অনুভূতির সংমিশ্রণ?
তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)
পর্ব তিন
?
নিধি অনেকক্ষন যাবত ঘর থেকে বের হয় নি আর বের হবেও না সে..কি পেয়েছে কি হ্যা??উনার বাড়িতে থাকি বলে এমন বিহেভিয়ার করবে??থাকবো না!!কাল হোস্টেলে সিট খুজবো!!থাকবো না এই যমরাজের বাড়িতে!!
নিজে নিজে বক বক করছে আর চোখের জল মুছছে নিধি।।
এদিকে ইমরেত নিজের রাগ সংযত করতে পারছে না দেখে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে।।
গোসল করে বেরোনোর পর একটু হালকা লাগছে তবে নিধির ফোনে ওয়েটিং এর কথা মনে পরতেই আবারো মাথার রগটা ফুলে ফুঠছে।।
রাতেরবেলা,
ডাইনিং এ যেয়ে ইমরেত দেখলো নিধি খেতে আসে নি।।
“নিধি কই?” ইমরেত গম্ভীরমুখে স্মৃতিকে প্রশ্ন করলো।।
“ভাই ও আসবে না,তুই খেয়ে নে..ঘরে বসে মাহি আর নিধি মিকি মাউস দেখতেছে” মেহবুব বলে উঠলো স্মৃতি বলার আগে।।
রাগে গা টা আরো রি রি করে উঠলো ইমরেতের..কোন রকমে দাঁতে দাঁত চেপে, মুখের ভিতরে খাবার গুজে উপরে চলে গেলো।।
এদিকে মেহবুবের নজর গেলো স্মৃতির শাড়ি ভেদ করে পেটের উপর,চট করে শয়তানী করার বুদ্ধি মাথায় আসলো তার।।
পানি হাতে নিয়ে স্মৃতির পেটে হাত রাখলো মেহবুব,এরকম আক্রমনে স্মৃতি চিৎকার দিতে যেয়েও থেমে গেলো বুঝলো বাহিরে আছে..চিৎকার দিলে খারাপ দেখায়।।
কটমট করে মেহবুবের দিকে তাকালে,সে খুব মনোযোগ দিয়ে চিকেন খাচ্ছে..এদিকে মেহবুব ভিজা হাত সরায় ও না,ভিতর ভিতর পৈশাচিক আনন্দ নিচ্ছে।।
স্মৃতি টেবিলের নিচ দিয়ে দিলো এক গুতা মেহবুবের পায়ে।।
“আহ!!” মেহবুব ব্যাথাতে বলে উঠলো।।
স্মৃতি দেখলো মেহবুব হাত সরায় দিয়েছে দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।।
“আরেকবার এমন করলে,তোমার সব কয়টা হাড় ভেঙে দিব আমি” রাগে গিজগিজ করতে ডাইনিং ত্যাগ করলো স্মৃতি।।
“লেটস সি বেবি..রুমে যাও তোমার কপালে কি আছে দেখবে তখন দেখবে” মেহবুব শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।।
ইমরেত সার্জারির নিয়ে একটু কথা বলছে অফিসের লোকের সাথে..কাল সকালে একটা বড় অপারেশন করতে হবে তাকে..বড় অপারেশন সব ইমরেত করে,ইমার্জেন্সি ছাড়া যায় না সে হসপিটাল.. বাকি সময় ব্যবসায়..লোকজন ভাবে এতো ট্যালেন্ট কিভাবে আসে??দুইদিক সামাল দেয়।।
ইমরেত কথা বলতে বলতে চোখ আটকে গেলো সামনের ব্যালকনিতে.. সামনের ব্যালকনিতে নিধি ইজি চেয়ারের উপর গুটিশুটি মেরে মাহিকে বুকের উপর রেখে ঘুমিয়ে গেছে।।
ইমরেত প্রয়োজনীয় কথা শেষ করে মাহির রুমে রওনা দিলো।।
মাহির রুমে গিয়ে ইমরেত দেখলো মাহিকে বুকে চেপে নিধি ঘুমিয়ে আছে..আসলেই কত নিষ্পাপ লাগছে দেখতে তাদের।।
মাহিকে কোলে নিয়ে ওর বেডে শুইয়ে দিলো..তারপর নিধির কাছে এসে কিছুক্ষন তাকালো।।
“এই মুখ দেখে আমি আমার বয়স টা ভুলে গেছি..আমি তোমার বাচ্চামো দেখে নিজের যে তোমার থেকে ১০ বছরের বড় সেটাও ভুলে গেছি..কিন্তু কি করবো বলো আমি যে তোমাকে প্রথম দেখাতে দূর্বল হয়ে গেছি,নিজের অনুভূতির প্রতিটায় শিরায় তোমাকে আবদ্ধ করে ফেলতে চাই,করে ফেলেছি এই তিন বছরে..হ্যা তোমাকে চাই আমি,খুব করে চাই..এতোবেশি চাই যেন কখনো আমি তোমার বড় কিংবা তুমি আমার ছোট এই অনুভূতি টা বুঝতে না পারি…আমি তোমাকে ভালোবাসি অনেকবেশি, এতোবেশি যে তোমাকে আমি ব্যতীত অন্য কেও কখনো কেও ভালোবাসা ত দূরেই থাক পছন্দ করুক আমি তা চাই না..আমি পারলে তোমাকে আমার বক্ষ পিঞ্জরে লুকিয়ে ফেলতে চাই..আজ যখন তোমার খোজ নেয়ার জন্য ওয়েটিং দেখলাম,বিলিভ মি মনে হচ্ছে সামনে পেলে ঠাটিয়ে দুইটা চড় মারি..দুনিয়ার সবার সঙ্গে তোমার যত কথা,আর আমি সামনে আসলে তোমার মুখ বন্ধ হয়ে যায়..আমার অনুভূতির তোমার চোখে পরতে দেই না আমি জানি কিন্তু খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার অনুভূতির সাথে পরিচয় করাবো”।।
নিধিকে কোলে তুলে মাহির পাশে শুইয়ে দিলো..কথাগুলো নিধি শুনতে পেতো কিন্তু ঘুমের জন্য তার হুশ ই নাই কেও তাকে তার অজান্তে এতোবেশি কেও চেয়ে ফেলেছে।।
নিধির কপালের চুল সরিয়ে মাথায় চুমু দিয়ে,দুজনের গায়ে চাদর লাইট অফ করে ইমরেত চলে গেলো।।
স্মৃতি ঘুমাতে পারছে না যখন সে বেডে ঘুমাচ্ছে মেহবুব তার গায়ে পানির ছিটা মারছে,দেখলো কোন উপায়ন্তর নাই নিজে রুমে থেকে চাদর নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।।
মেহবুবের মেজাজটায় এইবার খারাপ হয়ে গেলো,এমনিতে সময় পায় না ওকে আদর করার, যখন কাছে পাই হয় মাহি আসে না হয় অন্যকাজ পরে..নাহ আর এরকম করতে দিব না..ওই ভুলে গেছে ওরে আমি কেমনে তুলে এনে বিয়ে করেছি।।
ধপাধপ পা ফেলে স্মৃতির কাছে,কোমরকে শক্ত করে ধরে কাছে ঘুরিয়ে দেয়ালে ঠেসে ঠোটে ঠোট বসালো।।
বেশকিছুক্ষন ছোটাছুটি করে স্মৃতি পার পেলো না যখন তখন নিজেও তাল মিলালো..সে জানে মেহবুব বরাবরই জেদি..আর সেখানে স্মৃতিকে নিয়ে সবসময় সিরিয়াস..স্মৃতির গায়ের ঘ্রান মেহবুবের কাছে টনিকের মতো কাজ করে..
স্মৃতিকে কোলে তুলে ভালোবাসার রাজ্যে ডুব দিলো মেহবুব।।
সকালবেলা,
নিধি নিজেকে বেডে পেয়ে একটু অবাক হলো..সে ত ছিলো মাহিকে নিয়ে বারান্দায় এখানে কিভাবে এলো সে??
মাহির দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখনো ঘুমে কাদা…৪ বছরের মাহি,তার মা বাবার মতো গায়ের রঙ পেয়েছে..দেখতেও পুতুল..মাহির কপালে চুমু দিয়ে নিজের রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।।
ইমরেত তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে সার্জারীর জন্য বেরিয়ে পরেছে সকাল সকাল।।
মেহবুব এখনো স্মৃতিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে,কিছুক্ষন আগে মেহবুবকে ঠেলে উঠতে যেয়ে স্মৃতি একদফা কামড় খেয়ে শুয়ে আছে।।
“আরেকবার যদি এরকম করো,গতকাল রাতে যেমন রেস্ট দি নাই..আজ সারাদিন ও তাই হবে??” এই বলে মেহবুব স্মৃতির বুকে মুখ গুজে ঘুম।।
স্মৃতি মনে মনে গালি দিলেও মেহবুবের তাকিয়ে একটা প্রশান্তির হাসি দিলো সে।।
সকালে নিধি উঠে সবার জন্য নাস্তা বানালো সে,ভাবলো সবাইকে চমক দিয়ে দিবে যে সেও পারে।।
এদিকে নিধি ফ্রেশ হয়ে ক্যাম্পাস যায় আর সেখানে যোগাযোগ করে হোস্টেলের সিট ফাকা আছে কি না খোজখবর নেয়।।
বন্ধুরা ফোন দিয়ে পায় না নিধিকে এইজন্য জিজ্ঞেস করছে ফোন অফ ক্যানো।।
কি বলবে বুঝতে না পেরে নিধি কথা কাটিয়ে অন্য কথা তুলে ব্যস্ত হয়ে পরলো।।
ইমরেত সার্জারি শেষে ফ্রেশ মুড নিয়ে কেবিনে আসছে..তার অপারেশন সাকসেস হয়েছে..এমন কোন রেকর্ড নাই যে সে হিট করে নাই..কোন অপারেশন তার আনসাকসেফুল হয় নাই।।
” নিধির ফোন ভেঙে দিয়েছে আজ ওর জন্য ফোন কিনবে..বেচারি গান না শুনে থাকতে পারে না..ফোন নাই কিভাবে যে আছে..বাসার লোকের সাথে সে ল্যান্ডলাইনে কথা বললো..আমার দেয়া ফোন নিবে না জানে সে..স্মৃতি ভাবীকে দিয়ে দেয়াবে” বাকা হাসি দিয়ে ভাবছে ইমরেত।।
ফোন বাজছে ইমরেতের..রিসিভ করে দেখলো তার গার্ডের নাম্বার এটা।।
“স্যার নিধি ম্যাম হোস্টেলে সিট খুজছে..বেশ কয়েকজনকেও বলেছে..এখন ওর শামীম ফ্রেন্ডের সাথে বসে বলছে যে করেই হোক সিট খুজে দিতে” গার্ড টি বললো
গার্ডের কথাগুলো শুনে ইমরেতের ভালো মুড টা নিমিষে বিষে পরিনত হলো..মাথার মধ্যে মনে হচ্ছে দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো..রগ গুলো কেমন চাড়া দিয়ে উঠেছে..আজ এর বিহিধ করেই ছাড়বে সে।।
“ও যেন সিট খুজে না পায়..আর শামীম ছেলেটারে একটা ধোলায় দেও যেন হসপিটালে এক মাস থাকে..খরচ নিয়ে নিও অফিস এসে..গট ইট?” রাগে দাতে দাত চেপে বললো ইমরেত।।
ফোন কেটে মাথার চুল গুলোকে অনবরত টানছে ইমরেত..মেজাজ যে সপ্তমে তার।।
“সিট খুজা বের করাচ্ছি তোমার আমি” এপ্রোন খুলে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।।
কলেজ,
নিধি কলেজের সামনে রিক্সার জন্য ওয়েট করছে সে..কিন্তু এই ভরদুপুরে সে রিক্সা পাচ্ছে না..এমনিতেও হোস্টেলে সিট খুজার চক্করে অনেক লেট হয়ে গেছে।।
নিধির সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো..নিধি দেখে এভয়েড করলো কিছুটা দূরে সরে এসে আবার রিক্সা খুজার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলো।।
গাড়ির ভিতরের মানুষটা বেরিয়ে এসে নিধির হাত এতো শক্ত করে ধরলো..টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে..গাড়ির ভিতরের মানুষটা আর কেও নয় ইমরেত..ফর্সা মুখ রোদে একদম চকচক করছে কিন্তু মুখ লাল হয়ে গেছে রাগে।।
“আরেহ!!ইমরেত ভাইয়া ছাড়েন..কই নিয়া যান ভাইয়া!!আমি যাবো না.. আজব লোক আপনি শুনতে পান না??” নিধি বলেই যাচ্ছে আর হাত মুচরাচ্ছে।।
ইমরেত নিধির মুখে ভাই ডাক শুনলে ক্ষেপে যায় কিন্তু কিছু বলেনি এতোদিন আজ এমনিতে মেজাজ গরম ভাইয়া ডাক শুনে আরো চেতে গেছে সে।।
গাড়ির দরজা খুলে নিধিকে ধাক্কা দিয়ে বসালো..নিধি হাতে ব্যাথা পেলেও,ভয়ে কিছু বলছে না..কারন,ইমরেতের এই রুপ কখনো সে দেখে নি।।
ইমরেত নিজেও গাড়িতে বসে পরে..নিধির দিকে ঝুকে দিট বেল্ট লাগালো।।
“প্লিজ ভাইয়া গাড়ি চালাবেন না..আমি বাড়ি যাবো” নিধি এক প্রকার ভয়ে বলেই দিলো।।
“নিয়ে যাওয়াচ্ছি বাড়ি” দাতে দাত চেপে বললো ইমরেত
চলবে?