখনই বৃষ্টির শুনতে পেল কেউ বলছে,

— হেই ইউ স্টান্ড আপ।

বৃষ্টি সামনে তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ স্যার তার দিকে তাকিয়ে আছে। পাশ থেকে নিরা ছোট করে বলে উঠল,

— বৃষ্টি স্যার তোকে ডাকছেন। উঠে দাঁড়া। আজকে তুই শেষ।

বৃষ্টি উঠে দাঁড়াল। স্যার কিছুক্ষণ বৃষ্টিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপর মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে উঠলেন,

— নতুন?

বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে ছোট করে বলে উঠল,

— জ্বি স্যার।

সে মনে মনে বলে উঠল,

— বৃষ্টি তুই আজকে শেষ। না জানি এখন আমাকে কি বলে?

বৃষ্টির কথা শুনে শ্রাবণ একটা ছোট করে মুচকি হাসল। তারপর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— নাম কি?

— আফিয়া জাহান বৃষ্টি।

— আচ্ছা বসো। আর হ্যাঁ মাস্ট বি এ্যাটেন্টিভ ইন মাই ক্লাস।

— ওকে স্যার।

বলেই বৃষ্টি বসে পড়ল। এরপর স্যার ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন। ক্লাসের শেষে স্যার বেরিয়ে গেলেন। স্যার চলে যাওয়ার পর নিরা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— আজকে অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে গেছে। স্যার একবারের জন্যও রাগ হয়নি কোনো বিষয়ে। নিশ্চয়ই আজকে বউয়ের সাথে ঝগড়া হয়নি?

শেষের কথাটা নিরা কিছুটা সন্দেহের সুরে বলল। নিরার কথা শুনে বৃষ্টি ফিক করে হেসে উঠল। তারপর হাসতে হাসতে বলে উঠল,

— তুমি খুব ফানি।

বৃষ্টির কথা শুনে নিরা কিছুটা মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠল,

— হ্যাঁ আমি জানি সেটা।

বলেই একটা দাঁত বের করে হাসি দিল।

— যাইহোক, এবার বলো আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?

নিরার কথা শুনে বৃষ্টি মিষ্টি হেসে বলে উঠল,

— হ্যাঁ অবশ্যই।

— তাহলে নো তুমি, ওনলি তুই।

— আচ্ছা।

দুটো ক্লাসের পর বৃষ্টি হেঁটে যাচ্ছিল। তখনই অভ্রর সাথে বৃষ্টির দেখা হলো। বৃষ্টিকে দেখে অভ্র বলে উঠল,

— কিরে ক্লাস কেমন হচ্ছে?

— ভালোই।

— খারুশ স্যারকে দেখলি? শুনলাম তোদের প্রথম ক্লাস খারুশ স্যারের ছিল?

— শ্রাবণ স্যার?

— হ্যাঁ উনিই।

— তোমরা খালি খালিই এসব বলছ। আমি তো আজকে ক্লাস করলাম। কই তেমন কিছু তো চোখে পড়ল না?

বৃষ্টির কথা শুনে অভ্র অবাক হয়ে বলে উঠল,

— অবিশ্বাস্য ব্যাপার। উনি কাউকে কোনো ঝাড়ি দেননি বা বকেননি?

বৃষ্টি মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বলল,

— না।

বৃষ্টির কথা শুনে অভ্র বিষ্ফোরিত চোখে বলে উঠল,

— কি বলিস এসব? উনি মনে হয় আজকে গাঁজা খেয়ে এসেছেন?

অভ্রর কথা শুনে বৃষ্টি হেসে উঠল। বৃষ্টিকে হাসতে দেখে অভ্র বলে উঠল,

— হাসিস কেন? যা বলতেছি আমি ঠিকই বলতেছি।

বৃষ্টি এবার হাসি থামিয়ে বলে উঠল,

— আচ্ছা ভাইয়া তাহলে আসি।

— আচ্ছা আয়। আর যাওয়ার সময় পার্কিংয়ের কাছে আমার জন্য অপেক্ষা করিস।

— আচ্ছা।

বলেই বৃষ্টি হাঁটতে শুরু করল। অভ্র উল্টো দিকে হয়ে হাঁটতে শুরু করল। বৃষ্টি কিছু যেতেই শ্রাবণ স্যারের সাথে মুখোমুখি হলো। বৃষ্টিকে দেখে শ্রাবণ বলে উঠল,

— একটু আগে যেই ডাঃ এর সাথে কথা বলছিলে উনি তোমার কি হয়?

— মানে?

— তোমরা যেভাবে কথা বলছিলে ওটা দেখে আমার মনে হলো না যে এটা টিচার স্টুডেন্টের কথোপকথন। তোমাদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক আছে। তাই জিজ্ঞাসা করছি যে উনি তোমার কি হয়?

— ওহহ। স্যার ওটা আমার ভাই হয়।

— নিজের?

— না। ওটা আমার ফুফাতো ভাই। আমার তো কোনো ভাই নেই। তাই ওনাকেই আমার ভাই মনে করি।

— ওহহহ। আচ্ছা তুমি আসতে পারো।

— আচ্ছা স্যার।

বলেই বৃষ্টি চলে গেল। শ্রাবণ একবার পেছন ফিরে বৃষ্টির যাওয়া দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে বের করল। তারপর কাউকে কল দিয়ে হাঁটতে শুরু করল।

সব ক্লাস শেষ করে বৃষ্টি অভ্রর জন্য পার্কিংয়ের কাছে অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর অভ্র এলো। বৃষ্টি আর অভ্র গাড়িতে উঠল। বাসায় এসে দরজায় কলিং বেলে চাপ দিতেই মিসেস রায়া এসে দরজা খুলে দিলেন। বৃষ্টি আর অভ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে থেকে তিনি সরে দাঁড়ালেন। ওরা দুজন ভেতরে ঢুকল। মিসেস রায়া আবার দরজা লাগিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— কিরে কলেজের প্রথম দিন কেমন কাটল?

— খুব ভালো। আমি তো কখনো ভাবতেই পারিনি যে আমার এই স্বপ্নটা পূরণ হবে।

বৃষ্টির মুখে হাসি দেখে মিসেস রায়া তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলেন,

— আচ্ছা এখন যা রুমে গিয়ে জামাকাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর এসে খেয়ে নে।

— আচ্ছা। ফুফি তুমি খেয়েছ?

— না। তোদের সাথে খাব বলে বসে আছি। যা অভ্র আর বৃষ্টি দুজনে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমার সব সাজাচ্ছি।

অভ্র আর বৃষ্টি একসাথে বলে উঠল,

— আচ্ছা।

ওরা দুজন যার যার রুমে চলে গেল। বৃষ্টি ড্রেস নিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে সে যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তখন তার চোখ গেল ফোনের দিকে। সে ঠিক করল রাতে একবার বাবাকে কল দিবে। তারপর বেরিয়ে গেল। সে গিয়ে দেখল মিসেস রায়া খাবার সাজাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর অভ্রও চলে এলো। তারপর মিসেস রায়া আর ওরা দুজন একসাথে লান্স করে নিল। খাওয়া শেষে মিসেস রায়া গোচ্ছিলেন। তখন অভ্র বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— বৃষ্টি আমার রুমে আয়। তোকে একটা জিনিস দেখাব।

— আচ্ছা।

অভ্রর কথামতো বৃষ্টি তার রুমে গেল। অভ্র মিসেস রায়ার রুম থেকে একটা বড়ো এলবাম নিয়ে এলো। তাতে অভ্র আর আয়নার ছোটবেলার ছবি। বৃষ্টি সেগুলো দেখছিল আর হাসছিল। তখনই অভ্র বলে উঠল,

— আচ্ছা বৃষ্টি তোর ছোটবেলার ছবি আছে?

— না। তবে স্কুলে থাকাকালীন কিছু ছবি আছে আমার ফোনে।

— তাহলে যা নিয়ে আয়।

— আচ্ছা।

বৃষ্টি একছুটে তার রুমে গিয়ে ফোন নিয়ে এলো। তারপর তার একটা ছবি বের করে অভ্রকে দেখাল। ছবি দেখে অভ্রর চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল। অভ্র অবাক হয়ে বলে উঠল,

— এটা তুই?

— হ্যাঁ।

— অসম্ভব। এটা তুই হতেই পারিস না।

— আরে না এটাই আমি।

— সত্যিই?

— হ্যাঁ।

— সত্যিই এটা তুই। কিন্তু…

— কি হয়েছে ভাইয়া? ভালো করে বলো তো।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে