অবেলায় তোমার আকাশে পর্ব-০৩

0
1600

#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_৩
#লেখিকা_N_K_Orni

সামনে নিজের ফুফিকে বসে থাকতে দেখে বৃষ্টি কিছুটা অবাক হলো। সে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,

— ফুফি তুমি?

তখন তার মনে পড়ে যে সে তো দরজা বন্ধ করে রেখেছিল। তাহলে তার ফুফি ভেতরে ঢুকল কিভাবে? সে তখন দরজা দিকে তাকাল। দেখল দরজা খোলা। সে তার ফুফি মিসেস রায়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— আমি তো দরজা লাগিয়ে রেখেছিলাম। তাহলে তুমি ভেতরে ঢুকলে কিভাবে?

বৃষ্টির কথা শুনে মিসেস রায়া হালকা হেসে বলে উঠলেন,

— দরজা ভেঙে।

বৃষ্টি অবাক হয়ে বলল,

— মানে?

— আমি আসার পরই সবটা শুনেছিলাম। তখন তোকে দেখতে রুমে আসি আর দেখি দরজা বন্ধ। তুই নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেললি না তো। সেই ভয়ে আমি ভাইয়াকে ডাকি। তারপর ভাইয়া এসে দরজা ভেঙে দেখে তুই ঘুমাচ্ছিস।

ফ্লাসব্যাক

মিসেস রায়া বাসায় এসে প্রথমেই ভাইয়ের রুমে যায়। রাদিব সাহেব বিষণ্ন মুখে বসে ছিলেন। বোনকে রুমে ঢুকতে দেখে তিনি ঠিক হয়ে বসেন। তারপর মিসেস রায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— তুই এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছিস?

মিসেস রায়া হাসি মুখে বলেন,

— আমার একমাত্র ভাতিজির বিয়ে। আর আমাকে তো তাড়াতাড়ি আসতেই হবে। নাহলে হয়?

মিসেস রায়ার কথা শুনে রাদিব সাহেব মলিন মুখে
বলে উঠলেন,

— আর বিয়ে!

মিসেস রায়া গিয়ে রাদিব সাহেবের পাশে বসলেন। তারপর অবাক হয়ে বলে উঠলেন,

— কি হয়েছে ভাইয়া? কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

— সমস্যা! অনেক বড়ো সমস্যা। আমার মেয়েটার কপালটাই খারাপ রে।

— কি হয়েছে ভাইয়া আমাকে পুরোটা বলো?

— বলছি। তাহলে শোন।

রাদিব সাহেব এবার মিসেস রায়াকে সবটা খুলে বললেন। সব শুনে মিসেস রায়া মাথায় হাত দিলেন।

— ওই মহিলা আসলেই বাজে। আমি তোমাকে আগেও বলেছিলাম। কিন্তু তুমি ভাইয়া এসব কিভাবে মেনে নিলে?

— ও তুই বুঝবিনা।

— আচ্ছা ভাইয়া বৃষ্টি কই? ওকে কোথাও দেখছি না? ও এখন কোথায় আছে?

— ও হয়তো ওর রুমে আছে। তুই গিয়ে দেখ।

— ওকে এভাবে একা রাখা ঠিক হয়নি। যদি কিছু করে ফেলে। নাহ্ আমি একবার ওর রুমে গিয়ে দেখি।

— আচ্ছা যা।

মিসেস রায়া এবার ওনার রুম থেকে বের হয়ে বৃষ্টির রুমের দিকে গেলেন। বৃষ্টির রুমের দরজা বন্ধ দেখে তিনি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি দরজায় নক করে বৃষ্টির নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু বৃষ্টির কোনো সাড়াশব্দ পেলেন না। তিনি এবার দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে কিছুটা জোরে জোরে বৃষ্টির নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। তবুও তিনি অপর পাশ থেকে কোনো শব্দ পেলেন না। এবার তিনি ভাইয়ের ঘরে ছুটে গেলেন। বোনকে ছুটে আসতে দেখে রাদিব সাহেব অবাক হয়ে বললেন,

— কি হয়েছে?

মিসেস রায়া হাপাতে হাপাতে বললেন,

— ভাইয়া বৃষ্টির রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। আমি অনেকবার ডাক দিলাম কিন্তু একবারও সাড়াশব্দ পেলাম না। তুমি প্লিজ একটু দেখ।

এই কথা শুনে রাদিব সাহেব আতঙ্কিত কন্ঠে বলে উঠলেন,

— এসব তুই কি বলছিস? চল তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি।

রাদিব সাহেব ছুটে মেয়ের রুমের সামনে গেলেন। তিনি বেশ কয়েকবার বৃষ্টিকে ডাক দিলেন কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলেন না। তিনি দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলেন। মিসেস রায়া বৃষ্টির কাছে গিয়ে দেখলেন বৃষ্টি ঘুমাচ্ছে। বৃষ্টিকে ঘুমন্ত অবাস্থায় দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। মেয়ে ঠিক আছে দেখে রাদিব সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। এবার তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মুখ নেই তার। মিসেস রায়া বৃষ্টির কাছে গিয়ে তাকে কয়েকবার ডাক দিলেন। এবার বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠলো।

বর্তমান

— এবার বুঝলি?

— হুম বুঝলাম। চিন্তা করো না আমি নিজের কোনো ক্ষতি করব না। যে আমার কথা না ভেবে নিজের মতো জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার জন্য আমি কেন সুইসাইড করব? ওসবে আমার কোনো ইচ্ছা নেই।

— এই তো ভালো মেয়ে। তুই ওর কথা ভুলে যা। হয়তো তোর জীবনে এর থেকেও বেটার কেউ আছে। তাই একে নিয়ে দুঃখ পাস না।

বৃষ্টি ছোট করে বলল,

— হুম।

— আচ্ছা ফুফি তোমার তো কালকে আসার কথা ছিল। তাহলে হঠাৎ আজকে চলে এলে যে?

— ভেবেছিলাম না বলে এসে তোকে সারপ্রাইজ দেব। কিন্তু এখানে এসে আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।

শেষের কথাটা কিছুটা অন্য রকম স্বরে বললেন মিসেস রায়া। বৃষ্টি মিসেস রায়াকে জিজ্ঞাসা করল,

— আচ্ছা ফুফি আয়না আসেনি?

— না রে। ওর সামনে পরীক্ষা। তাই আর ওকে আনিনি।

— ওহহ।

( আয়না হলো বৃষ্টির ফুফাতো বোন। )

— আচ্ছা তুই বস। আমি তাহলে এখন আসি।

— হ্যাঁ ফুপি তুমি যাও। জামাকাপড় বদলে ফ্রেশ হও। আমার জন্য তোমাকে কতো কষ্ট করতে হলো।

বৃষ্টির কথা শুনে মিসেস রায়া হালকা হেসে বলে উঠলেন,

— বোকা মেয়ে। আমি কই কষ্ট করলাম। আচ্ছা এখন আসি।

বলেই মিসেস রায়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। বৃষ্টির মাথা বাঁকা করে ওভাবেই বসে রইল।

————–

বাইরে সন্ধ্যা নেমেছে। পশ্চিম আকাশে সূর্যের অর্ধ লাল আভা ফুটে উঠেছে। হালকা হলুদ আলো প্রকৃতিতে বিরাজ করছে। বৃষ্টি তার রুমের সাথে থাকা বারান্দার দরজার মাথা ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তখনই তার চোখ পড়ল বাসার গেটের দিকে। তার ছোট বোন সায়েরা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকছে। তার মুখে লেগে আছে অন্য রকম হাসি। বৃষ্টির আর বুঝতে বাকি রইল না সায়েরা এতোক্ষণে সবটা জেনে গেছে। বিষয়টা বুঝতে পেয়ে বৃষ্টি একটা শুকনো হাসি দিয়ে তার রুমে চলে গেল।

সায়েরা তার বাড়ির ভেতরে ঢুকল। তার চোখ দুটো এখন শুধু তার মাকে খুঁজছে। সে কিছুটা বলে উঠল,

— আম্মু! আম্মু! তুমি কোথায়? তাড়াতাড়ি এসো। আমি এসে গেছি।

মিসেস সানিয়া রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। মাকে দেখে সায়েরা দৌড়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই বলতে লাগল,

— উফফ আম্মু আমি জিতে গেছি। অবশেষে আমি আসিফকে পাচ্ছি। আমার যে কি খুশি লাগছে!

মিসেস সানিয়া এবার মেয়েকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলতে লাগলেন,

— আচ্ছা আচ্ছা। এবার চল রুমে চল।

— হুম।

মিসেস সানিয়া এবার সায়েরাকে তার রুমে নিয়ে গেলেন। নিজের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে মিসেস রায়া এই পুরো বিষয়টা খেয়াল করলেন। ওরা চলে যেতেই তিনি রুমে ফিরে এলেন। তিনি বিছানায় বসে ভাবতে লাগলেন,

— আচ্ছা আসিফের আম্মু ওই রিপোর্ট পেল কোথায়? উনি কি বৃষ্টির কোনো চেকআপ করিয়েছেন। কিন্তু উনি তো বৃষ্টিকে নিয়ে কোথাও বেরই হননি। তাহলে কি আসিফ করিয়েছে? কিন্তু আসিফের যদি বিয়ের ইচ্ছা না থাকত তাহলে তো আর সে বাবা মাকে বাসায় আনতো না। আচ্ছা ওই বাজে মহিলাটা করায়নি তো? হতেও পারে? হয়তো বৃষ্টি এই রিপোর্ট ওইই আসিফের মাকে দিয়েছে কিন্তু করালো কখন এটাই বিষয়? ওর মেয়েটাও আবার করাতে পারে? আচ্ছা ওই সায়েরা তখন কি যেন বলছিল? হ্যাঁ মনে পড়েছে। ও নাকি জিতে গেছে। অবশেষে আসিফকে পাচ্ছে। এসব কথার কি মানে? এসবের পেছনে হয়তো ওই মা মেয়েরই হাত আছে।

————–

বারান্দায় বসে রাতের আকাশ দেখছে বৃষ্টি। রাতের আকাশে অসংখ্য তারা ঝলমল করছে। বৃষ্টি সেই তারাগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

— ছোটবেলায় বাবা বলত মাম্মাম নাকি স্টার হয়ে গেছে। আমিও বিশ্বাস করে তারাদের সাথে কথা বলতাম। কিন্তু এখন আমার আর বিশ্বাস হয় না। আমার বারবার মনে হয় মাম্মাম বেঁচে আছে আর একদম ঠিক আছে। আচ্ছা মাম্মাম তুমি কি সত্যিই স্টার হয়ে গেছো? কেন হলে মাম্মাম? তোমাকে ছাড়া যে এই পৃথিবীতে থাকা খুব কঠিন।

রাদিব সাহেব মেয়েকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিলেন। রুমে দাঁড়িয়ে মেয়ের কথা শুনে তার চোখের কোণে পানি চিকচিক করতে লাগল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে