অদ্ভুত প্রেম পর্ব-০৪

0
2117

অদ্ভুত প্রেম❤️
Writer-Afnan Lara
[৪]
-‘সৌরভ দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে।যেন রুমটা তারই।আমি অতিথী।আশ্চর্য!!! যান আমার রুম থেকে। আমি চেঞ্জ করবো এখন’

-‘গেলেও কি না গেলেও কি!আমি তো সব দেখি”

-‘স্টুপিড।বাহির হোন বলছি।কথাটা বলে উনাকে রুম থেকে বাহির করে দিয়ে দরজা লাগাই দিলাম।কি জ্বালা রে বাবা!!
আম্মু রান্না করে আমাকে ডেকে বললেন পরিবেশন করতে।
-‘হিহি!! এমন ঝাল,নুন দিছি না আজকে বাপ বাপ করে পালাবে)’

সৌরভ খাবারটা এক চামচ মুখে দিয়েই বুঝেছে খাবারের ১২টা কে বাজিয়েছে।

-‘(খাও চান্দু খাও,)’

-‘আন্টি ভেসিন টা কই?’

-‘তাহা যা সৌরভকে ভেসিনের কাছে নিয়ে যা’

-‘আসেন’

ভেসিনে যেতেই একটান দিয়ে চেপে ধরলো উনি আমাকে।
ছাড়ুন শুরুতেই বলছি তা নাহলে আমি কিন্তু চিৎকার করবো!”

সৌরভ ঝালে হাঁপাচ্ছে।

-‘চিৎকার করো”

-‘আআআআমম….’

আর কইতে পারলাম না।ছুঁয়ে ফেললো ঠোঁটজোড়া।
নিজের সব শক্তি দিয়ে উনাকে সরানোর চেষ্টা করেও পারছি না।এমন লম্বা চওড়া পোলার সাথে শক্তির জোরে পারা যাবে না যা বুঝলাম।’

-‘তাহা,সৌরভ?তোমরা কোথায়?’

আম্মুর ডাকে শয়তানটা ছাড়লো আমাকে।
স্টেচু হয়ে আছি আমি এখনও।

-‘পরেরবার এমন শয়তানি করলে কি হবে বুঝছো নিশ্চয়?’

-‘উনি বেশি থাকলেন না।চলে গেলেন তখনই’
——
-‘কাল আব্বু আসবে।বাসায় নানা আয়োজন।
আর ডিস্টার্বের জন্য শয়তানটা তো আছেই সকাল থেকে উড়না নিয়ে টানা টানি করে।আমার আর একটু শক্তি থাকলে মেরে আলুর ভর্তা বানায় দিতাম।কিছু করতেও ভয় লাগে।
দুপুর ২:৩২মিনিট।
আব্বু আসছে তখন।আমি আব্বুকে জড়িয়ে ধরবো ঐসময়ে শয়তানটা কোথা থেকে দৌড়ে এসে হাজির।

-‘শ্বশুর মশাইইইইই’

আব্বু তো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সৌরভের এমন ব্যবহারে আম্মু ও অবাক।
সৌরভ গিয়ে আব্বুকে পা ধরে সালাম দিলো আর বললো
আসার সময় কোনো প্রব্লেম হয় নাই তো?
ড্রাইভার কই?’

এটা বলে উনি গিয়ে ড্রাইভারকে টাকা দিলেন।

-‘গাড়ি টা তোমার?’

-‘জ্বী।আপনাকে রিসিভ করার জন্য পাঠাইছি আমি।’

আব্বু আম্মুকে ফিসফিস করে বলছে ছেলে তো ছবির থেকেও সুন্দর।

-‘(কচু সুন্দর।একটা বানরের মতন লাগে)
—–
সবাই বিকালের নাস্তা শেষে কথা বলছে বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট নিয়ে।আমার জন্মদিন এই মাসের ১৮ তারিখ। ২৫তারিখে গায়ে হলুদ।পালাই যে যাবো তার ও উপায় নাই।রাস্তাঘাটে সব উনার লোক।

-‘হ্যালো? কিরে রেশমি ভালো আছিস?’

-‘হ্যাঁ আম্মা ভালো আছি।তুমি?কিছু বলবে?’

-‘তোর খালাতো বোন টিয়া তো আমেরিকাতে থাকে।ওরে বলে সৌরভের পরিবারের খবর নিছি।ছেলে নাকি ওখানের বড় ব্যবসায়িদের মধ্যে একজন,আর উনাদের বাসায় টিয়া গিয়ে সব দেখে আসছে।’

-‘যাক আলহামদুলিল্লাহ’

-‘আম্মু!!আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না’

-‘দেখ এমন ভালো ছেলে পাওয়া যায় না সহজে।সৌরভ তোকে সুখে রাখবে’

বাবা মায়ের আপত্তি দেখে আর কিছুই বললাম না আমি।
রাতে ফোন আসলো সৌরভের।কল করেছে ধমক দিতে

-‘তোমাকে বেশি সাহস দেখাতে মানা করি নাই?
কোন সাহসে বলো যে বিয়ে করবা না?বিয়ে না করে যাবা কই?এখনও সময় আছে সুধরে যাও।নাহলে পরিনাম খারাপ হবে.কষ্ট তুমিই পাবা.তার জন্য তুমি দায়ী থাকবা’

-‘আমি আপনাকে ঘৃনা করি’
.
অনেকদিন কেটে গেলো।
আজ সৌরভের মা বাবা আর উনার ছোট বোন আসবে।আমাদের বিজয়নগরে উনাদের বাসায় ইনবাইট করেছেন উনারা।তারা আসার আগে সৌরভ আমাকে মেসেজ করেছে
-‘Dear,
Black dress ta pore asba’
.
-‘আমি ঐ জামাটা পরি নাই ইচ্ছা করেই।
নীল একটা জামা পরে গেছি।
সৌরভ আমাকে দেখে রাগি চোখে তাকালো।তার পর আম্মুকে আর আব্বুকে সালাম দিয়ে সোফার রুমে নিয়ে বসালো।আমার দিকে আর তাকায় নাই।
যাক আল্লাহু উনাকে হেদায়াত করছে।আমি তো ভাবছি রেগে গিয়ে আমাকে বাসা থেকেই বের করে দিবে।দিলেই ভালো।বিয়ে ভাঙবে।উনার মা বাবা আসলো আরও কিছুক্ষণ পর।

-‘মাশাল্লাহ আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে’

-‘দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে মেড ফর ইচ আদার’

-‘এটা আমার ভাবী?আমার চাইতেও কিউট’

সবাই ওর কথায় হাসা শুরু করলো।
আম্মু আব্বু সৌরভের আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত এখন।
সৌরভের বোন আমার কাছে এসে বললো,’ভাবী,চলো হাঁটি’

-‘ওকে’
.
দুজনেই হাঁটতেছি হঠাৎ সৌরভ আসলো এদিকে।

-‘জিসা যাও তোমাকে মা ডাকছে’
.
আমিওও কেটে পড়ছিলাম জিসার সাথে সাথে ঠিক সেসময়ে উনি আমার হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।

-‘আমার কথার অবাধ্য হতে মানা করি নাই?কথা কানে যায় না?তুমি দেখতেছি আচ্ছা একরোখা মেয়ে।এই টাইপের বদ স্বভাব ঠিক করতে আমার ১দিন ও লাগে না।আর তুমিতো!”

-‘আপনার কথায় চলতে হবে কেন?আমি আপনাকে ভয় পাই না।আমার উপর নিজের জোর দেখাবেন না’

-‘হ্যাঁ দেখাবো না।কারন আজকের পর থেকে আমি তোমাকে অর্ডার করা লাগবে না। তুমি নিজেই সব করবা।
এটা বলেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন উনি।
ভাবলাম কি না কি করবে।উনি সোজা ওয়াসরুম থেকে এক বালতি এনে আমার হাত ধরে আবার দাঁড় করিয়ে পানি ঢেলেন একেবারে আমার মাথার উপর।
এরপর আমার হাত ধরে সোফার রুমে নিয়ে আসলেন উনি।

-‘একি সৌরভ!!তাহার এই অবস্থা কেন?এমন ভিজছে কিভাবে?’

-‘আমাদের বাসার পাশে যে সুইমিং পুলটা আছে?তাহা ওটাতে পড়ে গেছিলো।ও তো সাঁতার জানে না।তাই আমি ওকে তুললাম।দেখো আমিও ভিজে গেছি।’

-‘এতো কিছু হয়ে গেলো?তাহা তুমি ঠিক আছো?’

-‘জ্বী আন্টি’

-‘তোমার তো জামা চেঞ্জ করতে হবে।আসো আমার সাথে।’

সৌরভের আম্মু রুমে এসে একটা শাড়ী নিয়ে বললেন,’এই নাও এটা আমার শাড়ী।পরে নাও’

-‘(নেটের শাড়ী!)কোনোমতে পরে নিচে নামলাম।শয়তানটা হা করে তাকাই আছে।

-‘ভেজা চুলে কি সুন্দর লাগছে ওকে।চোখ ফিরাতে পারছি না তো”

চুপচাপ সবার সাথে এসে সোফায় বসলাম আমি।
শয়তানটা সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
নির্লজ্জ কোথাকার।
—-
সন্ধ্যায় উনি আমাদেরকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এরপর নিজের বাসায় চলে গেলেন।

-‘মা!!যতদিন না বিয়ে হচ্ছে তুমি তাহাকে বলবা না যে আমরা ওরে আগ থেকে চিনি’
চলবে””

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে