#Love_warning❤️
#your_love_is_my_drug_addiction?
#Part_12
#ফারজানা
প্রবণ মনে মনে হাসলো সামনে অর্ণব কে চোখ টিপ দিলো সাথে অর্ণব ও…….
তিতি আর শিশিরকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে অর্ণব আর প্রবণ চলে গেলো।
তিতি আর অর্ণবের সারাদিন ফোন আলাপ আর শিশির ও প্রবণের হালকা পাতলা ফোনে কথা বলা শিশির তাড়াহুড়া করে ফোন কাটা আর তনয়ের সাথে কথা এইভাবেই চলতে থাকে সারাদিন।
পরের দিন সকালে…….
“শিশির এই শিশির কোথায় তুই?”
শিশিরের মায়ের ডাক শুনে শিশির ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো। শিশিরের চোখ মুখ ফুলে আছে।
“কি রে মা কি হয়েছে তোর চেহারার এই অবস্থা কেনো?”
শিশির ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। মেয়ের আচমকাই এই কান্না দেখে শিশিরের আম্মু ভয় পেয়ে যায়।
“কি রে মা কি হয়েছে বল কেউ কি কিছু বলেছে বল মা কি হয়েছে। স্বাধীন কি আবারো?”
“নাহ আম্মু স্বাধীন কিছু বলে নাই”
“তাহলে কি হয়েছে?”
“আম্মু আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি কাকে ভালোবাসি বা কার সাথে থাকলে আমি হেপী হবো”
“কি হয়েছে আগে খুলে তো বল”
“তুমি তো প্রবণের কথা জানো তাই না?”
“হুম। ওই ছেলেই তো স্বাধীনের কাছ থেকে তোকে বাঁচিয়েছে তাছাড়া তিতির মুখে শুনছি ও নাকি তোকে পছন্দ করে”
“কিন্তু আম্মু আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি”
“কে ও?”
“তনয়। ইন্টারনেটে ওর সাথে আমার পরিচয় ওর গল্প পড়ে ওকে পছন্দ করি ”
“তুই কি সিউর তনয়কে ভালোবাসিস?”
শিশির চুপ হয়ে গেলো।ও বুঝতে পারছে না এইটা ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা।
“কি রে বল?”
“জানি না আম্মু”
“হুম বুঝলাম। তুই আমার কথা মন দিয়ে শুন এত না ভেবে। ”
“হুম বলো”
“ভালোবাসা হলো শুধু আকর্ষণই নয়, এতে থাকতে হয় সম্মান, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস
ভালোবাসা জিনিসটি শুধুমাত্র একে অপরের আকর্ষণের মাধ্যমে তৈরি হয় না। এতে থাকতে হয় একেঅপরের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস।
একজন মানুষ যেমন কখনো পারফেক্ট হতে পারেন না তেমনই ভালোবাসা কখনো পারফেক্ট হবে না। অনেক খুঁত থাকবে এতে। কিন্তু তা মেনে নিয়ে চলার নামই ভালোবাসা।
ভালোবাসা ধরে রাখতে অনেক কিছুই করতে হয়। নতুবা সময়ের সাথে সাথে এই ভালোবাসার রঙ বদলে যেতে থাকে। এবং নিজেকে সেই রঙের সাথে মিলে গিয়েই ধরে রাখতে হয় ভালোবাসা।
তোর ভালোবাসা সত্যি কি মিথ্যা তা বলতে পারবো না শুধু এইটুকু বলতে পারবো আমাদের জীবনে চলার সময় আমরা অনেক কিছুরই প্রেমে পড়ে যাই কিন্তু তাকে ভালোবাসা বলা চলে না। সুতরাং প্রেম এবং ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু এই সত্যটি আমরা অনেকেই মানতে চাই না।
আর একটি কথা আছে জোর করে ভালোবাসা এইটা কিন্তু অন্যায় ।কেননা ভালোবাসা সাধারনত জোর করে হয় না
যতোই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন, এই জিনিসটি মূলত কারোরই অজানা নয় যে জোর করে কখনো কাউকে ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসা পুরোপুরি একজন মানুষের একান্ত ব্যাপার।
তাই বলছি মা যা করবি ভেবে চিন্তে করবি আমি আর তোর আব্বু তোর বিপক্ষে কোনোদিন যাবো না তুই যাকে ভালোবাসিস তাকেই আমরা মেনে নিবো শুধু এইটুকু বলবো তোকে যে বেশি ভালোবাসে যে তোকে সুখী রাখতে পারবে তাকেই মনের সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করবি”
শিশিরের আম্মু শিশিরের মাথায় হাত রেখে কথাগুলো বললো। শিশির চুপচাপ কথাগুলো শুনলো। কি বলবে ও কিছুই বুঝতে পারছে না। শিশিরের আম্মু শিশিরের মনের কথা বুঝতে পেরে বললো……
“এত ভাবিস না তো সময় নে তুই যত সময় লাগে নিয়ে নে এইভাবে ভাবলে পরে ফল খারাপ হবে তাই সময় নিয়ে ভালো মন্দ বিবেচনা করে পরে তোর ফাইনাল সিদ্ধান্ত বলবি”
“হুম আম্মু”
শিশিরের আম্মু শিশিরকে আরো অনেক কিছু বলে তিনি চলে গেলেন। শিশির রেডি হয়ে রওনা দিলো ভার্সিটির উদ্দেশ্য……..
“কি রে ভাঙ্গা বাঁশি আজ এত দেরি হলো কেনো?”
তিতি শিশিরকে দেখে কথাটা বললো…..
“আর বলিস না গাড়ি পাচ্ছিলাম না তাই এত দেরি হয়ে গেলো”
“তোর কি কিছু হয়েছে চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো?”
“কিছুই হয়নি চল ক্লাসে যাই ভালো লাগছে না”
“হুম চল।”
“শিশিরের কিছু একটা হয়েছে কিন্তু বলতে চাচ্ছে না। ওতো আমার কাছ থেকে কিছু লুকায় না তাহলে আজ কি হলো? ”
তিতি শিশিরের সাথে ক্লাসে যাচ্ছে আর মনে মনে এইসব ভাবছে…..
আজ প্রথম ক্লাস ছিলো প্রবণের । প্রবণ ক্লাসে ঢুকতেই সব মেয়েরা হা হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু শিশির বাদে। আজ প্রবণ ব্লু কালারের শার্ট হাত ফোল্ডার করা কালো পেন্ট কালো জুতা ব্রাউন চুল তাও স্পাইক করা হাতে ঘড়ি। সবাই হা হয়ে আছে।
প্রবণ বুঝতে পেরে বললো…..
“আমাকে এইভাবে না দেখে সবাই ক্লাসে মনোযোগ দিন। যদি ক্লাস ভালো না লাগে তাহলে চলে যেতে পারেন দরজা খোলা আছে”
শিশির প্রবণের কথা শুনছে কিছুই বলছে না তাই তিতি বললো……
“বাহ শিশির আমি তো আজ প্রবণ স্যার কে দেখে ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি আর কি সুন্দরভাবে কথা বলে পুরাই চকোলেট বয় অর্ণবের আগে প্রবণ স্যারের সাথে যদি পরিচয় হতো রে কি ভালোই হতো”
শিশির তিতির কথায় একবার প্রবণের দিকে তাকালো পরে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো……
“স্যার হলো বাবার মতো তাই খারাপ নজরে তাকাবি না”
তিতি শিশিরের কথা শুনে চোখ দুটি বড় বড় করে বললো…..
“কথাটা একটু আস্তে বলতে পারলি না। হিরোর সামনেই হিরোইন বলছে হিরো নাকি তার বাবার মতো”
শিশির তিতির কথা শুনে দেখে প্রবণ লেকচারের পাশাপাশি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে…..
“শালী তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু। আমার কথাটা হয়তো বেশি শুনে নাই কিন্তু তুই তো ফাটা বাঁশের গলার মতো বললি আজ আমি শেষ”
“হিহিহি প্রবণ কে শুনানোর জন্যইতো বলছি। অর্ণব বলেছে যে প্রেমে রাগ বেশি সেই প্রেম নাকি মাখো মাখো হয়। ভালোবাসা ও বাড়ে।”
তিতি মনে মনে কথাটা বললো…..
“এই যে মিস শিশির দাড়ান”
প্রবণের কথায় শিশির দাড়িয়ে যায়…..
“বলুন তো একটু আগে আমি কি বলেছি?”
শিশির প্রবণের লেকচার ভালো করে শুনে নাই তাই আমতা আমতা করে বললো…..
” ওইটো বলছিলেন যেনো কি আর কি?”
মাথায় হাত দিয়ে চুল বুলাতে বুলাতে…..
“কি বলছেন স্পষ্ট ভাষায় বলুন”
“আমি শুনতে পারি নাই স্যার”
“আপনি ছাড়া তো বাকিরা সবাই শুনেছে। তাহলে কি আমি ধরে নিবো আপনি কানে শুনেন না বা অমনোযোগী ছিলেন। আমি আসার পরেই বলেছি যার ক্লাস ভালো না লাগে সে চলে যেতে পারে তাহলে আপনি বসে ছিলেন কেনো?”
“সরি স্যার আর হবে না”
“আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না”
“স্যার আমি”
“শাট আপ। বের হোন ক্লাস থেকে আপনার মত স্টুডেন্ট আমার দরকার নেই”
প্রবণ রাগের বশে শিশির কে ধমক দিচ্ছে…..
“আর হবে না স্যার”
“গেট আউট। এক্ষনি বের হোন ক্লাস থেকে”
এত এত স্টুডেন্টের মাঝে শিশিরকে এইসব বলাতে শিশির অনেক লজ্জা পায় তাই কাঁদতে কাঁদতে ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়…….
তিতি কিছু বলতে চেয়েও পারলো না তাহলে ক্লাসের একেকজন একেক কথা বলবে…….
প্রবণ ও ক্লাস তাড়াতাড়ি শেষ করে চলে গেলো। প্রবণ যাওয়ার পর পর তিতি ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো। পুরো কলেজ শিশির কে খুঁজতে লাগলো বাট পেলো না। তাই শিশির কে ফোন দিলো বাট শিশিরের ফোন অফ।
“এই যে তিতির পাখি কি করছেন আপনি এইখানে?”
অর্ণব দাড়িয়ে আছে…..
“ওহহ তুমি। শিশির কে ফোন দিচ্ছি ও কলেজ নাই কিন্তু ওর ফোন অফ খুব টেনশন হচ্ছে।”
“আরেহ বোকা মেয়ে শিশির মনে হয় প্রবণের সাথে আছে। আর ওরা এখন মনে হয় বিজি আছে তাই ফোন ধরছে না”
“নাহ আজ তো প্রবণ আর শিশিরের….”
“ওহ কাম অন তিতির পাখি ওদের এখন আলাদা টাইম স্পেন্ড করার দরকার। এখন ওদের না ডিস্টাব করাই বেটার”
“তুমি বুঝতে পারছো না আজ ক্লাসে”
“দেও তো ফোন আমার হাতে আর উঠো গাড়িতে তোমায় আজ এক জায়গায় নিয়ে যাবো”
তিতির হাত থেকে ফোন কেরে নিয়ে….
“কিন্তু শিশির”
“তিতি বার বার বলছি প্রবণ শিশির একসাথে তাও এক কথা বলছো।নাকি আমার কোলে উঠে গাড়ি উঠার শখ হয়েছে”
“তোমার কোলে উঠার কোনো শখ নাই”
বলেই গাড়িতে বসলো তিতি……
???
অর্ণব গাড়ি থামালো একটি পাহাড়ি রাস্তায়। তিতি কে নিয়ে পাহাড়ে উঠে তিতির চোখ এক হাত দিয়ে বন্ধ করে নিলো……
পাহাড়ের চূড়ায় উঠে তিতির চোখ খুললো…..
তিতি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সাদা মেঘের ভেলা আকাশে উড়ছে। ওর মনে হচ্ছে ও মেঘের রাজ্যে আছে হাত তুললেই মেঘ ধরতে পারবে। এই রকম এক অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলো তিতি। যখন ওর চোখ পাহাড়ের নিচে গেলো অমনি অর্ণবকে জড়িয়ে ধরলো…..
“ভয় পেও না তিতির পাখি। আমি আছিতো কিছু হতে দিবো না তোমার”
“হুম জানি তো। এই জন্যই তো খুব ভালোবাসি এই সাইকো ভিলেন কে”
“আমিও খুব ভালোবাসি আমার তিতির পাখি কে”
তিতি আর অর্ণব ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফিরছিলো তখন সন্ধ্যার সময় ছিলো……
তিতির ফোনে কল আসে তিতি ফোন রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে কিছু একটা শুনে তিতি বলে উঠলো…..
“মানে কি পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি? কোথায় শিশির কোথায় গিয়েছে?”
তিতি কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন কেটে দেয়।
“কি হয়েছে শিশিরের?”
“শিশির কে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় খুঁজা হচ্ছে ওকে পাওয়া যাচ্ছে না। সব দোষ আমার। আমি যদি তখন ওকে খুঁজতে যেতাম”
তিতি কান্নায় ভেংগে পরে। অর্ণব প্রবণ কে ফোন দিয়ে ঘটনা টা বলে। আর এই দিকে তিতি আর অর্ণব খুঁজতে বের হয় শিশিরকে…….
চলবে……