Lover Boss part-11

0
3188

#Lover_Boss
#part_11
#Mihika_Rahman

–তোর কি বিন্দুমাত্র লজ্জা হচ্ছে না,রিত্ত??

–বা….বা!!

–দিব্য হয়তো খারাপ ছিল কিন্তু সেই ছেলেটাই ছোট থেকে ভালোবেসে এসেছে,প্রতিটা প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছে।একবার সে ব্যর্থ হলো বলেই কি তার এতদিনের সব উপকার ভুলে গেলি???

–কিন্তু বাবা ……

–যে ছেলে নিজের জীবন দিয়ে দিল তোর জন্য আর তুই কিনা রিশাদের সাথে ভালোবাসার জগতে মেতে আছিস।একটা অপরিচিত মানুষের মৃত্যু জানলেও আমরা কষ্ট পাই,সেখানে তুই কিভাবে এত সহজে ভুলে গেলি দিব্যকে???

–বাবা…বিশ্বাস করো।

–তোর ভালোবাসা কতটা ঠুনকো আমি বুঝে গেছি।

–(চোখ বন্ধ করে)আমি অফিসে গেলাম।

–চাকরি ছেড়ে দিবি এই মিথ্যাটা বলার দরকার নেই।যা,রিশাদের সাথে এই সময়টুকু কাটা কিন্তু খুব শীঘ্রই সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।

–কেন বুঝছো না,বাবা ??দিব্যকে আমি ভালোবাসি না।

–ভালোবাসিস না তাই বলে একটা মানুষের মৃত্যুতে তোর কোন প্রভাবই পড়বেনা।এতটা নির্দয় তো আমার মেয়ে না।যা তুই,এই মুহূর্তে তোকে আমি নিজের সামনে সহ্য করতে পারছি না ।

আর কিছু না বলে রিত্ত মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়।বাবার কথাগুলোকে মনে জায়গা দিতে চাইল না রিত্ত কিন্তু তারা জোর করেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে বারবার।দিব্যর রক্তাক্ত চেহারা আর শেষ আকুতিটা রিত্তর বুকে এক সূক্ষ্ম ব্যথা সৃষ্টি করছে যা ক্রমাগত চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে।চোখ বুজলেই রিত্ত দিব্যর চেহারা দেখতে পাচ্ছে,কানে বাজছে দিব্যর আকুতি।

.

.

.
অফিসে আসার পর থেকে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে রিশাদ।রিত্তর অনুপস্থিতি তার কাছে ততটা কষ্টকর যতটা শরীরের একটা অংশ শরীর থেকে আলাদা হওয়ার।রিশাদ দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে।অবশেষে রিত্ত ঢুকল।রিত্তকে দেখেই উঠে আসলো রিশাদ।রিশাদকে দেখেও যেন দেখলোনা রিত্ত,সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নিজের ডেস্কে বসলো।রিত্তর এমন আচরণে ভিমড়ি খাওয়ার উপক্রম রিশাদ।মেয়েটা এভাবে তাকে অবহেলা করে যেতে পারলো কিভাবে??চিন্তায় কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে রিশাদের।রিশাদ রিত্তকে নিজের কেবিনে ডাকল।অনিচ্ছা সত্ত্বেও গেল রিত্ত।

–কি হয়েছে রিত্ত??এমন করছো কেন তুমি??

–আমার কিছু হয়নি রিশাদ।আমি একা থাকতে চাই কিছুটা সময়।

–একা থাকতে চাও মানে কি রিত্ত??আমি চাইলেও অধিকার খাটিয়ে তোমাকে নিজের কাছে এনে রাখতে পারি কিন্তু তোমার বাবার তোমাকে প্রয়োজন।এটা আমার বাধ্যবাধকতা না,আমার মানবিকতা।তুমি স্ত্রী আমার,তোমার মনের সকল কথা জানার অধিকার অবশ্যই আছে আমার।

–রিশাদ!!প্লিজ,আমাকে একটু সময় দাও নিজেকে ঠিক করার।

–তুমি কবে ভুল ছিলে রিত্ত??

–আমি বরাবরই ভুল ছিলাম রিশাদ।দিব্যকে ভালোবাসা আমার ভুল ছিল,ওকে ভুলে তোমাকে বিয়ে করাটা আমার ভুল ছিল,দিব্যকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া আমার ভুল ছিল আর সব ভুলে তোমার প্রেমে মত্ত হওয়াটাও আমার ভুল ছিল।নূন্যতম মানবিকতা নেই আমার মাঝে।

–এসব কেন বলছো রিত্ত??কি হয়েছে তোমার??

রিত্ত আর কিছু না বলে রেজিগনেশন লেটার রিশাদের হাতে ধরিয়ে দেয় রিত্ত।অফিসে এসে আগে এটাই করেছে রিত্ত।

–রিত্ত, ইউ হ্যাভ গোন ম্যাড!!তুমি এমনটা করতে পারোনা।আমি ভালোবাসি তোমায়।এতটা ঠুনকো কি করে হতে পারে তোমার ভালোবাসা???

–হ্যাঁ আমার ভালোবাসা ঠুনকো!!আমি কাউকে ভালোবাসার যোগ্যই না।আমি শুধু ঘৃণার যোগ্য।কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।আমাকে ভালোবেসে থাকলে প্লিজ সাইন করে দিও লেটারটাতে।

–ওহহ,ভালো কথায় শুনবে না!!!ওকে ফাইন।মিসেস রিত্ত রিশাদ আফসান,আপনার ওয়ান ইয়ার কন্ট্রাক্ট শেষ হওয়ার আগে আপনি অফিস থেকে রিজাইন করতে পারবেন না।

–রিশাদ!!!

–কল মি স্যার!!

–স্যার..প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড!!

–অবশ্যই!!আমি বুঝবো!আপনি কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী যদি দশ লাখ টাকা একদিনে পে করতে পারেন,ইউ উইল বি ফ্রি।

–জোর করে অফিসে আটকে রাখতে পারবেন কিন্তু ভালোবাসা কখনোই পাবেন না।

–এটা অফিস,মিসেস.রিত্ত।আপনি ভুলে যাচ্ছেন,আপনার আর আমার সম্পর্ক শুধু বস-এমপ্লয়ির।

–ওকে স্যার।

রিত্ত মাথা নিচু করে নিজের ডেস্কে এসে বসলো।রিশাদের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল রিত্ত যাতে রিশাদকে ভুলতে পারে কিন্তু সেটা বোধহয় আর হবেনা।রিত্ত বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে তার সাথে।দিব্যকে কি সে আদৌ ভালোবেসেছিল??আর রিশাদকেই কি সে আদৌ ভালোবাসে??মনের সাথে একপ্রকার দ্বন্দ্ব করছে রিত্ত।তবে এই দ্বন্দ্বে জয় যারই হোক,পরাজয়টা তার,একান্তই তার।

–মিসেস.রিত্ত!!রিশাদ স্যার ডাকছে আপনাকে।

–কেন,আসিফ ভাইয়া??

–যান,শুনে আসুন।

একপ্রকার বিরক্তি নিয়েই আবার রিশাদের কেবিনে ঢোকে রিত্ত।ঢুকতেই যা দেখে তার জন্য কিছুতেই প্রস্তুত ছিল না সে।রিশাদ ড্রিংক করছে,একদম মাতাল অবস্থা।রিত্ত চলে যেতে নিচ্ছিল কিন্তু রিশাদ রিত্তকে টেনে নিজের কোলে বসালো।রিশাদের কোল থেকে ওঠার জন্য ছটফট করতে লাগল রিত্ত কিন্তু রিশাদের সাথে পেরে উঠলো না।রিশাদ পাগলামি করছে।কখনো রিত্তর গালে চুমু খাচ্ছে,কখনো বা রিত্তর চুলে।রিত্ত পড়েছে আরেক ঝাভেলায়।রিশাদের কাছে সেও থাকতে চায় কিন্তু বাবার কথা মনে হতেই হাত শক্ত হয়ে আসে রিত্তর।জোরেসোরে রিশাদকে ধাক্কা দিয়ে উঠে বসে সে।রিত্ত কেবিন থেকে বেরোতে যাবে তার আগেইরিশাদ রিত্তকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।রিত্তকে নিজের দুই বাহুর মাজে বন্দি করে নেয়।রিশাদের মুখ থেকে অ্যালকোহলের বিশ্রি গন্ধে গা গুলিয়ে আসছে রিত্তর।রিশাদ নেশাভরা দৃষ্টিতে দেখছে রিত্তকে।রিত্তর গলার তিলটায় রিশাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি।রিত্ত রেগে রিশাদকে ধাক্কাতে লাগল।তাল সামলাতে না পেরে রিশাদ ফ্লোরে পড়ে যেতে ধরল,বাঁচার জন্য রিত্তকেও টেনে ধরল রিশাদ।ব্যস!!রিশাদ পড়ল ফ্লোর আর রিত্ত রিশাদের বুকে।রিশাদের হৃদস্পন্দন কানে আসতেই রিত্তর গলা শুকিয়ে আসলো,মনের ভিতরটা শূণ্য লাগতে শুরু করল।চোখ বন্ধ করে রিশাদের হৃদস্পন্দন অনুভব করতে লাগল সে কিন্তু চোখজোড়া বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো দিব্যর রক্তাক্ত লাশ আর বাবার কথাগুলো।রিশাদকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে উঠে দাঁড়ালো রিত্ত।

দৌড়ে রিশাদের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো রিত্ত।রিত্তর কান্না পাচ্ছে।না সে পারছে রিশাদকে ভালোবাসতে আর না পারছে ভুলতে।এক গোলকধাঁধায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে সে।

.

.

.
–এটা তুই ঠিক করছিস না রাহাদ।রিত্ত ভালোবাসে রিশাদকে।আমি আমার ছেলেকে হারিয়েছি তার মানে এই না যে এর জন্য ওরা দায়ী।দোষটা দিব্যর ছিল।

–আমার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত।আমি কিছুতেই রিশাদকে রিত্তর ধারে-কাছে ঘেঁষতে দিব না।রিশাদ আমার এত খারাপ অবস্থা করেছে তাও তুই বলছিস ওকে মাফ করতে??

–দেখ রাহাদ,ভালোবাসা কখনো আলাদা করা যায় না।ওরা হয়তো দূরে আছে কিন্তু ওদের ভালোবাসা বিন্দুমাত্র ও কমবে না।কষ্ট পাবে দুজন কিন্তু ভালোবাসা ভুলবে না।

–রিত্তকে আমি রিশাদের থেকে আলাদা করবোই।যাই হয়ে যাক না কেন,রিত্ত কখনো রিশাদের হতে পারে না।রিত্ত আমার মেয়ে।আমার শত্রুর সাথে ওকে আমি মেনে নিতে পারবো না।

–শত্রুতার এই মনগড়া খেলায় একটা জীবন নষ্ট হয়েইছে,তুই আরেকজোড়া জীবন নষ্ট করতে চাচ্ছিস??

–বিধান!!তুই এত সহজে রিশাদকে মাফ কিভাবে করে দিলি??ওহহ বুঝেছি,সম্পত্তি তো তুই হারাসনি,হারিয়েছি আমি তাই আমার কষ্ট তুই বুঝবিনা।

–টাকা,সম্পত্তি কখনোই তোকে সুখ দিতে পারবেনা রাহাদ,খুব শীঘ্রই আমি সমস্ত সম্পত্তি এতিমখানায় দান করে আল্লাহর ইবাদতে ডুবতে যাচ্ছি।

–তুই বেশি বলছিস বিধান।টাকা থাকলে সব হয়।আজ টাকা আছে বলেই তুই এসব বলতে পারছিস।

রাহাদ আহমেদের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দিলেন বিধান মাহমুদ।অতঃপর দেওয়ালে ঝুলে থাকা দিব্যর ছবির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে