Lover Boss part-09

0
3284

#Lover_Boss
#part_9
#Mihika_Rahman

রিশাদ ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেছে।রিত্ত একটাবারের জন্যও একা ছাড়েনা রিশাদকে।রিত্ত প্রেগন্যান্ট নয় জানার পর থেকে তো রিশাদ রিত্তকে সবসময় নিজের পাশে বসিয়ে রাখে।

ছয় মাস অতিবাহিত হতে চলল বিয়ের।কত কাছাকাছি দুজন তবুও যেন এক বিস্তর দূরত্ব।কেউ কারো চোখের দিকে তাকাতে পারেনা,ভালোবাসার উষ্ণতায় মেতে ওঠা তো বহুদূরের কথা।রিশাদের মনেও অনুতাপের মেঘ জমেছে,মেয়েটাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে সে।রিশাদ ঠিক করে রেখেছে বিয়ের ছয়মাস পূর্ণ হলে রিত্তকে নিজের মনের কথা বলে দেবে।রিত্ত যদি অস্বীকার করে তাও রিত্তকে শিকল দিয়ে বেঁধে নিজের কাছে রাখবে।এসব ভাবতে ভাবতেই রিত্ত আসলো রিশাদের কাছে।

–রিত্ত,শোনো তো।

–বলুন।

–গিটারটা pass করো তো।

–গিটার দিয়ে কি করবেন???

–ক্ষুধা লাগছে,খাবো!!!আরে বাবা,গিটারটা দিয়ে কি করে!!!!

–নেন কিন্তু বাজাতে পারবেন না,হাতে ব্যান্ডেজ করা আছে।

–ব্যান্ডেজ রাখবে কে!!!খুলে দাও!!!

–ব্যান্ডেজ খুলবে কে!!!শখ কত!!!গিটার বাজানোর জন্য আমি ওনার হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দিব!!ইন্জুরি ভালো হোক,তারপর গিটার,তবলা,ঢোল-যা মন চায়,বাজান।

–এই চুপ!!!এত বকবক কেন???গিটার দিবা???

–নাহ!!!!

–প্লিজ দাও না গো!!

–রিশাদ!!ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করবেন না কিন্তু বলে দিচ্ছি।

–ওকে ফাইন,আমি বাজাবোনা।তুমি গিটার বাজাবে।

–আমি পারিনা।

–কাছে আসো,শেখাচ্ছি।

রিত্ত গিটার নিয়ে রিশাদের কাছে যেতেই রিশাদ রিত্তকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।ব্যান্ডেজটা খুলে রিত্তর হাতের উপর হাত রাখে।রিশাদের স্পর্শে কেঁপে ওঠে রিত্ত।রিশাদ আলতোভাবে রিত্তর হাত গিটারে রাখল।রিশাদ গিটার বাজাচ্ছে আর রিত্ত চোখ বন্ধ করে রিশাদের স্পর্শ অনুভব করছে।রিশাদের হাতের ছোঁয়া তার মনে এক অদ্ভুত সাড়া জাগাচ্ছে।গিটার বাজাতে বাজাতে হুট করেই রিত্তর পেটে হাত রাখল রিশাদ।সাথে সাথে চমকে চোখ খুলল রিত্ত।লাফ দিয়ে উঠে বসল রিত্ত।রিশাদ বাঁকা হেসে রিত্তর দিকে তাকিয়ে রইল।রিত্ত চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেল।”আমার লজ্জাবতীটা!!!”কথাটা বলেই মনে মনে হাসলো রিশাদ।

.

.

.
“না….আমি রিশাদকে জিততে দেব না…কিছুতেই রিত্তকে হারাতে পারবো না…..রিত্ত আমার…..শুধুই আমার…..রিত্ত শুধু দিব্যর …….রিশাদ আফসান…….তোর মৃত্যু আমার হাতে…….”চিৎকার করে কথাগুলো বলছে দিব্য।

দিব্যর চিৎকার শুনে বিধান মাহমুদ ছুটে এলেন দিব্যর ঘরে।

–কি হয়েছে দিব্য???চিৎকার করছো কেন???

–আমি ছাড়বোনা ….আমি রিশাদকে ছাড়বোনা……..

–দিব্য,লিসেন টু মি!!!দিব্য!!

–আমি রিশাদকে ছাড়বো না !!!!

–দিব্য!!!(দিব্যকে ঝাঁকাতে লাগলেন বিধান মাহমুদ।)

বিধান মাহমুদকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেল দিব্য।অজানা আতঙ্কের আশঙ্কায় গলা শুকিয়ে আসলো বিধান মাহমুদের।কি করবেন তিনি বুঝতে পারছেন।রিত্তর জীবনটা নষ্ট হোক তিনি চাননা কিন্তু নিজের ছেলের পাগলামির কাছেও বাধ্য তিনি।বারে বারে ঢোক গিলছেন বিধান মাহমুদ।এই বুঝি কোন খারাপ খবর ধেয়ে এলো তার দরজার সম্মুখে কিংবা হয়তো তার ছেলেই খারাপ খবর হয়ে এলো।চিন্তায় ঘামতে লাগলেন তিনি,বুকে চিন চিন ব্যথা করছে।

.

.

.
“রিত্তকে আমার মনের কথা জানাতেই হবে।আমি রিত্তকে ছাড়া বাঁচবোনা।আমার এই ঘৃণ্য জীবনকে ভালোবাসা দিয়ে আবৃত করতে একমাত্র রিত্তই পারবে।রিত্তই হবে এই রিশাদের রানী!!!”মনে মনে কথাগুলো বলছে আর মুচকি হাসছে রিশাদ।ঠিক তখনই রিত্ত রুমে ঢুকল।রিশাদকে হাসতে দেখে রিত্ত ভ্রু কুঁচকে তাকাল।

–কার কথা ভেবে হাসছেন???

–আমার লাইফলাইন।

–কে সে???

–বলা বারণ!!!

–ওহহহ(উদাস কণ্ঠে)

–খুব শীঘ্রই তাকে নিজের ওয়াইফ করব।

রিশাদের শেষ কথাটা শুনে রিত্তর মনে ঝড় উঠলো।তারমানে রিশাদ অন্য কাউকে ভালোবাসে।রিশাদের জীবনে অযথাই পড়ে আছে রিত্ত।”নাহ!!!আর সম্ভব না!!আমি চলে যাবো রিশাদের জীবন থেকে।রিশাদ সুখে থাক নিজের লাইফলাইনকে নিয়ে!!!আর কখনো রিশাদের লাইফে আসবোনা আর না-ই কখনো নিজেকে মিসেস.রিশাদ আফসান দাবী করব!!!আমি শুধুই একটা ভুল ওনার জীবনের আর ভুল হয়েই থাকবো।কখনো ভালোবাসবেন না ওনি আমায়।”কথাগুলো ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিত্ত।

“তুমিই আমার লাইফলাইন রিত্ত কিন্তু এখন তো বলবোনা সেটা!!আই ওয়ান্না গিভ ইউ আ সারপ্রাইজ,বেবি!!তোমাকে আমি তোমার মনের মতো করে প্রপোজ করবো!!আর নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে নতুন করে ঘরে তুলবো।আর কষ্ট দিব না তোমাকে।ভালোবাসবো শুধু…….আই লাভ ইউ রিত্ত,আই লাভ ইউ মোর দ্যান এভরিথিং।”মনে মনে ভাবছে রিশাদ!!!

.

.

.
আজ রিশাদ-রিত্তর 6th months anniversary..রিশাদ সম্পূর্ণ বাড়ি সুন্দর করে সাজিয়েছে।রিত্ত তো ধরেই নিয়েছে আজ রিশাদ ওকে ডিভোর্স দিয়ে ওর লাইফলাইনকে বিয়ে করবে।রিত্ত খালি বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে,এই বূঝি রিশাদের লাইফলাইন এলো।দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে সে।রিত্তর কাজকর্ম দেখে রিশাদহাসছে শুধু।পাগলীটা কত ভালোবাসে তাকে!!!অবশেষে রিশাদ কিছু একটা অ্যানাউন্স করার জন্য মাইক হাতে নিল।ব্যস!!ভয়ে কাঁপতে শুরু করল রিত্ত।রিত্ত কিছুতেই মাইক দিচ্ছে না রিশাদকে।রিত্তর কাজ দেখে রিশাদ হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছেনা।অবশেষে রিশাদ জোর করেই মাইক নিল রিত্তর হাত থেকে।রিত্ত এখন কেঁদে দিবে এমন অবস্থা।রিশাদ ভ্যাঁবাচ্যাকা খেয়ে আছে কিন্তু মাইক হাতে নিয়ে বলা শুরু করে,
“So ladies&gentleman,allow me to introduce you to my lifeline,my love…
মেয়েটা শুধু আমার লাইফলাইন না,আমার সব।ওকে কতটা ভালোবাসি তা আমার নিজেরও জানা নেই,শুধু জানা আছে,She is mine….আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আমি তাকে চাই,তার ভালোবাসার আবরণে নিজেকে আবৃত করতে চাই।আমার জীবনের সমস্তটুকু তৃর নামেই লিখে দিতে চাই।so,let me introduce you to my love,Miss….”রিশাদ কিছু বলার আগেই দিব্য এসে রিত্তর হাত টেনে ধরল।দিব্যকে দেখেই রাগ উঠলো রিশাদের।মাইক রঃখে রিত্তর কাছে এসে রিত্তকে নিজের কাছে টেনে নিল রিশাদ।

–রিত্তর গায়ে যদি তুই স্পর্শ করিস,তোর হাত আমি ঠিক রাখবোনা দিব্য!!!

–ওহহ কাম ওন,রিশাদ আফসান!!!রিত্ত শুধু আমার!!ও আমাকে ভালোবাসে!!

–রিত্ত কাকে ভালোবাসে সেটা আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাইনা।তুই বেরিয়ে যা এখান থেকে।

–রিত্তকে না নিয়ে তো আমি যাবোনা,রিশাদ আফসান।রিত্ত শুধু দিব্যর হবে।

বলেই রিত্তর হাত ধরে টান দিল দিব্য।সাথে সাথে রিশাদ দিব্যর হাত বরাবর আঘাত করল।ছিটকে দূরে সরে গেল দিব্য।বাঁকা চোখে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো রিশাদের দিকে।তবে এই রাগী দৃষ্টির মাঝেও ছলছল করা চোখজোড়া লুকাতে পারলোনা।দিব্যর চোখ বেয়ে যঃকোন সময় অশ্রু গড়াতে পারে।ভালোবাসার কি এক করুণ পরিণতি পাচ্ছে সে!!!চোখের অশ্রুকে উপেক্ষা করে রিশাদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে এগিয়ে যায় দিব্য।রিত্ত কেঁদেই ফেলেছে।রিশাদ আর দিব্যর এই সংঘর্ষে কষ্টটা সেই বেশি পাচ্ছে।না রিশাদের ভালোবাসা পেয়েছে সে আর না দিব্যর ভালোবাসা চেয়েছে!!নিয়তি এমন এক মোড়ে এনে ফেলেছে রিত্তকে যেখানে সে ভালোবাসার জন্য হাতড়ে মরছে কিন্তু ভালোবাসা তাকে ধরা দিচ্ছেনা।অথচ মোড়ের ঠিক অপরপ্রান্তেই যে তাকে ভালোবাসা নিয়ে সংঘর্ষ হচ্ছে তাও অজানা তার।সে তো জানেনা রেশাদের লাইফলাইন আর কেউ নয়,সে নিজেই।মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে রিত্তর,চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।সামনে দেখা দৃশ্যগুলো ধীরে ধীরে ধোঁয়াশায় মিশে যাচ্ছে।ধীরে ধীরে চোখটা বুঁজে আসলো রিত্তর।

চলবে……..
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।সবাইকে ধন্যবাদ।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে