#Lover_boss
#part_2
#Mihika_Rahman
“স্যরি দিব্য,আমি যা করেছি,তা আমার বাধ্যবাধকতা।””ওর সাথে শোয়াটাও বুঝি তোমার বাধ্যবাধকতা???”রিত্তর কথার পিঠেই কথা বলল দিব্য।দিব্যর এ কথায় আশ্চর্য হয়ে গেল রিত্ত।দিব্য কি করে জানলো তার আর রিশাদের সম্পর্কের কথা যেখানে সে নিজেই কিছু মনে করতে পারছেনা।”তুমি কি করে জানলে??”রিত্তর প্রশ্নে ভ্যাঁবাচ্যাকা খেয়ে যায় দিব্য তবে নিজেকে সামলে নিয়ে জোর গলায় বলে ওঠে,”তোমার গলার দাগগুলো নিশ্চয়ই আপনাআপনি হয়নি!”দিব্যর কথায় অস্বস্তিতে পড়ে রিত্ত,স্কার্ফ দিয়ে গলা ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে বলে,”আমি কি করতাম,দিব্য???বাবা অসুস্থ,তোমাকে এতবার ফোন দেওয়ার পরও তোমার ফোন সুইচড অফ বলছিলো।আই ওয়াজ জাস্ট ব্লাঙ্কড দ্যাট মোমেন্ট কিন্তু এই বিয়েটা স্রেফ এক ব………।”রিত্ত কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোন বেজে ওঠে।ফোনের স্ক্রিণে বস নামটা ভেসে ওঠছে।নিজেকে শক্ত করে ফোনটা ধরে রিত্ত।ফোন ধরতেই অপরপাশ থেকে শুনতে পায়,”হাউ ডেয়ার ইউ???তোমার সাহস হলো কি করে আমাকে না বলে বাড়ি থেকে বেরোনোর???আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোমাকে বাড়িতে দেখতে চাই।ইটস এন অর্ডার!!!”রিত্তকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দেয় রিশাদ।রিশাদের ধমকে বেশ ভয় পেয়েছে রিত্ত,যদি তার বাবাকে কিছু করে ফেলে!!!দিব্যকে কোনরকম বাই বলে একপ্রকার দৌড়েই ক্যাফে থেকে বেরিয়ে ক্যাবে উঠে বসে রিত্ত।ক্যাফের চেয়ারটাতে ভ্রু কুঁচকে বসে রইল দিব্য।তার কৌতূহলী মন বলছে রিত্ত এক এর পরে কিছু বলতে যাচ্ছিল,মূল্যবান কোন তথ্য দিতে যাচ্ছিল।”শীট!!!”বলে টেবিলে ঘুষি মারে দিব্য।
.
.
.
–কেন বেরিয়েছিলে???উইদাউট আস্কিং মি????
–স…..স্যরি।
–টু হেল উইথ ইউর স্যরি।আজ থেকে তুমি জাস্ট অফিসে যাবে এণ্ড বাড়ি ফিরবে,প্রত্যেক শনিবার বাবার সাথে দেখা করতে পারবে।বাবাকে ভালো দেখতে চাইলে,মেইনটেইন দিজ রুলস।
হাতে থাকা ব্লুটুথ কানে লাগিয়ে বরাবরের মতো বিছানায় বসে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেল রিশাদ।রাগী মুখটা এতক্ষণ লাল হয়ে ছিল,নীল চোখজোড়াও যেন মায়ার পরিবর্তে বিষাক্তের প্রতীক হয়ে ছিল।রিশাদের চোখের দিকে আর তাকালোনা রিত্ত,রুমে গিয়ে অফিসের জন্য রেডি হতে লাগলো।
.
.
.
আজ মনটা বড্ড খারাপ রাহাদ আহমেদের,মেয়ে কত তাড়াতাড়ি পর হয়ে গেল তার।মেয়ের বিয়ে যেন প্রতিটা বাবার জন্য অভিশাপ।কয়েকঘণ্টা যাবত মেয়ের চেহারা না দেখায় মনটা উদ্বিগ্ন হয়ে আছে তার।তিনি ঠিক করে রেখেছেন হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়ামাতূর তিনি মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে মেয়েকে দেখে আসবেন।
প্রতিটা বাবার কাছেই মেয়ে মানে ভালোবাসার সবচেয়ে বিশাল স্থান।মেয়ের চেয়ে বেশি ভালো কেউ বাসতে পারেনা বাবাকে।তাই হয়তো বাবার জন্য এতবড় আত্মত্যাগ করতে বেশি ভাবতে পারেনি রিত্ত।
.
.
.
–অফিসে আমাদের বিয়ে সম্পর্কে কেউ জানেনা।সো,তুমি অফিসের একজন অর্ডিনারি স্টাফ ছিলে আর সেটাই থাকবে,যাও এই ফাইলগুলো কমপ্লিট করে নিয়ে আসো আর আমার পি.এ আসিফকে রুমে পাঠাও।
–ওকে স্যার।
ফাইলগুলো হাতে নিয়ে নিজের ডেস্কে চলে গেল রিত্ত আর আসিফকেও রিশাদের কাছে পাঠিয়ে দিল।
–আসিফ,আজকের সবগুলো মিটিং ক্যান্সেল করে দাও।
–কেন স্যার??এনিথিং রং??
–নো,এভরিথিং ইজ ফাইন বাট আমি আজ দুপুরে অফিসে থাকবোনা,বিকালে আসবো।ততক্ষণে মিসেস….আই মিন মিস.রিত্তকে সব কাজ কমপ্লিট করে আমার কেবিনে সাবমিট করতে বলবে।
–ওকে,স্যার।
আসিফকে সব বুঝিয়ে দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায় রিশাদ।অফিস থেকে বেরিয়ে হুডিসহ কালো জ্যাকেটে নিজেকে জড়িয়ে নেয়।নিজের গাড়ি নেওয়ার ভুলটা করে না,একটা শোরুম থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে একটা বাইক কেনে ডকুমেন্টস ছাড়া।
বাইকটা নিয়ে নিজের কাজে লেগে পড়ে রিশাদ।প্রথমে যায় হেলথকেয়ার হসপিটালে যেখানে রিত্তর বাবা রাহাদ আহমেদকে রাখা হয়েছে।রাহাদ আহমেদের ডক্টরের সাথে কথা বলে তার সম্পর্কে বেশকিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করে।হসপিটাল থেকে বের হওয়ার সময় রাহাদ আহমেদকে চোখে পড়েছিল রিশাদের।লোকটাকে দেখেই রিশাদের কপালের রগ ফুলে ওঠে,মন চাচ্ছিল যেন এক্ষুণি লোকটাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিতে কিন্তু নিজেকে শান্ত করে।রাহাদ আহমেদের চোখের অগোচরে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে রিশাদ।
হসপিটাল থেকে বেরিয়ে রিশাদ নিজের বাড়িতে গেল।কাজের লোক সুধাকে বলল এক কাপ কফি বানিয়ে দিতে।বলেই রুমে ঢুকল রিশাদ।
.
.
.
ক্যাফে থেকে বেরিয়ে একটা বারে এসে বসে দিব্য।ওয়েটারকে ড্রিংক সার্ভ করতে বলে একটা টেবিলে হেলান দিয়ে বসে রইল।ওয়েটার ড্রিংক রেখে যেতেই ঢকঢক করে গিলল দিব্য। হঠাৎ তার পাশে কেউ একজন এসে বসলো।চোখ তুলে তাকাতেই চমকে উঠলো দিব্য,রিশাদ এসে বসেছে তার সামনে।হাতে থাকা ছুরিটা দিব্যর পেটে ধরেছে রিশাদ,মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে দিব্যর।জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে দিব্য।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নাই।ফোন বের করে দিব্য।
–হ্যালো,রিশাদ এখন কোথায়???
–ওনি তো ওনার রুমে,বস।
–ভালো করে চেক করো।
–বস,ওনি রুমে বসে ল্যাপটপ দেখছেন।
–ওহহ…ওকে।
চিন্তিত কণ্ঠে কথাটা বলে ফোন রাখে দিব্য এবং পুনরায় ড্রিংক করতে শুরু করে।
–দিব্য!!!এ তো সবে শুরু,খেলার সমাপ্তি আসতে আসতে খেলার মতো অবস্থাতেই থাকবেনা তুমি।কত বোকা স্পাই লাগিয়েছো আমার পিছনে যে রিয়াল আর গ্রাফিক্সের পার্থক্য বোঝেনা!!!
হুডি দিয়ে মুখ ঢেকে বার থেকে বের হয় রিশাদ।বাইকটা নিজের সিক্রেট হাইড আউটে রেখে জ্যাকেট খুলে রেখে পেছনের গেট দিয়ে বাড়িতে ঢুকল এবং ফর্মাল ড্রেসে সবার সামনে দিয়ে অফিসে গেল। অফিসে ঢুকেই প্রথমে আসিফকে ডেকে বলল রিত্তকে ডাকতে।রিত্ত ফাইলগুলো নিয়ে রুমে ঢুকলো।রিশাদ ফাইল চেক করতে লাগলো,চেক বললে ভুল হবে মূলত একটা ভুল খুঁজতে লাগলো।হঠাৎ একটা ফাইলে কিছু চেঞ্জ দেখে ভ্রু কুঁচকাল রিশাদ।
–এই প্রজেক্টের বাজেট আগেরটা কেটে এটা কেন করা হয়েছে??
–স্যার,এটা ছোট একটা প্রজেক্ট।এর জন্য এতটা বাজেট রাখার কোন আবশ্যকতা আমি দেখছি না।তাই বাজেটটা কমিয়ে…….
–হু দ্য হেল আর ইউ???কোম্পানির বাজেট ডিসাইড করার তুমি কে??আমি কারেকশন করতে দিয়েছিলাম,চেঞ্জ করতে না।
–স্যার,আমি তো কোম্পানির ভালোর……
–কোম্পানির ভালোর জন্য আমি আছি,তোমাকে ভাবতে হবেনা।জাস্ট গেট লস্ট এণ্ড এটা কারেক্ট করে নিয়ে আসো।
ফাইলগুলো রিত্তর দিকে ছুঁড়ে মারল রিশাদ।ফাইলগুলো তুলে নিয়ে নিজের ডেস্কে বসলো রিত্ত।সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রিত্তর দিকে।রিশাদ কোনদিন কারো উপর চিৎকার করা তো দূর,উচ্চস্বরে কথা অবধি বলেনি,সেখানে রিত্তর উপর এভাবে চিৎকার করল।
ডেস্কে বসতেই চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়তে লাগলো রিত্তর।এতটা অপমানের সম্মুখীন সে কখনো হয়নি।রিশাদ এতটা খারাপ ব্যবহার করবে সে ভাবেই নি।চোখের পানিতে ফাইল ভিজে যেতে লাগলো তবুও কাজ করছে রিত্ত।বাজেটটা ঠিক করে রিশাদের রুমে যেতেই দেখল রিশাদ গম্ভীর দৃষ্টিতে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে।বুকে ফুঁ দিয়ে ফাইলটা নিয়ে রিশাদের রুমে ঢুকল রিত্ত।ফাইলটা রিশাদের দিকে বাড়িয়ে দিল।রিশাদ গম্ভীরভাবে ফাইল চেক করতে লাগল।রিত্ত ভয়ে কাঁপছে।কিছুক্ষণ পর ফাইল চেক শেষে রিশাদ গম্ভীর গলায় বলল,”হুম,ডান!!!পাঁচটা বেজে গেছে।বাসায় যাও এণ্ড হ্যাঁ,আমি তোমাকে নিয়ে যাবো-এটা এক্সপেক্টও করো না।ক্যাব বুক করো এণ্ড যাও।””আপনার থেকে সেটা আমি এক্সপেক্টও করিনা।হুহ!!!!”মনে মনে ভললেও মুখে বলার সাহসটা পেল না রিত্ত।চুপচাপ রিশাদের কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।
চলবে……..