MR AND MRS WHATEVER পর্ব-০৬

0
2003

#MR AND MRS WHATEVER
পর্ব:6
#লেখিকা-Arshi khan

আলহামদুলিল্লাহ আমি ভাল আছি।আর আপনার কল করার কারণে আমার কোন সমস্যাই হয়নি।এখন বলুন তো ঠিক কি কারণে এখন কথা বলতে চাইছেন?(নুসরাত উঠে বসে মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

আসলে আশরাফুল কে শপিং করতে পাঠাবো তোমার জন্য বিয়ের কাপর আনতে।এখন তুমি বল তোমার কি শাড়ি লাগবে নাকি লেহেনগা?(মরিয়ম বেগম)

আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন ?আপনাদের মন মত যা আনবেন তাতেই হবে।তবে একটা কথা বলি আপনার এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বেশি দৌড়াদৌড়ি করবেন না ।আপনার ছেলেকে বলুন তার যা পছন্দ সে কিনে যেন নিয়ে আসে।আর আপনি বাড়িতে রেস্ট করবেন।সন্ধার সময় চলে আসবেন। আর হ্যা আপনি সকালে ব্রেকফাস্ট করেছিলেন?(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

হ্যা সব হবে।আর সকালে আমি ব্রেকফাস্ট করেছি।এখন তুমি বল কি কিনবে আশরাফুল ?নাহলে ও তো বুঝে কিনতে পারবেনা।ওর তো কোন বোন ও নেই যে ওকে হেল্প করবে।(মরিয়ম বেগম মুচকি হেসে)

আচ্ছা শাড়ি কিনতে বলিয়েন।(নুসরাত)

একটা কথা বলব রাগ না করলে?(মরিয়ম বেগম আমতা আমতা করে)

জ্বি বলুন।(নুসরাত উঠে দাড়িয়ে চুল বাধতে বাধতে)

তুমি নাহয় আশরাফুল এর সাথে গিয়ে শপিং টা করে আস।সন্ধার দিকে একেবারে পার্লার থেকে সেজে বাড়ি ফির।(মরিয়ম বেগম)

কিন্তু আমি কিভাবে যাব! আর আমিতো বাড়িতেই সাজব।(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

তোমার কি ওর সাথে যেতে প্রবলেম হবে নাকি ওর সাথে যেতে চাইছ না!(মরিয়ম বেগম ব্রু কুচকে)

না তেমন কিছুই না।আচ্ছা উনি কোন শপিংমল এ যাবে আমাকে বলুন আমি আধা ঘন্টার মধ্যেই বের হচ্ছি?(নুসরাত)

নেও ওর সাথে কথা বলে জিজ্ঞেস করে নেও।এই নেও আশরাফুল নুসরাত এর সাথে কথা বল।(মরিয়ম বেগম ফোন এগিয়ে দিয়ে)

জ্বি আম্মু।
আমি ফোনটা নিয়ে নুসরাত কে বলে দিলাম কোন শপিং মলে যাব।আমি কয়েকবার বললাম আমি আসব নিতে।কিন্ত ও ওর স্কুটি নিয়েই যাবে।ও যে খুব রাগি তা বুঝতে আমার বাকি নেই।কারণ ওর জেদের কারণে আম্মু অপারেশন করতে রাজি হয়েছে।আর ওর প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত সব কিছুই যেন রাগের কারণে করে আসছে।তবে ওকে এই জন্য আমার মোটেও ভাল লাগেনি।ভাল লেগেছে ওর করা পাগলামি দেখে।কেই বা চাইবে এমন জেদি মেয়েকে বিয়ে করতে।তবে ভাগ্য বলে একটা কথা আছে।যদি ভাগ্যে থেকে থাকে তাহলে যেমন করেই হোক বিয়ে হবেই।আমি এরই মধ্যেই রেডি হয়ে নিলাম। বরাবর এই আমার ফর্মাল ড্রেস আপ পছন্দ। তাই বরাবর এর মতো একটা শার্ট, পেন্ট আর হাতে পছন্দের ঘড়ি পড়ে বের হয়ে গেলাম শপিং মলের উদ্দেশ্য।শপিং মলে যেতে এক ঘন্টা লাগল। গিয়ে আমি নুসরাত কে কল করলাম।
হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম তুমি কোথায়?(আশরাফুল নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

এইতো আমি শপিং মলের ভেতরে একটা সাইটে বসে আছি।আপনি কোথায়?(নুসরাত আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

এইতো আমি মলের বাইরেই আছি।তুমি বস আমি আসছি।(আশরাফুল নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

কিছুক্ষণ আগেই শপিং মলে আসলাম।বাইরে খুব ভির দাড়িয়ে থাকা খুব কষ্টকর তাই ভেতরে এসে বসে আছি।হঠাৎই দেখি আশরাফুল এইদিকে এগিয়ে আসছে।বাহ বাহ বেশ সুন্দর লাগছে তো দের ব্যাটারিকে।মাসাআল্লাহ দের ব্যাটারি হলেও। উনি এসে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে কোন কথা না বলে।হঠাৎই ওনার চোখ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।
চলুন শপিং করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে তো?(আমতা আমতা করে নুসরাত)

বোরখা পড়নি কেন?(আশরাফুল দাঁতে দাঁত চেপে)

আমিতো সব সময় বোরখা পরি।তবে কাজের জন্য বের হলে বোরখা পরি আর কলেজ গেলে বোরখা পরি।তবে মাঝে মধ্যেই পরি না।(নুসরাত আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

কেন বোরখা পড়লে সব সময়ই পড়বে।আর না পড়লে নাই।তবে একটা কথা বলে নিচ্ছি আমাদের বিয়ের পর বোরখা ছারা বের হতে পারবেনা। (আশরাফুল রাগি সুরে)

কিতা হয়েছে সমস্যা কি তোমার !একদম আমার সাথে জোর দেখাবানা।আর হ্যা বোরখা আমি সব সময়ই পড়ি।আসলে আশার সময় বোরখা টা ছিরে গেছে রিক্সার সাথে লেগে।তাই শপিং মলে এসে খুলে রেখেছি।তোমাকে রেখে শপিং করতে গেলে তো আবার রাগ করবে তাই দাড়িয়ে আছি।যত্তসব বিয়ের আগেই জোর দেখাতে আসে।মন চায় ধোইরা আছাড় মারি।(বলেই হাটা দিলাম নুসরাত)

আজিব মেয়ে একবার বিয়ে টা করি তোমার সব বাকা রগ গুলো জদি সোজা না করছি আমার নাম ও আশরাফুল না।Mrs Whatever তোমার রাগ জদি ভেঙ্গে চুরমার না করছি দেখ আমার নাম চেঞ্জ করে ফেলব।ভাবতে ভাবতেই ওর পেছনে হাটা দিলাম। ও প্রথম এই একটা বোরখার দোকান থেকে একটা বোরখা কিনে নিল।ও বিল দিতে চাইলে আমি বিল দিয়ে দিলাম। হবু বউ কে সব শপিং করে দেওয়া আমার দ্বায়িত্ব।এরপর ওর জন্য বিয়ের শপিং টা করে নিলাম। ও কেন জানি বেশি দামি কিছু কিনল না।মাত্র দশ হাজার টাকার মধ্যেই সবকিছু কিনল।এর মধ্যেই আম্মুর জন্য ও শাড়ি কিনেছে।আমি বেশ অবাক হলাম তাই জিজ্ঞেস করেই বসলাম কেন এত্ত কম দামি জিনিস কিনল?(আশরাফুল নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

আসলে আপনার আম্মুর মানে আন্টির পরশু তো অপারেশন এ অনেক টাকা লাগবে তাই এখন কম শপিং করলাম।আর পরেও যেহেতু বড় অনুষ্ঠান করা হবে তখন না হয় দামি কিছু দিয়েন।তাছাড়া আমার সাজের সব কিছু বাড়িতে আছে।আর আমার কোন বোন নেই তাই আমার সব কিছুই আমার সাথেই নিব।(নুসরাত মুচকি হেসে)

ওকে।
ওর এই কাজ গুলোর জন্য ওর প্রতি ধীরে ধীরে আমার মনে ভালোবাসার সৃষ্টি হচ্ছে।আসলেই ও একজন পারফেক্ট মানুষ আমার জন্য। (আশরাফুল মনে মনে)

বিকাল পাচঁটার দিকেই আমি বাড়ি ফিরে আসলাম। উনি আমার সাথেই সব শপিং দিয়ে দিল রেডি হয়ে থাকার জন্য। আমি এসে ফ্রেশ হয়ে নিজের মত সেজে নিলাম। সন্ধার পরেই আমার কিছু নিকট আত্মীয় এসে পৌঁছেছে।আমি রেডি হতে হতে রাত আটটা বেজে গেল। ওনারা আসলেন রাত সাড়ে আটটার দিকে।সবাইকে আব্বু খুব সুন্দর ভাবে যত্ন করছেন।রাত নয়টার দিকে কাজি এসে আমাদের বিয়ে পড়িয়ে গেলেন।ওনাকে এনে আমার পাশে বসানো হল।আন্টি আমার দিকে ভাল মতো লক্ষ করে আমার পাশে বসে বলল।(নুসরাত )

তুমি সত্যি কি কালো?(মরিয়ম বেগম)

আসলে হয়েছেকি?(আমতা আমতা করে নুসরাত)

আম্মু পড়ে বলবে এখন এত্ত মানুষের সামনে আর জিজ্ঞেস করনা।তুমি বরং খেয়ে নাও তারপর ঔষধ খেতে হবে।(আশরাফুল মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

আচ্ছা। (মরিয়ম বেগম)

কিছুক্ষণ পর আমাদের ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হল।খাওয়ার পর আমাকে নিয়ে ওনারা রওনা দিবেন এমন সময়ই আম্মু আমাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করল।আর আমি এত্ত স্ট্রং হওয়ার পর ও আম্মুর কান্না দেখে নিজেকে আর শক্ত রাখতে পারলাম না।আমিও আম্মুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলাম।
আম্মু আমি যাব না।আমি যাব না আম্মু আমি তোমাদের সাথেই থাকব।(নুসরাত চিৎকার করে কান্না করতে করতে)

আমি আমার মেয়ের কান্না দেখে নিজেকে ও আটকে রাখতে পারলাম না ওর আম্মুর থেকে ছাড়িয়ে আমি ওকে জড়িয়ে কান্না করে দিলাম।আমার মেয়েটার প্রতি আমার ভালোবাসা গুলো কোনদিন দেখাতে পারিনি আমি।মেয়েটা তার জিদ দেখিয়ে তার আম্মুর সাথেই বেশি মিশেছে। ওর কাছে আমি আদর্শ বাবা হতে পারিনি।তবে আমি খুব করে চাই ও যেন ওর শাশুরী ও ওর স্বামীর মনের মত হয়ে আর ওরা ও যেন আমার মেয়ের মনের মত হতে পারে।
আশরাফুল বাবা আমার মেয়েটার দ্বায়িত্ব আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম ।তুমি ওর দোষ গুন সব মাফ করে ওর গুন গুলোর দিকে একটু খেয়াল কর।আর মরিয়ম তুমি আমার মেয়েটার দিকে একটু খেয়াল কর।বাচ্চা মেয়ে ভুল করলে বুঝিয়ে বল ও ওর সবটা দিয়ে তা ঠিক করে নিবে।(মামুন জামান অনুনয়ের সুরে)

আমি আমার সবটা দিয়ে নুসরাত কে দেখে রাখব।আর ওকে আমার মেয়ের মতো করে দেখে রাখব।এখন তাহলে আসি অনেক রাত হতে চলল।আর তোমরা আর কেঁদ না ওতো আমাদের কাছেই যাচ্ছে ওকে দেখে রাখা আমাদের দ্বায়িত্ব।ওর কোন অসুবিধাই হবেনা।(মরিয়ম বেগম আশ্বস্ত করে)

আচ্ছা আমার মেয়ের খেয়াল রাখবেন আপা।আপনাদের ভরসায় আমি আমার ছোট মেয়েটাকে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি।আশরাফুল বাবা আমার মেয়েটার খেয়াল রেখ।(রিতা বেগম কান্না করে)

জ্বি আন্টি আমি আমার সবটা দিয়ে ওকে দেখে রাখব।আপনারা টেনশন করবেন না একদম। এখন তাহলে আমরা আসি।(আশরাফুল নুসরাত এর হাত ধরেই)

ঠিক আছে।(মামুন জামান)

এর পর আমি আমার নতুন গন্তব্যের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম আমার নতুন সম্পর্কের টানে।ভাবতেই কেন জানি খুব অবাক লাগছে আমি এমন একজন এর স্ত্রী যার আম্মু আমার আব্বুর ভালোবাসার মানুষটি ছিল। বাড়িতে পৌঁছানোর পর আমাকে বরন করা হল। রাতে যেহেতু বিয়ে করানো হয়েছে।তাই আর এসে খাবার খাওয়ার কোন প্যারা ছিল না।আর আম্মু (মরিয়ম বেগম)যেহেতু অসুস্থ তাই আমাদের জলদি ঘুমানোর কথা বলে তার ফ্রেন্ড রা চলে গেল। আশরাফুল এর ফ্রেন্ড রা বাসর সাজিয়ে গেছে।সেখানেই আমি বসে আছি।বেশ কিছুক্ষন পর আশরাফুল রুমে প্রবেশ করল। আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। ও এসে হঠাৎই একটা চেয়ার টেনে বসল।আর চশমাটা খুলে সাইট টেবিল এ রেখে আমার সামনেই একটা সিগারেট ধরিয়ে দিল। আমি অবাক ও হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়েই আছি।ও সিগারেট ফুকে আমার মুখে ধোঁয়া ছাড়তে লাগল। আর ঠোঁটের কোনে কেমন ডেভিল হাসির রেখা ।আমি কেন যানি এই লোকটার কাজ সহ্য করতে পারছিনা।হঠাৎই ও উঠে এমন একটা কাজ করল যাতে আমি পুরো শকড হয়ে গেলাম!!!(নুসরাত মনে মনে)

***********(চলবে)**********

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে