Love warning Part-27

0
1801

#Love_warning❤️
#your_love_is_my_drug_addiction?
#Part_27
#ফারজানা

“ভাই প্রবণ তুই তো গেছিস সাথে তোর ফিউচার বাচ্চা কাচ্চাও”

পরেরদিন ভোর সকালে ওরা সবাই জাহাজ থেকে বের হয়ে রাঙামাটি আঁকা বাঁকা পথে হাঁটা শুরু করে….

“তিতির পাখি আর কতটুকু যেতে হবে?”

“আর বেশি না দশ মিনিটের রাস্তা চলো”

তিতি অর্ণব প্রবণ শিশির শুভ্র ও সামু কিছু পথ যেতেই তিতি তার চাচাতো বড় ভাই আনিসকে দেখতে পেলো….

“ওই যে আনিস ভাইয়া”

তিতি গিয়েই তার ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে তখন একটা পিচ্ছি হাত তিতির হাত ধরে টেনে বলে…..

“ফুফি ফুফি এই যে আমায় দেখো না ফুফি”

তিতি তাকিয়ে দেখে একটা পিচ্ছি ছেলে দেখতে খুব কিউট……

“তুমিই তাহলে আবার আবির বাবা তাই না”

“হিহিহিহি আমিই তোমার বাবা এখন চলো বড় আব্বু তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে”

সবাই আনিসের পিছন পিছন যেতে লাগলো। আবির তিতির কোলে। শিশির একবার আবিরের কান ধরে টানছে একবার গাল একবার চুল।

“দেখেছো ফুফি কি দুষ্টু মেয়ে আমার সাথে ইফটিজিং করছে দাড়াও তোমায় পুলিশে দিবো”

আবিরের কথায় সবাই হাসতে লাগলো…..

।।

।।

।।

।।

দাদুর বাড়িতে…….

সবাই তিতির দাদুকে সালাম দিলো। তিতির আব্বুর দুই ভাই দুই বোন। দুই বোন শশুর বাড়ি। আনিস হলো তিতির বড় চাচ্চুর ছেলে। তিতির বড় চাচ্ছুর দুই ছেলে দুজনেই বিয়ে করে ফেলেছে। একজন বিয়ে করে আমেরিকা থেকে আর আনিস দেশেই থেকে গেলো।

তিতির বড় চাচ্চু এসে বললো……

“কই কই দেখিতো আমার তিতি মাকে। ওমা কত বড় হয়ে গেছিস। বাসার সবাই ভালো আছে তো মামুনি?”

“হুম চাচ্চু সবাই ভালো আছে তোমরা কেমন আছো?”

“হুম ভালোই আছি মামুনি। তো বাবা জীবন কেমন আছো তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ চাচ্চু। আপনি?”

“হুম ভালো আছি বাবা”

সবার সাথে কথা বলে ওরা বাসার ভিতরে চলে গেলো।

তিতি সামু আর শিশির কে ওদের ভাবী একটা রুমে নিয়ে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

অর্ণব শুভ্র আর প্রবণ কে আনিস একটি রুমে নিয়ে গেলো।

সবাই ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষন বিশ্বাস করলো। খাবার খেয়ে দাদুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে ঘুমিয়ে পড়লো……

বিকালে……

“ওই অর্ণব এখনও ঘুমাচ্ছিস?”

“ওই শালা কি হইছে তোর ঘুমা”

“শিশিরের জন্য মনটা কেমন যেনো চটপট চটপট করছে”

“শালা দুই ঘণ্টা না দেখলেই চটপট চটপট করে তাহলে এতদিন কিভাবে ছিলি?”

“এতদিন পারছি এখন পারি না। আর চল এখন গিয়ে ঘুরে আসি”

শুভ্র তখন ক্লান্ত মুখে বললো…..

“আমার দ্বারা আজকে ঘুরা সম্ভব না। আগামীকাল থেকে ঘুরাঘুরি আর আজ শুধু ঘুম। তাছাড়া এইখানে এত এত জামাই আদর পাইছি আর কত কি খাইছি আমার দ্বারা এখন হাঁটা চলা সম্ভব না”

“শালা বারো মাসের গর্ভবতী।”

“দেখ প্রবণ এখন কথা বলার শক্তি নাই পরে বলবো বায়”

অর্ণব শুভ্র ঘুমিয়ে পড়ে। প্রবণ অনেক চেষ্টার পরও ওদের ঘুম থেকে তুলতে পারলো না। কিছুক্ষণ ফোন ঘেঁটে পরে ও নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।

।।

।।

।।

।।

“তিতি তোমাদের দাদু বাড়ির বাথরুম কোথায়?”

“এইখানে বাথরুম বলতে তো বাহিরে বাঁশ বাগানের দিকে বাঁশের খুঁটি আর বেরা দিয়ে বানানো”

“মানে কি বলছো?”

“হুম আপু। একটা তো গ্রাম আর গ্রামেই এইগুলোই থাকে। সমস্যা নাই আপু চলো আমি আছিতো”

শিশির সামুকে ভয় দেখানোর জন্য বললো….

“জানো সামু আপু আমি শুনেছি বাঁশ বাগানে ভুত থাকে ”

“এইসব ভুত বলতে কিছুই নেই”

“এই মাইয়া তো দেখছি কিছুতেই ভয় পায় না দাড়াও তোমারে এখন অন্য কিছু কমু”

শিশির মনে মনে ভাবছে কি বলবে তখন তিতি বললো….

“আপু তুমি চলতো প্রবলেম নাই”

“তিতি তুই একবার বলেছিলিনা বাঁশ বাগানে সাপ থাকে ওই কে কি বড় বড় সাপ”

“সা সাপ কোথায় সাপ?”

“বাঁশ বাগানে ইয়া বড় বড় সাপ”

তিতি দেখলো সামুর মুখের অবস্থা খুব খারাপ তাই বললো…..

“তেমন কিছু না আপু। গ্রামে এইসব সাপ থাকবে কমন ব্যাপার চলতো।”

“এই না আমি যাবো না”

সামুর এমন কথায় শিশির মুখ চেপে হাসছে তিতি চোখ রাঙিয়ে শিশিরকে বুঝালো এইসব কিছুই নাই বলার জন্য……

“ওই তোর চোখ রাঙানো কি আমি ভয় পাই। আমি তো সত্যি কথায় বলছি”

“তিতি তুমি এইসব আমায় আগে বললে না কেনো? তাহলে আমি জীবনেও আসতাম না এইখানে”

সামু কান্না করছে তিতি বুঝানোর চেষ্টা করছে তখন তিতির ভাবী মানে আনিসের বউ রুমে আসলো…..

“কি হয়েছে সামু কান্না করছে কেনো?”

“ভাবী ও ভয় পাচ্ছে সাপের জন্য?”

“সাপ কোথায় সাপ কি বলছো শিশির?”

“ভাবী শিশিরের কথা বাদ দাও ফাজিল মাইয়া। এখন হয়েছে কি সামু আপু বাথরুম যাবে কিন্তু ওনি বাঁশ বাগানে ভয়ে যেতে পারছে না”

“বাঁশ বাগানে কেনো যাবে আমরা তো এখন আলাদা বাথরুম বানিয়েছি। আমাদের বাসার পিছন দিকের বারান্দায় দুইটা বাথরুম যাও ওইখানে আচ্ছা তোমাদের যেতে হবে না আমি সামুকে নিয়ে যাচ্ছি। সামু আসো”

“হুম চলো ভাবী”

সামুকে নিয়ে ভাবী বারান্দার পিছনে যায়। আর এইদিকে শিশির তো হাসতে হাসতে পেট ধরে বসে আছে…..

“বদের হাড্ডি এইভাবে কেউ ভয় দেখায়। তুই জানিস না সামু আপু কোনোদিন গ্রামে আসে নাই তার উপর ওনার এইসব পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত নয় ওনার সাথে এমন কেউ করে”

“যাই বলিস সামু আপুর মুখ কিন্তু সেই ছিলো হাহাহা”

“হুম ঠিক বলছিস হিহিহিহি”

“ওই চল আমরা গিয়ে একটু দাদুর সাথে কথা বলি”

“চল”

তিতি আর শিশির দাদুর রুমে চলে গেলো।

“দাদু আসবো?”

“আয় । অনুমতি নেওয়া লাগে নাকি যখন মন চাইবে চলে আসবি”

শিশির তখন দাদুর মাথার কাছে বসে চুল বুলাতে লাগলো আর টানতে লাগলো……

“এখনও অভ্যাসটা পরিবর্তন হয় নাই তোর?”

“কেনো হবে বলো? তুমি তো ছোট থেকেই এই কাজ শিখিয়েছ পরিবর্তন হবে কেনো?”

“হাহাহা। তোরা দুইটা তো আমার দুই মনি। কিন্তু শিশির তোর সাথে কিন্তু আমার আড়ি”

“কেনো কেনো কি করেছি আমি হুহহহম?”

“তুই বলেছিলি আমায় বিয়ে করবি আমার বউ হবি এখন শুনছে অন্যদিকে ফুল দেও”

“আরেহ বোকা জামাই বুঝো না তুমি তো হলে আমার প্রথম বর। আর ওইটা হলো সেকেন্ড বর। আমি তোমার সাথে থাকবো আর দ্বিতীয় বর আমাদের টাকা পয়সা দিবে কেমন বুদ্ধি বল”

“হুম অনেক ভালো বুদ্ধি। কিন্তু বেগম সাহেবা আপনি আমাকে কেনো বললেন না এই কথা তিতির মুখ থেকে কেনো শুনতে হলো?”

শিশির মাথা চুলকিয়ে বললো…..

“সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বলি নাই আর আগে যদি শুনতে তাহলে তো হার্ট অ্যাটাক করতে যে তোমার বিবি অন্যজনের বিবি হতে চলেছে”

শিশিরের কানে ধরে বললো…..

“এখনও দুষ্টামি কমে নাই না”

“হিহিহিহি। আছি যতদিন,দুষ্টুমি করে যাবো ততদিন”

“হাহাহা। শোন আমার কিন্তু প্রবণ অর্ণব দুজনকেই খুব পছন্দ হয়েছে। তোদের সাথে মানাবে ভালো। মৃত্যুর আগে তোদের সুখী দেখতে পারবো এর থেকে বড় উপহার আর কি হতে পারে বল?”

“দাদু এইসব বাজে কথা একদম বলবে না। তুমি মরবে কেনো আমাদের নাতি নাতনী বিয়ে দেখেও তুমি মরবে না তোমাকে মরতে দিবো না আমি”

তিতি এক প্রকার কান্না করে দাদুকে জড়িয়ে ধরে বললো সাথে শিশিরও…….

“বনুরে পৃথিবীতে কেউ অমর না। সবারি মৃত্যু অনিবার্য। যখন যার ডাক আসবে তাকে তো যেতে হবে । এইভাবে বাচ্চাদের মত করতে নেই। কান্না করিস না রে”

“তাহলে বলো আর বলবে এমন পঁচা কথা?”

“নাহ বলবো না। এখন একটা কথা ছিলো আমার?”

“কি কথা বলো?”

“আমার ইচ্ছা আমি তোদের দুইজনের বিয়ে দেখবো”

তিতি তখন বললো…..

“দেখবেই তো এইভাবে বলার কি আছে আর মাত্র এক বছর পরে তো দেখবেই”

“তোরা বুঝতে পারছিস না। আমার শরীল এখন আর বেশি ভালো থাকে না। এখনতো প্রতিদিন তোদের দাদীকে স্বপ্নে দেখি। তোদের দাদী আমার জন্য অপেক্ষা করছে রে। আমি বলেছি তোদের দাদীকে যে আমার দুইটা পিচ্ছি বিবি আছে ওদের বিয়ে দিয়ে তোমার কাছে আমি চলে আসবো প্লিজ তোরা আমার এই আশা পূরণ কর”

দাদুর এমন কথা শুনে শিশির আর তিতি দুজনেই কান্না করছে আর বারণ করছে এইসব বাজে কথা না বলার জন্য।

দাদুর জেদের বশে ওরা দুইজন হার মানলো….

“কিন্তু দাদু শিশিরের আব্বু তো বিয়েতে রাজি হবে না”

“ওইটা আমার উপর রেখে দে। এখন তোরা এইখানে কিছুদিন থাক। জায়গাটা ঘুরে দেখ। এইখান থেকে ঢাকা ফিরে তোদের আমি বউ সেজে দেখতে চাই”

“তুমি যা বলবে তাই। তোমার ইচ্ছা বা তোমার কথা কি আমরা না রেখে থাকবে পারি বলো?”

“এই হলো আমার দুই বিবি আয় বুকে আয়”

শিশির তিতি দুজনেই দাদুকে জড়িয়ে ধরলো…….

।।

।।

।।

।।

।।

“আচ্ছা ভাবী আপনারা এই পাহাড়ের উপরে যে থাকেন ভয় করে না?”

“নাহ সামু। আমাদের তো অভ্যাস হয়ে গেছে এইখানে থাকতে তাই এইসব আর ভয় করে না”

“ওহহ আচ্ছা ভাবী এইখানে কি কেউ পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যায় নাই?”

“কত পড়েছে”

“ওরা কি বেঁচে ছিলো?”

“নাহ বেশিরভাগই বাঁচে নাই আর যারা বেঁচে ছিলো তারা কেউ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে পারে নাই কারন পঙ্গু ছিলো।”

“ওওওও”

“হুম”

সামু কিছুক্ষণ ভাবির সাথে পাহাড় বিষয়ে কথা বলতে লাগলো…..

রাতে……..

সবাই বাড়ির সামনে উঠানে মাদুরের উপর বসে গল্প পড়তে লাগলো। হারিকেনের মৃদু আলো আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। হাজারো তারার মেলা। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। পাহাড়ের গা বেয়ে পানির শব্দ নিচে পড়া সত্যই এক অপরূপ মুহূর্ত। নেটওয়ার্ক খুব স্লো। তাই সবাই মাদুরে বসে নানান গল্প করতে লাগলো। কেউ তার স্বপ্ন নিয়ে।

“আচ্ছা ফুফি চলো আমরা গান গান খেলি”

দাদু তখন বললো….

“গান গান খেলা হবে কিন্তু প্রকাশ ছাড়া”

শুভ্র কথাটা বুঝতে পারলো না….

“এইটা কিভাবে খেলে?”

“হুম খেলা যায় দাদুভাই। আসো আমরা গুনগুন করে গানের সুর বলবো আর কেউ একজন ওই গুনগুন সুরের গান বলবে আর সে হবে উইনার”

প্রবণ শুভ্র অর্ণব বললো…..

“ওয়াও ইমাজিং। অনেক সুন্দর একটা খেলা তো চলো শুরু হয়ে যাক”

“হবে না”

দাদুর কথায় আনিস বললো…

“এখন হবে না কেনো?”

“হবে না কারণ হলো সুভ্রদাদুভাই প্রবণ দাদুভাই অর্ণব দাদুভাই আনিস দাদুভাই ওরা হলো এক পক্ষ। তিতি শিশির সামিয়া আর আবিরের আম্মু এক পক্ষ”

“তাহলে দাদু চাচ্চু বড় আম্মু আর আবির তুমি তোমরা খেলবে বা না?”

শিশিরের কথা কেরে নিয়ে অর্ণব বললো….

“চাচ্চু আমাদের পক্ষ আর বড় আম্মু মেয়েদের পক্ষ। আবির দাদু তো আমাদের পক্ষই”

আবিরের আম্মু বললো…..

“এইটা হবে না দাদু আমাদের পক্ষ তাহলে সমান সমান”

আনিস বললো,…..

“ওই আবিরের আম্মু বুঝে শুনে কথা বলো দাদু ছেলে পক্ষ”

দুই দল এক প্রকার ঝগড়া করা শুরু করে তখন দাদু বললো…..

“সবাই চুপ করো। আমি আমার বৌমা আর নাতনীদের পক্ষে থাকবো। আর তোমরা তো ঠিকই আছো”

দাদুর কথায় কেউ কথা বললো না সবাই রাজি হলো। আনিসের বউ পিঠা বাদাম ভাজা। বিভিন্ন ধরনের পিঠা। দুই দলের সামনে রাখলো সাথে কড়াই মুরগি পিছ পিছ করে…….

চাচ্চু একটা মুরগির পিছ মুখে দিয়ে বললো খেলা শুরু হয়ে যাক……

ওরা দুইদল খেলা শুরু করে দিলো। রাত অনেক্ষণ পর্যন্ত হাসি গল্প করেই কেটে গেলো।

পরের দিন সকালে……..

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে