Lover Boss part 4

0
3486

#Lover_Boss
#part_4
#Mihika_Rahman

“রিশাদ স্যার এই সময় স্টোররুমে কি করছিলেন??শালা ভাসটা ভাঙার আর সময় পেল না।স্যার কি আমাকে দেখে ফেলল???ইয়া মাবুদ,রক্ষা করো।”তাড়াতাড়ি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে রিত্ত।ভয়ে হাত-পা কাঁপছে তার।কেন যে এই রাতের বেলা পানি খেতে উঠেছিল,ভেবে নিজেকে দোষারোপ করতে লাগল আর উঠেছে তো উঠেছে স্টোররুমের দিকে যাওয়ার কি দরকার ছিল???নিজের উপর মেজাজ খারাপ করে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে রিত্ত।

রিশাদ রিত্তর রুমে এসে দেখল লাইট অফ আর রিত্ত কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।রিশাদ আর বেশি না ভেবে গেস্টরুমের দিকে গেল।তবে নিজেকে কিছুতেই স্থির করতে পারলো না।
“রিত্ত কি আদৌ এসেছিল আমার রুমে নাকি আমিই বেশি ভাবছি??নাহ!!!এই মেয়ের উপর নজর রাখতেই হবে।অতীতের ভুলটা আর করা যাবেনা।খেলাটা আমাকে জিততেই হবে।”পকেটে হাত ঢুকিয়ে ভাবতে থাকে রিশাদ।

.

.

.
–স্যার,আজ অফিসে ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে।দিব্য স্যার তো আসবেন না বলেছেন।আপনি যদি আসতেন??

–মিটিংটা কি খুবই জরুরি???

–জ্বী স্যার!!!

–ঠিক আছে,আমি আসছি।

ফোন রেখে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগেন বিধান মাহমুদ।একটা সময় টাকার পেছনে কত ছূটেছেন অথচ এখন সেই টাকাকেই দুচোখ সহ্য করতে পারে না।

“স্যার,বিধান মাহমুদ অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।”অপরপাশ থেকে তথ্যটা পেতেই বাঁকা হেসে ফোন রাখলো রিশাদ।এর অপেক্ষাতেই তো সে ছিল।অফিসে ঢুকে সবার আড়ালে বের হয়ে যায় রিশাদ,রিত্তকে পূর্বের মতোই একগাদা কাজ চাপিয়ে।

বিধান মাহমুদ আজ একাই ড্রাইভ করছেন,ড্রাইভার সাথে নেননি।অদ্ভুত একটা চিন্তা ভেতর থেকে ঘিরে ধরে রেখেছে তাকে।

রিশাদ গতকালের বাইক নিয়ে বিধান মাহমুদকে ফলো করছে,উদ্দেশ্য ভয়ানক তবে যদি তা সফল হয় তবে।”তোর মৃত্যু আজ নিশ্চিত,বিধান মাহমুদ।আর সেটাও আমার হাতে।”বিধান মাহমুদের গাড়ির ঠিক পিছনে রিশাদের বাইক।পকেটে থাকা পেট্রোলভরা কাঁচের বোতলটা বিধান মাহমুদের গাড়ির পেছনের কাঁচে মারে রিশাদ।সাথে সাথে কাঁচ ভেঙে পেট্রোল পড়ে গাড়িতে।আচমকা এমন ঘটনায় বিধান মাহমুদ চমকে যান,বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয় তার।গাড়াভির সাইডের মিররে তিনি দেখতে পেলেন বাইকে করে কেউ তাকে ফলো করছে।চিন্তাটা আরো বেড়ে গেল বিধান মাহমুদের,গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলেন তিনি।

বিধান মাহমুদকে গাড়ির স্পিড বাড়াতে দেখে রিশাদ বুঝতে পারল বিধান মাহমুদ বুঝতে পেরেছে কেউ তাকে ফলো করছে,এই ভয়টাই তো পাওয়াতে চাচ্ছিল সে তাকে।”আজ শেষ দিন বিধান মাহমুদের।”বলেই একহাত দিয়ে লাইটারটা ধরায় রিশাদ।লাইটারটা ছুঁড়তে নিয়ে বুঝতে পারে সামনে রেলক্রসিং আসছে।বিধান মাহমুদের গাড়ি পার হতেই শাটার ডাউন করা হলো,রিশাদ আর বিধান মাহমুদকে ফলো করতে পারলোনা,শীঘ্রই রিশাদের চোখের অগোচরে চলে গেল বিধান মাহমুদ।”শীট!!!”বিরক্ত হয়ে কথাটা ভলল রিশাদ।প্ল্যান ভেস্তে যাওয়ায় তার মেজাজ এখন তুঙ্গে।বিরক্তির চরম সীমা নিয়ে পূর্বের মতো সবার অগোচরে অফিসে ঢুকল রিশাদ।

কাজে কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা রিত্ত,বারবার কালরাতের কথা মনে পড়ছে।কলম ধরতে গেলেও হাত কাঁপছে।কোনরকমে ফাইল কমপ্লিট করে রিশাদের রুমে আসে রিত্ত।রিশাদকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে ভয় বেড়ে যায় রিত্তর।ঢোক গিলে রিশাদের দিকে ফাইলগুলো বাড়িয়ে দিল রিত্ত।

ফাইল চেক করা শুরু করল রিশাদ।এমনিতেই রিশাদের মেজাজ খারাপ ছিল তার উপর প্রত্যেকটা ফাইলে তিন-চারটা করে ভুল।রিশাদের সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল রিত্তর উপর।চিৎকার করে উঠল রিশাদ,”তোমাদের মতো অশিক্ষিত মেয়েকে জব দেওয়াই উচিত না।একটা ফাইলে এত ভুল???এটা কি খেলা পেয়েছো???কাজ না করতে পারলে কাজে এসেছো কেন??গেট লস্ট,স্টুপিড গার্ল।”মাথা নিচু করে চুপচাপ কথাগুলো হজম করে ফাইলগুলো নিয়ে নিজের ডেস্কে বসলো।

“কেন এত রাগ স্যারের আমার উপরে???ভুল তো হতেই পারে।প্রতিমুহূর্তে আমার উপর চিৎকার না করে থাকতেই পারেনা।নূন্যতম রেসপেক্টও কি আমি ডিসার্ভ করিনা তার থেকে???এতটাই খারাপ আমি???”চোখের জল বাঁধা মানছে না রিত্তর।সবাই আজও বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে রিত্তর দিকে।আসিফের খুব খারাপ লাগছে রিত্তর জন্য।মেয়েটা এতটাও খারাপ না কাজে,তাহলে এতটা অপমান করার কারণ কি???কিন্তু রিত্তকে দেওয়ার মতো কোন সান্ত্বনাও নেই তার কাছে।চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকে সেও।

রিশাদের মন বড্ড ছটফট করছে,কোনকিছুই ভালো লাগছে না তার।সে বুঝতে পারছেনা এই ছটফটানির কারণ কি??বিধান মাহমুদকে মারার প্ল্যানটা ভেস্তে যাওয়া নাকি রিত্তর সাথে খারাপ ব্যবহার।রিত্তর সাথে খারাপ ব্যবহার করে যে তৃপ্তি রিশাদ পেতে চায় তা সে কখনোই পায়না,উল্টো পায় একরাশ অশান্তি আর অতৃপ্তির অনুভূতি।এমন হওয়ার কারণটাও অজানা রিশাদের।

.

.

.
–দিব্য,আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ফলো করছে।আজ সে আমার গাড়িতে পেট্রোল ছুঁড়েছে,রেলক্রসিং ছিল বলে বেঁচে গেছি।

–কি বলছো বাবা???এমনটা কে করতে পারে??……রিশাদ!!!!!!!!!রিশাদই করেছে এসব।

ফোন বের করে নিজের ইনফর্মারকে ফোন লাগায় দিব্য।

–রিশাদ এখন কোথায়??

–বাড়িতে তো আসেনি,বস!!!!অফিসেই থাকবে।

–আমি তোমাকে ওর বাড়িতে কাজ করার জন্য রাখিনি,ও কখন কোথায় যায় সেই খোঁজ রাখো।নেক্সট টাইম যেন বলতে না হয়।

ফোন রেখে কিছু একটা চিন্তা করতে বসে দিব্য।

.

.

.
রাতে,
আফসান ম্যানশনে,

রিত্ত অফিসের পোশাকেই বসে আছে যা দেখে রিশাদের অসহ্য লাগছে।

–এই মেয়ে, কমনসেন্স নাই??অফিসের পোশাকে কতক্ষণ বসে থাকবে??যাও,ড্রেস চেঞ্জ করো।

–আসলে স্যার…..আমার কয়েকটা ড্রেস কিনতে হবে।

–কেন??তোমার আলমারি ভর্তি শাড়ি আছে তো।

–ওসব পড়তে আমার অস্বস্তি হয়।

–ওহহ….হওয়ারই কথা,এত দামী শাড়ি আগে কখনো পড়োনি তো।

–দামের চেয়ে বড় স্বস্তি,আপনার কেনা শাড়িগুলোর একটাতেও আমি স্বস্তি খুঁজে পাইনা।বুঝেছেন???

–যেসব ওখানে আছে,তুমি সেগুলোই পড়বে,দ্যাটস ফাইনাল।

–আমি অফিসের ড্রেস পড়েই ঘুমাবো তাও ওগুলো পড়বোনা।

–সাহস খুব বেড়েছে,নাহ??

রিত্তর দিকে এগোতে থাকে রিশাদ।রিত্ত ভয়ে পিছাতে থাকে।উল্টোদিকে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সিঁড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে বসে পড়ে।বাঁকা হেসে রিত্তর মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসে রিশাদ।রিত্ত হা হয়ে তাকিয়ে আছে।আচমকা রিত্তর জামার চেইন খুলে দেয় রিশাদ।চমকে রিশাদকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় রিত্ত।রিশাদ আগের মতোই বাঁকা হেসে বলে,”এখন কি একা চেঞ্জ করবে নাকি আরো হেল্প করবো??”পিঠে হাত দিয়ে চেইনটা লাগিয়ে মনে মনে রিশাদকে গালাগাল দিতে দিতে রুমের দিকে যায় রিত্ত।

.

.

.
“আজ আমার আদরের মেয়েটা আমার থেকে দূরে।এসবই আমার পাপের ফল।কারো ক্ষতি করে যে কখনোই মাফ পাওয়া যায় না তা আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি।জানিনা কবে রিলিজ হবো এখান থেকে!!!”অনুতপ্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলে জানালার দিকে তাকালেন রাহাদ আহমেদ।চোখ বন্ধ করতেই বারবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে মেঝেতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত দুটো লাশ,পাশে দাঁড়িয়ে অট্টহাসি হাসছেন তিনি।ছটফট করতে করতে চোখ খুললেন রাহাদ আহমেদ,স্বপ্নটা আজকাল তাকে পাগল করে রেখেছে।ডক্টর এসে রাহাদ আহমেদের চেক-আপ শেষ করলেন।

–ডক্টর সাহেব,আমাকে কবে রিলিজ দেওয়া হবে???

–আপনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন,আর কয়েকদিন বাদে আপনাকে রিলিজ দেওয়া হবে ।

–ধন্যবাদ ডক্টর।

উদাসীন দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে মেয়েকে না দেখতে পারার অতৃপ্ত ইচ্ছের বশে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রাহাদ আহমেদ।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে