অতঃপর ভালোবাসি পর্ব-০৯

0
1721

অতঃপর ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
৯ম পর্ব

আঁচলকে কিছুটা বিব্রত বোধ করতে দেখে রাহী আবার সরে গেলো- একটা প্রশ্ন সব সময় আমার মনে নাড়া দেয় তবে কখনো আমি এর সঠিক মন মতো উত্তর পাই নি।।
খুব উৎসাহ নিয়ে আঁচল জিজ্ঞেস করলো – কি প্রশ্ন?
” একজন নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ যদি তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তবে সেটাকে ধর্ষন বলা হয়। আর সেই ধর্ষনের ফলে যে বাচ্চা হয় তাকে জারজ সন্তান বলা হয় ।
” হুম ।
” একটা মেয়ের যখন সুদীর্ঘ দিন একজন ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে থাকার পর তাকে অন্য একটা ছেলের সাথে তাকে পরিবার কতৃক জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, এরপর বিয়ের রাতেই স্বামী তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে মেতে ওঠে। যেন সে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যেই বিয়ে করেছে। তখন তো স্বভাবতই মেয়েটার ইচ্ছে থাকবে না শারীরিক সম্পর্ক করতে তাই না?
” হুম।
” তাহলে তো মেয়েটার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা হচ্ছে ।
” হুম।
” তাহলে এটা কি ধর্ষন না? আর এই শারীরিক সম্পর্কের ফলে যে সন্তান পৃথিবীতে আসবে তাকে কি বলা হবে?

রাহীর প্রশ্ন শুনে আঁচল থ হয়ে গেলো। অপলক দৃষ্টিতে রাহির দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে যেন কিছুই বের হচ্ছে না ।

” কি হলো চুপ হয়ে গেলেন কেন?
” এর কোনো উত্তর আমার কাছে নেই ।
” জানি আমি । একবার ভাবুন প্রতিরাতে কতগুলো মেয়ে মুখ বুঝে নিরবে ধর্ষন হচ্ছে । অবশ্য এটা পবিত্র ধর্ষন।
পবিত্র ধর্ষন কথাটা শুনে আঁচল জিজ্ঞেস করলো – পবিত্র ধর্ষন মানে?
” মানে বিয়েটা পবিত্র একটা বন্ধন। আর বিয়ের পরে যে ধর্ষনটা হচ্ছে সেটাও পবিত্র তাই পবিত্র ধর্ষন। আর বিয়ের আগে ধর্ষনের ফলে আগত বাচ্চা কে সমাজ কতৃক গায়ে একটা অবৈধ সন্তান নামক প্রতিলিপন করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পরে আসা বাচ্চা কে সেই প্রতিলিপনটা দেওয়া হয় না। তাই জন্য আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম যে মন থেকে মেনে নিবেন নাকি স্বামী জন্য মেনে নিবেন?
” আপনি আমার স্বামী তাই জন্য স্বামী হিসাবে মেনে নিবো। আর যেহেতু আপনাকে আমি ভালোবাসি তাই মন থেকেও।
” হুম । কিন্তু তাদের শারীরিক সম্পর্কের সাথে ভালোবাসার কোনো যোগসূত্র থাকে না তাই জন্য সেটা পবিত্র ধর্ষন। মনে করুন একজোড়া প্রেমিকযুগল রুম ডেট করলো। এটা কিন্তু ইসলামের বিধানের বাহিরে। ইসলাম এটাকে সমর্থন করে না। কিন্তু তবুও কিন্তু এটাকে ধর্ষন বলা হয় না। কারণ সেখানে ভালোবাসা সংশ্লিষ্ট। তাই সেই শারীরিক সম্পর্ক কে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ বলা হয় ।
” হুম । তে আপনার মতে কি হওয়া উচিত?
” প্রতিটি পুরুষ কে প্রেমিক হওয়া উচিত । আগে তার বিয়ে করা বউয়ের মনটা ছুঁতে হবে তারপরেই শরীর ।
” হুম আপনি ঠিকই বলছেন কিন্তু আপনি সব কিছু আপনার নিজের মতো করে ভাবলে তো হবে না।
রাহী মুচকি হেঁসে বললো- আমি সব কিছু আমার নিজের মতো করে ভাবি জন্য আমি এতটা সুখী। কারণ আমি কখনো ভাবি না সমাজ কি বললো। । কারণ আমি আমার রাজ্যের একমাত্র রাজা। আর রাজা কখনো কারো কথা শুনে চলে না। তাই আমি সেটাই করি যেটা আমার ভালো লাগে ।
” হুম । আপনি কি এখন ঘুমাবেন? আমার প্রচুর ঘুম পেয়েছে ।
” আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন। আমি আর কিছুক্ষণ এখানে বসে থাকবো।

রাহী ছাঁদের এক কোনায় পড়ে থাকা দোলনায় গিয়ে বসে পড়লো। আঁচল কি যেন ভেবে রুমে না গিয়ে রাহীর পাশে গিয়ে বসলো। রাহীর হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । রাহী আঁচলের দিকে তাকিয়ে হাতটা সরিয়ে নিয়ে তাকে কোলে বসিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো ।।

” আপনার স্পর্শে আমায় এমন লাগে কেন?
” কেমন?
” পুরো শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে । আগেও তো অনেক পুরুষ আমায় ছুঁয়েছে কিন্তু কখনো এমন হয় নি ।
” নারীর শরীর ছুঁলেই কি পুরুষ হওয়া যায়?
” মানে?
” কিছুনা। হয়তো আপনার অনুভূতিরা আমার স্পর্শে ভালোবাসার চিহ্ন খুঁজে পেয়েছে। তাই আপনার এমন মনে হচ্ছে ।
” হুম ।
” বাসার সামনের ঐ জমিটায় একটা পোশাক কারখানা করবো।
” কেনো?
” আপনি তো বললেন যে যৌনকর্মীদের জন্য কিছু করতে চান। তাই তাদের কর্মস্থল তৈরী করবো।
” কিন্তু এটার জন্য তো অনেক টাকার দরকার।
” হ্যাঁ । আমি তো বলি নি যে বললেই হয়ে যাবে।
” এতটাকা কোথায় পাবো?
” সেটা নিয়ে আপনাকর চিন্তা না করলেও চলবে ।
” আচ্ছা আপনি কোথায় জব করেন বলেন তো?
” আমি কোথায় জব করি সেটা জেনে কি করবেন? আমার জীবনে শুধু ভালোবাসাটার অভাব । আপনি শুধু আমার এই অভাব টা পূরণ করে দিন আপনার জন্য জীবন দিতেও আমি এক মুহুর্ত ভাববো না।

আঁচল রাহীর কথা শুনে হতবাক হয়ে গেছে। কি বলছে কিছুই যেন তার মাথায় যাচ্ছে না । সব মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে । আর কোনো প্রশ্ন না করে রাহীর কাঁধে মাথা দিলো। রাহীও কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।
” আমি আপনাকে কেন বিয়ে করেছি জানেন?

রাহী এতটুকু বলে থেমে গেলো। আঁচলের” কেন ” প্রশ্ন টি শোনার জন্য। কিন্তু আঁচল কতৃক কোনো প্রশ্ন আসলো।

To be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে