#Lover_Boss
#part:7
#Mihika_Rahman
“রিশাদ,তোমার ওয়াইফের খেয়াল রেখো,সি ইজ প্রেগন্যান্ট।”ডক্টরের কথায় চমকে উঠে রিত্ত।কিছুক্ষণ আগেই তো তিনি বললেন সব সত্যি বলে দিবেন কিন্তু এখন তো তিনি অন্য কথা বলছেন।প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে রিত্ত।ডক্টর চোখের ইশারায় রিত্তকে আশ্বস্ত করল।
রিত্তকে নিয়ে বাড়ি ফিরল রিশাদ।চিন্তায় মাথা ঘুরাচ্ছে রিশাদের ।কি করে এতবড় একটা ভুল করে বসলো সে!!!!রিত্তকে কষ্ট দিতে গিয়ে আরেকটা নতুন জীবনকে পৃথিবীতে আনতে যাচ্ছে সে যার বাবা হিসেবে নিজেকে ভাবতেই পারছেনা রিশাদ।রিশাদের নিজেকে সমাজের একটা নোংরা কীট মনে হচ্ছে।চাহিদার বশে করা একটা ভুল যে কতটা ভয়ানক হতে পারে তা আজ বুঝল রিশাদ।
.
.
.
–কি!!!!!!!রিত্ত সত্যিই প্রেগন্যান্ট????
–হ্যাঁ বস।
–রিত্তর সাথে আমাকে দেখা করতেই হবে।যে করেই হোক,রিশাদকে কিছুক্ষণের জন্য রিত্তর থেকে আলাদা করতেই হবে।
–ওকে বস।
ফোন কেটে দিয়ে দিব্য ভাবতে থাকে কি করা যায়।হঠাৎ করেই দিব্যর মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি খেলে যায়।সুধাকে ফোন করে নিজের সমস্ত প্ল্যান বলে দিব্য।
হঠাৎ করেই আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে রিশাদের ফোনে।অপরপাশে থাকা লোকটা বলল,বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনের গার্ডেনটায় দেখা করতে,কোন ইম্পর্টেন্ট নিউজ দেওয়ার আছে।রিশাদ যদিও বিশ্বাস করেনি তবে কে ফৌন করেছে জানার জন্য এসেছে।
রিশাদ বের হতেই দিব্য চুপি চুপি রিত্তর কাছে যায়।দিব্যকে দেখেই মস্তিষ্কে রাগ চরে যায় রিত্তর কিন্তু এর কারণটা অজানা তার।দিব্য এসেই রিত্তকে জড়িয়ে ধরে।রিত্ত দিব্যর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।অবশেষে রিত্তকে ছাড়ল দিব্য।
–রিত্ত প্লিজ,আমি জানি রিশাদ তোমাকে ছেড়ে দেবে।চলো না,আমরা বিয়ে করে ফেলি।
–তুমি পাগল হয়ে গেছো দিব্য!!!!তোমার আমার বিয়ে কখনোই পসিবল না।তাছাড়া আমি রিশাদের বাচ্চার মা হতে চলেছি।
–আমার কোন অসুবিধা নেই রিত্ত।আমি তোমাকে তোমার সন্তানসহই আপন করে নিব।
–দিব্য,তুমি কেন বুঝছো না,আমি ভালোবাসি রিশাদকে।
–ওহহহ!!!ছোটবেলার ভালোবাসাটা জেগে উঠেছে তাহলে কিন্তু আমার সাথে এত নাটক করার কি দরকার ছিল???ভালোবাসার নামে প্রতিমুহূর্তে কেন কষ্ট দিলে আমায়???
চোখ দিয়ে পানি গড়াতে লাগলো রিত্তর।দিব্য আবার রিত্তকে জড়িয়ে ধরল।রিত্ত কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।দিব্যর কথা ভেবে তার নিজেরই কষ্ট হচ্ছে।
–কি যা তা বলছো সুধা???
–আমি ঠিকই বলছি,সাহেব।রিত্ত মেমসাহেবের ঘরে কোন একটা ছেলে ঢুকছে।
–সুধা!!!!!!
–আপনি সিসি ক্যামেরায় দেখুন স্যার ।
সুধার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোনের স্ক্রিণে চোখ সরাল রিশাদ আর যা দেখল তাতে সে সত্যিই কেঁপে উঠলো।রিত্ত দিব্যকে জড়িয়ে ধরে আছে।বেশ কিছুক্ষণ পর রিত্তকে ছেড়ে লুকিয়ে বেরিয়ে গেল দিব্য।রাগে শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটছে রিশাদের।রিত্তকে খুন করতে ইচ্ছে করছে তার কিন্তু কেন হচ্ছে এমন???তবে কি রিশাদও ভালোবেসে ফেলল রিত্তকে নাকি শুধু নিজের সন্তানের খাতিরে???
–স্যার,একটা কথা কই!!!
–বল।
–না মানে স্যার ছোটমুখে বড় কথা কইতাছি কিন্তু ……..
–যেটা কথা সেটা বল।এত অপ্রাসঙ্গিকতা ভালো লাগেনা আমার।
–আমার মন বলতাছে রিত্ত মেমসাহেবের গর্ভের সন্তানডা আপনের না,ঐ লোকটার।এর আগেও আমি ওরে দেখছি লুকায়ে বাড়িতে ঢুকতে কিন্তু রিত্ত মেম নিষেধ করছিল তাই আপনারে বলবার পারি নাই।
–কি!!!!!!!!রিত্ত তোকে টাকা দেয় নাকি আমি দেই???এতবড় একটা কথা আর তুই আমাকে আজ বলছিস!!!সর সামনে থেকে।
–কিন্তু স্যার…..
–সর বলছি!!!!!!!!!!!!!
রিশাদ সোজা এসে রিত্তর মুখোমুখি দাঁড়ায়।ভয়ে কাঁপতে থাকে রিত্ত,কোনভাবে দিব্যকে দেখে ফেলেনি তো রিশাদ???
–কাঁপছো কেন??
–কিছুনা,এমনিতেই একটু অস্বস্তি হচ্ছে।
–কেউ এসেছিল???
— ন….না…..নাতো।
–তোতলাচ্ছো কেন???
–এমনিতেই।
–আচ্ছা শোনো,নিজের খেয়াল রাখো।যাও রেস্ট নাও।
রিশাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে রিত্ত শুয়ে পড়ল কিন্তু ভয় প্রতিমুহূর্তে কুঁকড়ে খাচ্ছে তাকে,ভয়ে হাত-পা ঘেমে যাচ্ছে বারবার।রিশাদ চুপচাপ লক্ষ করছে রিত্তর গতিবিধি।সন্দেহটা ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে রিশাদের।ক্রমশ রাগে লাল হয়ে আসছে রিশাদের চোখজোড়া।রিত্ত কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়ে যায়।
.
.
.
–প্ল্যানমতো সব হচ্ছে???
–জ্বী বস!!
–রিশাদ সন্দেহ করছে তো যে রিত্তর গর্ভের সন্তান আমার???
–হ্যাঁ বস!!!এমনভাবে কানে বিষ ঢেলেছি যে কি বলবো!!!দেখবেন কালকেই রিত্ত মেমসাহেবকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।
–তুমি তোমার কাজের টাকা পেয়ে যাবে।আর হ্যাঁ রিশাদের উপর ভালোমতো নজর রাখবে।
–ওকে বস!!!
ফোন কেটে দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল দিব্য।রিত্তকে পাওয়ার জন্য কতটা নিচে নেমে গেছে সে ভাবতেই চোখজোড়া অশ্রুসিক্ত হয়ে আসে দিব্যর কিন্তু কিছুই করার নেই।রিত্ত তার এডিকশন,রিত্তকে ছেড়ে বেঁচে থাকাটা তার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব না।চোখ বন্ধ করতেই নিজেকে অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে দেখল।গভীর একটা আঁধারজগতে নিমেষেই বিলীন হতে চলেছে সে।
.
.
.
“রিশাদ!!!!!!!”দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিত্তর।রিশাদ পাশেই ঘুমিয়ে ছিল।রিত্তকে ভয় পেয়ে উঠতে দেখে পাশে থাকা গ্লাস থেকে পানি খাওয়ায়।রিত্ত ঢকঢক করে সম্পূর্ণ গ্লাসের পানিটুকু খেয়ে নিল।রিত্তর এভাবে ভয় পাওয়া দেখে চিন্তা বাসা বাঁধলো রিশাদের মনে কিন্তু রিতূতর প্রতি কোন অনুভূতিকেই মনে পাত্তা দেয় না রিশাদ।একইভাবে এ অনুভূতিকেও পাত্তা দিল না।কিন্তু মন তো কথা শোনেনা,বেহায়া মনটা বারবার রিত্তর চিন্তাতেই ব্যাকুল হয়ে আছে।
.
.
.
–মি.বিধান মাহমুদ,এই ডিলটা আপনার কোম্পানির জন্য অনেক লাভজনক।আপনি কেন ডিলটা করতে রাজি না???
–আমার হয়তো লাভ হবে কিন্তু ঐ কোম্পানিটা বিপদে পড়ে লসে ডিলটা করতে রাজি হয়েছে।আমাদের একটা ভুল ঐ কোম্পানির জন্য সর্বনাশ বয়ে আনতে পারে।
–বিজনেসে এসব দেখা হয় না স্যার,বিজনেস মানে শুধু টাকা।
–পি. এ সাহেব,টাকার লোভ অনেক আগেই মরে গেছে।লাখ লাখ টাকা দিয়ে ভালোবাসার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি।কি করবো আমি এই টাকা দিয়ে???
–স্যরি স্যার,আমি বুঝতে পারিনি আপনার খারাপ লাগবে।
–আরে নাহ!!!ঠিক আছে।আপনি এখন আসতে পারেন।
বিধান মাহমুদ চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে আছেন,মনটা বড্ড কু ডাকছে তার।বারবার মনে হচ্ছে খারাপ কিছু একটা হতে চলেছে।মনকে বারবার মিথ্যা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি কিন্তু মন তো তা শুনছে না।অবশেষে বিধান মাহমুদ সিদ্ধান্ত নিলেন আজ হসপিটালে গিয়ে বন্ধু রাহাদের সাথে দেখা করে আসবেন।
.
.
.
–রিত্ত,ওঠো খেয়ে নাও!!!
–আমার ভালো লাগছেনা স্যার,আমি খাবোনা।
–একটা কথা বলি???
–বলুন।
–আমি কি এতটাই খারাপ???
–কেন স্যার ???
–একটাবার বলতেই পারতে তুমি দিব্যকে ভালোবাসো।আমি চলে যেতাম তোমাদের মাঝ থেকে।প্রতিশোধের নেশা তো কেটেই ছিল আমার।কি দরকার ছিল এসব করার???টাকার দরকার ছিল???
–কি বলছেন এসব???
–নাটক করোনা রিত্ত!!!!আমি জানি তোমার গর্ভের সন্তান দিব্যর।
–স্যাররর!!!!!!!
–চিৎকার করো না।সত্যি এটাই।জানো রিত্ত,আমি প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিলাম!!!প্রচণ্ড!!!ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম কি না!!!!কিন্তু ভালোবাসার যে প্রতিদান তুমি দিলে!!!
–স্যার,বিশ্বাস করুন।দিব্য আর আমার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।
–তাহলে কেন এসেছিল দীব্য???কেন লুকিয়ে দেখা করেছে তোমার সাথে??কেন জড়িয়ে ধরেছিল তোমাকে???বলো!!!
–স্যার,আপনি ভুল ভাবছেন!!!সেদিন যা হয়েছিল…….
–প্লিজ রিত্ত!!!!শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না!!!
–আমার কথাটা…….
রিত্ত কিছু বলার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় রিশাদ।রিত্ত আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রিশাদের যাওয়ার দিকে।
চলবে………