Lover boss part-03

0
3603

#Lover_boss
#part_3
#Mihika_Rahman

“এই যে ফুলকলি!!!এ তো দেখি হূরপরী রাস্তায় নেমে এসেছে।”রাস্তার এককোণে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে রিত্ত।পাঁচটায় অফিস থেকে বেরিয়েছিল,এখন সাতটা বাজে।ক্যাব তো আসছেই না তার ঊপর একটা গাড়ি অবধি নেই রাস্তায়।হাঁটতে হাঁটতে অফিস থেকে বেশ দূরে একটা নির্জন রাস্তায় এসে পড়ে রিত্ত।সামনে থাকা ছেলেগুলো বারবার তার দিকে অশ্লীল কথা ছুঁড়ছে,কিছুই করার নেই রিত্ত।এইসব রাস্তার ছেলেদের সাথে ঝগড়া করতে গেলেই বিপত্তি।চুপচাপ এককোণে দাঁড়িয়ে ক্যাবের অপেক্ষা করছে রিত্ত।চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেল রিশাদের গাড়ি।মনে একটা ক্ষীণ আশার সৃষ্টি হলো,হয়তো রিশাদ স্ত্রীর মর্যাদা না দিলেও একজন নারীর সম্মান রক্ষায় তার সাহায্য করবে কিন্তু সেই ক্ষীণ আশার আলোটাও চোখের পলকে নিভে গেল।সব দেখেও না দেখার ভান করে গাড়ি নিয়ে চলে গেল রিশাদ।রিশাদের এই প্রতিক্রিয়ায় কান্না আটকাতে পারছেনা রিত্ত,কোনমতো নিজেকে শক্ত করে সামনে এগোতে নেয় কিন্তু বখাটে ছেলেগুলো চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে রিত্তকে।

–আরে মামা,পাখি তো দেখি ফুরুৎ হওয়ার ধান্দায়!!!!

–হতে দিলে তো,চলো তো মামণি,আমাদের সাথে চলো।

–এ কি!!এই মেয়ের মুখ দিয়ে তো দেখি কথাই বেরোয় না,এমন মেয়েই তো চাই।এই ওকে ধর!!!!

ছেলেগুলো রিত্তর হাত ধরে টানাটানি শুরু করে।মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গেছে রিত্তর,এমন পরিস্থিতিতে কখনোই পড়েনি রিত্ত।চোখ বুজে নিজেকে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুত হয় রিত্ত কিন্তু হঠাৎ অনুভব করে ছেলেগুলো তার হাত ছেড়ে দিয়েছে।একবারের জন্য ভেবেছিল রিশাদ এসেছে কিন্তু চোখ খুলে আসিফকে দেখে রিশাদকে নিয়ে আর কিছু ভাবতে মন চায় না।ছেলেগুলোকে পুলিশের থ্রেট দিতেই ওরা পালিয়ে যায়।আসিফ রিত্তর দিকে এগিয়ে এলো।

–মিস.রিত্ত,চলুন আমি বাইকে করে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।

–আমার সাথে গেলেই তো ওনি জানতে পারবে আমি স্যারের বাড়িতে থাকি,প্রবলেম হয়ে যাবে।(মনে মনে)না থাক,লাগবেনা।ধন্যবাদ আপনাকে,ক্যাব এক্ষুণি চলে আসবে।

–ওকে,ক্যাব না আসা পর্যন্ত আমি ওয়েট করছি।

পনেরো মিনিটের মাথায় ক্যাব আসে,রিত্তকে ক্যাবে বসিয়ে আসিফ নিজেও বাইকে বসে।হেলমেটটা লাগাতেই আসিফের ফোনে রিশাদের ফোন আসে,ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে আসিফ।

–ওকে ক্যাবে তুলে দিয়েছো??

–জ্বী স্যার কিন্তু সামান্য একটা এমপ্লয়ির জন্য এসব কেন???

–ও একটা মেয়ে,তারপর একজন এমপ্লয়ি।

–কিন্তু স্যার,আপনিও তো বাঁচাতে পারতেন।

–বেশি কথা বাদ দাও।বাড়ি যাও& কাল টাইমলি অফিসে আসবে।

–ওকে স্যার।

ফোন রেখে মুচকি হাসে রিশাদ।”রিত্তর চেহারায় দেখা ভয়টা প্রতিমুহূর্ত থাকবে ওর চেহারায়,আজ তো সবে শুরু।ছেলেগুলোকে ওদের পেমেন্টটা দিতে হবে তবে এই ছেলেগুলো ওভার-এক্টিং করেছে,রিত্ত কাঁদছিল।এনিওয়ে,রিত্তর যা হয় হোক,আই ডোন্ট কেয়ার।”একা একাই বকবক করছে রিশাদ।

.

.

.
বাড়িতে ঢুকতেই বরাবরের মতো নীরবতা অনুভব করে রিশাদ।এই নিস্তব্ধ পরিবেশটা বেশ উপভোগ করে রিশাদ।টাইটা লুজ করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠে সে।

“সামান্যতম দায়িত্ববোধ ও কি এক্সপেক্ট করতে পারিনা আপনার থেকে??ওয়াইফ হিসেবে না হোক,একটা মেয়ে হিসেবে তো আমাকে বাঁচাতে পারতেন কিন্তু নাহ!!!আপনি তো দেখেও না দেখার ভান করলেন।এতটা খারাপ যে মানুষ হয় তা আপনাকে না দেখলে জানতাম না।অবশ্য আপনাকে তো মানুষ বলাও যায় না।যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে না,সে মানুষ হতেই পারেনা।আপনি একটা জড়বস্তু যার কোন অনুভূতি শক্তিই নেই।একটা রাস্তার কুকুরকে কাঁতরাতে দেখলেও মানুষের মনে দয়া হয় আর সেখানে আমি মাঝরাস্তায় কাঁদছিলাম তাও আপনার দয়া হয়নি।এতটাই নিষ্ঠুরতা আপনার মাঝে???”চিৎকার করে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ফেলল রিত্ত।টেবিলে থাকা পানির গ্লাসটা রিত্তর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে রিশাদ বলল,”এই সমস্ত frustration আমার উপর না ঝেড়ে যদি এখান থেকে দুটো লাইনও চিৎকার করে ঐ ছেলেগুলোর উপরে ঝাড়তে তাহলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে হত না।তোমরা মেয়েরা নিজেদের দুর্বল দেখাও বলেই তোমাদের দুর্বল ভাবা হয়।যেখানে তুমি নিজে আত্মসমর্পণ করেছিলে,সেখানে তোমাকে বাঁচানোর আমি কে???এণ্ড লিসেন,নেক্সট টাইম থেকে রিশাদ আফসানের সাথে উঁচু গলায় কথা বলার আগে নিজের বাবার অবস্থা ভেবে নিও।”রিশাদের কথার বিপরীতে কিছু বলার মতো খুঁজে পায়না রিত্ত,প্রতিমুহূর্তে অপমান আর থ্রেট করে চলেছে ছেলেটা তাকে।কোনভাবে এই একটা বছর কেটে গেলেই হয়।

.

.

.
–রিশাদের খবর কি??

–বস,রিশাদ রাতে কাওকেই বাড়িতে রাখেনা,যা জানার সকালে জানতে পারবো।

–রিত্ত আর রিশাদের মধ্যে সত্যিই কি কিছু হয়েছে???

–হ্যাঁ বস!!!আমি নিজের চোখে সকালে দেখছি রিত্ত আর রিশাদের অবস্থা,দুজনে…….

–হইছে থাক,অতো রসিয়ে বলতে হবেনা।যা কাজ দিছি সেটা কর।

ফোন কেটে দিতেই বিধান মাহমুদ দিব্যর ঘরে ঢোকে।দিব্য চোখ বন্ধ করে রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিল।

–দিব্য শোন,রিত্তর চিন্তা তুই বাদ দে,ও এখন বিবাহিত।

–আমি ওর জন্য এতকিছু করেছি আর তুমি বলছো সব বাদ দিতে।আমাকে এসব শেখাচ্ছো??এই শিক্ষা তখন কোথায় ছিল যখন তুমি রায়হান আফ…….

–দিব্য!!!তোকে বারবার বলেছি অতীতকে ঘাটবি না।অতীতে আমি খারাপ ছিলাম কিন্তু তারমানে এই নয় যে সারাজীবন খারাপ হয়েই বাঁচতে হবে।

–আমি রিত্তকে বিয়ে করবোই এণ্ড দ্যাটস মাই Obsession…..

–ভালোবাসাই জেদের কোন স্থান নেই,দিব্য।একদিন বুঝবি সেটা কিন্তু তখন হয়তো পরিস্থিতি হাতের বাইরে থাকবে।

–জাস্ট লিভ মি এলোন,বাবা।

বিধান মাহমুদ বেরিয়ে যেতেই দুহাতে মাথা চেপে ধরে দিব্য।বারবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে রিত্তর মুখটা,রিত্তর চোখজোড়া,রিত্তর সাথে কথা বলার জন্য সারাক্ষণ ছটফট করা কিন্তু কথা বলার সাহস না পাওয়া শৈশবটা।এসব ছিল সুমধুর স্মৃতি কিন্তু এরপরেই যে স্মৃতিতে যুক্ত হয় তিক্ততা।তিক্তময় অতীতের প্রতিদানে রিত্তকে পেয়েও যেন হারাতে বসেছে দিব্য।আজ ভয় হচ্ছে দিব্যর,রিত্তকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলার ভয়।

ভালোবাসার সংজ্ঞা হয়তো এমনি।প্রথম প্রেমে পড়ার ছটফটানিটা পরবর্তীতে নিতান্তই বোকামি মনে হলেও এই ছটফটানিটাই ঠোঁটের মুচকি হাসির কারণ আর দিনশেষে বিচ্ছেদের ছটফটানিটা হৃদয়ে জমে থাকা কষ্টগুলোর আজীবন জীবিত থাকার সাক্ষী।

.

.

.
রাতে রিশাদ রিত্তর রুমের দিকে যায়নি।রিত্তও অফিসের কাপড় পড়েই শুয়ে পড়ে কিন্তু ঘুমের মাঝেই হৃদস্পন্দনের উর্ধ্বগতিটা বহাল থাকে।

রিশাদ কিছুতেই ঘুমাতে পারছেনা,ঘুম জিনিসটার সাথে তার সম্পর্ক বরাবরই আদায়-কাঁচকলায়।কেন যেন রাত তাকে জাগিয়ে রাখতেই ভালোবাসে।
স্টোররুমের দরজাটা আলতো খোলা,ভেতরে রিশাদ দাঁড়িয়ে আছে একটা ফটোফ্রেমের সামনে।ফটোফ্রেমটাতে তিনটে পরিবার একসাথে দেখা যাচ্ছে।রিশাদের বাবা-মা বাদে অপর দুই ফ্যামিলির সবার মুখ রেড মার্কার দিয়ে আঁকা টার্গেট বৃত্তের মাঝে।নিষ্ঠুরদৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে রিশাদ।”কষ্ট কি তোমরা খুব শীঘ্রই বুঝবে,তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারবো তোমাদের।আমার বাবা-মার শরীর থেকে ঝরা প্রতি ফোঁটা রক্তের হিসাব নেব আমি তোমাদের থাকে।আমার নেক্সট টার্গেট তুমি,বিধান মাহমুদ।”

ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি ফুটে ওঠে রিশাদের।এই হাসিটা প্রতিশোধের,এক নির্মম খেলা শুরুর হাসি এটা।

আচমকা দরজার পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস পরার শব্দ পেল রিশাদ,চমকে দরজার দিকে তাকাল সে।”বাড়িতে তো রিত্ত ছাড়া কেউ নেই।তবে কি রিত্ত ছিল??রিত্ত সব শুনে ফেলল না তো??ও সব জেনে গেলে সব খেলা নষ্ট হয়ে যাবে আমার।”চিন্তিত কণ্ঠে কথাগুলো বলে দরজার দিকে এগোল রিশাদ।

চলবে…….

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে