Lover boss part-08

0
3234

#Lover_boss
#part_8
#Mihika_Rahman

“মি.রিশাদের মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়েছে।আপনি যেই হোক না কেন প্লিজ সিটি হসপিটালে চলে আসুন।”অপরপাশ থেকে সংবাদটা পাওয়ামাত্র হাত থেকে ফোন পড়ে গেল রিত্তর।হাত-পা কেঁপে কেঁপে উঠছে।রিত্ত সব ফেলে ওঠে ছুটল হসটিটালের দিকে।চিন্তায় হৃদস্পন্দন ক্রমশ কমে আসছে রিত্তর।রিশাদের চিন্তায় প্রতিমুহূর্তে হাত-পা শীতল হয়ে যাচ্ছে তার।ছোটবেলার সেই দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠছে।তবে কি দ্বিতীয়বারের মত রিশাদকে হারাতে বসলো সে???দুহাতে মাথা চেপে ধরে ছটফট করতে লাগে রিত্ত যেন মাথাটা কেউ ছিঁড়ে খাচ্ছে।রিত্তর এখন ইচ্ছে করছে নিজেকে মেরে ফেলতে।ছোটবেলায়ও ভুলটা তার ছিল,আজও ভুলটা তারই।

.

.

.
–মিসেস.রিশাদ আফসান আপনি???

–জ্বী ডক্টর।

–ওনি ড্রিংক করেছেন প্রচুর,সামনে থেকে আসা কারের সাথে খারাপভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে।ইন্টারনাল ইন্জুরিও আছে।

–ডক্টর,আমি কি একবার ওনার সাথে দেখা করতে পারি???

–এখন ওনাকে মেডিসিন দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে।ওনি উঠলে আপনার সাথে দেখা করিয়ে দিব।

–থ্যাংকস ডক্টর।

–টেক কেয়ার অফ হিম।

ডক্টর চলে যেতেই রিশাদের কেবিনের বাইরে দাঁড়ায় রিত্ত।রিশাদের কপালে,হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ।বন্ধ চোখজোড়ার মাঝে কত যে অভিমান,অভিযোগ মিশে আছে বুঝে উঠতে পারেনি রিত্ত।নিছের বলা একটা মিথ্যার জন্য আজ রিশাদের এই অবস্থা কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছেনা রিত্ত।নিজের উপর তীব্র রাগ আর বিতৃষ্ণা কাজ করছে তার।রিশাদের চোখের দিকে তাকানোর সাহস তার নেই।

–র….র….রিত্ত….. রিত্ত!!!!!!

–হ্যাঁ,রিশাদ,আমি এখানেই আছি,বলুন।

দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে রিশাদের কাছে বসলো রিত্ত।

–তো…তো…তোমাকে….আ…আমি….খুব শীঘ্রই ডিভোর্স দিয়ে দি….দিব।ত….তুমি দিব্যর সাথে সু….সুখে থাকবে।

–না রিশাদ!!!প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিওনা,রিশাদ!!!তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা।

–এতদিন তো ছিলে বেঁচে,এ…এই রিশাদ আর কোনদিন তোমার জীবনে আসবেনা।

–আপনি কি বলছেন এসব??আমার আপনাকে দরকার লাইফে।আপনাকে ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব না আমার।

–প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও।তুমি দিব্যর কাছে যাও।এইমুহূর্তে আমি কোন কথা বলতে চাইনা তোমার সাথে।

–রিশাদ,একটাবার কথা শোন আমার ।

–গেট লস্ট।

–রিশাদ প্লিজ!!!

–আই সেইড গেট লস্ট!!!!(চিৎকার করে)

রিত্ত বেরিয়ে আসে রিশাদের কেবিন থেকে,চোখের জল বাঁধা মানছে না, অবিরত চোখ বেয়ে ঝরেই যাচ্ছে।রিশাদের অবহেলাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা রিত্ত।

.

.

.
–বস,রিশাদের এক্সিডেন্ট হয়েছে,রিত্ত ম্যাম হসপিটালে গেছেন।

–ওহহ!!!!ওকে,ফোন রাখ।

রিশাদের এক্সিডেন্টের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকায় দিব্য।ভাবল একবার গিয়ে রিত্তর অবস্থা দেখে আসা দরকার।দিব্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

.

.

.
–পা…পানি..!!!

রুমে নার্স নেই,বাইরে থেকে রিত্ত বুঝতে পারল রিশাদ পানি খেতে চায়।রিশাদের নিষেধ করা সত্ত্বেও ভেতরে ঢুকল রিত্ত।গ্লাসে পানি ঢেলে রিশাদকে দিল।পানিটুকু খেয়ে সামনে তাকাতেই রিশাদ দেখল রিত্ত।রাগে গ্লাসটা চেপে ধরল রিশাদ।মুহূর্তেই গ্লাস ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গেল।কাঁচ ভাঙার শব্দে রিশাদের দিকে তাকাতেই রিত্ত দেখল রিশাদের হাতে কাঁচ ঢুকে হাত থেকে রক্ত ঝরছে।রিত্ত ব্যান্ডেজটা নিয়ে রিশাদের হাতে বেঁধে দিতে গেল।রিত্ত এগোতেই রিশাদ রিত্তর চুল টেনে ধরে রিত্তকে মুখের কাছে নিয়ে এলো।রিশাদের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে রিত্তর মুখে,যা ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে রিত্তর।ব্যান্ডেজসহ হাত থরথর করে কাঁপছে।রিশাদ ক্রমশ এগোচ্ছে রিত্তর মুখের দিকে।রিত্তর নিঃশ্বাস একেবারেই থেমে আসার মতো অবস্থা।রিত্তর চোখে চোখ রাখল রিশাদ।অতঃপর আলতো করে রিত্তর গালে একটা চুমু এঁকে দিল।রিশাদের এই শীতল স্পর্শের সাথে পরিচিত না রিত্ত।রিত্তর ভেতরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।

.

.

.
“এটা আমি কি দেখলাম???রিত্ত-রিশাদ!!!!ওরা এত কাছাকাছি!!!কিভাবে হতে পারে এটা!!!!রিশাদ কিভাবে রিত্তকে কাছে টেনে নিতে পারে!!!রিত্ত আমার,রিত্ত শুধু দিব্যর।রিশাদ আফসানের কোন অধিকার নেই রিত্তর উপরে।রিশাদ আফসান,তোকে আমি কোপদিন ও আমার রিত্তর কাছে আসতে দেব না কিন্তু রিত্ত!!!সেও কি রিশাদকে ভালোবাসে???”অজানা আতঙ্কে ছেঁয়ে যায় দিব্যর মন।কিছুতেই চোখের সামনে দেখা রিত্ত আর রিশাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তটা ভুলতে পারেনা।ব্যথায় মাথায় চির ধরার মতো অবস্থা।নিজের ভালোবাসাকে অন্যকারো সাথে দেখার কষ্টটা তারাই বোঝে যারা এই অভিজ্ঞতাটা পেয়েছে।দিব্যর ভেতরে আগুন জ্বলছে,যে আগুনে যেকোন সময় ভস্ম হয়ে যেতে পারে রিত্ত আর রিশাদের ভালোবাসা।

.

.

.
–রিশাদ!!!ঠিক আছেন আপনি???

–আমাকে ঠিক থাকতে দিস তুই???তোর কাছে আসলে সব ভুলে যাই,সমস্ত রাগ-অভিমান!!!শুধু তোর কাছেই থাকতে মন চায়।

–রিশাদ!!!ছাড়ুন।

–এতক্ষণ তো লাফাচ্ছিলি কাছে আসার জন্য,কাছে টেনে নিলাম দেখে ঢং!!!যাহ!!!গেট লস্ট!!!

–আপনি পাগল হয়ে গেছেন রিশাদ!!!

–তোর প্রেমে কিন্তু বুঝিস না তুই!!!তোর কাছে তো আমি একটা লুচ্চা যে কিনা টাকার বিনিময়ে তোকে চাহিদা মেটানোর জন্য কিনেছে,তোর শরীর নিয়ে খেলেছে।

–রিশাদ!!!প্লিজ!!!

–একটা কথা বলি??

–বলেন।

–সেরাতে আমাদের মধ্যে কিছু হয়নি,আমি শুধু চেয়েছিলাম তুই নিজেকে ঘৃণা কর তাই ওসব নাটক সাজিয়েছিলাম।

–ক…কি!!!!

–হ্যাঁ!!!এই রিশাদ আফসান এতটাও চরিত্রহীন নয় যতটা তুই ভাবিস।

–আমি চরিত্রহীন ভাবিনা আপনাকে।

–ভালোবাসিস???

–হুম!!!

–বাসিস না!!!এটা শুধুই তোর নাটক।

কথাটুকু বলেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায় রিশাদ।রিত্ত ডক্টরকে ডাকে।ডক্টর জানান ওনার অতিরিক্ত প্রেশার একদমই নেওয়া যাবেনা।

.

.

.
একমাস পর,

রিশাদকে রিলিজ দেওয়ার পর থেকে রিশাদের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছে রিত্ত।রিশাদকে খাওয়ানো থেকে শোয়ানো অবধি সব ও একাই করে।রিশাদ ও আজকাল নতুন এক রিত্তকে আবিষ্কার করে।সারাক্ষণই রিশাদের কাছে বসে থাকে রিত্ত।কখন কি লাগে রিশাদের সব খেয়াল রাখে রিত্ত।রিত্তর প্রতি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে রিশাদের মন কিন্তু কিছুতেই রিত্তকে আপন করে নিতে পারেনা রিশাদ,অদ্ভুত একটা সংকোচ অনুভব করে।

–রিত্ত,সারাক্ষণ আমার কাছে না থেকে নিজের খেয়াল রাখো।আমার জন্য তোমার আর দিব্যর বাচ্চার কোন ক্ষতি হোক আমি চাইনা।

–কিসের বাচ্চা??বেশি বোঝেন???প্রেগন্যান্ট না আমি!!আপনাকে পাওয়ার জন্য নাটক করেছিলাম কিন্তু আপনি তো এক লাইন বেশি বোঝেন।আপনি ধরেই নিলেন আমার গর্ভের সন্তান দিব্যর।একটাবার এক্সপ্লেইন করার সুযোগটা অবধি দিলেন না।কেন???আপনার ইগো!!!!সবসময় দোষটা অন্যকে দেওয়া কি খুব জরুরী??

–রিত্ত,বেশি বলছো তুমি!!একেতো নিজে মিথ্যা বলেছো তার উপর……

–এই চুপ!!!কথা শেষ হয়নি আমার!!!আমার কথা শেষ হোক আগে।এর আগে একটা কথাও বলবেন না!!!

–কি কথা,বলো।

–ভালোবাসি আপনাকে খুব,নিজের চেয়েও বেশি!!!!

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে