Lover boss part-01

0
6336

#Lover_boss
#part_1
#Mihika_Rahman

“আমি এক বছরের জন্য তোমাকে বিয়ে করতে চাই।এই এক বছরে তোমার চাহিদা হবে টাকা আর আমার চাহিদা হবে তোমার শরীর।”রিশাদ স্যারের কথায় চমকে ওঠে রিত্ত।এইমুহূর্তে তার টাকার খুবই প্রয়োজন কিন্তু তার প্রয়োজনের এমন একটা সুযোগ যে রিশাদ নিবে তা সে ভাবতেও পারেনি।রিশাদ রিত্তের অফিসের বস,দুমাসও হয়নি রিত্ত অফিসে জয়েন করেছে,আজ প্রথম বসের কাছে এসেছিল স্যালারি এডভান্সে নেওয়ার জন্য কিন্তু রিধাদ এমন একটা প্রস্তাব দিয়ে বসলো।রিত্তের বাবার হঠাৎ স্ট্রোক হয়েছে,হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।অবস্থা বেশি ভালো নয়,ডক্টররা ট্রিটমেন্ট করছেন কিন্তু প্রচুর টাকার দরকার।একমুহূর্তের জন্য রিত্তর সমস্ত শরীর জুড়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায়।চোখের সামনে বাবার আকুতিভরা চেহারা আর রিশাদের বাঁকা হাসি ভেসে উঠে।আট বছর বয়সে মাকে হারানোর পর বাবা তার একমাত্র অবলম্বন,বাবাকে হারাতে পারবে না রিত্ত।

কন্ট্রাক্ট পেপার হাতে দাঁড়িয়ে আছে রিশাদ।সে ভালো করেই জানে রিত্ত এই পেপারে সাইন করবেই।বাবার জন্য মেয়েটা যে নিজেকেও বিক্রি করতে পারে তা সে ভালো করেই জানে।ঠোঁটের বাঁকা হাসিটা এখনো বিদ্যমান।পিনড্রপ সাইলেন্স রুমে।হাতে থাকা দামী ঘড়িটার টিকটিক শব্দটাও কানে আসছে রিশাদের।সে অপেক্ষায় আছে রিত্তর সম্মতির।

চোখ বন্ধ করতেই বারবার দিব্যর চেহারাটাও ভেসে উঠছে রিত্তর সামনে।দিব্য ছেলেটা যে বড্ড ভালোবাসে তাকে।একদিকে বাবা,অন্যদিকে ভালোবাসা,নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে রিত্তর।হঠাৎ চোখ খুলল রিত্ত।রিশাদের হাত থেকে কন্ট্রাক্ট পেপার নিয়ে খুব দ্রুত সাইন করে দিল।পেপারটা ছিল রিত্ত আর রিশাদের রেজিস্ট্রি পেপার এবং একইসাথে এক বছরের কন্ট্রাক্ট পেপার।সাইন করার সাথে সাথেই রিশাদ ফোন বের করে কাওকে কল দিলো।রিশাদ ফোনে কথা বলছে,রিশাদের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে রিত্ত।দিব্যর চিন্তায় মাথাটা বারবার চক্কর দিয়ে উঠছে।ধীরে ধীরে চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো।

পড়ে যাওয়ার শব্দে পেছনে তাকিয়ে রিত্তকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখল রিশাদ।ফোন রেখে রিত্তর কাছে দৌড়ে এলো সে।রিত্তকে কোলে করে সোফায় শুয়ে দিল।রিত্তর গোছালো চেহারার সাথে এলোমেলো চুলের কম্বিনেশনটা পছন্দ হলোনা রিশাদের।আলতো করে রিত্তর চুলে হাত বুলিয়ে দিল রিশাদ।

.

.

.
“বাবাআআআআআ”চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো রিত্ত।আশেপাশে তাকিয়ে উপলব্ধি করল ঘরটা তার নয়।বিশাল আলিশান একটা গোছালো রুম,ওয়ালে রিশাদের বেশ কিছু ফটো টানানো।বেডসাইড টেবিলেও রিশাদের একটা ফটো।রিত্তর বুঝতে সময় লাগলোনা সে রিশাদের বাড়িতে।আশেপাশে তাকিয়ে নিজের ফোন খুঁজতে লাগলো রিত্ত কিন্তু পেল না।ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে ঢুকল রিশাদ আর রুমে ঢুকেই দেখলো রিত্ত কিছু একটা খুঁজছে।কথা শেষ করে ফোন পকেটে ঢুকালো রিশাদ।

–ফোন বালিশের পাশে আছে।

–ধন্যবাদ।

ফোন পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায় রিত্ত।”আজ স্বাধীনতা উপভোগ করে নাও রিত্ত,কাল থেকে রিশাদের খাঁচায় বন্দী হতে চলেছো তুমি!!!তুমি আর তোমার বাবা মিলে যা করেছো,সবকিছুর শাস্তি আমি দেব তোমাদের।মৃত্যুর জন্য কাঁতরাবে তোমরা কিন্তু রিশাদ আফসানের থেকে মুক্তি পাবেনা!!!!এবার হবে খেলা শুরু।গেট রেডি ফর আ ওয়ার,মিসেস রিত্ত রিশাদ আফসান!!!!”কথাগুলো বলেই বাঁকা হেসে বারান্দায় থাকা রিত্তর দিকে তাকায় রিশাদ।

.

.

.
–এটা তুমি ঠিক করলেনা,রিত্ত।আমাকে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে রিশাদকে বিয়ে কি করে করতে পারলে তুমি???

–দিব্য বাবা,তুই শান্ত হো।আমরা তোর জন্য ওর চেয়েও ভালো মেয়ে দেখবো!!!

–না বাবা!!!!আমার রিত্তকেই চাই।

–ও এখন অন্যকারো বিবাহিতা স্ত্রী।

–বাবা,আমার রাস্তায় বাঁধা হয়ে এসো না নয়তো তোমার কালো অতীতটা আমার অজানা নয় আর সেই অতীতকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতেও আমার দুবার ভাবতে হবেনা।

–দিব্য!!!!বাড়াবাড়ি করিস না।তোর বাবা আমি।

বিধান মাহমুদের কথায় রেগে গিয়ে তার গলা চেপে ধরল দিব্য।ছটফট করতে লাগলেন তিনি।কয়েকসেকেন্ড বাদে বিধান মাহমুদকে ছেড়ে চোখ গরম করে তাকালো দিব্য।ছেলের এতটা অবনতির জন্য মনে মনে নিজেকে দায়ী করে উপরের ঘরের দিকে এগোলেন বিধান মাহমুদ।

.

.

.
বাবার সাথে কথা বলে মনে স্বস্তি পেল রিত্ত তবে সে স্বস্তির মাত্রা খুবই কম যেন মরুভূমির তীব্র গরমে একফোঁটা পানি জিহ্বায় পড়েছে।

–রিত্ত,যাও রেডি হয়ে এসো।

–র…..রেডি??মা…..মানে???

–গেট রেডি ফর অ্যা ক্রেজি রোমান্টিক নাইট,বেবী।

–স্যার,প্লিজ আমাকে একটু সময় দিন।

–টাইম দেওয়ার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করিনি,ড্যাম ইট।জাস্ট গেট রেডি ফর টুনাইট।

কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিশাদ।রিশাদের বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মেঝেতে বসে পড়ল রিত্ত।বাবার জন্য নিজেকে একটা ভদ্ররূপী পশুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে চলেছে রিত্ত।ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বাজছে।উঠে আলমারির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো রিত্ত।আলমারি খুলতেই দেখতে পেল হ্যাঙারে ঝোলানো বেশ কয়েকটা দামী শাড়ি।এত দামী শাড়ি শেষ কবে পড়েছিল রিত্ত মনে নেই তার।আলমারি থেকে কালো রঙের একটা শাড়ি বের করল রিত্ত,সাথে হাতকাটা ব্লাউজ,পেটিকোট।আলমারির সবগুলো শাড়ির ব্লাউজই হাতকাটা,বিষয়টা রিত্তের মাঝে বেশ অস্বস্তি সৃষ্টি করল।

.

.

.
রাত প্রায় এগারোটায় বাড়ি ফিরল রিশাদ,ফাঁকা বাড়িতে পিনপতন নীরবতা,কাজের লোকেরাও সন্ধ্যে নামলে চলে যায়।বাড়িতে এখন শুধু রিশাদ আর রিত্ত।সশব্দে নিজের রুমে ঢুকল রিশাদ।লাইট অন করতেই চোখে পড়ল বিবর্ণ,বিষণ্ণ চেহারায় কালো শাড়ি পরিহিতা রিত্তকে।চেহারায় বিষণ্ণতার সাজটা বিরক্ত করল রিশাদকে।

–স্যার,শরিয়ত মোতাবেক আমাদের বিয়ে হয়নি,অন্তত ইসলামের বিধি মেনে বিয়েটা করে নিলে…….

–আমি বিশ্বাস করিনা এসব শরিয়তে!!!আমিই আমার রক্ষক আর আমিই আমার মালিক।

–মুখে বললেই সত্যি বদলে যায় না,স্যার।এই সৃষ্টিজগতের মালিক একজনই,তিনি মহান আল্লাহ্।

–জাস্ট শাট আপ,এটা খাও।

–কি এটা??

–যাই হোক,খেতে বলছি,খাবে।

কথাটা বলে রিত্তর দিকে একটা জুসটাইপ কিছু বাড়িয়ে দেয় রিশাদ।রিশাদের ধমকে চুপ হয়ে যায় রিত্ত।চুপচাপ জুসটা খেয়ে নেয় রিত্ত।ধীরে ধীরে রিত্তর দিকে এগোতে থাকে রিশাদ,রিত্ত ঢোক গিলতে লাগে।প্রথম কোন ছেলে তার থেকে মাত্র দুইঞ্চির দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে,এটা যেন বেশ অস্বস্তিতে ফেলছে তাকে।দুচোখ বন্ধ করে ফেলল রিত্ত।চোখ বুঁজতেই ভেসে উঠল দিব্যর চেহারা,সাথে সাথে রিশাদকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাতে চাইলো রিত্ত কিন্তু পারলো না।ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে জ্ঞান হারালো রিত্ত।রিত্তকে কোলে করে বিছানায় শুয়ে দিল রিশাদ।রিত্তর শাড়ি কাঁধের দিকে খানিকটা সরিয়ে দিল,ব্লাউজও খানিকটা ছিঁড়ে দিল।এরপর ক্লিপ দিয়ে রিত্তর পেটে আঘাত করল,মুহূর্তেই রিত্তর ফর্সা পেট লাল হয়ে উঠল,একইভাবে রিত্তর গলাতেও আঘাত করল রিশাদ।রিত্তকে ছেড়ে এবার নিজের শার্টটা খুলল রিশাদ।রিত্তর নখ দিয়ে নিজের বুকে আঁচড় দিল।অতঃপর সেভাবেই রিত্তকে বুকে নিয়ে কম্বল জড়িয়ে নিল।

.

.

.
ঘুম থেকে উঠেই নিজেকে আপত্তিকর অবস্থায় রিশাদের বুকে পেল রিত্ত।রিশাদের উন্মুক্ত বুকে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো রিত্তর কিন্তু রিশাদ এতোটাই শক্ত করে ধরেছে যে রিত্ত ছাড়াতেও পারছেনা।রিশাদের বুকের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল আঁচড়ের দাগ,চমকে উঠল রিত্ত।”তারমানে রাতে আ….আমরা…..ছিঃ!!!কি করে করতে পারলাম আমি এটা??এতটাই চাহিদা আমার!!!দিব্যকে ছেড়ে অন্য একটা ছেলের সাথে???ছিঃ!!!”কথাগুলো ভাবতেই চোখ থেকে পানি গড়াতে লাগলো রিত্তর,টপটপ করে রিশাদের বুকে পড়তে লাগল রিত্তর চোখের পানি।বুকে রিকশা পানির স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকালো রিশাদ।চোখ মেলতেই দেখতে পেল রিত্তর কান্নারত চেহারা।বাঁকা হেসে রিশাদ বলল,”রাতে আবেদনময়ী আর সকালে দেবদাসের পারো!!!আজব মেয়ে তো তুমি!!”রিশাদের কথায় ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসে রিত্তর।উঠে যেতে ধরে কিন্তু রিশাদ রিত্তকে বুকে চেপে ধরে রাখে।রিত্তর কানে কানে বলে,”শাড়িটা ঠিক করে বের হও।রাতে তো কেও ছিল না,আমার সামনে খুললে অসুবিধা নাই কিন্তু কাজের লোকদের সামনে এভাবে গেলে তারা তোমাকে আমার বউয়ের চেয়ে রক্ষিতার নজরে বেশি দেখবে।”বলে রিত্তকে ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোয় রিশাদ আর রিত্ত ঘৃণার চোখে তাকিয়ে থাকে রিশাদের দিকে।কতটা খারাপ হলে
একজনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এভাবে খেলা যায় অনুধাবন করার চেষ্টা করছে রিত্ত।

“আই ডোন্ট ওয়ান্না লিসেন এনিথিং!!ওদের উপর নজর রাখো আর কেউ যেন সন্দেহ না করে।রিত্তকে রিশাদের থেকে দূরে রাখার দায়িত্ব তোমার আর রিশাদের মনে রিত্তর প্রতি সন্দেহ সৃষ্টি করার দায়িত্বটা আমার।খেলাটা শুরু করেছে রিশাদ কিন্তু শেষটা আমি করব!!!আবার পুনরাবৃত্ত হবে অতীতের সেই অধ্যায়টা।গেট রেডি ফর আ ওয়ার,রিশাদ আফসান!!!!!”বাঁকা হেসে ফোনটা পকেটে ঢুকালো দিব্য।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে