অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
1413

#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা — [৮]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
______________________

-‘ তোমার হাতে এই ঘড়িটা? এটা তো আগে দেখিনি আপু, নতুন কিনলা বুঝি? ‘

মিরার আকস্মিক প্রশ্নে ভড়কে ওঠে তামান্না। মনের মধ্যে সন্দেহের আলাপন জেগে ওঠে দৃঢ়ভাবে। মনের ভাবনা মনে রেখে ওষ্ঠদ্বয়ে হাসির রেখা ফুটিয়ে জবাব দিলো,

-‘ হ্যাঁ এটা তো নতুনই। এই পরশু দিন মাত্র কিনলাম মিরা। কেনো বলোতো?’

-‘ আসলে আপু ঘড়িটা আমারও খুব পছন্দ হয়েছে তাই আর কি।’

-‘ ওহ্।’

তামান্না নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হতেই মিরা মনের আনন্দে নির্জনকে ডেকে নিয়ে ঘরে চলে যায়! অবশেষে সে যা ভেবেছে সেটাই তাহলে সঠিক? এখন তাহলে উপযুক্ত প্রমানের অপেক্ষা তাহলে বোঝা যাবে এটা কি তার নিছক মনের স’ন্দে’হই বটে নাকি যা ভাবছে তা-ই।

🥀🥀🥀

-‘ মা তুমি একদমই চিন্তা করো না আমি আমার উদ্দেশ্য সফল হবো খুব তাড়াতাড়ি। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই বাড়িতে এখানে এসছি সেটা খুব তাড়াতাড়িই পূর্ন হবে কিন্তু তার আগে তুমি যা কান্ড করেছো একবার তোমাকে দেখতে আসছি আমি!’

তামান্নার রুম ক্রস করার সময় এই কথাগুলো শুনলাম একটু আগে। কই এই যে সাতদিন আগে মাত্র ওদের বিয়ে হলো তামান্না যখন এই বাড়িতে বিয়ে করে আসলো ও তো বলেছিলো ও নাকি রাসেলকে ভালোবেসে এই বাড়িতে এসেছে তাহলে কোন উদ্দেশ্যের কথা বলছে ও? ভাবতেই অবাক লাগছে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েও ওর কোনো উদ্দেশ্য আছে অথচ সেটা আমি কি-না জানিই না! বলার হলে নিশ্চয়ই বলতো কিন্তু ও যখন বলেনি তখন আমাকেই সবটা জেনে নিতে হবে দেখছি। হাই স্কুল লাইফ আর কলেজ অব্দিও তামান্নাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো অথচ ওর বাসাই কোনোদিন আমাকে নিয়ে যাওয়া তো দূর কখনো ওর মায়ের চেহারাটাও আমাকে দেখতে দেয়নি। ও এখানে বাসা ভাড়া করে থাকতো বলদো ওর মা গ্রামে একলা থাকে। কিন্তু ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে না ওর মা গ্রামে একা থাকে! অথচ ও এক্ষুনি ফোনে ওর মা’কে বললো আসছি তার মানে ও আগে মিথ্যা বলেছে আমায়! শুধু তা-ই নয় ওর এই বাড়িতে আসার একটা উদ্দেশ্যও আছে যেটা কি-না আমরা কেউই জানি নক! সত্যি টা জানার জন্য তামান্নার পিছু নিলাম!

তামান্না বড়ো রাস্তার মোড় ছেড়ে সামনে একটু এগিয়ে গেলো সেখান থেকে অটোয় উঠলো আমিও ওর পিছু পিছু গেলাম। তারপর কিছু দূর এগোতেই একটা ব’স্তির ভেতর ঢুকলো তামান্না আমিও পিছু পিছু গেলাম। বস্তির ভেতর ঢুকলেও বস্তির ঘরগুলো থেকে পাঁচ মিনিট দুরত্বে একটা ভা’ঙাচোড়া ঘর আছে সেখানে গিয়ে ঢুকলো তামান্না!

আমিও মনের কৌতুহল মেটাতে সেই ভা’ঙাচোরা ঘরটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটা ছোট্ট জানলআ আছে সেইখানটায় গিয়ে দাঁড়ালাম ওদের কথা শোনার জন্য

-‘ তার মানে তুমি মি’থ্যা বলে আমাকে এনেছো এখানে! মা তুমি তো জানো তোমাকে কতোটা ভালোবাসি আমি আর তুমি সেটার সুযোগ নিয়ে মি’থ্যা বলে এখানে কেনো আনলে বলোতো?’

-‘ দেখ তামান্না মা আমার বোঝার চেষ্টা কর। তুই যা করছিস তা অ’ন্যা’য়। যা হবার তো হয়েই গেছে তাই না বল? এখন আর এসব বলে কি কোনো লাভ হবে আদৌ? এর চেয়ে বরং তুই মন দিয়ে সংসার কর এতেই আমি খুশি। ‘

-‘ তুমি খুশি? হাহ্! আমি কি কিছুই বুঝি না মা? ঠিক কতোটা খুশি নিয়ে তুমি আমাকে মানুষ করেছো? আর কি বললে যা হয়েছে তা হয়েছেই ভুলে যাবো? কখনোই না!’

এবার তামান্নার মা আর কিছু বললেন না চৃপ করে রইলেন! আমি এখনো ওদের কথা শুনে যাচ্ছি এই মধ্যবয়স্ক মহিলাটিই তামান্নার মা তাহলে! যেটা সন্দেহ করে এসেছি সেটাই ঠিক। মানে তামান্না আমাকে মিথ্যা বলছিলো ওর মা গ্রামে থাকে! জানিনা আর কতো কি শুনতে পাবো ভাগ্যিস এখানে এসেছিলাম তামান্নার পিছু পিছু। দেখি আরো কি বলে।

-‘ তো নিজের সুখের সংসার টা নষ্ট করে দিবি তুই? রাসেল তো ভালো ছেলে ও যদি জানে এসব তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছিস একবারো?’

তামান্নার মায়ের কথায় চমকে গেলাম! মানে এসবের ভেতরে রাসেলও জড়িয়ে আছে। নিশ্চয়ই কোনো বড়ো সড়ো প্ল্যান লুকিয়ে আছে। তামান্নাকে এমনি এমনি বললে ও মিথ্যা বলবে তাই প্রমান হিসাবে ভিডিও করে নিই।

-‘ সংসার তো দূর! ভালোবাসা? কিসের ভালোবাসা হ্যাঁ? মা রাসেল শুধু মাত্র আমার খেলার একটা গুটি মাত্র বুঝেছো? ওকে না আমি কোনোদিনও ভালোবেসেছি আর না ভালোবাসবো! আমার তো শুধু উদ্দেশ্য একটাই যারা তোমাকে, আমাকে এই ক’রুন অবস্থা করেছে তাদের সুখ নষ্ট করা আর দেখো অলরেডি আমি সেখানে কতোটা এগিয়ে গেছি পৌঁছে গেছি মঞ্জিল ভিলায় যেখানে মিজান সাহেবের দুই মেয়ে মিরা আর তানহা আছে!’

-‘ ছেড়ে দে ওদের! আর কতো নিচে নামবি ? কম ক্ষতি তো করিস নি ওদের দুই বোনের বল? তানহার কলেজে যে বদ’নাম করেছিস মিরার উপর যে মিথ্যা তকমা লাগিয়েছিস এটাই যথেষ্ট আর কিচ্ছু করতে হবে না তোকে। আর যে তোকে দূরে ঠেলে দিয়েছে অস্বীকার করেছে তার জন্য কিছু করিস না আর!’

এতোক্ষণ ধরে সবটা চুপচাপ সহ্য করে শুনে এলেও এবার যেনো ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে গেছে আমার! তামান্নার মায়ের কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তামান্নাই সবকিছু করেছে! যাকে নিজের বোন ভেবেছি, যার সঙ্গে এতো বছর রয়েছি ছায়ার মতন আর সে কিনা আমার এতো বড়ো ক্ষতি করলো! মানতেই পারছি না এই সব কিছুর মূলে তামান্না রয়েছে! কিন্তু মা’থায় প্রশ্ন একটাই ও কেনো এরকম করলো?

-‘ এই যে এতোগুলা বছর আমরা যে কষ্টে রয়েছি সেগুলোর কি কিছুই দাম নেই মা? বড়ো হবার আগ পর্যন্ত কতো মানুষের কতো কটু কথা শুনেছি সেটা কেবল মাত্র ওই তানহা আর তানহার বাবার জন্য! এগুলো কি এতো সহজে ভূলে যাবো? কখনোই না! যে মানুষটা আমাকে জন্ম দিয়েছে, যে মানুষটা আমার বাবা তাকে একবারো পর্যন্ত বাবা বলে ডাকতে পারিনি, বাবার ভালোবাসা কি তা অব্দি এখনো বুঝতে পারিনি। সেই মানুষগুলোকে ছেড়ে দিবো এত্তো সহজে না! উনি উনার পরিবারের জন্য এতোকিছু করেছে তো ঠিকআছে সেই পরিবারকেই সুখে থাকতে দিবো না আমি! তারপর দেখো কি হয়?”

মনে হচ্ছে এখুনি গিয়ে তামান্নাকে ধরে জিগেস করি সবটা! কিন্তু ওর মনে নিশ্চয়ই কোনো ফ’ন্দি আছে যার জন্য ও এতোকিছু করেছে। ভরসা হচ্ছে না ওর উপর। আমি এখানে থাকলে নির্ঘাত আমার ক্ষ’তি করবে! এতোটা ঝুঁ’কি নিয়ে এখানে থাকাটা নিরাপদ বোধ করলাম না একা একা।

-‘ আয়মান কোনো প্রশ্ন করবেন না। আপনি এক্ষুনি বড়ো রাস্তা ছেড়ে যে ব’স্তিটা আছে সেখানে একটা ভা’ঙা বাড়ি আছে কোনো কথা না বলে যতো দ্রুত সম্ভব চলে আসুন।’

তানহার এরকম ফোনকলে আয়মান স্থির থাকতে পারলো না! হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে। মনের ভেতর একটাই প্রশ্ন কি এমন ঘটনার সম্মুখীন হলো তানহা?

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে