প্রত্যাখান_পর্ব(০৫)
লেখা- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা
সেদিনও প্রতিদিনকার নিয়মে অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছিলাম। রুমে আসে মা। জানান দেয়, লাবণ্য’র কেনাকাটা করা দরকার। ওরে নিয়ে যেন একটু কেনাকাটা করে আসি। মাতৃআজ্ঞা! অবশ্য পালনীয়… ঘমার্ক্ত শরীরেই তাই বিছানায় ওঠে বসলাম। গেঞ্জি গায়ে দ্রুত ছুটলাম নিচে। খুব বেশী ক্লান্ত থাকার কারণে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারিনি। বাসা থেকে বের হয়েই তাই রিকশা ডাকি। রিকশা চলতে শুরু করল। লক্ষ্য করলাম, এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রতিবারই ওর চোখ আমার চোখে এসে আটকে যেত। একবার তো ও আমার একটা হাতও চেপে ধরেছিল। আমি তাকাতেই দ্রুত সে তার হাতটা সরিয়ে নেয়। গভীর ভাবনায় ডুবে যাই আমি। আচ্ছা! ও’কে এরকম দেখাচ্ছে কেন? চোখ মুখ এরকম অস্বাভাবিক লাগছে কেন ওর? তবে কি ও আমায়….. ধূর! এসব কি ভাবছি? ও’তো আমাকে বন্ধু বৈ বেশি কিছু ভাবেনি কখনো। আমিই মনে হয় একটু বেশীই ভাবছি…. এই যে আমার হাতে হাত রাখা, চোখে চোখ আটকে যাওয়া, লজ্জা পেয়ে আবার সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে সবগুলোই আমার মনের ভ্রম। ও আমাকে জাস্ট বন্ধু’ই ভাবে, এরচে’ বেশি কিছু নয়। ভাবতে ভাবতে কখন যে মার্কেটের সামনে এসে গেছি টের পাইনি। ঘোর কাটে লাবণ্যর ডাকে। ভাইয়া…. অনর্থক হাসি দিয়ে দ্রুত রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে ভাড়া মিটিয়ে নিয়েছে লাবণ্য। কেনাকাটা শেষে বাসায় ফেরার সময়ও একই ভঙ্গিতে আমার সাথে ওর চোখাচোখি হয়। হয় দৃষ্টির আলাপন। রাত্রি ২টা — বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। অজানা কারণে ভেতরটা হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে যেন খুব প্রিয় কোন জিনিস হারাতে বসেছি আমি। কিন্তু কিসের এত হাহাকার? কেন এমনটি অনুভূত হচ্ছে আমার? নিজের মন নিজেকে এরকম হাজারো প্রশ্ন করলেও কোনটার সঠিক জবাব পাইনি আমি। পরদিন মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ঘড়িতে সময় ৯টা বেজে ১১টা মিনিট। অফিসে যাবো না। তাই ঘুম থেকে উঠার সেরকম তাড়াও ছিল না কোন। বালিশটা খাটে সোজা করে রেখে আধশোয়া অবস্থায় হেলান দিয়ে বসলাম। সালাম দিয়ে প্রশ্ন করলাম মা’কে, কিছু বলবে মা? ধীর কন্ঠে মায়ের জবাব, জানি ভোরে নামাজটা পড়েই ঘুমিয়েছিলি। তা সত্ত্বেও জাগাতে হলো। আসলে লাবণ্যর গ্রামের বাড়ি থেকে কল এসেছে। ওদের জরুরী তলব, লাবণ্য যেন আজই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যায়। এবার পুরোপুরি সোজা হয়ে বসলাম আমি। কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত মনে প্রশ্ন করলাম, কোন সমস্যা? চিন্তিত গলায় মায়ের জবাব, জানি না। যায় হোক, তুই বরং মেয়েটাকে একটু গ্রামের বাড়িতে দিয়ে আয়। মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। মা! আমি? আজ ছুটির দিন। কোথায় আমি একটু বিশ্রাম নেবো। তা না! তুমি আমাকে সুদূরের ঐ নরসিংদী…. পুরো কথা বলতে পারিনি। তার আগেই মায়ের প্রস্থান ঘটে। কি আর করার?! ঐ যে! মাতৃআজ্ঞা অবশ্য পালনীয়…. অগত্যা তাই লাবণ্যকে সাথে নিয়ে বের হতে হলো আমার। দুপুরের দিকে নরসিংদীতে পৌঁছি আমরা। ঐখানে পৌঁছেই আসল ঘটনা জানতে পারি৷ জানতে পারি হঠাৎ ওদের জরুরী তলবের কারণ। ‘লাবণ্যকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।’ চলবে….














