Adorable Love পর্ব : ০৫

0
4304

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৫
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
রাত প্রায় নয়টা। চাদর মুড়ি দিয়ে একদম গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে ঈশিকা। সেই যে সন্ধ্যার আগে ঘুমিয়েছে আর উঠার নাম নেই। ব্লান্ট কাট চুলগুলো মুখের ওপর এলোমেলো হয়ে পরে আছে। সামান্য কিছু চুল ঠোঁটের ভাজের এক পাশে গিয়ে মিশেছে। ফোলা ঠোঁট জোড়া লাল টকটকে হয়ে আছে।

আমান ট্রেতে করে খাবার নিয়ে এসে ঈশিকার পাশে বসে আছে। এক ধ্যান এ চেয়ে আছে ঈশিকার দিকে। ঘুমন্ত অবস্থায় কি নিষ্পাপ লাগছে মেয়েটাকে। এই এক মুখখানার দিকে তাকিয়ে বোধ হয় হাজার জনম পার করে দিতে পারে সে।

—-” ঈশু ওঠো…খেয়ে আবার ঘুমাও।”
—-” উম…”
—” কি উম? ওঠো….খাবার খেয়ে আবার মেডিসিন খেতে হবে। ঈশু…ওঠো না লক্ষীটা…”
—-” উফ! কি শুরু করেছেন আপনি? শান্তিতে কি একটু ঘুমাতেও দেবেন না নাকি? বিরক্তি নিয়ে উঠে বললো ঈশিকা।
—-” সন্ধ্যার আগে থেকে ঘুমিয়েই তো যাচ্ছো। আর কতো ঘুমাতে হয়? এবার খাবে এসো…”
—-” খাবোনা আমি…ঘুমাবো এখন। যান তো।” বলে যেই শুতে নেবে ওমনি আমান গম্ভীর সুরে বললো,
—-” বারবার এমন খাবার নিয়ে ঝামেলা করা আমার কিন্তু ভালো লাগছে না। এবার পিটানি কিন্তু একটাও মাটিতে পরবে না।”

ব্যস! কাজ হয়ে গেলো। এই ছেলের যে রাগ…কথা না শুনলে মেরে হাড়গোড় ভেঙ্গেও দিতে পারে। শেষমেশ নামের আগে “ল্যাংড়া” শব্দ জুড়ে যাবে! ঈশিকা চুপচাপ সোজা হয়ে বসলো। আমান মুখ টিপে হেসে ঈশিকাকে খাইয়ে দিতে লাগলো সাথে নিজেও খাচ্ছে।

—” আর খাবোনা।”
—” আর একটু?”
—” না প্লিজ!”
আমান আর জোড় করলো না। এরপর যেই ট্রে থেকে দুধের গ্লাস উঠিয়ে ঈশিকার দিকে তাকালো। ঈশিকা ওমনি দুই হাত দিয়ে নাক মুখ চেপে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়িয়ে “না” ইশারা করলো। আমান শক্ত ভাবে বললো,
—-” একটা কথাও চলবে না। চুপচাপ পুরোটা খাবে।”
—” না প্লিজ! দুধের গন্ধ ভালো লাগে না আমার। বমি আসে।” মুখ চেপে ধরেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো ঈশিকা।
—” আসবে না। নাক চেপে ধরে এক চুমুক দেবে। নাও।” বলেই গ্লাস টা এগিয়ে দিলো।

সঙ্গে সঙ্গে মুখ চেপে ধরেই পিছিয়ে গেলো ঈশিকা।
—” হুম বুঝেছি…আবার কিসি থ্যারাপিটা দিতে হবে। তাতে অবশ্য আমারই ভালো। তবে এইবার আর এক ঘন্টার নিচে ছাড়ছিনা।” পৈচাশিক হাসি হেসে বললো আমান।

আমানের কথা শুনে ঈশিকার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এক ঘন্টা! এতো দম আটকে মারার পায়তারা করছে এই ছেলে! এরপর যেই আমান এগিয়ে আসতে নিলো ওমনি মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো,
—-” না না…খাবো তো…দিন।”
—-” গুড গার্ল!” মুচকি হেসে।

ঈশিকা নাক চেপে ধরে কোনোমতে গ্লাস টা খালি করলো। সাথে মনে মনে আমানকে বকে তুলোধুনো করলো। তারপর আমান জল খাইয়ে একটা পেইন কিলার খাইয়ে দিলো। ঈশিকা আমানকে মুখ ভেংচি দিয়ে ধপ করে আবার চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো। আমান হেসে ট্রে টা নিচে রাখতে চলে গেলো।

আমান ঘরে এসে যেই ঈশিকার পাশে শুয়ে ঈশিকাকে জড়িয়ে ধরলো। ওমনি ঈশিকা চোখ খুলে বিচলিত ভঙ্গিতে বললো,
—-” এই এই। আপনি এখানে শুচ্ছেন কেনো?”
—” তো কোথায় শুবো?” অবাক হয়ে।
—-” এতো বড় বাড়ি…একটাই ঘর নাকি? আমি একা ছাড়া ঘুমাতে পারি না। যান অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমান।”
—-” এ্যাহ! বললেই হলো নাকি? এখন আর একা ঘুমানো যাবে না। অভ্যাস পাল্টাও। আর আজকে তো আমাদের বাসর রাত। বাসর রাতে কি বর বউ আলাদা থাকে নাকি?”
—” নিকুচি করেছে আপনার বাসর রাতের! আপনি যাবেন?
নাকি আমি উঠে চলে যাবো?” রেগে বললো ঈশিকা।

আমান কিছু একটা ভেবে তারপর দুম করে ঈশিকার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
—” ওক্কে সুইটহার্ট! তোমার যেতে হবে না। আমিই যাচ্ছি। তুমি বরং একা ঘরে শুয়ে শান্তিতে ভুতের সাথে বাসর করো কেমন?” মিষ্টি হেসে।

এবার ঈশিকার সব ঘুম কর্পূরের মতো উবে গেলো। বড় বড় চোখ করে বললো,
—-“ভু ভু..ভুত!!”
—-” হুম। এই এলাকায় ভীষন উপদ্রব এদের। সবার বাড়ি বাড়ি প্রতি রাতে হানা দেয়। আর নতুন মানুষ পেলে তো কথাই নেই। সাথে করে নিয়ে যায় ওদের রাজ্যে। তারপর কাঁচা মাছ খাইয়ে ডামাডোল বাজিয়ে ঘুঙুর পরিয়ে নাচায়। আর কথা না শুনলেই ঘাড় মটকে দেয়।”

ঈশিকার ভয় পাওয়ার বস্তুরগুলোর তালিকার মধ্যে প্রথম বস্তুটি হলো এই ভুত। ছোটবেলায় জুজু বুড়ি, মামদো ভুত, মেছো ভুত, পেটকা ভুত সব ভুতেরই গল্প শোনাতো তার দাদী। এখন বড় হয়ে হরর ফিল্মগুলো দেখে ভয়টা দ্বিগুণ বেড়েছে।
মনে মনে বললো, “আল্লাহ! এই কোন জায়গায় আমাকে আনলো এই ছেলে! বাইরে মেয়েধরা তো ভেতরে ভুত!!! এবার নির্ঘাত সে মরে যাবে।”

—” ঠিকাছে…আমি যাচ্ছি তাহলে। হ্যাভ আ নাইস ড্রিম উইথ ভুতস!” বলে আমান উঠে যেতে নিলে ঈশিকা আতংকভাবে “নাআ” বলে আমানের টি শার্ট টেনে ধরে।
—” কি হলো? এই তো তাড়াতে চাইছিলে। আবার না কেনো? ” এক ভ্রু উঁচু করে।
—” না মানে বলছিলাম যে… এতো বড় বিছানা থাকতে অন্য ঘরে থাকার দরকার কি? এখানেই থাকুন না। আমার একটুও সমস্যা হবে না সত্যি।” মেকি হেসে।

আমানের ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে ঈশিকা এবার অনুরোধের গলায় বললো,
—” প্লিজ থাকুন না।”

যাক কাজ হয়েছে! আমান হেসে ঈশিকাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে শুয়ে পরলো। ঈশিকাও একেবারে আমানের সাথে লেগে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে রইলো।
বাসর না হোক… ভুতের ভয়ে জড়িয়ে ধরে তো আছে। নাই মামার থেকে কানা মামাই ঢের ভালো।
.
.
.
.
মাঝরাতে কারো ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আমানের। দেখে ঈশিকা ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর কাঁপছে।

—-” ঈশু..এইইই ঈশু? কাঁদছো কেনো? এই কি হয়েছে লক্ষীটা!? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”
কান্না কিছুতেই থামছে না। ঈশিকা জড়ানো গলায় বলে,
—-” ওওওরা আমমমাকে নিয়ে গেল্লো…আয়ামিইইই যাযাবো নাআআ….”
—-“কে নিয়ে যাবে? কিছু হবেনা…আমি আছি তো… এই মেয়ে স্বাভাবিক হও। ঈশু…ভয় পাচ্ছি কিন্তু আমি এবার।”
একেবারে হেচকি উঠে গেছে কান্নার তোড়ে। আমান দিশাহারা হয়ে বললো,
—” এই জল খাবে? আচ্ছা একটু ছাড়ো জল দিচ্ছি আমি।” বলে যেই ঈশিকাকে ছাড়াতে যাবে ওমনি “না…না” বলে কান্না দিগুণ করে আমানকে খামচে ধরলো ঈশিকা।
আমান উপায় না পেয়ে ঈশিকাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো।

এভাবে অনেকক্ষন পর শান্ত হয়ে কান্নার তোড় কমলো। এখন আমানের টি শার্ট খামচে ধরে বুকের সাথে একেবারে লেগে ঘুমিয়ে আছে ঈশিকা।

আমান বুঝলো নিশ্চয়ই খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছে মেয়েটা। এসব ভুত প্রেতের গল্প বলা ঠিক হয়নি। এমনি যে ভীতু…আবার না বললেও তো জেদ করে অন্য ঘরে চলে যেতো। তখন কেমন হতো ব্যাপারখানা? কই এখন সে বাসর করবে তা না। জড়িয়ে ধরে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে। মেয়েটাকে জান দিয়ে ভালোবাসে বলে জোড় করে কিছু করতে চায় না। অনেক কষ্টে সামলাচ্ছে নিজেকে সে।

আমান বিড়বিড় করে বললো, —-” খুব তাড়াতাড়িই তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে যাবো ঈশু। তারপর আর কোনো তালবাহানাই শুনবো না। কোনো বাধাই মানবো না। এক্কেবারে পুরোপুরি নিজের করে নেবো।”
বলেই ঈশিকাকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে কপালের পাশে চুমু খেলো।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে