Lover Boss part-13(last part)

0
3826

#Lover_Boss
#part_13(last part)
#Mihika_Rahman

সস্তা ক্লিনিকের নোংরা একটা বেডে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে রিত্ত।আশেপাশে বেশ কজন ওয়ার্ডবয় আর মাস্কের আড়ালে থাকা একজন ডক্টর।রিত্ত বেঘোরে ঘুমোচ্ছে কড়া ডোজের মেডিসিনের প্রভাবে।তার সাথে কি হতে চলেছে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অবগত নয় সে।

ক্লিনিকের রুমের বাইরে একটা বেঞ্চে বসে আছে রাহাদ আহমেদ।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে তার।উদ্দেশ্য আর চিন্তা একটাই বাচ্চাটার মৃত্যু আর রিত্তর সুস্থতা।

.

.

.
সকাল থেকেই মনটা বিষণ্ণ রিশাদের।রিত্ত অফিসে না আসায় কপালের ভাঁজগুলো যেন আরো বেড়ে গেল।এক অজানা আতঙ্ক ক্রমশ গ্রাস করে চলেছে তাকে।রিশাদ কিছুতেই নিজেকে এ আতঙ্কের বেড়াজাল থেকে বের করতে পারছে না।নিজেকে স্থির করে অফিস থেকে বের হলো রিশাদ।রিত্তর বাড়িতে এসে দাঁড়ালো রিশাদের গাড়ি।গাড়ি থেকে নেমে রিশাদ

–হ্যালো,দ্বীপ??একটা হেল্প কর।একটা নাম্বার সেন্ড করছি,নাম্বারটা ট্র্যাক করে লোকেশন জানা ইমিডিয়েটলি।

–আরে ভাই,রিল্যাক্স।কি হয়েছে বলবি তো।এতদিন পর ফোন করলি তাও এত টেনশনে??

–ভাই,আমি সব বলবো তোকে বাট এখন আমি যা বলছি কর।

–আচ্ছা তুই নাম্বার সেন্ড কর।

রিশাদ দ্বীপকে রিত্তর নাম্বার সেন্ড করল।কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বীপ রিত্তর লোকেশন ট্র্যাক করে রিশাদকে জানিয়ে দিল।

.

.

.
অপারেশন থিয়েটারের লালবাতির আড়ালে চলছে এক অনাগত জীবন নষ্টের প্রচেষ্টা।অজ্ঞান রিত্তর গর্ভের সন্তান নষ্টের প্রচেষ্টা চলছে।

বাইরে রাহাদ আহমেদ চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।রিত্ত তার কাছে এখন একটা পণ্য মাত্র আর তার অনাগত সন্তান পণ্যে লাগা দাগ।

লোভ কতটা বেড়ে গেলে নিজের সন্তানকে বাজারের পণ্যের ন্যায় ভাবা হয়,তা বোঝা দরকার।এতটা লোভ!!!এর পরিণতি কি আদৌ ভালো,নিশ্চয়ই না।কারণ সকল কুকর্মের একটা পরিণতি থাকে।এই পরিণতি প্রতিশোধ নয়,এটা হলো নিয়তির প্রতিদান।তুমি যা করবে,তা-ই তুমি ফিরে পাবে।হতে পারে সুখটা ক্ষণিকের জন্য তবে দুঃখটা আজন্ম রয়ে যাবে।

বিন্দুমাত্র পিতৃত্ববোধ কাজ করছেনা রাহাদ আহমেদের মধ্যে।চিন্তায় ক্রমশ মুখ শুকিয়ে আসছে তার।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠতেই চমকে তাকালেন তিনি।এই বুঝি রিশাদ এলো!!ফোন হাতে নিয়ে আশ্বস্ত হলেন রাহাদ আহমেদ।নাহ্!!এটা তো সেই ডক্টর পাত্রের ফোন।কি জানি নাম-নাম মনে করার চেষ্টা করলেন তিনি।মস্তিষ্কে অসম্ভব জোর দিয়ে তিনি মনে করলেন,সম্ভবত ছেলেটার নাম আদিল।গলা পরিষ্কার করে নিয়ে ফোনটা তুললেন তিনি।

–হ্যাঁ বাবা আদিল বলো।

–না…মানে আঙ্কেল,আপনি কোন মেয়ের ছবি দেখিয়েছেন আমাকে???

–কেন বাবা??আমার নিজের মেয়ে।

–ওর কি চরিত্রে কোন দোষ………

–এসব কি বলছো তুমি??আমার মেয়ে একেবারে পবিত্র আর তুমি কি-না তার চরিত্রে দোষ নিয়ে কথা বলছো।

–আমি চোখ বন্ধ করে কিছু বলছিনা।আমার কাছে প্রমাণ আছে।

–আমার ক্লিনিকের ওয়ার্ডবয়রা একটা এবরশন কেস এনেছে আমার কাছে।মেয়েটা অজ্ঞান,এ আপনারই মেয়ে।

–তুমিই সেই ডক্টর যে এবরশন করাচ্ছে??

–আপনি কোথায়??ও.টির বাইরে??থামুন,আমি আসছি।

ফোন রেখে মাস্ক আর গ্লাভস খুলে ও.টির বাইরে আসতেই মুখোমুখি হয় আদিল আর রাহাদ আহমেদ।

–নোংরা চরিত্র আপনার মেয়ের।কার না কার সাথে কি করে এখন বিয়ের আগে এবরশন করাচ্ছে।

–বাবা,বিশ্বাস করো।একটা ছেলে ওকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ওর ক্ষতি করেছে।আমার মেয়ের কোন দোষ নেই।

–আপনি কি ফাজলামি করছেন আমার সাথে??আপনার মেয়ে কি বাচ্চা যে কিছুই বোঝে না??একটা ছেলে ওকে ভুলিয়ে সব করে গেল অথচ সে বুঝলোই না।সে কি ফিডার খায় নাকি??

–বেশি বলছো তুমি আদিল।

–বেশি কিন্তু যুক্তিযুক্ত।

–বুঝলাম আমার মেয়ে ভালো নয় কিন্তু তুমি??তোমার এই ক্লিনিক আর এবরশনের ব্যবসা যে অবৈধ,সেটা কি??তোমার এত সাধু সেজে কাজ নেই।

–আমার কাজ নিয়ে কথা বলার রাইট আপনার নেই।

–সোজা হিসাব,রিত্তর এবরশন যেহেতু হয়েই গেছে,তুমি ওকে বিয়ে করে নাও নয়তো……

–নয়তো কি???

–তোমার এই অবৈধ কাজের কমপ্লেইন পুলিশের কাছে যাবে।

–ব্ল্যাকমেইল করছেন আমাকে??

–যা ভাবার ভেবে নাও।রিত্তকে বিয়ে তোমার করতেই হবে।

–কতটা লোভ আপনার!!!

–লোভ না,প্রতিশোধ!!!সেসব আপনি বুঝবেন না।আপনার কাজ এখনি রিত্তকে বিয়ে করা।

“রিত্ত শুধুই রিশাদের!!!”পেছন থেকে আসা শব্দটা শুনে পেছনে তাকাল রাহাদ আহমেদ।পিছনে তাকাতেই রিশাদকে দেখে হাতে থাকা ফোনটা পড়ে গেল রাহাদ আহমেদের।রিশাদের চোখ দিয়ে ঝরা আগুন স্পষ্ট বলে দিচ্ছে রাহাদ আহমেদের বলা প্রতিটি কথা শুনেছে সে।হাত শক্ত হয়ে আছে রিশাদের,রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে।চারিদিকে ক্রমাগত ঝড়ো হাওয়া সৃষ্টি হচ্ছে।অদ্ভুত ভয়ানক এক ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে প্রকৃতিতেও,রিশাদের মাঝেও।

–আপনার সমস্ত ভুল মাফ করেছিলাম,রাহাদ আহমেদ কিন্তু আমার অনাগত সন্তানের জীবন নষ্ট করে যে অপরাধ আপনি করেছেন,তার কোন ক্ষমা হয় না।রিত্ত কোথায়???

–রি…রিশাদ!!!

–আমি বলেছি রিত্ত কোথায়??আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।এর বাইরে একটা এক্সট্রা কথাও না।রিত্ত কোথায়???

–ও….ও.টি তে।

রাহাদ আহমেদের কথা শেষ হতে না হতেই রিশাদ ও.টির দিকে পা বাড়াল।

ও.টিতে,

রিত্তকে আলতোভাবে ডাকলো রিশাদ,ঘুমের ওষুধের ডোজ তখন প্রায় নিঃশেষ।ধীরে ধীরে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই রিশাদকে দেখে রিশাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল রিত্ত।

–রিশাদ,আমি এখানে কেন??কি হয়েছে আমার??

–কিচ্ছু হয়নি তোমার,তুমি একদম ঠিক আছো।এসো আমার সাথে।

–কোথায়??

–এসো তো।

রিত্ত স্ট্রেচার থেকে উঠতে গেলে পা পিছলে যায়।রিশাদ রিত্তকে কোলে তুলে নিল,আলতো হাতে রিশাদের গলা জড়িয়ে ধরল রিত্ত।

রিত্তকে কোলে নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালো রিশাদ।রাগ চেপে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,”মি.রাহাদ আহমেদ,ভুলেও ভাববেন না আমার সন্তান হত্যার জন্য আপনি মাফ পাবেন।আইন অনুযায়ী আপনাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবো আমি।”

–রিশাদ!!মাফ করে দাও আমাকে।

–না,বাবা,তুমি একটাবার আমার কথাও ভাবলে না,আমার গর্ভের সন্তান কেড়ে নিলে তুমি??

কথাটা বলতে বলতেই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াতে লাগল রিত্তর।

রাহাদ আহমেদের বুকে চিনচিন ব্যথা করছে,অনুশোচনার অগ্নিতে পুড়ছেন তিনি।কয়েকক্ষণের মাঝেই পুলিশ এলো সেখানে উপস্থিত হলো।রাহাদ আহমেদের চোখের দিকে তাকালোনা রিত্ত,যতই অনুশোচনা থাক,এই চোখদুটো তার সন্তানের খুনীর।পুলিশ রাহাদ আহমেদ এবং আদিলকে ধরে নিয়ে যাবে ঠিক এমন সময় আদিল বলে উঠে,”আমি রিত্তর বাচ্চা নষ্ট করিনি।ওর বাচ্চা সুস্থ আছে।”কথাটা শোনামাত্র রিশাদ-রিত্তর চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।

রিশাদ আর কিছু বলল না,কেস উইথড্রো করে নিল কিন্তু রাহাদ আহমেদের দিকে তাকালো না অবধি।

রিত্ত ও রিশাদের সাথেই এলো,বাবা নামক মানুষটার থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে তার।

.

.

.
আজ রিত্তর কোল আলো করে এসেছে তাদের অংশ,রিত্ত-রিশাদের প্রথম সন্তান রিদ।ছেলেটা পুরো রিশাদের মতোই হয়েছে।সন্তানকে আদর করতে করতে রিত্তর চোখ পড়ল দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার দিকে।অনুশোচনা আর অনুতপ্ত দৃষ্টিতে সামনে এসে দাঁড়াতেই রিত্ত বাবার কাঁধে মাথা রাখলো।রিশাদ মুচকি হেসে উপলব্ধি করল দৃশ্যটা।সে তো জানে বাবাকে সন্তান থেকে আলাদা করার কষ্টটা।

অবশেষে পূর্ণতা পেল একজোড়া জীবনের ভালোবাসা।রিদের ছোট্ট ছোট্ট পায়ে পথচলার মাঝে জুড়ে থাকবে রিত্ত-রিশাদের ভালোবাসা।

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে