অচেনা শহর পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
3420

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ২৪

চোখ খুলে নিজেকে আদ্রর কাঁধে মাথা রেখে ওর বাম হাত জড়িয়ে ধরে আছি দেখে ছিটকে দূরে সরে আসলাম। ‌হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি আমি। ঘুম আসলাম কখন, আর আমি আদ্রর কাঁধে ই বা গেলাম কখন।
আদ্রর কাছে নিজেকে দেখেই আমার ঘুম ছুটে গেছে সাথে সাথে।
আদ্র চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে আছে হয়তো ঘুমিয়ে। আমি সরে আসতে হবে হালকা নড়ে আবার চুপ হয়ে র‌ইল। আমি মনে করার চেষ্টা করছি আমি ঘুমালাম কখন। তার পর মনে পরলো আমার মাথা ব্যথা করছিলো তাই চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা রেখে ছিলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই তাহলে তখন‌ই হয়তো ঘুমিয়েছি কিন্তু তাহলে আমি কি ঘুমের ঘোরে আদ্রর কাছে চলে গেছি।

কথাটা ভেবেই জ্বিভ কাটলাম ছিঃ ছিঃ নিজেকে একটু সংযত রাখতে পারলাম না সেই ঘুমিয়ে পরলাম।আদ্রর কি দেখেছে আমি এভাবে তার উপর ছিলাম দেখে নী মনে হয় দেখলে কি আমাকে নিজের কাঁধে রাখতো নাকি এতোক্ষন তুলকালাম বাঁধিয়ে দিতো‌।
আমার আগে যদি তার ঘুম ভাঙতো তাহলো কি হতো ছিঃ লজ্জ্বা আমার মাথা কাটা যেত আর ভুলে ও ঘুমানো যাবে না।

নিজেকে বকতে বকতে সামনে তাকালো বাসের সবাই ই ঘুমে প্রায়।কতো সময় হলো ফোন টিপে দেখলাম বারোটা বাজে।
দুই‌ ঘন্টা ঘুমিয়েছি তাহলো। একটু মুখে পানি দিতে পারলে ভালো লাগতো ঘুমের রেশ হালকা আছে। ওইভাবেই জানালার বাইরে তাকালায়।
যেতে আর কতোক্ষন লাগবে তাও জানি না গাড়িতে আছি তার ঘন্টা হয়ে গেছে।

আর ও পনেরো মিনিট পর দেখলাম আদ্রর চোখ মেলেছে। আমি তাকাতেই সে আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো তার চোখ লাল হয়ে আছে। ওইভাবে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওনার তাকানো ঠিক লাগছে না অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ জনি একটু আমার দিকে চেপে এলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি ওনার তাকানো দেখে আমার ভ্রু কুঁচকানো দেখে আদ্র নিজের জায়গায় গিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো‌।
কিন্তু আমি চোখ সরালাম না সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছি। এভাবে এগিয়ে আসছিলো কেন?

“আপনি এভাবে তাকিয়ে এগিয়ে আসছিলেন কেন? আপনার মতলব আমার ঠিক লাগছে না।”

আমি জানালার সাথে চেপে জিগ্যেস করলাম।
কিন্তু আদ্র আমার কথা কানে ও নিলো না তাকালো ও না। সামনে তাকিয়ে র‌ইল।
কিছু ক্ষন উওরের অপেক্ষা করে ব্যর্থ হয়ে সামনে তাকালাম।
বিড়বিড় করে আদ্র চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলাম।

5 মিনিট পর দেখি আদ্র পানি দিয়ে নিজের মুখ ধুচ্ছে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” কিছু বললে।”

আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। হা করে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
এতো সময় পর তার মনে হলো আমি তাকে কিছু বলেছি। কটমট চোখে তাকিয়ে আছি সে উত্তরের অপেক্ষা করছে। কিছু বলতে গিয়েও বললাম না তখন সে বলে না এখন আমি বলবো না। তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলাম তাকে অগ্রাহ্য করে।

আদ্র ভ্রু কুঁচকে স্নেহা দিকে তাকিয়ে আছে।
স্নেহা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। ও বুঝতে পারল যে পরে উত্তর দেওয়ার জন্য স্নেহাকে ওকে ইগনোর করলো।
গালে হাত দিয়ে আদ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল স্নেহার দিকে। জানালার বাইরে দৃষ্টি স্নেহার ঠান্ডা হাওয়া এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে আর মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ আদ্রর দিকে তাকিয়ে হতবাক হলো কারণ আদ্রর ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাও পলক হীন ভাবে এটা দেখে স্নেহা সন্দেহ চোখে তাকায় আদ্রর সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়।স্নেহা বুঝির চেষ্টা করেছে এভাবে তাকানোর কারন কি আবার কি জিজ্ঞেস করবো কিন্তু বলে না জিজ্ঞেস করলে।
আদ্র স্নেহাকে আচমকা এদিকে তাকাতে দেখে তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়। একটু শান্তি তে দেখতে ও পারে না এমন ভাবে তাকায় যেন চোখ দিয়েই ভষ্স করবে আমাকে। আদ্র পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা হাতে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে টানতে থাকে কি ভেবে পাশে তাকিয়ে দেখে স্নেহা ওরনা দিয়ে নাক মুখ ডেকে ওর দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে।

আর এক টান দিয়ে আদ্রর সিগারেটের আগুন নিভিয়ে ফেলে।
পুরো রাস্তা আর দুজনের মাঝে কথা হয় না।
স্নেহা নিজের মতো থাকে আর আদ্র স্নেহার দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকে কিন্তু সেটা স্নেহা কে বুঝতে দেয় না। মাঝে মাঝে দুজনে চোখা চোখি হয় কিন্তু কথা হয় না।

🍁

অবশেষে রিসোর্ট এসে পৌছালাম।
শেষে রাস্তাটুকু আর ঘুমাই নাই। জেগে ছিলাম।অন্তরা থেকে জানতে পারলাম ওর সাথে নাকি একটা মোটা মেয়ে বসে ছিলো। সেই বাসে নাকি হৃদয় ছিল।
দুজন দুজনকে এক সাথে দেখে তো অবাক তারপর নাকি হৃদয় কিভাবে কি করে জানো অন্তরার পাশে এসে বসেছিল।
আর সারা রাস্তা নাকি দুজন পাশাপাশি বসে এসেছে।

সেজন্য অন্তরা তো সেই খুশি। খারাপ থাকলে পরের সময় নাকি খুব ভালো কেটেছে।তাতো কাটবেই আমার সে না খারাপ কেটেছে পুরোটা সময়।
আমাকে আর অন্তরাকে একটা রুমে।
অনেকটা পথ জানি কারাতে। সবাই ক্লান্ত তাই রুমে চলে গেছে।
এখন বিশ্রাম নেবে সবাই। আমি আর অন্তরা ও রুমে একসাথে চলে এলাম।
রুমে এসে হাঁ করে দেখতে লাগলাম সব কিছু। অনেক সুন্দর রুমটা। বাঁশের তৈরি রুম। একটা বিছানা আর একটা সিঙ্গেল সোফা আছে।খুব বড় না ছোট রুম কিন্তু অন্য সব রুম বড় লেগেছে । অন্য সব রুমে দেখলাম পাঁচ ছয় জন করে মেয়ে থাকবে। আর এটায় আমরা দুইজনই এজন্য হয়তো ছোট রুম।
যাই হোক তাও ভালো হয়েছে ছোট রুম সমস্যা নাই অন্যদের সাথে মিশতে পারতাম কিনা জানিনা আমরা দুজন আলাদা। দুজনেই খুশি হলাম এজন্য।
অন্তরা রুমে এসেই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়েছে খাটে আর ফোন কানে হৃদয়ের সাথে কথা বলছে।যার সাথে এত ঝগড়া করত এখন কি না তার জন্য পাগল হয়ে গেছে মেয়েটা ভাবা যায়।

“স্নেহা রুমটা খুব সুন্দর তাই না রে আমাদের আলাদা থাকতে দিয়েছে। আমার যে কি ভালো লাগছে রে।”

“হ্যাঁ রুমটা খুব সুন্দর দেখ বেলকনি আছে আয় দেখি।”

“আমার খুব ক্লান্ত লাগছে আমি এখন দেখব না তুই গিয়ে দেখ। আমি এখন ঘুমাবো।”

“কি ঘুমাবি ফ্রেশ হবি না। ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমাও।”

“না এখন আর আমি ফ্রেস হতে পারব না তুই আমাকে ডাকিস না প্লিজ।”

আমি আর কিছু বললাম না ও চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে আমি ওকে রেখে একাই বেলকোনিতে চলে গেলাম। এখানে এসে তো আর ও বেশি মুগ্ধ হলাম বেলকুনিতে আমার আরো বেশি পছন্দ হলো।বেলকনি থেকে সামনে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায় সামনে উঁচু-নিচু পাহাড় সবুজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে।

হা করে স্নেহা প্রকৃতির সৌন্দর্য দূর থেকে হালকা দেখছে। এতে ও মুগ্ধ না জানি আরো কত সুন্দর কাছ থেকে দেখতে পেলে।
হঠাৎ স্নেহার মনে হলো পাশের বারান্দা থেকে কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ ঘুরিয়ে পাশের বারান্দায় তাকিয়ে দেখে না কেউ নাই। তোমার একবার সামনে তাকিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে ফ্রেশ হ‌ওয়ার জন্য।

এদিকে আদ্রর রুম স্নেহার পাশেরটা।রুমে এসে ও বারান্দায় চলে আসে সিগারেট খেতে । বাসে একটা সিগারেট খেতে ‌পারি নাই। এসে আগে বারান্দায় চলে আসে বারান্দায় এসে দেখে স্নেহা বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখছে। স্নেহা কে দেখে আদ্রর সব ধ্যান স্নেহার মধ্যে চলে আসে।হঠাৎ স্নেহা ওর দিকে ফিরতে তাড়াতাড়ি বারান্দা থেকে সরে যায়।

ফ্রেশ হয়ে আসতেই খাবারের জন্য ডাক পড়ে।
4 টার উপরে বাজে লাঞ্চ তো আর করা হয় না এখনি লাঞ্চ করতে হবে। স্নেহা এসে অন্তরা পাশে বসে ওকে ডাকতে লাগে।

“কি এমন ডাঅ পারচ্ছিস কেন আমাকে কি একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিবিনা তোকে না বললাম আমাকে ডাকিস না।”

“আমার কিছু করার নাই আমি নিজের ইচ্ছায় থাকতে আসি নাই‌। তো কি খিদে পায় নাই যদি খিদে না পেয়ে থাকে তাহলে ঘুমা আমি খেতে গেলাম।”

খাবার কথা শুনে অন্তরার চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো খুশিতে।

“খিদে পাই নাই আবার কি যে বলিস না আমার তো প্রচুর খিদে পেয়েছে তাড়াতাড়ি চল খেয়ে আসি।”

বলে অন্তরা ওঠে পরে।

“আগে ফ্রেশ হয়ে আয় তারপর।”

অন্তরা ফ্রেশ হতে যায় তারপর দুজনে একসাথে খেতে যাই।
খাবার টেবিলে গিয়ে আমি আর অন্তরা পাশাপাশি সিটে বসি। অনেকে আছে আবার অনেকে নাই আমার পাশে বলতে ডান পাশের সিটটা খালি।
ভ্রু কুঁচকে একবার সেটার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম। এই সেটটা খালি কেন?
তারপর সেটা পাত্তা না দিয়ে অন্তরা সাথে কথা বলতে লাগলাম। একটু পর খাবার চলে এল তখন আমার পাশে এসে বসল মাইশা।আমি তাকে আমার পাশে বসতে দেখে চরম অবাক হলাম।কারন সে আমাকে একদম পছন্দ করে না।আমার পাশে বসলো খানিকটা অবাক হয়েছে।

“কিভাবে ব্যাপার এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?”

“কিছু না এমনি।’

আমার কথা শুনে মাইশা একটা ভেংচি কেটে ফোন টিপতে লাগল। আমার প্রচুর রাগ লাগল। কিন্তু কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম। মাইশা খাচ্ছে আর ফোন
টিপছে একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম। আমি ও চুপচাপ খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম।
খাওয়ার মাঝে পানি না হলে আমি একটু খেতে পারিনা। তাই দুই লোকমা খেয়েই পানি খুঁজতে লাগলাম।

আমার খাবারের সামনে কোন পানি নাই গ্লাস আছে অনেকগুলা খানিকটা দূর। মাইশার পাশে গ্লাস আছে। কিন্তু আমি সেটা আনার সাহস করলাম না।
আরেকটা দূরে থেকে গ্লাস এনে থেকে জগ থেকে পানি ভরতে লাগলাম।

কপাল খারাপ হলে যা হয় আমার হাত থেকে জগ ছুটে যায় অনেকটা পানি মাইশার হাটুতে পরে। আর কি চিতকার চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে মাইশার চিৎকার শুনে ভয়ে আমি ঠিক করে রেখে জগ রেখে কাপাকাপি করতে থাকি।

“ইউ স্টুপিড ইডিয়েট গার্ল। কি করলে তুমি আমার পুরো ড্রেসটা নষ্ট করে ফেললে বিজিয়ে।”

“সরি আপু আমি সত্যি ইচ্ছে করে এমনটা করি নাই। ভুলবশত হয়ে গেছে।’

“ইচ্ছে করে করোনি। আমি শিওর তুমি ইচ্ছে করে করেছ। ”

বড়সড় একটা সীন ক্রিয়েট হয়ে গেল। আমাকে যাতা বলে মাইশা বকতে লাগলো। শুধু বকেই শান্ত হলো না শেষে তো হাত উঠালো মারার জন্য আমি সবার সামনে মাথা নিচু করে আছি। মুখে কোন কথা বের হচ্ছে না। লজ্জায় অপমানে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।

কিন্তু মাইশার হাত আমার অব্দি আসলো না। তার আগেই কেউ ধরে ফেলেছে।আমি মাথা উঁচু করে হাতের মালিক কে দেখলাম সে আর কেউ না আদ্র। আগুন চোখে মাইশার দিকে তাকিয়ে আছে।
তার এমন ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আমি নিজেও ভয় গেলাম। মাইশা তার ফ্রেন্ড সেটা আমি জানি। খুব ভাল ফ্রেন্ড। মাইশা সাথে এমনটা হল আমাকে না জানি আবার কি শাস্তি দেয়। ভয়ার্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি।

আদ্র চিৎকার করে বলল,, “এখানে কি হচ্ছে?’

গরগর করে মাইশা বললো।আমি নাকি তাকে ইচ্ছে করে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে তার ড্রেস নষ্ট করেছি। আরো নানা বকা স্ট্যাটাস গাইয়া ক্ষেত অনেক বকাবকি করতে লাগলো।

“আমি এখানে আর কোন সিনক্রিয়েট চায়না।
চুপচাপ বসে খা। ওর হয়তো ভুলে ভরে পরে গেছে। এই সামান্য বিষয়ে তুই ওর গায়ে হাত তুলতে গেলে কেন?”

“কি বললি তুই এটা সামান্য বিষয়? ও আমাকে ভিজিয়ে ফেলেছে এখন আমার ড্রেসটা চেঞ্জ করতে হবে। এটা তোর কাছে সামান্য বিষয় মনে হচ্ছে।”

“এক কথা বারবার বলবি না। ড্রেস চেঞ্জ করলেই তো হবে এজন্য মারার কি দরকার?এটা তুই ঠিক করিস নি আর এভাবে বকাবাজি করার কি আছে একটু পানি তো পড়েছে।”

মাইশার কিছু বলল না ও জানে আদ্র স্নেনাকে কিছুই বলবেনা দাঁতে দাঁত চেপে আদ্রর কথা সহ্য করে আর রাগী চোখে স্নেহার দিকে তাকায়।

আদ্র কথা শেষ করে স্নেহার দিকে একনজর তাকিয়ে হনহন করে চলে যায়। অন্তরা হতবাক হয়ে এসব দেখলো আর স্নেহাকে এক হাতে জাপটে ধরে ছিলো। স্নেহা সাথে সাথেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দৌড়ে চলে যায় রুমে। কষ্টে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সবসময় কেন ওকেই সবার সামনে অপমানিত হতে হয় কোন সময় কি কোথাও একটু সম্মান পাবে না। সবাই কেন সবসময় ওকে নিয়ে হাসাহাসি করবে কেন সবার মত চলতে পারে না কেন? গরিব বলে টাকা নেই বলে টাকাই কি জীবনের সব।
স্নেহাকে যেতে দেখে মুখ ভেংচি কাটে মাইশা আর বলে ঢং,

অন্তরা পিছন থেকে দেখে ঠেকে ও থামাতে পারেনি।
কিন্তু অন্তারা যেতে পারল না কারণ এখন গেলে আর খাবার পাবেনা। সে খাবার খেয়ে স্নেহার খাবার নিয়ে যেতে পারবে তাও। এজন্য বসে রইলাম খাবার শেষ করে ওর প্লেটটা নিয়ে গেলাম।

অন্তরা এসে দেখেস্নেহা শুয়ে শুয়ে কাদছে।
ওরো খুব কষ্ট লাগে। মাইশা মেয়েটা বেশি খারাপ শাকচুন্নী একটা।
বিরবির করে মাইশাকে বকে স্নেহা পাশে গিয়ে বসে ডাকতে লাগে খাওয়ার জন্য।

“স্নেহা উঠ বোন খাবার খেয়ে নে তোর না খিদে পেয়েছে। ওই শাকচুন্নি মাইশার কথায় কষ্ট পাস না আমিতো জানি তো ইচ্ছে করে করিসনি।”

“আমাকে ডাকিস না আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমি খেতে পারব না।”

“প্লিজ অন্যের জন্য নিজের ক্ষতি করিস না। ও তোর কি না খেলে তো অসুস্থ হবি এতে ক্ষতি তোর হবে ও না।”

অন্তরা শত বলে ও কিছু খাওয়াতে পারলো না।
তাই ব্যর্থ হয়ে শুয়ে পড়লো ওর ক্লান্ত লাগছে। কিছু ক্ষনের মাঝে ঘুমিয়ে ও পরলো।

স্নেহা ওইভাবে কিছু ক্ষন থেকে কান্নার মাত্রা কমিয়ে ওইভাবেই ঘুমিয়ে পরে।
সন্ধ্যায় পর ঘুম থেকে জাগে। উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে বারান্দায় যায়।
বারান্দায় এসে কিছু ভালো লাগে কিন্তু এখানে খুব ঠান্ডা লাগছে।গায়ে শীতের জামা নেই ব্যাগ থেকে বের‌ই করা হয় নাই‌। ঠান্ডা বাতাস আসছে অনেক ভালো লাগার সাথে শীতে কাঁপছি ও গায়ে কাঁটা দিয়ে যাচ্ছে।
অন্ধকারে হয়ে এসেছে।
রুমে এসে অন্তরার আনা খাবারে নজর যায়।
কাছে গিয়ে দেখে নষ্ট হয়েছে কিনা হয় নাই কিন্তু এখন না খেলে নষ্ট হয়ে যাবে।তাই খেতে বসে। কষ্টের জন্য খাবার নষ্ট করা উচিত না। তাই খেয়ে নেয়।

একজন সেটা আড়াল থেকে দেখে ।
সেও না‌ খেয়ে ছিল এবার তার মুখে হাসি ফুটে উঠে সে নিজে ও খেতে যায়।
চলবে♥️

#অচেনা_শহর 💖
#লেখিকা_তানজিনা_আক্তার_মিষ্টি
#পর্ব:–২৫

ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।
চোখ মেলে ফোন হাতে নিয়ে দেখছি কতো বাজে। ছয়টা বাজে। সকাল হয়ে গেছে। এই সময় কে কল করেছিল। কল কেটে যাওয়ায় আর না ভেবে ঘুমানোর চিন্তা করি। কিন্তু সাথে সাথে আবার ফোন বেজে ওঠে তাকিয়ে দেখি আদ্রর নাম্বার‌। আদ্রর নাম্বার দেখেই আমার ঘুম ছুটে যায়।
আদ্রর কল করেছে কেন এ সময়?
ভাবতে ভাবতে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ঝাঁজালো কন্ঠস্বর আসে।

“এতোক্ষণ লাগে ফোন রিসিভ করতে? তারাতাড়ি উঠে দরজা খুলো আমি বাইরে আছি।”

আমি তার কথা শুনে ই ভয় পেয়ে যায়।তার থেকে বেশি অবাক হয় দরজা খুলতে বলায়‌।

“কি বলছেন দরজার বাইরে আছেন মানে?”

“বাংলা কথা বুঝ না। এক ঘন্টা যাবত এখানে আছি কতো গুলো কল করছি হিসেব নাই। আর এখন তুমি আমার কাছে কৈফয়ত চাইছো।”

“আমি এই সাত সকালে বাইরে কেন আসবো।স্যাররা কি আসতে বলেছে।”

“দুই মিনিটের মাঝে না আসলে আমি তোমার রুমে চলে আসবো কিন্তু।”

আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই কল কেটে গেছে।
ফোন কানে থেকে নামিয়ে হা করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি।কি করবো বুঝতে পারছি না।
এই সময় বাইরে কেন যেতে বলছে আর উনি বা বাইরে আছে কেন?
শীত কাঁটা দিচ্ছে গায়ে এই সময় কেন যেতে বলল,
না আমি যাব না কিন্তু যদি সত্যি রুমে চলে আসে তাহলে কি হবে?উফ আর ভাবতে পারছি না এখানে এসে আবার জ্বালানো শুরু করছে।
উনাকে বিশ্বাস নাই সত্যি যদি রুমে চলে আসে তার থেকে একটু শুনে আসি কি জন্য।

উঠে চুল খোপা করে ওরনা দিয়ে মাথা ও শরীর ঢেকে নিলাম ভালো করে। শীতের জামা পরলাম না এসেই আবার শুয়ে পরবো ভাবলাম।
উঠে দরজা খুলতেই চোখ পরলো আদ্রর দিকে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সে।
পেছনে ফিরে ছিলো দরজার শব্দ এদিকে ফিরে তাকায়। আদ্রর আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। কিন্তু আমার সেগুলো দেখার টাইম নাই আমি তো রেগে জিজ্ঞেস করলাম,,

“আপনি এখানে কি করছেন?”

সাথে সাথে বলে উঠলো,, “তোমার জন্য অপেক্ষা।”

“হোয়াট?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
শীতে জমে যাচ্ছি দাঁড়ানো যাচ্ছে না। রুমে ভেতরে এতো ঠান্ডা লাগে নি এখন লাগছে। আমি তাই কথা বাদ দিয়ে ভেতরে এসে চাদর নিতে চাইলাম এজন্য দরজার কাছে থেকে ঘুরে গেলাম।

কিন্তু হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রর আমার হাত ধরে আছে।
আমার দিকে তাকিয়ে শুধু একটা কথা বললো,,,”চলো।”

আমি কিছু বলার আগেই সামনে এগুতে লাগলো। কিছু বলার সুযোগ ই পেলাম না হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে। আর ভাবছি চলো মানে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে এই সাত সকালে।

“আরে আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে ছারুন হাত।ধরাধরি পছন্দ করি না একদম।”

“বেশি কথা না বলে হাঁটতে লাগো।”

“আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।ছারুন আমার হাত। আমি আপনার সাথে কোথা ও যাব না।”

আদ্রর কিছু বলছে না নিজের মত চলতেছে‌।
রিসোর্টে বাইরে চলে এসেছি আদ্র আমার হাত ছারছেই না আমি চেষ্টা করে ও ছারাতে পারছি না।
এতো শক্ত করে ধরেছে।

“আমি না চাইলে আমার হাত থেকে তুমি নিজেকে ছারাতে পারবেনা।তাই বৃথা চেষ্টা করে নিজের শক্তির অপচয় করো না।”

রেগে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে এমনিতেই শীতকাল তার উপর এখানে আর ও বেশি শীত গায়ে কাঁটা দিয়ে যাচ্ছে। হাত পা ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে।আদ্রর ইচ্ছে করে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
আমি সিউর এই লোকটা প্রথম দিন থেকে ই আমাকে সব রকম কষ্টের সামিল করেছে এখানেও তাই করছে। এই শীতে আমাকে বাইরে এনে সেটাই প্রমান করছে সেই দেখেছে আমার শরীরের কোন শীতের পোশাক নাই ওমনি জোর করে ধরে বাইরে নিয়ে এলো।
যাতে শীতে আমি আধমরা হয়।

নিজে তো দিব্যি সব পরে এসেছে।
অজান্তে ই চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
উঁচু নিচু রাস্তা ধরে হাঁটছি তখন আমি আদ্রর থেকে চোখ সরিয়ে হাঁটতে লাগলাম। অসভ্য লোকটার দিকে তাকাবো না। শীতে কাঁপছি। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে হচ্ছে। আর ও কিছু টা রাস্তা হাঁটলাম।

হঠাৎ আদ্রর থেমে গেল। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম কিছু বলবো তার আগে আদ্র‌ই বলল,

“তোমার শীতের পোশাক ক‌ই।”

কথাটা শুনে আমার আমার এতোটা রাগ হলো যে বলে বুঝাতে পারব না।কটমট চোখে তাকিয়ে র‌ইলাম অসভ্য , ইতর, হনুমান বাঁদর একটা ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে এনে এখন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে শীতের পোশাক কোথায়?

“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? আন্সার মি।”

“একদম নাটক করবেন না। কি বুঝাতে চাইছেন আপনি জানতেন ই না আমি শীতের পোশাক পরি নি। ”

“অফকোর্স জানতাম‌ই না তো জানলে কি এভাবে আনতাম তোমায়।”

“আপনি ইচ্ছা করে এভাবে এনেছেন যাতে শীতে আমাকে কষ্ট দিতে পারেন আমি ভালো করে জানি। তাই নাটক করে লাভ নাই।”

“জানো ভালো।”

আচমকা আদ্র নিজের জ্যাকেট খুলে আমার দিকে বারিয়ে দিলো আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি সেটা দিকে‌। সেটার থেকে চোখ সরিয়ে আদ্রর দিকে তাকালাম।

“পরে নাও।”

হা করে তাকিয়ে আছি।

“মানে।”

সব কিছুর এতো মানে খুজো কেন? এই শীতে কাঁপছে কেমন দেখেছো আর একটু হলে ঙ্গান হারাবা আর আমি তোমাকে অঙ্গান করতে চাইনা না হলে হতো কষ্ট দিতে পারবো না ঠিক মতো।
অতো খারাপ হলে এতো সব চিন্তা করতে পারে।

“কি হলো পরো‌?”

“নাহ পরবো না।”

এবার আদ্র চিৎকার করে উঠল,,, “একটা বাড়তি কথা শুনতে চাই না। তারাতাড়ি পরো।”

আদ্রর চিৎকার শুনে আমার আত্মা উড়ে যাওয়ার উপক্রম।ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছি কানের তালা মনে হয় ফাটিয়ে ফেলেছে।

“পরবে নাকি এই যে পাহাড় দেখতে পাচ্ছ এখানে থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো।”

পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালাম।আর না করার সাহস পেলাম না শুরশুর করে জ্যাকেট হাতে নিলাম।পরার জন্য।
অগ্যতা পরতে হলো।
আবার আদ্র আমাকে নিয়ে হাটতে লাগলো।
আসতে আসতে এগিয়ে যাচ্ছি আর আমাদের মতো অনেক মানুষের দেখা মিলছে। আমি সবার দিকে একবার তো আদ্রর দিকে একবার তাকালাম।
আদ্রর দৃষ্টি সামনে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দাঁড়ালাম দুজনে।

এখানে এসে আমার হাত ছেড়ে দিল আদ্র এতো ক্ষন নজর আদ্র উপর ছিলো কিন্তু এখন আমার নজর মেঘের উপর। হা করে তাকিয়ে আছি।এমন কিছু দেখবো আমি কল্পনাতেও ভাবি নি।
মনে হচ্ছে কোন মেঘের দেশে চলে এসেছি।
বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি মুগ্ধ হয়ে।

আদ্র খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিকে এক দৃষ্টিতে। স্নেহার ঠোঁটে হাসি চোখ বড় বড় করে দেখছে। আর লাফাচ্ছে ও যে অনেক খুশি হয়েছে তা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।খুশি ওর চোখে জল গড়িয়ে পরছে। হঠাৎ স্নেহা ছুটে আদ্রর কাছে আসে।

“এটা আমাকে কোথায় নিয়ে এলেন মনে হচ্ছে মেঘের দেশে চলে এসেছে।সব কিছু সপ্নের মতো‌ লাগছে আমি কি সপ্ন দেখছি সুন্দর সপ্ন যেটা আপনি দেখালেন।”

স্নেহার উজ্জ্বল হাসি মুখ দেখে আদ্রর মুখেও হাসি ফুটে উঠে ও তো এই হাসি দেখার জন্য এতো কিছু করলো।ওর কষ্ট সার্থক স্নেহার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছে।

“আমি এই মেঘ ছুঁতে চাই।”

“আচ্ছা ছ‌ও।”

“কিন্তু কিভাবে।”

আর মতো করো‌ দেখবে মেঘ নিজেই তোমায় ছুঁয়ে দেবে। মাথায় ওরনা খুলে নিয়ো।

বলো আদ্র চোখ বন্ধ করে দাঁড়ায় আদ্রর কথা মতো ও চোখ বন্ধ করে।

🌷
🌷
🌷

আদ্র আগে আগে হাঁটছে আর আমি ওর পেছন পেছন হাঁটছি। এখন আর আদ্র আমার হাত ধরে হাঁটছে না। আমি আর পেছনে হেঁটে যাচ্ছি। মুগ্ধ হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। আমি আজকের মত এত খুশি কবে হয়েছিলাম আমার ঠিক মনে নাই। আসার সময় কত কিছুই না ভেবে আসলাম। কিন্তু এখানে এসে আমি সারপ্রাইজড।আদ্রকে একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে এমন সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।

“এত আস্তে হাটছো কেন তাড়াতাড়ি হাট।”

আদ্র পেছনে ‌ঘুরে আমাকে কথাটা বলে আবার হাঁটতে লাগে আমি দৌড়াতে পাশাপাশি এসে দাঁড়ায়। আদ্রর সাথে হাঁটতে পারছে না ওর তাড়াতাড়ি হাঁটছে।

রিসোর্টে এসে আমি আমার রুমে চলে যায় আর আদ্র ও চলে যায়। এর মাঝে আর আমাদের মধ্যে কোন কথা হয়না।
রুমে এসে দরজা আজকে পেছনে ঘুরতে দেখি অন্তরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে।
আমি কিছুটা থতমত খেয়ে যায়।

“কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”

খাটের অপর পাশে বসে কম্বলের নিচে পা ঢুকিয়ে।

“তুই কোথায় গিয়েছিলি?”

অন্তরার কথা শুনে স্নেহা একটা শুকনো ঢোক গিলে। আদ্র সাথে যাওয়ার কথা কাউটা বলা যাবে না তাহলে ও নেগেটিভ ভাববে। ফোন দিয়ে আদ্র আমাকে যা বলছে সব ওকে বলেছি। আর ওসব শুনে বলেছে আদ্র নাকি আমাকে লাইক করে এ্যান ত্যান। আরে এসব শুনলে তো আমারও বেশি করে বলবে। কিন্তু আমিতো জানিনা আমাকে দিয়ে এ সব কেন করাচ্ছে।
কষ্ট দেয়ার জন্য। ডিস্টার্ব করে বিরক্ত করে ও শান্তি পায়। আজকেও ঠান্ডায় আমাকে আধমরা করে নিয়ে গেছে তারপরে এই সারপ্রাইজটা সত্যি কেন দিলে আমাকে। আমি কনফিউজড কিন্তু সেটা আমাকে দিতে চাইনাই। আমি জানি আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নিয়ে গেছিল পরে সারপ্রাইজ দিয়ে ফেলেছে।

ওই কি ভাবছিস বললি নাতো কোথায় গিয়েছিলি।

কোথায় যাবে সাতসকালে শীতের মধ্যে কোথাও যাইনি ওই তো একটু বাইরে গিয়েছিলাম আর সাথে সাথে চলে এসেছি। তুই কখন উঠলি।

আচ্ছা সাথে সাথে চলে এসেছিস তাহলে তোর গায়ে জ্যাকেট টা কার? আর সাথে সাথে মানে আমি কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে জেগে ছি।

জ্যাকেটের কথা শুনে আমার কাশি উঠে গেল।
জ্যাকেটের কথা তো আমার মনেই ছিলনা। আদ্রর কেউ জ্যাকেট ফেরত দেওয়া হয় নাই।

অন্তরা আমাকে জেরা করা শুরু করলো।
এই জ্যাকেট কোথায় পেলাম এটা কার‌ জ্যাকেট।
এমন ভাবে চেপে ধরল যে আর লোকাতে পারলাম না সব বললাম।
ও সব শুনে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

“আমি বললাম না আদ্র ভাইয়া তোকে লাইক করে আজ তো বিশ্বাস করবি।”

“আবার এক কথা এজন্য তোকে বলতে চাই নাই।”

“তা বলবি কেন আমি তো সত্যি বলি মা আপনে বিশ্বাস করতে চান না।”

“তোর ফালতু কথা কেউই বিশ্বাস করবে না।”

দুজন তর্কাতর্কি করে চললো কিছু ক্ষন।

চলবে♥️

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ২৬

ব্রেকফাস্ট টাইমে আদ্রর জ্যাকেট নিয়ে নিলাম সাথে তখন দেওয়া হয় নাই এখন না হয় দিয়ে দেব। আসার সময় দিতে পারি নাই।কিভাবে বা দিতাম আদ্র তো একা থাকেই না সব সময় ওর সাথে অর ফ্রেন্ড থাকে ভেবেছি এক পেলেই গিয়ে দিয়ে আসব।
ওরনা আড়ালে লুকিয়ে খাবার টেবিলে বসে আছি আবার কে দেখে ফেলবে। সেই ভয়ে?
আদ্র জ্যাকেট আমার কাছে দেখলে অবশ্যই সবাই সন্দেহ করবে আবার নানা প্রশ্ন করবে। তার থেকে এটা লুকানো থাকাই ভালো।

খাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেক বেরিয়ে আদ্রকে একা পেয়ে গেলাম। আদ্রর বন্ধুরা এক পাশে আর ও কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। হয়তো ফ্যামিলির কারো সাথে।
আমি গুটিসুটি মেরে ভাবতে লাগলাম আমি এই দিক দিয়ে আদ্রর কাছে গেলে কি কেউ বুঝে ফেলবে না তো আমি আদ্রর দিকে যাচ্ছি। চিন্তা ভাবনা এক পাশে ফেলে আদ্রর কাছে যেতে লাগলাম। জ্যাকেটটা আদ্রকে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত।
আমি ঠিক আদ্রর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে।

আদ্র কথা বলা শেষ করে পেছন ফিরে স্নেহাকে দেখে অবাক হল ভ্রু কুঁচকে ওকে জিজ্ঞেস করল….

” তুমি এখানে কি করছ?”

স্নেহা কিছু না বলে ওর ওরনার আড়াল থেকে জ্যাকেট টা বের করে আদ্রর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল….

“এই যে আপনার জ্যাকেটটা আমার কাছে ছিল। তখন দিতে মনে ছিল না নিন আপনার জ্যাকেট।”

আদ্রর জ্যাকেট টা ধরতেই স্নেহা দ্রুতপায়ে সেখান থেকে চলে গেল।
স্নেহা সোজা অন্তরা কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

“কিরে কোথায় গেছিলি?”

স্নেহা বলার আগে অন্তত আবার বলে,

“তা আদ্র ভাইয়ের জ্যাকেটটা কি করলি? ”
আদ্রর দিকে তাকিয়ে অন্তরা স্নেহার দিকে ভাল করে তাকিয়ে বলে,

“এই জ্যাকেট আবার কখন ফিরিয়ে দিয়ে এলি। আমাকে না বলেই আমাকে একটু নিয়ে যেতি‌।”

“ওই এখনিতো দিয়ে এলাম।”

“বাব্বাহ একাই গেছিলি।”

“দেখ ওরকম কিছু না আমি জাস্ট উনাকে গিয়ে ওনার জ্যাকেটটা ফিরিয়ে দিয়ে চলে এসেছি। ব্যাস এটুকুই।”

“আরো কিছু তো হতে পারে আমি কিভাবে জানবো তুই কি আমাকে নিয়ে গেছিলি।”

“তুই কি বলতে চাস?”

“কিছু না‌। শোন, চল একটু সাজুগুজু করে আসি এখন ঘুরতে বের হবে।”

আমি চুলটা বেঁধে ঠিকঠাক হলাম।অন্তর সাজতে লাগল।

“কিরে এভাবে বসে আছিস কেন?”

“তো কি করব তাড়াতাড়ি কর।”

“আরে আমি সাজছি দেখতে পারছিস না তুই। তুই ওসাজ এভাবে বসে না থেকে আর এভাবে যাওয়ার প্ল্যান করছিস নাকি।”

“এতে আবার প্ল্যান করার কি আছে আমি এভাবে যাব। আমি সাজি না তুই সেটা ভালো করে জানিস।”

“আল্লাহ, সবসময় না সাজিস এখন তো একটু সাজুগুজু কর।এখানে আমরা বেড়াতে এসেছি সবাই কত সাজবে দেখিস তুই একাই এভাবে গেলে কেমন দেখা যাবে।তোর নিজের ই ভালো লাগবে না দেখিস।”

“আমি এভাবেই ঠিক আছি রে।’

অন্তরার কিছু বললো না নিজের মত সাজুগুজু করতে লাগলো। তারপর দুজনে রুম থেকে বেরিয়ে দেখা পেল হৃদয়ের। ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে হৃদয়। আমি একবার অন্তরার দিকে তাকালাম ও লজ্জা পাচ্ছে। ওদের রিলেশন এ যাবার পর মনে হয় যতবার আমি একসাথে দেখেছি ততোবারই অন্তরা লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু আগে এইটা ছিলনা। অন্তরা সব সময় রাগী ভাবে তাকিয়ে থাকতো।

হৃদয় হাসিমুখে আমাদের সামনে এসে দাড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল,,

“কেমন আছো স্নেহা?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাই আপনি কেমন আছেন?”

“এইতো তোমার বান্ধবী যেরকম রাখছে ওই রকমই আছি। চলো তাহলে যাওয়া যাক।”

কথাটা শুনে আমি একা একা হাটতে লাগলাম আগে আগে। আর এদিকে অন্তরা আর হৃদয় কথা বলতে বলতে আমার কিছুটা পেছনে আসতে লাগলো।

রিসোর্ট এর বাইরে এসে সবাই জিপে উঠে বসে হেলিপ্যাড যাওয়ার জন্য রওনা হলাম।হেলিপ্যাড থেকে আমরা রওনা হলাম কংলাক পাড়ার উদ্দেশ্যে।
কিন্তু সম্পূর্ণ রাস্তা জিপে করে যাওয়া গেলোনা কারণ পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে।
সুরু চিকন উঁচু নিচু রাস্তা বেয়ে সবাই হেঁটে যেতে লাগলাম। আশেপাশে শুধু সবুজ গাছের সমাহার। কংলাক পাড়া পৌঁছাতে আমাদের এক ঘন্টা লাগল।
এখানে আসতে আসতে দুপুর হয়ে গেছে। লাঞ্চ এইখানের করা হলো।
এখানকারই জনপ্রিয় খাবার বাম্বু চিকেন।
সবাই নিজেদের মত ছবি তোলায় ব্যস্ত। আর আমি চারপাশ দেখতে ব্যস্ত। এখানে এসে আমার লাভ বয়ে ক্ষতি হয়নি।অনেক জিনিস দেখতে পাচ্ছি নিজের গ্রাম আর ঢাকায় এসে ভার্সিটি অবদি আমি সীমাবদ্ধ ছিলাম। সত্যি এখানে নিজেকে মুক্ত পাখির মতো লাগছে। বড় একটা শ্বাস ফেলে ব্যস্থ হয়ে পরলাম সব কিছু দেখতে।

আর কোথাও যাওয়া হলো না কালকে নাকি একটা ঝর্ণা আছে ঐখানে যাবে আর কি যেন একটা নাম শুনেছিলামএখন ঠিক মনে নাই আমার আগামীকাল সন্ধ্যায় আবার ব্যাক করতে হবে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
সন্ধ্যার দিকে সবাই রিসোর্টে ফিরে এলাম সবাই ক্লান্ত।যে যার রুমে চলে যাচ্ছে আমিও ক্লান্ত অন্তরা হৃদয়ের সাথে আছে তাই ওকে না ডেকে আমি নিজেই রুমের দিকে যেতে লাগলাম।
কিছুটা এগিয়ে আমাদের রুমের সামনে আমার চোখ পড়ল আদ্র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছি রুমে না ঢুকে সে ওই রুমে কি করছে এইটা আমার ভাবনা। হঠাৎ আদ্র রুমের ভিতরে ঢুকে পরল। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি এটা কি হলো তাহলে কি এই রুমে আদ্র থাকে।
চিন্তা ভাবনা করতে করতে রুমে এলাম আমার আবার এই রুমে এসে বারান্দায় না আসলে ভালো লাগে না। তারেক সোজা বারান্দায় চলে এলাম। হঠাৎ আদ্র ওই রুমে ঢুকেছে মনে পড়ল সাথে সাথে পাশের বারান্দায় তাকিয়ে দেখলাম আদ্র সিগারেট টানছে।
আমি বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

মনে হল বড় একটা জট খুলে গেল।কালকে আমার বারবার মনে হচ্ছিল কে যেন আমাকে দেখছে তীক্ষ্ণ নজরে। আর আমার পাশের রুমে যে আদ্র আছে সেটা তো আমি জানতামই না। তাহলে কি আদ্রর ই আমার উপর নজর রাখতো।
হ্যা আদ্র হবে ওই তো সিগারেট টানছে। এখন আমাকে খেয়াল করে নাই মনে হয়।
কিন্তু আমাকে কেন নজর রাখে কি উদ্দেশ্য তার।প্রথমে ঝগরা করা তারপর ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করা আবার এখানে আসার সিটটা ও আমার তার সাথেই পড়ল। পাশাপাশি রুমে থাকা। আবার এখন মনে হচ্ছে আমার ওপর নজর রাখছে কি মুসিবত। এর উদ্দেশ্য কি জানতেই হবে সিওর কোন খারাপ মতলব আছে।

আজকে এই মুহূর্তে জিজ্ঞেস করবো এর কী মতলব আমার পিছনে পড়েছে কেন?আজ এমনভাবে চেপে ধরবো সত্যিটা বলতে বাধ্য হবে। ক্লান্ত নেস মনে হয় আদ্রর চিন্তায় গায়েব হয়ে গেছে। স্নেহা কটমট করে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে। আদ্র আরেক দিকে ফিরে সিগারেট টানছে আর ফোন টিপছি আরেক হাত দিয়ে।
আদ্র শেষ টান দিতে দিতে পেছন ফিরে দেখে স্নেহা ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে।
আচমকা স্নেহাকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় আদ্রর। কারন ও স্নেহাকে জানতে দিতে চাইছিল না যে ওর পাশের রুমে থাকে। স্নেহা ওকে দেখে ফেলল।এমনভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলবে।

“কি ব্যাপার তুমি এভাবে তাকিয়ে আছ কেন আমার দিকে?”

সাথে সাথে স্নেহা মৃদু চিৎকার করে বলে, “আপনার কি মতলব সত্যি করে বলুন। কোন মিথ্যা কথা বলবেন না আপনার খারাপ উদ্দেশ্য টা এই মুহূর্তে আমার সামনে স্বীকার করুন।”

আদ্র হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে।
স্নেহা প্রচুর রেগে কথা বলছে তা ওর চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ এত রেগে যাওয়ার কারন কি? আচ্ছা ওকি দেখে ফেলেছি আমি লুকিয়ে ওর ছবি তুলেছি।সিওর দেখে ফেলেছে মনে হয় সবার সামনে কিছু বলতে পারে নাই তাই এখানে এসে ঝারছে।কিন্তু তখন তো দেখলাম দেখে নাই আমি তো খুব লুকিয়ে সাবধানেই ছবি তুলেছে কয়েকটা।এভাবে লুকিয়ে ছবি তোলার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু ওর ওই উজ্জ্বল হাসিমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে ছবি না তুলে তো আমি থাকতে পারলাম না।এখন কি বলব স্নেহা তো আমাকে জিজ্ঞেস করবে ওর ছবি কেন তুললাম?
চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে যেমন লাগে আদ্রর এখন তেমন লাগছে?

আদ্র ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিকে।স্নেহা সাথে সাথে থমথম গলায় আবার বলে উঠলো,,
“কি হল কথা বলছেন না কেন আমি জানি আপনার উদ্দেশ্য খারাপ না হলে কেন আমার পেছনে পড়বেন।”

স্নেহার অগ্রাহ্য করে আদ্র না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করল,,

“হোয়াট আমার আবার কিসের মতলব থাকবে। আর আমি তোমার পিছনে পড়ে ছি পাগল হয়েছ তোমার পেছনে পড়তে যাব কেন? ওয়েট ওয়েট তুমি আবার ভাবছো না তো আমি তোমাকে লাইক টাইক করি।তাহলে সম্পূর্ণ ভুল আমি তোমাকে ওইসব করিনা ওকে তোমার কোনো যোগ্যতাই নাই আমার পাশে দাঁড়ানো দেখতো আমি কোথায় আর তুমি কোথায়।কোথায় আমি হ্যান্ডসাম স্মার্ট বয় সবাই আমার জন্য পাগল আর আমি কিনা তোমাকে লাইক করবো হাউ ফানি।”

“দেখুন একদম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবেন না। আমি একবারও বলি নাই যে আপনি আমাকে লাইক করেন।আমি আপনাকে বলছি আপনার উদ্দেশ্য কি আপনি আমার পেছনে পড়েছেন কেন আর এভাবে ডিস্টার্ব‌ই করছেন কেন আর আমার উপর নজর রাখছেন কেন? এ সব প্রশ্নের উত্তর চাই আমি।”

“দেখ না আমি তোমার পেছনে পড়েছি আর না তোমার উপর নজর রাখছি ফালতু করছেন করবে না।”

“দেখুন আমি শিওর আপনি আমার উপর নজর রাখছেন কি উদ্দেশ্য বলেন বলছি‌।”

“দেখো বারবার এক কথা বলবে না। এক্সিডেন্টলি তোমার পাশের রুম টা আমার হয়ে গেছে।”

“আপনি আমাকে ফোন দিবেন না।”

“মন চাইলে দেবো আমার আবার যেটা মন চাই সেটা আমি না করে থাকতে পারি না তাই তোমার কথাটা ততক্ষণ অব্দি থাকবে যতক্ষণ আমার মন তোমাকে ফোন দিতে চাইবে না।”

“আপনি কি চান বলেন তো!”

“তোমার কি আছে আর আমি কি যাইবো। আচ্ছা তুমি যেহেতু এত আমাকে কিছু দিতে চাও সময় সুযোগ বুঝে চেয়ে নেব।”

“আপনি আসলে একটা অসভ্য লোক। আমি কখন বললাম আমি আপনাকে কিছু দেবো।”

“তুমি নাই মাত্র বললা আমি কী চাই জানতে চাও।”

“পাগল হয়ে যাব আমি আপনার সাথে কথা বলে। যত সব ফালতু কথাবার্তা বলে আমার মাথা নষ্ট করে ফেলেন।”

“আচ্ছা যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও পাগল হওয়ার দরকার নেই আমি সারাজীবন পাগল টানতে পারবো না।”

“কি বললেন আপনি পাগল টা টানতে পারবেন না মানে।আমি আপনাকে আবার পাগল টানতে কখন বললাম।”

“ওসব তুমি বুঝবে না।”

“আপনার ফালতু মার্কা কথা আমি বুঝতে ও চাই না।”

“বুঝতে তো তোমাকে হবেই আজ না হোক কাল। আর একটা কথা তুমি রাগলে তোমার নাক আর গাল পুরো লাল হয়ে যায় দেখতে,,

বলতে গিয়েও থেমে গেল আদ্র তারপর হাতের সিগারেট বারান্দায় দিয়ে ফেলে ভেতরে চলে গেল।
স্নেহা বিস্ময় চোখে আদ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

“এই স্নেহা তুই এখানে কি করছিস। তুই না আমার আগে চলে এলি রুমে এখনো ফ্রেস হোস নাই।”

অন্তরার কথায় স্নেহার ধ্যান ভাঙে ও ফ্রেশ হতে চলে যায়।

আদ্র রুমে এসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে এতো খন চোর মনে হচ্ছিল। কিন্তু আমি যেটা নিয়ে ভয় করছিলাম সেটা হয় না। স্নেহা অন্য কারণ এভাবে বলেছে। ছবি ব্যাপারটা না বলে ভালোই হয়েছে। এটা মনে হয় স্নেহা জানেই না।
খুব বাঁচা বেঁচে গেছি।

নয়টার পরে ডিনার শেষে সবাই রিসোর্টের বাগানে এলাম। বাগানে হালকা শীতে সবাই গল্পের আসর বসিয়েছে। শীত হওয়ায় আগুন জ্বালিয়েছে।আর আগুনের চারপাশে সবাই গোল হয়ে বসেছে।প্রথমে ঠান্ডা লাগলো আগুনের তাপে এখন অতটা শীত লাগছে না বরংচ সবার মাঝে ভালো লাগছে। সবাই গল্পের আসর বসিয়েছে। হাতে কফি গরম গরম কফি আছে আর গল্পে মশগুল।
কফি খাওয়া শেষে গানের আসর বসলো। আমায় ঠিক সামনে আদ্র বসেছে।
কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।

অসস্থি হচ্ছে তবুও কিছু বলতে পারছি না কিন্তু আদ্রর এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ টা বুঝতে পারছিনা‌।
গান শুরু হলো দ্বিতীয় বর্ষের একটা ছেলে নাম তাহসান সে গাইল ফাস্ট গলাটা মুটামুটি ভালো সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনলাম।তারপর রিতা আমাদের ক্লাসের। এরপর একে একেগান চলতেই লাগল।
অনেক জন গাইল আমাকেও বলা হয়েছিল আমি সাথে সাথেই না করে দেয়। কারণ আমি গান পারিনা আর কখনো গাই ও নি।

এবার আদ্রর গাইবে।বাবা কি স্টাইল করে বসলো তারপর গলা ঝেড়ে গাইতে লাগলো,
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এখনো আমার দিকে ই তাকিয়ে আছে। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি‌।আজকে এর উওর ও আমি চাইবো আমার দিকে এমন বেহায়ার মত তাকিয়ে আছে কেন?
স্টুপিট একটা।মুখ ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালাম এর গান শুনতে ই চাইনা।

🌹🌹🌹তোর মন পারায় থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল ওই উদাশ পারার বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনা
অভিমানী মন আমার চায় তোকে বারবার
অভিমানী মন আমার চায় তোকে বারবার তাই বলি আয়রে ছুটে আয়
তোর মন পারায় থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল ওই উদাশ পারার বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনা
তোর হৃদয় আঙিনায় থাকতে আমি চায়
তুই ছাড়া বাঁচার নেই রে উপায়, কিভাবে উড়ে তোকে ছেড়ে , একাকি আমি জীবন কাটায়,
অভিমানী মন আমার চায় তোকে বারবার
অভিমানী মন আমার চায় তোকে বারবার
অভিমানী মন আমার চায় তোকে বারবার তাই বলি আয়রে ছুটে আয়
তোর মন পারায় থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল ওই উদাশ পারার বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনা
শুধু তোকে ঘিরেই শত সপ্নের ভীড়ে এখন আমার বসবাস,
তুই এলে জীবনে, পাবো বাঁচার মানে, পাবো সুখের‌ই আভাস,
অভিমানী মন আমার চায় তোকে বারবার
অভিমানী মন আমার চায় তোকে বারবার তাই বলি আয়রে ছুটে আয়
তোর মন পারায় থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল ওই উদাশ পারার বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনা
তোর মন পারায় থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়
তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল ওই উদাশ পারার বৃষ্টিতে আজ ভিজবো দুজনা।🌹🌹🌹

স্নেহা উঠতে গিয়ে ও উঠে নি আদ্রর কন্ঠ শুনে এতো সুন্দর করে গাইছে যে স্নেহা উঠতে পারে নাই‌। মুগ্ধ হয়ে আদ্র গান শুনেছে। অপুর্ব গায় আদ্র। অদ্ভুত ভালো লাগা ছেয়ে গেছে কিন্তু আদ্র ও অবাক করেছে স্নেহাকে
তা হলো হাঁ করে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো গানটা গাওয়ার সময়।
গান শেষ হতেই চারপাশ থেকে হাত তালি ও প্রশংসায় শুরু হলো সবার কথা বলা থেকে জানতে পারলাম আদ্রর আগে থেকে গান গায়।সহজে নাকি কেউ ওনাকে গান গাওয়াতে পারে না অনেক দিন পর নাকি আজ এক কথায় গাইলো।
চলবে♥️
® তানজিনা আক্তার মিষ্টি

(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে