#Lover_boss
#part_12
#Mihika_Rahman
একমাস পেরিয়ে গেছে।
এই একমাসে রিশাদ একসেকেন্ডের জন্য ও রিত্তকে একা থাকতে দেয়নি।সবসময় রিত্তর কাছে আসার চেষ্টা করেছে,রিত্তকে ভালোবাসার চেষ্টা করেছে।রিত্ত ও আজকাল অনুভব করে রিশাদের ভালোবাসা তবে দিব্য নামক সংশয়টা যে তার মন থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না।
রিশাদের ডাক পড়তেই মুচকি হাসলো রিত্ত।রিশাদের কাজই হলো কেবিনে ঢুকেই রিত্তকে ডাকা।রিত্ত কেবিনে ঢুকতেই চমকে উঠল।রিশাদ তার প্রিয় বিরিয়ানী প্লেটে সাজিয়ে বসে আছে।তার মানে রিশাদ এখনো তার ছোটবেলার পছন্দগুলো মনে রেখেছে।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে রিত্তর।লজ্জামাখা চোখে রিশাদের দিকে এগোয় রিত্ত।
–তো,কেমন হলো সারপ্রাইজ??খেয়ে বলুন।
–আপনি যখন করেছেন,ভালোই হবে।
–খেয়ে বলো তাড়াতাড়ি।
রিত্ত প্লেটের কাছে এগোতেই লেবুর তীব্র ঘ্রাণ নাকে আসে তার।সাথে সাথেই গা গুলিয়ে ওঠে রিত্তর।রিশাদ বুঝতে পারেনা হঠাৎ রিত্তর কি হলো।
–এখানে লেবু দিয়েছো তুমি??
–হ্যাঁ কেনো??তোমার তো লেবু বেশ পছন্দ।
–আমার সহ্য হচ্ছে না লেবুর গন্ধ।
আর কিছু না বলেই ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দিল রিত্ত।রিশাদ চিন্তিত হয়ে পড়লো।যে মেয়েটা লেবু ছাড়া খাবারই খায় না,তার কেন লেবুর গন্ধ সহ্য হবেনা??রিত্ত ওয়াশরুমে ঢুকে বেসিন ছেড়ে দিয়ে বমি করল কিছুক্ষণ।সকালে খালি পেটে অফিসে এসেছিল,এখন মনে হচ্ছে পেটের সবকিছু বের হয়ে আসবে।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে চোখেমুখে পানি দিল রিত্ত।
রিত্ত ওয়াশরুম থেকে বের হতেই রিশাদ দৌড়ে গিয়ে রিত্তকে বুকে মিশিয়ে নিল।রিশাদের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে গেছে।
–কি হয়েছে তোমার??অসুস্থ থাকলে বলবে তো।
–জানিনা,হঠাৎ গা গুলিয়ে আসলো।এমন কেন হলো বুঝলাম না।
–তুমি এক্ষুণি চলো ডক্টরের কাছে……না থাক,তোমার যাওয়ার দরকার নেই,আমি ডক্টরকে এখানে ডেকে নিচ্ছি।ওনি এসে তোমার চেক-আপ করে যাবেন।
–না,রিশাদ।তার প্রয়োজন নেই।আমি যাওয়ার সময় ডক্টরকে দেখিয়ে যাবো।
–ইউ নিড রেস্ট।চলো তোমাকে ডক্টর দেখিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
–আরে নাহ..তার…
রিত্ত কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার বাবার কণ্ঠ শুনতে পেল।রিত্ত তাড়াহুড়ো করে রিশাদের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।
–বা….বাবা…ত…তুমি এখানে??
–হুম,আমি এখানে।অফিস ছুটি নিয়ে আমার সাথে চল।
–ক…কে…কেন বাবা??
–আমার দরকার আছে,তুই চল।
–কিন্তু বাবা….
–যা বলছি তাই কর।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
রিশাদের থেকে পারমিশন নিয়ে রাহাদ আহমেদের সাথে বেরিয়ে এলো রিত্ত।
রিত্ত চলে যাওয়ার পর থেকে চিন্তা যেন বেড়ে গেল রিশাদের।কোনভাবেই নিজেকে স্থির রাখতে পারছেনা সে।রিত্তর চিন্তায় মাথায় চির ধরার উপক্রম তার।কেবিনে পায়চারি করছে রিশাদ।মন কিছুতেই ভালো সায় দিচ্ছে না তাকে,কোন এক দুঃসংবাদ আসছে তার জন্য।ভেতরের ছটফটানিটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে রিশাদ।নিজেকে স্থির করে রিত্তকে নিয়ে ভাবতে শুরু করল রিশাদ।
.
.
.
–বাবা,আমরা কোথায় যাচ্ছি??
–তোকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসছে।ছেলে মস্ত বড় ডক্টর,টাকাপয়সার অভাব নেই।বংশও বেশ উঁচু।তোর ছবি পাঠিয়ে ছিলাম।তোকে দেখে বেশ মনে ধরেছে।
–বাবা!!!!তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে??আমি রিশাদের স্ত্রী।বিবাফিত হওয়া সত্ত্বেও তুমি অন্য জায়গায় আমার বিয়ে কি করে ঠিক করতে পারো??
–বেশি কথা বলবিনা।তোদের বিয়ে আমি মানিনা।রিশাদকে ডিভোর্স দিবি তুই আর আমার পছন্দ করা ছেলের সাথেই বিয়ে করবি।
–না বাবা,এটা আমার দ্বারা সম্ভব না।
–তুই আমার কথার উপর কথা বলছিস??
–বাবা,তুমিই তো বলেছিলে,মানবিকতার খাতিরে হলেও আমি যেন দিব্যর দিকটা ভাবি কিন্তু এখন তুমিই….
–যে গেছে,সে গেছে।তাকে নিয়ে ভেবে জীবন নষ্ট কেন করবি??চুপচাপ চল আর ঐ ছেলেকে বিয়ে কর।
–বাবা,প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো,আমি রিশাদকে ভালোবাসি।আমি রিশাদের বিবাহিত স্ত্রী।
–(মনে মনে)এমনিতে কাজ হবেনা।হার্ট অ্যাটাকের নাটকটা করতেই হবে।ঐ নাটক করেই তো রিত্তকে এনেছি আমার কাছে,এবার বিয়েটাও দিয়ে দিব।
রাহাদ আহমেদ বুকে হাত রাখতে নিয়েছেন ঠিক এমন সময় মাথা ঘুরে পড়ে গেল রিত্ত।চিন্তায় পড়ে গেলেন রাহাদ আহমেদ।ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ি হসপিটালের দিকে ঘোরাতে বললেন।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে রাহাদ আহমেদের।রিত্তর কিছু হয়ে গেলে তো ডক্টর ছেলেটার কাছ থেকে একটা টাকাও পাবেন না তিনি!!এসব ভাবতেই চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়লো তার।
.
.
.
হসপিটালে,
রিত্তকে চেক করছে ডক্টর আর রাহাদ আহমেদ বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।দাঁড়িয়ে আছেন বললে ভুল হবে,পায়চারি করছেন।রিত্তর চেক আপ করে বাইরে এলেন ডক্টর।
–ডক্টর,কি হয়েছে আমার মেয়ের??
–আরে,চিন্তার কিছু নেই।মিষ্টিমুখ করুন।আপনার মেয়ে মা হতে চলেছে।
–কি!!!!!!(মনে মনে)সর্বনাশ!!এটা যদি রিত্ত জানতে পারে তাহলে রিশাদকে বলে দিবে।তখন আমার হাতে আর কোন পথ খোলা থাকবেনা রিত্তকে রিশাদের কাছে যেতে দেওয়া ছাড়া।কিছু একটা করতে হবে।এই সন্তানকে পৃথিবীতে আসতে দেওয়া যাবেনা।
–কি হলো??আপনাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন??
–কি বলছেন আপনি ডক্টর??আমার মেয়ের তো বিয়েই হয়নি।একটা ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দেখিয়ে এসব করেছে।আপনি প্লিজ সন্তানটা নষ্ট করে দিন।আমার মেয়ে ঐ নোংরা ছেলের অংশ নিজের গর্ভে জানলে আত্মহত্যা করবে।
–স্যরি,মি.আহমেদ।আমাদের হসপিটালে এবরশন করানো হয় না আর তাছাড়া আপনারা ছেলেটাকে ডাকুন।আমি ওনার সাথে কথা বলবো।
–না ডক্টর,তার প্রয়োজন নেই।আমি জানি ছেলেটা কখনোই রাজি হবেনা।ও একটা নোংরা ছেলে।
–আপনারা যা ভালো বোজেন তবে রিত্তর ইন্টারনাল উইকনেস আছে,এবরশন করালে হয়তো সে বাঁচবে না কিংবা কখনোই মা হতে পারবেনা।
–ওকে ডক্টর।আমি ভেবে দেখছি কি করা যায়।
–অফকোর্স।ওনার জ্ঞান ফিরলে আপনি কথা বলতে পারেন।দেখবেন এমন কোন কথা বলবেন না যেন তিনি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।এতে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে।
–জ্বী ডক্টর।
কিছুক্ষণ পর, রিত্তর জ্ঞান ফেরে।রাহাদ আহমেদ রিত্তর পাশে বসলেন।
–বাবা,কি হয়েছে আমার??
–কিছুনা মা।এমনিতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেছিস।চিন্তা করিস না,তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তোর বিয়ে দিব না।
–থ্যাংকস বাবা।চলো বাসায় যাই।
–হ্যাঁ মা।আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে আসছি।
রাহিদ আহমেদ ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে রিত্তকে বাসায় নিয়ে আসলো।রাহাদ আহমেদ বেশ চিন্তিত।তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না রিত্তকে না জানিয়ে কিভাবে রিত্তর এবরশন করাবে।মাথায় বেশকিছু ছক কষছেন তিনি।অবশেষে একটা প্ল্যান মাথায় স্থির করলেন তিনি।পরিকল্পনার কথা ভেবে বাঁকা হাসি ঝুলালেন ঠোঁটে।
.
.
.
সময় কাটছে।রিত্তর অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।স্বাভাবিক অসুস্থতা ভেবে আর ডক্টরের কাছে যায়নি রিত্ত।রিশাদের সাথেও সময় বেশ ভালোই কাটছে রিত্তর।
.
.
.
–মেয়ের কোন সমস্যা হবে না তো??
–আরে নাহ!!আপনি শুধু টাকাটা ঠিকঠাক আনবেন।বাচ্চাও নষ্ট হয়ে যাবে,কেউ টেরও পাবেনা।
–সব ঠিকমতো না হলে এক পয়সাও পাবে না।
–আরে,আপনি এত চিন্তা কেন করছেন??রা জানি আমাদের কাজ।আপনি শুধু টাকা রেডি রাখুন।
–আচ্ছা ঠিক আছে,কবে নিয়ে আসবো মেয়েকে??
–আপনার আনতে হবেনা,শুধু এই ওষুধ ওর খাবারে মিশিয়ে দিবেন,তারপর আমাদের কল করবেন।আমরা গিয়ে এম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসবো।কেউ সন্দেহও করবে না।
–আচ্ছা বুঝলাম।কাজটা কালকেই করতে হবে।কাজ শেষ হলেই টাকা পাবে।
কথা শেষ করে ফোনটা পকেটে রেখে শয়তানি হাসি দিলেন রাহাদ আহমেদ।অবশেষে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।রিত্তর জীবন থেকে রিশাদের অংশকে চিরতরে মুছে দিতে চলেছেন তিনি ।
ঘৃণা জিনিসটা বড্ড ভয়ানক।ভালোবাসা না থাকলেও জীবনটা জীবনের মতোই চলে কিন্তু ঘৃণার শিকার হলে জীবনটা বেঁচে থেকেও লাশের মতো করে বাঁচতে হয়।
রিশাদের প্রতি রাহাদ আহমেদের একটা অকারণ ঘৃণা তিনটে জীবন নষ্টের পথে পা বাড়িয়েছে।
চলবে……