গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (০৫)

1
2560
golpota nishchop balikar
golpota nishchop balikar

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকা’র (০৫)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

লাইব্রেরীতে বসে পত্রিকা পড়ছিল নীলিমা। হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে শাকিলা। ‘নীলি! প্রিন্সিপাল মেডাম তোকে ডাকছে।’ ‘আমাকে? প্রিন্সিপাল মেম? কেন?’ প্রশ্নগুলো করতে করতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। নীলিমা’র সাথে শাকিলা’ও উঠে দাঁড়ায়। জবাব দেয়, সেটা তো আমি জানি না। তোকে যেতে বলেছে তাই বললাম। — এখন’ই? — হ্যাঁ, এখন’ই যেতে বলেছে। — ঠিক আছে। আমি আসছি। — হু! ধীর পায়ে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নীলিমা। বুকটা ধুরুধুরু কাঁপছে ওর। ভেবে পাচ্ছে না সে প্রিন্সিপাল মেম হঠাৎ’ই কেন ওকে ডাকবে ওকে! কি হতে পারে এভাবে জরুরী তলবের কারণ? খাতাপত্র ঘাটছিল মেডাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ধীর গলায় অনুমতি নেয় নীলিমা। ‘আসতে পারি মেম?’ মাথা তুলে তাকায় প্রিন্সিপাল মেম। হাসোজ্জ্বল মুখে জানায়, ওহ, তুমি! আসো, আসো! কাঁপা শরীরে ভেতরে প্রবেশ করে নীলিমা। মেডামের ঠিক সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ‘আসসালামু আলাইকুম, মেম!’ — ওয়ালাইকুম আসসালাম। দাঁড়িয়ে কেন? চেয়ার আছে। বসো… — না মেম! সমস্যা নেই। — হু! তুমি তো অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী, তাই না? — জ্বী, মেম! — কোন ডিপার্টমেন্টের জানি? — অর্থনীতি! — অর্থনীতি! খুব ভালো একটা সাবজেক্ট। — (নিশ্চুপ) — বাসা কোথায় তোমার? — নরসিংদী! — অনেকদূর! — জ্বী, মেম! — কোথায় উঠেছ? — আপাতত আন্টির বাসায় উঠেছি! — গত ২দিন যাবৎ শুভ্র’র মুখোমুখি হতে তোমায় বেশ কয়েকবার দেখেছি। কোন সমস্যা? — ইয়ে মানে মেম সমস্যা… — মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি তোমার কোন সমস্যা হয়েছে কি? — মেম আমি আসলে ঢাকা শহরে এর আগে একা কখনো আসিনি। এবার’ই প্রথম একা আসলাম। আমার একটা বাসা দরকার ছিল। যেখান থেকে আমি পড়াশুনা আর পাশাপাশি তার খরচটা যোগাতে পারি। শুনেছি শুভ্র ভাইয়া এ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তাই ওনার শরণাপন্ন হয়েছিলাম যদি কোন হেল্প করতে পারে। — এই নাও! এই কাগজে তোমার বর্তমান ঠিকানা আর নাম্বারটা লিখো… — জ্বী, মেম… — (……..) — মেম! (কাগজটা এগিয়ে দিয়ে) — ওকে, তুমি এখন আসতে পারো। — জ্বী, আসসালামু আলাইকুম মেম। নীলিমা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নীলিমা বেরিয়ে যেতেই দরজা’র সামনে এসে দাঁড়ায় শুভ্র। ‘আসতে পারি মেম?’ — হ্যাঁ, আসো! — ……….. — বসো।(চেয়ার দেখিয়ে) — (নিশ্চুপ) — দুপুরে খেয়েছ? — নাহ! — খাওনি কেন? — খাবার আনিনি।(নিচু হয়ে) — এই যে। নাও। কোন কথা ছাড়া’ই দ্রুত খেয়ে নাও। বিরতি শেষ হওয়া’র ১৫মিনিট আছে। (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) —- (চুপচাপ খাওয়া শুরু করে শুভ্র) খাওয়া শেষে উঠে যাওয়া’র সময় পিছন থেকে ডেকে উঠে, এই শুনো! — জ্বী, মেম! — তনিমা নাকি কি যেন নাম মেয়েটা’র? যার জরুরী ভিত্তিতে বাসা’র প্রয়োজন?! — জ্বী, মেম! ওর নাম নীলিমা… — হ্যাঁ, যাই হোক! ওকে বলো কাল থেকে ও আমাদের বাসায় থাকবে। ও যাতে ওর সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে রেডি থাকে। কাল আমার ড্রাইভার যাবে ওকে আনতে। আর তাছাড়া আমি ওকে রাতে কল দেবো। — জ্বী, মেম! — ওকে, এখন তাহলে ক্লাসে যাও। রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ক্লাসে আতিকের পাশে গিয়ে বসে শুভ্র। অজানা কারণে চোখে মুখে ওর মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। প্রশ্ন করে বন্ধু আতিক- ” কিরে! সেই কখন থেকে দেখছি একা একা হাসছিস! ঘটনা কি?” — আমি??? — জ্বী, আপনি! — কখন?(স্মিতহাস্যে) — এখন! — চুপ কর! মন দিয়ে ক্লাস কর। — আচ্ছা, না বললে আর কি… ‘আতিক’ স্যারের লেকচার শুনায় মন দেয়। এদিকে শুভ্র! বেঞ্চের মধ্যে কুনুই ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে গভীর ভাবনা’য় মগ্ন হয়ে যায়।

 

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে