#Lover_Boss
#part_6
#Mihika_Rahman
রিশাদ কিছুতেই নিজেকে স্থির করতে পারছেনা,চঞ্চল মস্তিষ্ক বারবার রিত্তর প্রতি ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।বাধ্য হয়ে আজ প্রথম রেড ওয়াইনের কয়েক ঢোক গলা অবধি নামালো রিশাদ।ড্রিংক করার পর থেকে মাথাটা যেন আরো ভারি হয়ে গেল।রিশাদ টলমল করতে লাগলো,ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছেনা।
রিশাদের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রিত্ত খেয়াল করল রিশাদ ড্রিংক করে টলমল করছে,যেকোন সময় পড়ে যেতে পারে।রিত্ত এসে রিশাদকে ধরে বিছানায় বসালো।রিত্তকে দেখে নেশার্ত অবস্থায় হাসতে লাগল রিশাদ।
–তুই আমাকে মারার আগে একটাবারও ভাবলি না???
–রিশাদ!!!!!
–আমিও তোকেই ভালোবাসতাম কিন্তু দেখতে চেয়েছিলাম তুই আদৌ আমাকে ভালোবাসিস নাকি সেটা তোর আবেগ ছিল!!!আবেগই ছিল সেটা।তাইতো আমাকে মারতে হাত কাঁপলোনা তোর।
–না রিশাদ!!!আমি সত্যিই খুব ভালোবাসতাম তোমায়।
–ভালোবাসার মানে তুই বুঝতি আদৌ???তোর ভালোলাগা ছিলাম শুধু,পাত্তা দেইনি বলে মেরে ফেললি।
–তুমি বেশি ড্রিংক করে ফেলেছো,রিশাদ।শুয়ে পড়ো।
রিশাদকে বিছানায় শুয়ে দেয় রিশাদ।তারপর সরে আসতে নেয়।রিত্ত সরে যেতে নিলে রিশাদ ওর হাত ধরে টান দেয়।রিত্ত গিয়ে পড়ে রিশাদের বুকের উপর।রিশাদকে এতটা কাছাকাছি দেখে ঘামতে শুরু করে রিত্ত।এমনই একটা মুহূর্তের স্বপ্ন সে প্রায়ই দেখতো।কিন্তু কখনো ভাবেনি সত্যিই সে রিশাদের এতটা কাছাকাছি আসতে পারবে।রিত্ত রীতিমতো চোখ বড় বড় করে রিশাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
–ঐ!!!!!!(চিৎকার করে)
–কী???শুনতে পাচ্ছি তো,আমি কি ঠসা নাকি???
–আচ্ছা শোনো।
–বলো।
–আমি হট না তাইনা???
–এটা কেমন প্রশ্ন???
–Isn’t Rishaad Afsaan hot????
–বাদ দাও তো।
–আমি যা বলেছি তার উত্তর দাও।
–ক…..কি প্রশ্ন????
–আমি hot না???(রিত্তর কাছে এগোতে এগোতে)
–হ্যাঁ খুব hot…দেখো আমি ঘামছি।
রিশাদকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে রিত্ত কিন্তু পারেনা।রিশাদ আবার তাকে চেপে ধরে নিজের বুকের মাঝে এনেই রাখে।রিত্তর ঠোঁটের দিকে ক্রমশ আগাতে থাকে রিশাদের ঠোঁটদ্বয়।
.
.
.
সকালে উঠে রিত্তকে নিজের বুকে আবিষ্কার করে রিশাদ।রাগে রিত্তকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিল।রিত্ত ব্যথা পেয়ে কোনরকম উঠে দাঁড়ালো।
–এটা কি ধরনের ব্যবহার??
–তুমি আমার বুকে কি করছিলে???
–কাল রাতে আপনিই তো এনেছিলেন।
–আমি????আমি কেন আনতে যাবো???
–সেটা আমি কি করে জানবো???
–ইউ,জাস্ট গেট আউট অফ মাই রুম।
–হুম।
চুপচাপ মুচকি হেসে রিশাদের রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিত্ত।রিত্তর এই মুচকি হাসির মানে বুঝলোনা রিশাদ।তবে কি রাতে কিছু হয়েছে তাদের মাঝে???চিন্তায় ঘামতে লাগল রিশাদ।
.
.
.
আজকাল দিব্যও ভালো থাকতে শিখে গেছে,রিত্তর স্মৃতিগুলো আর আগের মতো বিরক্ত করতে পারেনা তাকে,সারাক্ষণ আপন পৃথিবীতেই মেতে থাকে দিব্য।তবে চাইলেই কি ভালোবাসা ভুলে থাকা যায়???যায় না।দিব্য শুধুমাত্র নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছে যাতে রিত্তর স্মৃতিগুলো তার মনে আর প্রবেশ করতে না পারে কিন্তু যে মেয়েটাই তার মনের মাঝে থাকে,তাকে কি করে ভুলবে দিব্য??
.
.
.
দুইমাস পার হয়ে এলো,রিশাদ রিত্তর সাথে কথা বলা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে,রিত্তও কিছু বলেনা।বিষয়টা এমন যেন,এক ছাদের নিচে থেকেও এক আকাশ দূরত্ব।
কয়েকদিন ধরেই ঠিকমতো কিছু খাচ্ছেনা রিত্ত।যাই খাচ্ছে,বমি করছে।রিত্তর শরীরের দিন দিন এই অবনতি রিশাদেরও নজর কাড়ছে।
আজ সকাল থেকেই রিত্তকে দেখেনি রিশাদ,অফিসেও আসেনি মেয়েটা।বাসায় ফিরতেই দঃখল রিত্ত চিন্তিত মুখে বিছানায় বসে আছে।পাশে একটা ফাইল।রিশাদকে দেখেই একপ্রকার ছুটে এল রিত্ত।
–র……রিশাদ….একটা কথা ছিল???
–ম্যাঁ ম্যাঁ না করে বলে ফেলো।
–আ…… আ’ম প্রেগন্যান্ট!!!!
–হোয়াট???এটা কিভাবে সম্ভব???
–সেই রাতে…ত….তুমি…..
–মজা করছো???আমি এতোটাই ড্রাংক ছিলাম না যে তোমার সাথে এতকিছু করে ফেলবো আর জানতেও পারবোনা।
–রিশাদ,আমি সত্যি বলছি।
–বি রেডি,কাল তোমাকে ক্লিনিকে নিয়ে যাবো।
–বিশ্বাস করোনা,তাই না??ওকে,নিয়ে যেও।আমি ঘুমাতে যাচ্ছি।
–খেয়েছো কিছু???
–না…..ভালো লাগছেনা।
–ফ্রেশ হয়ে আসছি,যাও ডাইনিং টেবিলে বসো।
–খাবোনা আমি!!!!
–সারাদিন ল্যাপটপে কাজ করে হাতব্যথা করছে,এরপরও যদি তুমি চাও আমি তোমাকে কোলে করে টেবিল অবধি নিয়ে যাই,আই ডোন্ট মাইন্ড।
–না….তুমি ফ্রেশ হও,আমি বসছি।
–হুম,গুড গার্ল।
রিশাদ ফ্রেশ হতে গেল আর রিত্ত টেবিলে বসলো।রিশাদের এই ছোটখাটো কেয়ারগুলোই তো পেতে চেয়েছিল লিত্ত কিন্তু এভাবে পাবে সে কখনো ভাবেনি।রিশাদ যা করছে তা শুধুই ওর অনাগত সন্তানের কথা ভেবে অথচ একটা মেয়ে যে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেটা সে একটাবারও বুঝলোনা।
.
.
.
সকালে,
–রিত্ত চলো।
–হুম।
রিশাদ ড্রাইভ করছে,রিত্ত পাশে বসে আছে।এই প্রথম রিশাদের পাশে বসার সুযোগ ফেল রিত্ত,আনন্দে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে রিত্তর।
–রিত্ত!!!
–হুম!!
–স্যরি।আমি যদি সত্যিই সে রাতে কিছু করে থাকি…….ছোটবেলার ঘটনাটার প্রতিশোধ নিতে আমি মোটেও এমন করিনি।এটা শুধুমাত্র একটা অজানা ভুল।
–হুম!!তোমার কাছে হতে পারে অজানা ভুল কিন্তু তোমার সেই ভুলটা আমার সন্তান আর সে কখনোই আমার কাছে ভুল নয়।তুমি ডিভোর্স দিতে পারো।চিন্তা করো না,আমার জীবনে আর কোন পুরুষ আসবেনা আর না-ই তোমার সন্তানের জীবনে নতুন কোন বাবা।
–রিত্ত,প্লিজ স্টপ।
–না…রিশাদ!!!আমি সত্যিই বলছি।আমি কখনো কোন অধিকার নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াবোনা,কখনো বলবোনা মি.রিশাদ আফসান,ও তোমার সন্তান।
রিশাদ আর কিছু বলেনা।প্রতিশোধের নেশায় সে একটা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করতে পারে তা তার নিজেরই জানা ছিল না,চোখমুখ শক্ত হয়ে আসছে রিশাদের।
.
.
.
–বস,রিত্ত ম্যাডাম প্রেগন্যান্ট।
–তোকে আমি নিষেধ করেছি ওদের খবর আমাকে আর না দিতে।
–বস কিন্তু …..
–কোন কিন্তু না সুধা,আমি ওদের জীবনে নতুন করে ঢুকতে চাইনা।হয়তো একসময় রিত্ত আমার ছিল কিন্তু সেটা শুধুই আমার জেদ হিসেবেঌআমি ওকে ভুলতে চাই।
–কিন্তু বস রিশাদ তো রিত্তকে ডিভোর্স দিবে।
–হোয়াট????কেন???
–বস আমি শুনেছি,ওদের মধ্যে এক ডছরের বিয়ের কন্ট্রাক্ট হয়েছিল।
–শীট!!!!!!রিত্ত কোথায়???
–রিশাদ ওকে নিয়ে অফিসের কাছের ক্লিনিকে গেছে।
–ওকে,রাখো।
ফোন রেখেই চিন্তিত হয়ে পড়ে দিব্য।রিত্তর জন্য ছটফট করে ওঠে দিব্য।রিত্তকে আবার ফিরে পাবে ভাবতেই চোখজোড়া ভিজে ওঠে,ঠোঁট থেকে হারিয়ে যাওয়া হাসিটা পুনরায় ঠোঁটে ফিরে আসে।দিব্য দ্রুত রেডি হয় ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য,একটাবারের জন্য হলেও সে রিত্তকে দেখতে চায়,রিত্তর মুখোমুখি হতে চায়।
.
.
.
–মি.রিশাদ আপনি বাইরে যান।আমি আপনার ওয়াইফের চেক-আপ করবো।
–ওকে ডক্টর নিহা।
রিশাদ বাইরে চলে আসে।ভেতরে ডক্টর নিহা আর রিত্ত।
–ডক্টর,প্লিজ লিসেন টু মি,আমি প্রেগন্যান্ট না।
–হোয়াট???তাহলে তুমি তোমার হাজব্যান্ডকে মিথ্যা কেন বলেছো???
–সম্পর্কটা বাঁচাতে।আমি যদি এই মিথ্যা না বলতাম,তাহলে রিশাদ আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
–কিন্তু প্রেগন্যান্সি নিয়ে মিথ্যা বলাটা অন্যায়!!!সে তোমাকে ভালোবাসলে ডিভোর্স দিবেনা কিন্তু এই নাটক করে তুমি কতদিন ধরে রাখতে পারবে তাকে???
–আমি ওকে সত্যিটা বলে দিব,ডক্টর কিন্তু প্লিজ এখন…….
–আমি মিথ্যা বলা শিখিনি মিসেস.রিশাদ আফসান।আমার রিশাদকে যা বলার আমি তাই বলবো।আপনি এখানেই ওয়েট করুন।
–ডক্টর প্লিজ!!!!
রিত্তকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বেরিয়ে যায় ডক্টর।রিত্ত কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে।রিশাদকে নিজের কাছে রাখার তার শেষ প্রচেষ্টাটাও কি তবে জলে গেল???
চলবে…….