#Love_warning❤️
#your_love_is_my_drug_addiction?
#Part_18
#ফারজানা
পরের দিন সকালে…….??
শিশির ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারলো ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আর কেউ ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ও কারো বুকে শুয়ে আছে।
“কে কে এইভাবে জড়িয়ে ধরেছেন আমাকে দেখুন খুব কষ্ট হচ্ছে আমার”
“উফফফফ মেঘ পরী চুপ থাকো তো সারারাত ঘুমাতে পারি নাই প্লিজ এখন ডিস্টার্ব করবে না”
“আপনি আপনি আমায় এইভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন কেনো ছাড়ুন ছাড়ুন বলছি”
শিশির প্রবণের বুক থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে…..
“তোমার এই মুরগি মার্কা দেহ নিয়ে আমায় ছাড়ানোর চেষ্টা করছো হাউ ফানি। পারবে আমায় সরাতে এক চুলও?”
“দেখুন স্যার এইটা কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর শুনুন আমি কিন্তু আপনাকে ভালোবাসি না আমি তনয়কে ভালোবাসি। আর জোর করে ভালোবাসা হয় না জানেন তো। জানি না রাতে কি হয়েছে আর জানতেও চাচ্ছি না প্লিজ আমায় ছাড়ুন। আর আপনি জানেন না অবিবাহিত একটা ছেলে একটা মেয়ে একসাথে থাকলে মানুষ কত কি বলে আর আমি ভাবতেও পারছি না আপনি কি না আমার সাথে ছিঃ”
প্রবণ শিশিরকে ছেড়ে দিলো। শিশির নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও পেন্ট শার্ট পরে আছে। রাতে যে ও নিজেই তার ড্রেস চেঞ্জ করেছে তার মনে নাই।
“ছিঃ স্যার আপনি আমার সাথে ছিঃ আমি ভাবতাম আপনি খুব ভালো মনের মানুষ কিন্তু আমি ভাবতেও পারছি না আপনি আমার সাথে এমন একটা বাজে কাজ করেছেন। এখন আমি সমাজে কিভাবে মুখ দেখাবো আর তনয়কেই বা কি উত্তর দিবো।”
“শিশির তুমি যা ভাবছো সব ভুল আমার কথাটা শুনো প্লিজ”
“ওই তুই আমার গায়ে হাত দিবি না তোর ওই খারাপ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাবি না। আল্লাহ আজকের দিন দেখার আগে কেনো আমায় নিয়ে নিলো না।আর আজ তোর ব্যাবহারে তোর জন্মের পরিচয় বুঝা যায়”
“ঠাসসসসসস,,,,,, না জেনে শুনে একদম কথা বলবে না। আর মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ কি তুই তুকারি করছো তুমি? তোমাকে ভালোবাসি বলে এই জন্য যা খুশি তাই বলবে নেভার। শুনো তোমার সাথে এমন কিছু করি নাই যা সমাজে খারাপ। আর কি যেনো বলছিলে তনয় যাকে খুব বিশ্বাস করো ভালোবাসো হাহাহা এই তনয় গতকাল রাতে তোমার সাথে খারাপ কাজ করতে চেয়েছিলো সাথে ভিডিও বানানোর প্ল্যান। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে তিতি ভাবী কে আস্ক করতে পারো”
“ওনি যা বলছে তা কি সত্যি? আর যদি সত্যি হয় তাহলে তো আমি খুব খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছি”
শিশির বসে বসে ভাবছে আর চোখের পানি ফেলছে ……
“আর শুন……”
প্রবণের ডাকে শিশির তার দিকে তাকায়। প্রবণের মুখে তুই শব্দটা শিশিরের বুকে তীরের মত বাঁধে……
“আজ তুই আমার ফ্যামিলি নিয়ে বাজে কথা বলেছিস। আমি জানি আমি অনাথ আমার মা যেদিন থেকে আমার জীবন থেকে চলে গিয়েছে যেদিন থেকে আমি ভালোবাসা নামক শব্দটা খুঁজে পাই নি। তখন অর্ণব আমার পাশে দাঁড়ায়। যেদিন তোকে দেখেছিলাম তোর বাচ্চামো স্বভাব কথাবার্তা দেখে কিভাবে যেনো তোকে ভালবেসে ফেলি। আমি ভেবেছিলাম এখন হয়তো আমার জীবনের কেউ ভালোবাসা নামব শব্দটা নিয়ে আসবে কিন্তু আমি ভুল। শুন আজ থেকে তোকে যা ভালোবেসেছিলাম তার থেকে দ্বিগুণ ঘৃনা অবহেলা করবো। তুই আমার জন্ম নিয়ে কথা বলেছিস। আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে তুই বাজে কথা বলেছিস মন চাচ্ছে তোকে এক্ষনি খুন করি”
প্রবণ জোরে জোরে চিৎকার দিচ্ছে আর কথাগুলো বলছে সাথে এইটা ওইটা ফেলে দিচ্ছে।
শিশির কান্না করছে……
“এই কোন স্যার এই স্যারকে তো আমি চিনি না। কত ভয়ানক হয়ে গেছেন তিনি। দোষটা আমারই না জেনে শুনে এই রকম কথা বলা আমার একদমেই ঠিক হয়নি। আমাকে স্যারকে শান্ত করতেই হবে সাথে ক্ষমা চাইতেও হবে”
“ওই কি ভাবছিস তুই যা বের হয়ে যা আমার বাসা থেকে তোর মুখ আমি দেখতে চাই না”
“সরি স্যার, ক্ষমা করে দিন এই ভুল আর কোনোদিন হবে না”
“তোকে যেতে বলছি যা এইখান থেকে”
“স্যার প্লিজ আমার কথাটা”
“গেট আউট। আর একটা কথা বললে গলা টিপে মেরে ফেলবো”
শিশির ভয়ে ভয়ে কিছু বলতেও গিয়েও প্রবণের মুখ দেখে আর পারলো না। তাই কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে যায়……..
বাসার বাহিরে আসতেই……
“ম্যাম, স্যার বলেছে আপনাকে বাসায় দিয়ে আস্তে”
প্রবণের ড্রাইভার শিশিরকে দেখে বললো। শিশির ও আপত্তি করলো না সোজা গাড়িতে বসে পড়লো।
।।
।।
।।
???
অর্ণব তিতির সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। হটাৎ করেই সামু দৌড়ে এসেই অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে। অর্ণব এইটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। অন্যদিকে তিতি তো রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার…..
“এই অর্ণব সব সময় তো কথা বলিস প্লিজ আজ আমাকে একটু ঘুরতে নিয়ে যা না। সেই কবে দেশ ছেড়েছি”
“হুম যাবো তো নিয়ে বলেছি না”
“আজ যাবো চল চল”
অর্ণব সামুর হাত সরানোর চেষ্টা করছে আর তিতির দিকে তাকাচ্ছে। অর্ণব বুঝতে পারছে তিতি এখন কেমন মেজাজে আছে……
“আচ্ছা বায় তোমরা কথা বলো আমি ফোন রাখছি”
“এই শুনো তিতি তিতি”
তিতি রাগে ফোন কেটে দিলো…….
“এইটাই তো চেয়েছিলাম হিহিহিহি। আজ থেকে তোদের দুজনের মাঝে কাটা হয়ে দাঁড়াবো আমি”
“শুন সামু তুই এখন আর ছোটো নেই তাই আজ তোকে একটা কথা ক্লিয়ার করে বলে দিচ্ছে …..”
“এইভাবে বলছিস কেনো কি করেছি আমি?”
“তুই এখন হুটহাট আমায় জড়িয়ে ধরবি না। আর আমি জানি বিদেশ এইসব সব সময় হয় ওইটা ওখানের কালচার। আর বাংলাদেশে এইসব মানায় না। তুই ও এখন বড় হয়েছিস আর আমি ও, বুঝতে পারছিস?”
“হুম বুঝছি। সরাসরি বললেই তো পারিস যে তোর সাথে কথা না বলতে এইভাবে বলার কি আছে। আসল কথা হলো আমি ভুল ছিলাম আমি ভাবছি তুই সেই আগের অর্নিবেই আছিস। কিন্তু আমি ভুলে গেছি মানুষ দূরে থাকলে তার মাঝে যে দুরত্ব হয় তা আমার জানা ছিলো না। তুই দুরত্ব ঠিকই করতে পেরেছিস কিন্তু দেখ আমি পারলাম না।”
ন্যাকা কান্না করে বলতে লাগলো…..
“ওহহ সামু তুই যা ভাবছিস তা কিন্তু না আমি কথাটা ওইভাবে….”
“সরি ভুল হয়ে গেছে আমার। আমি আজ শুভ্র ভাইয়াকে বলবো কোনো বাসা দেখতে আর শুভ্র ভাইয়া যদি আমার সাথে থাকতে চায় তাহলে দুইজন একসাথেই থাকবো আর না থাকলে আমি একাই থাকবো। পরে দু তিনদিনের ভিতর কানাডার টিকেট কেটে চলে যাবো আর আসবো না তোদের মাঝে”
সামু কান্না করছে আর বলছে পরে কান্না করতে করতে ওইখান থেকে চলে যায়। অর্ণব কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওর খুব কষ্ট + খারাপ লাগছে। আর নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে……
“আমি যে কি করি শুধু সামুকে কষ্ট দিলাম। ও তো ছোট থেকেই এমন। খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি যাই ক্ষমা চাই পিচ্চিটার কাছ থেকে”
অর্ণব হাঁটা শুরু করলো সামুর রুমের দিকে…….
অন্যদিকে তিতি রাগে পারছে না অর্ণবকে খুন করতে……
“শালা কখন ফোন কেটে দিয়েছি একবার ফোন ও দিচ্ছে না কি এমন বিজি হয়ে পড়ছে। ও এখন তো ওনার কিউটি বিউটি সামু এসে পড়ছে না ওনাকে নিয়ে বিজি ওনি। ফোন দেওয়ার সময় পাচ্ছে না। আচ্ছা আমি কি দিবো নাহ থাক আমি কেনো দিবো।”
অনেক্ষণ ধরে ভাবছে শেষমেশ নিজে থেকেই ফোন দিলো তিতি। কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। তিনবার ফোন দেওয়ার পর ও রিসিভ হলো না। তিতি রাগে দুঃখে ফোন অফ করে ও অন্য কাজে মন দিলো……
“এই সামু রাগ করেছিস দেখ আমি কিন্তু ওইভাবে বলি নাই”
“প্ল্যান কাজে দিচ্ছে হিহিহিহি। সরি বলছি তো আসলি কেনো আবার”
“তুই এইভাবেই পেত্নীর মতো মুখ করে রাখবি আর আমি বসে থাকবো এইটা হতে পারে বল?”
“কি চাই বল?”
“তোর হাসি মুখ দেখতে চাই”
“হিহিহিহি হাহাহা হয়েছে এইবার যা”
“এইটাতো আমার সামুর হাসি না। এই হাসি আমি চিনি না। দেখ আমি কানে ধরছি আর তোর সব কথা শুনবো”
“প্রমিজ কর যা বলবো তাই শুনবি”
“ওকে প্রমিজ। এইবার খুশিতো”
“হুম অনেক খুশি। তো চল কোথাও ঘুরতে যাই”
“হুম চল”
অর্ণব সামুকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো। সাথে করে ফোন নিতে মনে নাই ওর……
???
শুভ্র জানালার পাশে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে আর ভাবছে…..
“তিতি কি আসলেই আমার মায়াবিনী নাকি দ্বিতীয় মেয়েটা? ওই মেয়েটার খুঁজ নিতে হবে আর ওই মেয়ের সাথে তিতির কি পরিচয় তা জানতে হবে”
শিশির তিতির বাসায় আসে আর সব ঘটনা জানতে পারে। শিশির ও বলে ও প্রবণ কে কি বলেছে……
“শিশির আমি জানতাম তুই বাচ্চা কিন্তু তোর মন মানসিকতা খুব ভালো কিন্তু তুই আজ যা করেছিস তার জন্য তোকে ক্ষমা করতে পারছি না আমি”
“দেখ বাবু প্লিজ আমাকে স্যারের সাথে কথা বলিয়ে দে আর তুই যা বলবি স্যার শুনবে প্লিজ আমাকে হেল্প কর। আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভুল। আর এই তনয়ের বাচ্চাকে আমি ছাড়বো না ওর খবর পরে নিবো তুই আগে স্যারের সাথে আমার কথা বলিয়ে দে”
“আমি পারবো না।যখন দোষ করেছিস তখন মনে ছিলো না এখন আসছিস ক্ষমা চাইতে পারবো না আমি”
“দেখ তোর পা ধরছি প্লিজ একটা সুযোগ দে”
শিশির কান্না করছে। তিতি শিশিরের এই অবস্থা সহ্য করতে পারছে না….
“যা একটা সুযোগ করে দিবো নে এখন কান্না অফ কর। আর শুন প্রবণ ভাইয়া কিন্তু তোকে খুব ভালোবাসে। তুই এতদিন হিরা রেখে কাচের গাছে ছুটেছিস তাই একটা ভালো উপদেশ দিচ্ছি প্রবণ ভাইয়ার ভালোবাসা বুঝতে শিখ তোরই ভালো হবে”
শিশির কোনো উত্তর দিলো না চুপ করে রইলো…..
“ওকে ফাইন কিছু বলতে হবে না। পরেরটা পরে বুঝা যাবে। এখন চল ঘুরতে যাই আর ফুচকা খাই অনেকদিন ধরে খাওয়া হচ্ছে না”
“হুম”
তিতি শিশিরের মন ভালো করার জন্য তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো। দুই বান্ধবী হাঁটছে আর কথা বলছে তখন তিতির চোখ যায় তার অন্যদিকে একটি মেয়ে আর একটি ছেলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে পিক তুলছে। যখন তিতি ভালো করে ছেলেটার মুখ দেখতে পেলো তখন ও নিজের চোখকেই বিশ্বাস করাতে পারলো না কেননা ছেলেটি আর কেউ না অর্ণব ছিলো………
চলবে,……..