#Lover_Boss
#part_10
#Mihika_Rahman
নির্জীব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিত্ত।ফ্লোর রক্তে ভেসে যাচ্ছে।রক্তের স্রোত রিত্তর ঠিক পায়ের কাছে এসে থেমেছে।রিত্ত নির্বাক চাহনীতে দেখছে রক্তে মাখামাখি একটা শরীর।
ফ্ল্যাশব্যাক,
মারামারির এক পর্যায়ে দিব্য রিভলবার বের করে রিশাদের দিকে ধরে।তা দেখে রিত্ত আর থাকতে না পেরে দিব্যর মুখোমুখি দাঁড়ায়।
–রিত্ত সরে যাও।
–তুমি চলে যাও দিব্য।
–আমি তোমাকে ভালোবাসি রিত্ত।নিজের জীবনের চেয়েও তোমাকে বেশি ভালোবাসি।আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস জুড়ে শুধু তোমার বসবাস।তোমাকে ছাড়া আমি ঠিক ততটাই অসহায় যতটা এ পৃথিবীতে একজন ব্যক্তি তার দৃষ্টি ছাড়া।
–প্লিজ দিব্য,চলে যাও তুমি।
–ওকে ফাইন।আমি যাবো।আমার লাস্ট একটা কোয়েশ্চেনের উত্তর দাও।
–বলো।
–তুমি আমাকে কি একটুও ভালোবাসতে পারোনি??একটুও মায়া হয়নি আমার জন্য???
–আমি রিশাদকে ভালোবাসি…(নির্লিপ্ত কণ্ঠে)
মাথা নিচু করে কথাটা বলতেই গুলির তীব্র শব্দ পেল।মাথা তুলে তাকাতেই রিত্ত দেখল দিব্যর রক্তাক্ত দেহটা নিচে পড়ে আছে।ঠিক মাথা বরাবর নিজেকে গুলি করেছে দিব্য।দিব্যর লাশ দেখে কয়েক মিটার দূরে সরে গেল রিত্ত।আগের ন্যায় আডার মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ল কিছুক্ষণের জন্য।রিত্ত রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে শুধু দেখছে,সমস্ত বাড়িতে আতঙ্ক বিরাজ করে আছে।রিশাদ পুলিশকে ফোন করল।অতঃপর রিত্তর পাশে এসে দাঁড়ালো।
–রিত্ত!!!রিত্ত,লিসেন টু মি।
–…….
-রিত্ত,কথাটা শোনো আমার।
–……..
–রিত্ত!!!!!!!
— ও…ও আ…আমার…জ…জন্য স….স…সুইসাইড কর…করেছে।আ….আমি দায়ী ওর মৃত্যুর জন্য!!আমি দায়ী রিশাদ,আমি দায়ী!!(ফোঁপাতে ফোঁপাতে)
–রিত্ত,শান্ত হও তুমি!!!পুলিশ আসছে,ওনারা ডেডবডি নিয়ে যাবেন।তোমার কোন দোষ নেই।
–সব দোষ আমার!!!আমি একটা খুনী!!আমি তোমাকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম,এখন দিব্যকে……
–চুপ!!!একদম চুপ!!!কি পাগলামো শুরু করছিস!!ইনাফ ইজ ইনাফ!!!
রিশাদ রিত্তকে টানতে টানতে স্টেজের দিকে নিয়ে আসে।
সামনে কাজী সাহেব বসে আছে।রিশাদ কবুল বলে ফেলেছে।রিত্ত বোবার মতো বসে আছে,ক অবধি বের হচ্ছেনা তার মুখ থেকে।রিশাদের এখন মন চাচ্ছে মেয়েটাকে টেনে দুইটা থাপ্পড় লাগাতে।
–রিত্ত,কবুল বলো।
–…….
–রিত্ত !!!!!!
–ক….কবুল। ক….বুল।কবুল।
রিত্ত কবুল বলতেই রিশাদ সবাইকে বিদায় জানিয়ে রিত্তকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকল।
অন্ধকার ঘরে ডিমলাইটের মৃদু আভা।বিছানায় চিন্তিত ভাঁজ পড়া কপালে বসে আছে রিত্ত।রিশাদের বিরক্ত লাগছে রিত্তর এই চিন্তিত মুখ কিন্তু কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা এত সহজে ভোলা সম্ভব নয় মেয়েটার পক্ষে।রিশাদ রিত্তর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
–মাথা ব্যথা করছে,চুলগুলো টেনে দাও তো রিত্ত।
রিশাদের কথায় ধ্যান ভাঙে রিত্তর,আলতো হাতে রিশাদের চুল টানতে শুরু করে রিত্ত।রিত্তর এত আস্তে চুল টানা দেখে রিশাদ বলল,”থাক!!যে চুল টানতেছেন,মাথার সব চুল ছিঁড়ে পড়ে যাবে!!”রিশাদের কথা শুনে রেগে খেল রিত্ত।বেশ জোরেসোরেই রিশাদের চুল ধরে টান দেয় রিত্ত।রিশাদ “আহহ”বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।রিত্ত মুখ টিপে হাসছে।রিশাদ রিত্তর হাত ধরে টান দিল।রিশাদের বুকে এসে পড়ল রিত্ত।রিশাদ রিত্তর সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিল,অতঃপর রিত্তর কপালে একটা চুমু খেল।রিত্ত লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করল।এটা দেখে রিশাদ হেসে রিত্তর থুতনি আলতো করে তুলে বলল,”আমার লজ্জাবতীটা!!!”রিশাদের কথা শুনে রিত্ত লজ্জা পেয়ে রিশাদের বুকে মুখ লুকাল।রিশাদ আলতো হাতে রিত্তর মাথায় হাত বুলাতে লাগল।এক নতুন শুরুর আভাস ছেঁয়ে গেছে ওদের জীবনটাই।রিত্তর শরীর থেকে এক ভালোবাসাময় ঘ্রাণ পাচ্ছে রিশাদ যা তার মনের অন্তঃর্পুরে প্রশান্তির দোলা দিচ্ছে।
ক্রমাগত কাছাকাছি আসতে থাকে দুজনের নিঃশ্বাস,নিস্তব্ধ রাতে অস্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে একে অপরের দীর্ঘশ্বাস।পূর্ণতার প্রাপ্তিতে মত্ত একজোড়া জীবন,একজোড়া অস্তিত্ব।
রিশাদের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির নিদ্রায় রিত্ত আর রিশাদের আখিদ্বয় ব্যস্ত রিত্তকে পর্যবেক্ষণে।
.
.
.
–রিশাদ,উঠুন।
–আর একটু পরে!!(ঘুম ঘুম কণ্ঠে)
–আমি বাবার সাথে দেখা করতে যাবো(গম্ভীর কণ্ঠে)
রিত্তর কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠল রিশাদ।এলোমেলো চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,”রেডি হয়ে নাও,যাও।ন’টায় বেরোবো।”রিশাদের কথায় রিত্তর ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।রিত্ত তড়িঘড়ি করে রেডি হতে চাই।চিন্তিতভাবে বিছানায় বসে আছে রিশাদ।সে বুঝতে পারছেনা তাকে দেখার পর রাহাদ আহমেদের প্রতিক্রিয়া কিরূপ হতে পারে!
.
.
.
গাড়ি ড্রাইভ করছে রিশাদ।রিত্তর চোখ জুড়ে এক আলাদা দীপ্তি,বাবার সাথে দেখা করার এক তীব্র উত্তেজনা।অথচ রিশাদ একেবারেই ভাবশূণ্য।একরকম চিন্তায় আছে সে।হুট করেই মেয়ের বিয়ে মেনে নেওয়া কোন বাবার পক্ষে সম্ভব না।
হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি থামাল রিশাদ।গাড়ি থামাতেই রিত্ত দৌড়ে ভেতরে ঢুকল।রিশাদ গাড়ি পার্ক করছে।
–বাবা!!!
–র…রিত্ত!!মা,এসেছিস তুই!!বিয়ে করে বাবাকে ভুলেই গেলি!!!
–না বাবা।(কাঁদতে কাঁদতে)
–আয় বস!!জামাই কোথায়???
–ঐ তো বাবা,আসছে।
দরজার দিকে তাকাতেই বড়সড় একটা ঝটকা খেলেন রাহাদ আহমেদ।এ যে রিশাদ!!মুখের হাসি মিলিয়ে গেল তার।রিশাদ এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো রাহাদ আহমেদের সামনে।
–রিশাদ এখানে কি করছে???
–আঙ্কেল!!
–আমি তোমাকে প্রশ্ন করিনি,আমি আমার মেয়েকে প্রশ্ন করেছি যে রিশাদ এখানে কি করছে??
–বাবা!!!
–বলবি তুই??
–বাবা,রিশাদই আমার বর,আমি ভালোবাসি রিশাদকে।
–যদি বাবাকে ভালোবাসিস,এক্ষুণি ঐ ছেলের সাথে সমস্ত সম্পর্ক শেষ করবি।
–বাবা!!আমি ভালোবাসি রিশাদকে।ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবোনা।
–বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারবি??তুই জানিস,আমাদের সমস্ত সম্পত্তি ঐ রিশাদই কেড়ে নিয়েছে??আমার হার্ট অ্যাটাকের জন্য ও ও দায়ী।এতসব জেনেও ওকে ভালোবাসবি তুই??
–কিন্তু বাবা,প্রথমে ভুলটা আমরা করেছি,রিশাদকে ধোকা দিয়েছি।ওর বাবা-মার মৃত্যুর জন্য আমরা দায়ী।এতকিছু জেনেও যদি ও আমাকে ভালোবাপতে পারে,তাহলে আমি কেন পারবোনা??
–তুই ঐ ছেলেটার জন্য আমার সাথে তর্ক করছিস???
–বাবা,ঐ ছেলেটা আমার স্বামী।আমার সমস্ত অপরাধ মাফ করে আমাকে আপন করেছে সে।
–রিত্ত!!!!
হঠাৎ বুকের বামপাশে হাত দিয়ে বসে পড়লেন রাহাদ আহমেদ।রিত্ত দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরতে নিলে তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন।নার্সরা এসে রাহাদ আহমেদকে বেডে বসালেন,ডক্টরকে ডাকলেন।
–আপনারা প্লিজ বাইরে যান,আমি পেশেন্টকে দেখছি।
–ওকে ডক্টর।
রিশাদ আর রিত্ত বাইরে এসে দাঁড়ালো।রিত্ত কেঁদে ভাসিয়ে ফেলছে।জীবনের সূচনাতেই বাবার অভিশাপ নিয়ে কিভাবে জীবন শুরু করবে সে!!রিত্তর চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে,রিশাদ কিছুই বলতে পারছেনা।ভুল তার ও ছিল,প্রতিশোধের নেশায় অনেক নিচে নেমে গেছে সে।
–রিশাদ!!!আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা আর না পারবো বাবাকে ছেড়ে থাকতে।
–তোমার এখন ওনার সাথে থাকা দরকার।
–রিশাদ!!প্লিজ এভাবে বলো না।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।বাবাকে বোঝাও তুমি।
–ওনার অবস্থা একটু বেটার হোক,তারপর।এখন ওনার তোমাকে দরকার।আমি সবসময় থাকবো তোমার পাশে।ডোন্ট ওয়ারি।আর হ্যাঁ ওনি হয়তো জব ছাড়তে বলবেন তোমাকে।তুমি বলো ছেড়ে দিব।বাকিটা আমি আর কন্ট্রাক্ট দেখে নিব।
–রিশাদ!!আমি পারবো সব সামলাতে??
–আমার তোমার উপর বিশ্বাস আছে।টেক কেয়ার।আমি আসছি।
রিত্তর কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেল রিশাদ।রিত্ত তাকিয়ে রইল রিশাদের যাওয়ার পানে যতক্ষণ না রিশাদ দৃষ্টির অগোচর হয় ততক্ষণ।
চলবে……
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।সবাইকে ধন্যবাদ।]