Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"অন্তরালের সত্যিঅন্তরালের সত্যি পর্ব -০২ও০৩

অন্তরালের সত্যি পর্ব -০২ও০৩

#অন্তরালের সত্যি
#নুরুন্নাহার তিথি
#পর্ব-২+৩

দাদার রাগের পরিসীমা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা। দাদীকে তো দাদীর ভাই মানিক দাদা শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু তারা দুজনেই কেউ কিছুই শুনতে চাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে ফুফি, ফুফা ও তাদের চার বছর বয়সি ছেলে সাকিব ভাইকে নিয়ে চলে এসেছেন। ফুফি চারমাসের প্রেগনেন্ট। এদিকে বড় কাকা আমার বাবাকে বললেন,

–ভাই। আপনি তো জানতেন অর্পা (দ্বিতীয় স্ত্রী) আমাকে চার বছর আগেও বিয়ে করতে চেয়েছিল। তখন আমি অর্পাকে টিউশন পড়াতাম। ইন্টারের ছাত্রী ছিল তখন সে। সে আমাকে বিয়ে করবার জন্য তখন অনেক বলেছিল। আমি তাকে ছাত্রীর নজরে দেখতাম তাই বারবার মানা করতাম। এরপর তো আপনার বন্ধুর বোনের সাথে আব্বা-আম্মা আমার বিয়ে ঠিক করলেন। আমার তখন অন্যত্র কোনো পছন্দ ছিলোনা বিধায় আমি সানজিকে বিয়ে করি। আপনাদের জানানো হয়নি যে অর্পা আমাকে সানজির সাথে বিয়ের দিনও বারবার ব্ল্যাকমেইল করতেছিল। আমি যাতে সানজিকে বিয়ে না করে অর্পাকে বিয়ে করি।

আমার বাবা গম্ভীর হয়ে বললেন,
–সেসব তখনকার কথা। যা পুরাতন হয়ে গেছে। অর্পার আব্বার সাথে আমাদের আব্বার জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল আর অর্পা মেয়েটা সংসারি ছিলনা বিধায় আব্বা তাকে পুত্রবধূ করতে নারাজ ছিলেন। অর্পার আব্বা আমাদের আব্বাকে অনেক হুমকিও দিয়েছিলেন সেসময়। তোকেও আমি বারবার মানা করেছিলাম অর্পাকে টিউশন করানোর দরকার নেই। তুই তো শুনিস নি।

বাবা ও বড় কাকার কথার মাঝে দরজায় ধামধুম শব্দ হতে থাকে। আমার দাদী নিজেই সেই শব্দের সৃষ্টি করছেন। বাবা দরজা খুলে দেওয়ার পর দাদী আবারো বড় কাকাকে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করেন। দাদী বড় কাকাকে মারছেন আর নিজেও কাঁদছেন। তিনি বলছেন,

–সানজির ভাই ফোন করে আমাদের অকথ্য গা’লিগা’লাজ করলো শুধুমাত্র তোর জন্য। কেনো আমরা তার গা’লিগা’লাজ শুনবো? তোর বড় ভাইয়ের সম্মানটাও তুই রাখলি না। সব ধুলিস্যাৎ করে দিলি। তারা আসছেন পুলিশ নিয়ে। আমরা কেউ তোর পক্ষে থাকবো না এটা মনে রাখিস। তোর অন্যায়ের সময় যেমন আমরা কেউ তোর পাশে ছিলাম না তেমনি শাস্তিতেও থাকবো না। ভালো কাজে অনুপ্রেরণা আমরা দিলেও খারাপ কাজে সবসময়ের মতো নিরুৎসাহিত করেছি। আজ তোর জন্য চরম শাস্তির দিন।

বড় কাকা তার মায়ের দুই পা জড়িয়ে কাঁদছেন। দাদীর ভাই মানিক দাদা ও আমার বাবা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার বাবা দাদীকে বললেন,

–আম্মা একটু আমার সাথে আসেন। কিছু কথা আছে।

দাদী শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বাবা গিয়ে দাদীকে ধরে সেই রুমের ব্যালকনিতে নিয়ে আসলেন। বাবা বললেন,

–আম্মা। অর্পা রাশেদকে জোর করে বিয়ে করেছে। সম্পূর্ণ দোষ রাশেদের না। আপনি একটু আব্বাকে বুঝাইয়েন। রাশেদ তো আপনারই সন্তান। সে অন্যায় করেছে কিন্তু সেটা ইচ্ছাকৃত নাকি বাধ্য হয়ে তা বিবেচনা করলে ভালো হয় আম্মা।

আমার দাদী গলার স্বর উঁচু করে বলেন,
–যেভাবেই করুক সে করেছে তো! তাকে বারবার নিষেধ করা স্বত্বেও সে ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। সবতো জানতো সে। অর্পার আব্বার সাথে তোদের আব্বার বিরোধ ও অর্পার মায়ের বাড়াবাড়ি। সব জেনে শুনে কেনো অর্পাদের বাড়িতে যেতো? অর্পার পড়ার জন্য কি দুনিয়ায় আর শিক্ষক ছিলো না?

আমার বাবা আর কোনো কথা বললেন না। এটাতো ঠিকই বলেছে, আরো কতো শিক্ষক তো ছিল। তাও কেনো বড় কাকাকেই উনাকে পড়াতে যেতে হতো!

_______

সন্ধ্যার পর ডেমরা থেকে সানজি কাকির বাবা ও ভাইয়েরা এলেন। সানজি কাকিকে তারা আনেননি। বসলো বিচার সভা। মা পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার সাথে মায়ের শাড়ি ধরে আমি লুকিয়ে ছিলাম। বসার ঘরের পরিবেশ অতীব গম্ভীর। সানজি কাকির ভাই মাহাদী মামা বললেন,

–দেখ মুরাদ। প্রথমে যখন তোদের বাড়ি থেকে সানজির জন্য বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল তখন আমি কিঞ্চিত পরিমানও রাজী ছিলাম না। এমন স্থায়ী ঘর-বাড়িহীন অজপাড়াগাঁয়ে থাকে তারউপর যৌথ পরিবারে আমার বোনের বিয়ে দিতে আমি, আম্মা ও বড় আপা নারাজ ছিলাম। কিন্তু বড় দুলাভাই ও আব্বা রাজী ছিলেন। আমার এমএ পাশ বোনের জন্য ঢাকার সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল। কিন্তু আব্বার যে কোনো তোর ভাইকেই পছন্দ হয়েছিল বুঝলাম না। যখন জানতে পারলাম রাশেদ তোর ভাই তখন আর গুরুতর আপত্তি করিনি। তোর সাথে আমার ২০ বছরের বন্ধুত্ব সেই ক্যাডেট কলেজে ক্লাশ সেভেন থেকে। তোর স্বভাব চরিত্র বরাবরই প্রশংসা যোগ্য। তাই আব্বা ও দুলাভাই এটা প্রথম থেকে জানতেন বিধায় তারা তোর ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলেন। আমিও পরে জানার পর আপত্তি করিনি। কিন্তু হলোটা কি? আমার বোনের সুখ হলো কোথায়? সেইতো নিজের রঙ দেখিয়েই দিলো! মুরাদ ক্যাডেটে পড়েছে বলে আদব-কায়দা জানে। ক্যাডেটে পড়েছে বলে আজ সে ভালো চরিত্রের। সব হচ্ছে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা। আর রাশেদ তো এই আজেবাজে টেক্সটাইলে পড়েছে। কতো আজেবাজে মানুষের সাথে মিশেছে কে জানে! চরিত্রের ঠিক নেই।

আমার বাবা তার বন্ধুর এহেনো অপমানজনক মন্তব্য শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু আমার দাদী বাবকে হাত ধরে থামিয়ে দিলেন। বাবা বরাবর স্ট্রিক্ট পারসোনালিটির মানুষ। বাবা যে কলেজের লেকচারার সেখানে স্টুডেন্টদের প্রিয় শিক্ষক আর সবার প্রিয় তিনি কারন বাবা নিয়ম শৃঙ্খলা সব কিছু মানেন এবং নিজের আদর্শে অটল। ক্যাডেট কলেজ গুলো খুবই মানসম্মত ও নিয়ম-শৃঙ্খলার ভিতরে ছাত্রদের রাখেন। এদের সময় জ্ঞান প্রখর। আমার বাবা ছিলেন তার ব্যাচের নজরুল হলের ক্যাপ্টেন। আর মাহাদী মামা সরোয়ার্দি হলের ছাত্র তবে তিনি ক্যাপ্টেন ছিলেন না। আমার বাবা ছাড়া বাকি যত হলের ক্যাপ্টেন ছিল এবং আছেন তারা সবাই আর্মিতে আছেন। বাকিরাও আর্মিতে আছেন সেটা যার যার ইচ্ছেতে। আমার বাবা আর্মি ট্রেনিং নিয়েও শেষ সময়ে জয়েন করেননি।

এবার আমার দাদা সানজি কাকির আব্বার উদ্দেশ্যে বললেন,
–দেখেন বিয়াই। রাশেদ যতোই বিয়ে করুক না কেনো সানজিই থাকবে এই বাড়ির মেঝোবউ। আমার ছেলে বলে যে আমি রাশেদকে ছাড় দিবো তা কিন্তু কখনোই হবে না। আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সানজি মা এই বাড়িতে থাকতে পারবে মেঝোবউ এর মর্যাদাতে। আমার বড় ছেলে বা আমার ছোট ছেলে কখনোই আমার এই সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করবে না তা আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি। আমার বাড়ির বউ ও নাতিকে আমরা মাথায় করে রাখবো। রাশেদের কখনোই তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এই বাড়িতে জায়গা হবেনা।

সানজি কাকির বাবা বললেন,
–বিয়াই সাহেব দেখন, আপনার ছেলেই যদি না থাকে তাহলে আমার মেয়ের এই বাড়িতে কি মূল্য? একদিন না একদিন সে আপনাদের গলগ্রহের শিকার হবেই। আমি আমার মেয়েকে এখানে রাখবো না।

আমার দাদা বোঝাতে চাইলেন,
–আমার নাতি তার দাদাবাড়িতে তার মাকে নিয়ে থাকবে। আমার ছেলের দরকার নেই।

মাহাদী মামা উঁচু স্বরে বললেন,
–আরে রাখেন আপনার নীতিকথা! আপনি এখন নিজের ছেলের বিপক্ষে কিন্তু একদিন না একদিন ঠিক মাফ করে দিবেন তাকে। আপনার মনগড়া কথাতে আমরা গলছি না। আমার ভাগিনাকে আমরা ঢাকাতে নিয়ে যাবো। সামনের মাসে আমরা মিরপুরের ফ্লাটে ট্রান্সফার হবো। আমার ভাগিনা এই অজপাড়াগাঁয়ে মানুষ হবেনা। ওকে আমরা ঢাকার নামকরা স্কুলে পড়াবো।

তখন আমার ফুফা বললেন,
–ভাই সাহেব। একটু বুঝে কথা বলিয়েন। রাশেদ ভাইয়ের অন্যায়ের শাস্তি আপনি আপনার বোন, ভাগিনা ও এই পরিবারকে দিতে পারেন না। আমার শ্বশুর এক কথার মানুষ। তিনি যা বলেন তাই করেন।

মাহাদী মামা এবার তাচ্ছিল্য করে বললেন,
–খুব তো এক কথার মানুষ! তাহলে সে যে আমার বোনের বিয়ের সময় কথা দিয়েছিলেন, আমার বোনকে মেয়ের মতো রাখবেন। সেই কথার বরখেলাফ হলো কেনো?

আমার দাদী আমার বাবার ও ফুফির হাত খিঁচে ধরে আছেন। ফুফি তার মায়ের রাগ ও কস্ট বুঝতে পেরে বললেন,
–যতোই বলেন না কেনো, আপনার বোন মানে সানজি ভাবী তো এই বাড়ির বউ আর শাহাদাত এই বাড়ির আমার আব্বা-আম্মার নাতি। এই বুড়ো বয়সে তাদের কস্ট দিবেন না। ছেলে তো তাদের মুখ ডুবিয়েছেই। এখন আদরের নাতিকে কেড়ে নিবেন না। একটু বোঝার চেষ্টা করুন।

আমার দাদা এবার এমন একটা কথা বললেন যা শুনে উপস্থিত সকলে থমকে গেলেন। তিনি বললেন,…

চলবে ইনশাআল্লাহ,
কেমন হয়েছে জানাবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

#অন্তরালের_সত্যি
#নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৩
আমার দাদা এবার এমন একটা কথা বললেন যা শুনে উপস্থিত সকলে থমকে গেলেন। তিনি বললেন,
–আমি আমার মেঝো পুত্র সৈয়দ রাশেদউদ্দিনকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষনা করলাম। আমার স্থাবর-অস্থাবর কোনো কিছুর প্রতি তার কোনো পৈত্রিক অধিকার থাকবে না। আমার ও আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পর সে আমার কবরে এক মুঠো মাটিও দিতে পারবে না।

দাদার এরকম হৃদয়হীন সিদ্ধান্তে উপস্থিত সকলে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। দাদী সেখান থেকে উঠে গেলেন চোখ মুছতে মুছতে। আমার মা কিছুক্ষন আগেই অবস্থা বেগতিক দেখেই আমার নানাকে ফোন করেছিলেন বাবার নাম্বার থেকে। তখনো আমার মাকে নিজস্ব মোবাইল দেওয়া হয়নি। বাবার তিনটা ক্যামেরা ফোনের মধ্যে একটা মাকে ব্যাবহার করতে দেওয়া হতো যাতে মা বাবার সাথে কথা বলতে পারে। প্রযুক্তি তখনো অতোটা উন্নতি না হলেও ক্যামেরা ফোনের যুগ চলে। বলতে গেলে ফেসবুক তখন নতুন এসেছিল মাত্র।

আমার নানাবাড়ি বেশি দূরে ছিল না। পায়ে হেঁটে আধাঘণ্টাতে যাওয়া যায় আর কোনো যানবাহন ব্যাবহার করলে আরো কম সময়। নানা বিশ মিনিটের মধ্যে বড় মামাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে পৌঁছান। তখনো বড় কাকা দাদার পায়ে ধরে বসেছিল কিন্তু আমার দাদা তার সিদ্ধান্তে অনড়। আমার দাদা আরো বলেন,

–যদি রাশেদ অর্পাকে ছেড়ে সানজিকে নিয়ে আসে তবে রাশেদকে মাফ করার কথা ভাববো।

সানজি কাকির বাবা তখন গর্বের সাথে বলেন,
–আমার মেয়ে শিক্ষা-দীক্ষাতে কম না। আর আমি ও মাহাদী আমাদের সানজিকে নাতি সহ রাখতে পারবো। আপনাদের দয়ার কোনো দরকার নেই। আমার মেয়ে এখানে থাকলে বাঁচবে না। আপনারা মা’নুষ মনে করেন না কাউকে। আমি বড় ভুল করেছি ঘটকের দেয়া তথ্যকে বিশ্বাস করে। ঘটক অর্ধেক সত্য ও বাকিটা মিথ্যাই বলেছিল তা তখন বুঝিনি। আমার মেয়ে এই বাড়ি আর মাড়াবে না।

আমার নানা সানজি কাকির বাবাকে বোঝাতে চাইলেন,
–দেখেন বিয়াই সাহেব। মেয়ে শুধু আপনি দেননি। আমিও আমার ছোট মেয়েকে এই বাড়িতে বিয়ে দিয়েছি। আমার মেয়ে কখনো আমার কাছে কিংবা তার আম্মার কাছে শ্বশুর-শাশুড়ির নামে বা অন্যকারো নামে কটু কথা বলেনি। আমার মেয়ে আপনার মেয়ের মতো এমএ পাশ না হলেও সে ডিগ্রী পাশ। বেয়ানের অবাধ্য হয়নি আর না জামাইয়ের অবাধ্য হয়েছে। আমার মেয়েকে তারা যেমন নিজের মেয়ের মতো আদর ও শাশন করেছে তেমনটাই আপনার মেয়েকেও। কিন্তু আপনি সেটাকে অ’ত্যাচার বলে পারেন না।

আমার নানাকে আমার ফুফি থামিয়ে বলেন,
–তালোই, আপনি কি আর বলবেন তাদের। আজ বড় ভাবী আপনাকে কিছু না বললেও আমি বলবো। আমার মা বড় ভাবীকে কখনো জোর করে বলেননা সব কাজ করতে। আমার মা ও বড় ভাবী মিলে ঘরের কাজ করেন। কিন্তু আমি যখনি এখানে আসি আর যদি ভাগ্য করে মেঝো ভাবীকে এই বাড়িতে পাই তাহলেই দেখি যে সে শুধু তার ছেলেকে খাওয়ানো আর নিজের বিছানা ও সোফা গুছানো ও নিজের জামা-কাপড় ধোঁয়া ছাড়া কিছুই করেন না। মেঝো ভাবী নাকি ছেলে সামলিয়ে আর পারেন না। আশ্চর্যের বিষয় আমার বড় ভাবীর কোলে ৩ বছরের তিহা ও ১ বছরের তারিন। আর শাহাদাত তো তিহার ৯ মাসের ছোট মাত্র। বড় ভাবী যদি তার দুই বাচ্চা সামলিয়ে ঘরের কাজ করতে পারে তাহলে মোঝো ভাবী কেনো পারবে না? শাহাদাত পেটে আসার আগে মেঝো ভাবী বাপের বাড়িতে ১মাস থেকে এখানে ১৫ দিন থাকে এমন। এরপর মেঝো ভাবী যখন প্রথমবার প্রেগনেন্ট তখনো সে তার বাবার বাড়িতে ছিলেন। প্রেগনেন্সি ১০ মাস ছিল তার। সেটার ৯মাস সে তার বাবার বাড়িতেই ছিলেন। এরপর শাহাদাতের জন্মের ৪ মাস পর মেঝো ভাবী এই বাড়িতে আসেন। টানা এক বছর সে তার বাবা বাড়িতে থাকলেন। এরপর যে আরো কতো গেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু বড় ভাবী তার প্রেগনেন্সির মাত্র ২ মাস তার বাবা বাড়ি ছিলেন। আর তারিনের বেলায় তো আরো কম। তাহলে আপনিই বলেন, আমার আম্মা কোনদিক দিয়ে মেঝো ভাবীকে অত্যাচার করলেন? আসলে মেঝো ভাবী তার সাড়ে তিন বছরের বিবাহিত জীবনে এক বছরও শ্বশুর বাড়িতে থেকেছেন কিনা তাও সন্দেহ।

আমার নানা সবটা শুনলেন। সানজি কাকির ভাই এতোক্ষন ফুফির কথার মাঝে কথা বলতে চাইছিলেন কিন্তু আমার ফুফা তাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলেন। এবার মাহাদী মামা বললেন,

–সবার সাথে সবার তুলনা কেনো দিচ্ছেন? আমার বোন শিক্ষিতা। সে ঘরের কাজের জন্য বা শ্বশুরবাড়ির ফাই-ফরমাশ খাটতে আসেনি।

ফুফি তাচ্ছিল্য হেসে বললেন,
–তাহলে একটা ঘরজামাই কিনে নিতেন। আমার মেঝো ভাই নিতান্ত চুপচাপ স্বভাবের বলে আপনার বোনের এসব মেনে নিয়েছেন। কিন্তু আপনারা যার রেফারেন্স দেখে আপনার বোনকে বিয়ে দিয়েছেন! তার বউ যদি সানজি ভাবী হতো তাহলে কবেই লা’ত্থি দিয়ে বের করে দিতো। আমার মেঝো ভাইয়ের সবচেয়ে বেশি দোষ। সে মানুষের কথাতে গলে যায়। বাড়ির বউ হয়ে বৃদ্ধা শাশুড়িকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিজে আরামে ঘুমাবে! আরে ভাই! আপনি নিজেই ভাবেন, আপনার বউ যদি এমন হতো তবে কি করতেন? বছরের পর বছর বাপের বাড়িতে পরে থাকলে কি করতেন? আপনার বোন শাহাদাত হবার আগে চাকুরী করতো কিন্তু শাহাদাত হবার পর সে স্বেচ্ছায় চাকুরী ছেড়েছে। আমার আম্মা তাকে চাকুরী ছাড়তে বলেননি। কারন আমার আম্মা আমাকেও শিক্ষিতা করেছেন। আমি নিজে ডিপ্লোমাতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। আমার ফুফু যা কস্ট করেছেন তার শ্বশুরবাড়িতে সেইটা যাতে আমাকে করতে না হয় তাই আমাকে তিনি নিজে পড়ালেখাতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমিও শিক্ষিতা। আমিও চাকুরী করতাম আমার বড় ছেলের জন্মের আগে। আমি তো সারা বছর বাপের বাড়িতে পরে থাকিনা! সাকিবের জন্মের ৭ দিন আগে বাপের বাড়ি এসেছিলাম। এরপর সাকিবকে চার মাসে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেছিলাম কারন আমার অতিরিক্ত মেদের কারনে ও সিজারের কারনে আমি আমার ছেলেকে নিজে পালতেও পারিনি। বড় ভাবী তখন প্রেগনেন্ট প্রথমবার। তারপরেও সে আমার ছেলেকে দেখে শুনে রাখছেন। এখন বলেন, আপনাদের ভাষ্যমতে যদি মেঝো ভাই ইচ্ছা করেই! দ্বিতীয় বিয়ে করে তবে আপনার বোনের কোনোই দোষ নেই? আমি বলছি না উনি বিয়ে করে ভালো করেছেন।

(খারাপ ভাবে নিবেন না। যা বলা হচ্ছে সবটা ২০০৪ সালের ঘটনা। তখনকার পরিবেশ কেমন ছিলো সেটা ভেবে মন্তব্য করবেন।)

মাহাদী মামা এর প্রতিউত্তর করলেন না। এদিকে আমার নানা দাদকে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে বুঝিয়েছেন অনেক কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি দাদার সিদ্ধান্তে।

সানজি কাকির বাবা বললেন,
–আমি আমার মেয়েকে এই পরিবারে আর পাঠাবো না। এই পরিবারের সাথে সমস্ত সম্পর্ক শেষ।

আমার দাদা তখন অন্যরুম থেকে সেখানে এসে বললেন,
–আপনাদের এতো বলার পরেও যখন শুনলেন না তাহলে সানজিকে জিজ্ঞাসা করবেন তার কি মত। আমার ছেলের সাথেই যেখানে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম সেখানে আপনার মেয়ে একবার মানা করলে আমরা আর সম্পর্ক রাখবো না।

চলে গেলেন সানজি কাকির বাবা ও ভাই। বড় কাকা তখনো ফ্লোরে বসে মাথা নিচু করে কাঁদছেন। আমার দাদা তখন তাকে ডাকলেন,

–রাশেদ।

বড় কাকা এবারো দাদার পা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
–বিশ্বাস করেন আব্বা। আমি যা করেছি ইচ্ছা করে করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে আপনাদের সম্মান রক্ষার্থে। মাফ করে দিন আমাকে। আমার আপনার সম্পত্তি লাগবে না। শুধু আমাকে আমার আব্বা-আম্মার মন থেকে দূরে করবেন না।

দাদার চোখেও তখন পানি। তিনি শুধু বললেন,
–চলে যাও এখান থেকে। আমি তোমাকে দেখতেও চাইনা।

এটা বলেই দাদা বুকে হাত দিয়ে হেলে পড়ছিলেন। তৎক্ষণাৎ আমার বাবা লক্ষ্য করে আর দৌঁড়ে দাদার কাছে যান। দাদার পেছোনে আমার বড় মামা ছিলেন। তিনিও দাদাকে ধরে ফেলেন। দাদা তখনো অস্ফুট স্বরে বললেন,

–চলে যা রাশেদ। চলে যা।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ