Lover Boss part-05

0
3371

#Lover_Boss
#part_5
#Mihika_Rahman

রিশাদ অফিসে বেরিয়ে গেছে কিন্তু রিত্ত ইচ্ছে করেই দেরি করছে।রেশাদ বেরোতেই রিত্ত অফিসে ফোন দিয়ে সিক লিভ নেয় যদিও সে অসুস্থ নয় কিন্তু রিশাদের সত্যি জানতে এই মিথ্যাটা তার বলার দরকার ছিল।স্টোররুমের সেই ফ্রেমটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিত্ত।ছবির মানুষগুলোকে চিনতে তার একটুও সময় লাগেনি কিন্তু চেনার পর থেকেই অজানা আতঙ্কে বারবার কেঁপে ঊঠছে রিত্ত।”অতীত কি তবে সত্যিই আমার পিছু ছাড়লো না??”চিন্তিত কণ্ঠ রিত্তর।

ফ্ল্যাশব্যাক,

রিশাদের বাবা রাহিত আফসান,মা রেহানা আফসান।রিশাদের পরিবারের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল রিত্তর পরিবারের।রিত্তর মা ছিল না,বাবা রাহাদ আহমেদ ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না।অনেক কষ্টে রিত্তকে বড় করছিলেন তিনি।হঠাৎ একদিন রাহিত আফসান রাহাদ আহমেদকে নিজের বিজনেস পার্টনার করে নেন।ঠিক সেদিন থেকেই রাগে পুড়তে থাকে রাবাদ আহমেদের প্রাণপ্রিয় বন্ধু বিধান মাহমুদ।বন্ধুর সাফল্য সহ্য হয়না তার,নানাভাবে রাহাদ আহমেদকে প্ররোচিত করতে থাকে সে।সেইসময় রিশাদ,রিত্ত এবং দিব্য খুব ভালো বন্ধু ছিল,রিত্ত বরাবরই রিশাদকে পছন্দ করত তবে তখন তারা খুবই ছোট,সবে ওয়ানে পড়ত।রিশাদ রিত্তকে পাত্তা দিত না,দিব্য আবার রিত্তর জন্য পাগল ছিল।একটা সময় রিশাদের থেকে পাত্তা না পেয়ে সবসময় দিব্যর সাথে থাকতে শুরু করে রিত্ত।

বিধান মাহমুদ রাহাদ আহমেদকে রাহিত আফসানকে মারার জন্য তৈরি করে।সম্পত্তির লোভে একটা ভয়ঙ্কর খেলার সূচনা হয়।রিশাদের চোখের সামনে তার বাবা-মাকে ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত করা হয়।বাবা-মাকে বাঁচাতে চিৎকার করে ছুটতে থাকে রিশাদ।দিব্য রিত্তকে বোঝায়,” এই সুযোগ রিশাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার,ও তোকে পাত্তা দেয় না।যা,ওকে ধাক্কা দে।”শিশুমন রিত্তর,দিব্যর কথার বশে চলে আসে সে।রাস্তার মাঝে রিশাদকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে।সামনে থেকে আসা গাড়িটার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় রিশাদ।রিশাদের আঘাত পাওয়ায় আনন্দ পায় রিত্ত,দুজন ফিরে আসে বাড়িতে।

রিশাদ মারা যায়নি সেদিন,গাড়ির মালিক তাকে বাড়িতে এনে নিজ সন্তানের মর্যাদা দেয়,বড় করে তোলে।সেই থেকেই রিশাদের মনে জ্বলছে প্রতিশোধের আগুন।

যেই টাকার জন্য রাহাদ আহমেদ এতকিছু করেছে,ইনভেস্ট করে তার সমস্তটাই হারিয়েছেন তিনি।

.

.

.
রিশাদ অফিসে যেতেই জানতে পারল রিত্ত অফিসে আসেনি।রিশাদের সন্দেহ আরো গভীর হলো যে সেরাতে রিত্তই ছিল দরজার পাশে আর সেই সত্যটা জানতেই রিত্ত আজ অফিসে আসেনি।অফিস থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায় রিশাদ।

রিত্ত এখনো স্টোররুমের মেঝেতেই বসে আছে।সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা এই রিশাদই তার ছোটবেলার ভালোলাগা ছিল কিন্তু রিশাদের সাথে সে যা করেছে তার কোন ক্ষমা নেই।বড় হয়ে দিব্যকে সারাজীবন পাশে পেয়ে,দিব্যর ভালোবাসা পেয়ে সে রিশাদকে ভুলতে বসেছিল।

রিশাদ বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে স্টোররুমে ঢুকল এবং যা এক্সপেক্ট করেছিল,তাই,রিত্ত স্টোররুমের মেঝেতে বসে আছে।রাগে রিশাদের চোখ লাল হয়ে আসে।রাগে রিত্তর চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে রিশাদ।আচমকা এমন করায় ভ্যাঁবাচ্যাকা খেয়ে যায় রিত্ত তবে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।রিশাদ রিত্তকে ফ্লোর থেকে টেনে তুলে সিঁড়ির দিকে ছুঁড়ে মারে।রিত্ত যে ব্যথা পাচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই রিশাদের।সিঁড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় রিত্ত কিন্তু রিশাদ এগিয়ে এসে দেখেও না।রিত্তকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠে যায় রিশাদ।রিশাদের এতটা অবহেলা আর নিষ্ঠুরতা দেখে চোখে পানি আসে রিত্তর কিন্তু এটাকে নিজের নিয়তি ভেবে চুপচাপ উঠে রুমের দিকে চলে যায়।

রুমে ঢুকতেই দেখতে পায় রিত্ত বিছানায় বসে পা নাড়াচ্ছে।ছোটবেলা থেকেই এই কাজটা রিশাদ তখনই করে যখন সে মাত্রাতিরিক্ত রেগে যায়,এটা তার কাছে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার একটা পদ্ধতি।রিত্তর চোখ ভিজে উঠছে,ছোটবেলায় করা একটা ভুল আজ তার জীবনে এভাবে ফিরে আসবে সে কখনো ভাবেইনি।

–রিশাদ,আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমি যা করেছিলাম তা……

–আমার তোমার চেহারা অবধি দেখার রূচি নেই,এক বছরের জন্য বিয়ে করেছিলাম কষ্ট দেওয়ার জন্য কিন্তু তোমার মতো মেয়েকে চোখের সামনে দেখা আমার জন্য বেশি কষ্টের।দুদিনের মধ্যে তুমি ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে তবে ভেবোনা এত সহজে তোমাদের ছেড়ে দেব।তোমরা শাস্তি পাবেই আর এই রিশাদ আফসানের হাতেই পাবে সে শাস্তি।রিশাদ আফসান কাউকে ক্ষমা করেনা।

–রিশাদ,আমার কথাটা তো শোনো।ছোটবেলা থেকেই তোমাকে ভালোলাগত আর তুমি আমাকে পাত্তাই দিতে না।সেদিন যখন দিব্য ………

–ইয়াহ রাইট,দিব্য!!!!!দিব্য যা বলবে তুমি তাই করবে।দিব্য যদি বলে কাউকে মেরে ফেলো,তুমি সেটাও করবে।এত ভালোবাসা!!!!!আই কান্ট বিয়ার ইউর ফেস।জাস্ট গেট লস্ট।

রিত্তকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল রিশাদ।মাথাটা ভারি হয়ে আছে তার।রিত্তকে বিয়ে করে যে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল তার প্রতি আর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই রিশাদের,এখন সে এই রিত্তর মাঝে আগের খুনিটাকে দেখতে পাচ্ছে।এখন রিত্তকে আরো কষ্ট দেওয়াই রিশাদের উদ্দেশ্য তবে সবার আগে সে রিত্তর থেকে ডিভোর্স চায়।মেয়েটাকে নিজের বাড়িতে আর সহ্য করতে পারবেনা রিশাদ।

.

.

.
–দিব্য,কথা শোন আমার।

–আমি ব্যস্ত বাবা।

–এই ব্যস্ততার জন্যই রিত্তকে হারিয়েছিস,এখন কি আমাকেও হারাতে চাস???

–বাবা প্লিজ!!!রিত্তর কথা বাদ দাও না।

–সিগারেট ফেলে আমার রুমে আসিস।

কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলেন বিধান মাহমুদ কিন্তু কথাটা শুনলোনা দিব্য।সে আপনমনে সিগারেটের ধোঁয়ায় নিজেকে খুঁজতে ব্যস্ত।দূরে কোথাও থেকে একটা গানের সুর ভেসে আসছে।দিব্যর গিটারে সুর উঠতো শুধু রিত্তর নামে,আজ রিত্ত নেই তাই গিটারটাও অযত্নে পড়ে আছে।সিগারেটে আরেকটান দিয়ে ফেলে দিল দিব্য।গিটারটা হাতে নিল।চোখ বুঁজতেই রিত্তর চেহারাটা ভেসে উঠল।গিটারের তালে গানের সুরে রিত্তকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল দিব্য।

“Sun mere Humsafar….Kya tujhe itni si bhi khabar……..
ki tere saansein chalti jidhar……rahunga bas wahi umrr bhar…….hai rahunga bas wahi umrr bhar…….
jitni haansi ye mulakatein hai….unse bhi pyaari teri bateein hai……”

আর গান গাইতে পারলো না দিব্য,গলা কেঁপে কেঁপে উঠছে,চোখ বন্ধ করলেই চোখ দিয়ে পানি গড়াবে।এতটা অসহায় আজ দিব্য শুধু ভালোবাসার জন্য।

ভালোবাসা মানুষকে অসহায় করে,ততটা অসহায় যতটা মানুষের বেঁচে থেকেও মরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

.

.

.
রাহাদ আহমেদ আজকাল প্রায়ই মেয়েকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেন,চিন্তার শেষ নেই তার কিন্তু হসপিটাল কতৃপক্ষ তাকে রিলিজও করছে না।অতৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস বারে বারে তাকেই ঘিরে রয়েছে।

–হ্যালো,উকিল সাহেব,ডিভোর্স পেপার রেডি করুন।

–তুমি আবার ভুল করছো রিশাদ,রিত্তকে বিয়ে করার আগেও আমি তোমাকে ভাবতে বলেছিলাম কিন্তু তুমি হুট করে কাজটা করে বসলে।এভাবে ডিভোর্স দিয়ে আরেকটা ভুল করছো তুমি।আমি তোমার বাবার বন্ধু,তোমাকে ভালো-মন্দ বুঝানোর অধিকার আমার আছে।

–আংকেল প্লিজ!!!ঐ মেয়েটার দিকে তাকালেই আমার নিজের বাবা-মার রক্তাক্ত চেহারা মনে পড়ে।

–কন্ট্রোল ইউরসেলফ রিশাদ,এক বচরের কন্ট্রাক্ট তুমিই করেছো।এত সহজে নিজেকে দুর্বল করে দিও না।তুমি তোমার বাবা-মার খুনের প্রতিশোধ নিবেই আমি জানি।

–থ্যাংকস আংকেল।আপনি সবসময় আমাকে ঠিক রাস্তা দেখিয়ে এসেছেন।আমি আপনার কথামতোই কাজ করবো।রাখছি।

ফোন কেটে দিয়ে চিন্তিতভাবে রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রিশাদ।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে