#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৩
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
.
ইফতেখার চৌধুরী বই নিয়ে বারান্দায় এসে বসলেন। আজ তিনি অফিস কার্য থেকে ছুটি নিয়েছেন। শরীর নাকি বিশেষ ঠিক লাগছে না। এমন সময় আফসানা চৌধুরী এসে ক্ষোভ মেশানো কন্ঠে বললেন,
—-” তোমার মেয়ে কি পন করে রেখেছে যে আমার কোনো কথাই সে শুনবে না?”
—-” কেনো কি করলো আবার সে?” বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে প্রশ্ন করলেন ইফতেখার চৌধুরী।
—- ” ভার্সিটি থেকে সোজা বান্ধবীর বাসায় গেছে সে। দু’দিন নাকি সেখানেই থাকবে। অনুষ্ঠান নেই কারণ নেই…কোনো মানে আছে সেখানে থাকার? আবার নিজে কথা বলেনি বান্ধবীকে দিয়ে ফোন করিয়ে বলেছে।”
কিছুক্ষন থেমে আবার বলতে লাগলেন,
—-“কাল এতো করে বুঝালাম বিয়ের জন্য…কিছুতেই বুঝলোনা! কি খারাপ আছে ওই ছেলের? দেখতে একেবারে রাজপুত্র। উচ্চবিত্ত ভালো ফ্যামিলি। আর সেখানে তোমার মেয়ে “না” বলে বসে আছে। এখন নাকি বিয়ে করবে না। বলি মেয়ে যখন হয়েছে বিয়ে তো একদিন করতেই হবে নাকি? সেটা এখন হলে সমস্যাটা কি?”
ইফতেখার চৌধুরীর কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে আফসানা চৌধুরী গলার স্বর উঁচু করে বললেন,
—-” তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না আমি কি বলছি?”
—-” হ্যাঁ? কি বললে?” বই থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলেন ইফতেখার চৌধুরী। আফসানা চৌধুরী কিছুক্ষণ দাঁত চেপে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
—“বাপ, ছেলে, মেয়ে সব হয়েছে এক ধাঁচের। আমার কথার কোনো দামই নেই এদের কাছে? এক কান দিয়ে শোনে তো আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। নয়তো শুনবেই না৷ থাকবো না আর এই সংসারে। চলে যাবো। তারপর দেখি কিভাবে চলে এদের।” রাগে বিলাপ বকতে বকতে চলে গেলেন আফসানা চৌধুরী।
ইফতেখার চৌধুরী কিছুক্ষণ তার যাওয়া দিকে তাকিয়ে থেকে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়িয়ে ফের বইয়ে মুখ গুঁজলেন।
.
.
____________________________________________
ঈশিকা একবার খাবার মুখে নিচ্ছে তো বদলে দুই বার জল খাচ্ছে। সাথে ঠোঁট চেপে সমানে শোসাচ্ছে। ঠোঁটের কাঁটা জায়গাগুলোতে জ্বলছে চিনচিন করে। খাওয়া শেষে টেবিলে প্লেট রাখতে রাখতে আমান বললো,
—-” এতো শোসাচ্ছো কেনো ঈশু? খাবার তো বেশি ঝাল ছিলো না।”
—-” ঠোঁট জ্বলছে তো।” কান্না কান্না মুখ করে।
তখন আমানের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। ফিচেল হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—-” কেনো? কি হয়েছে ঠোঁটে আবার? কেউ কি আদর করেছে নাকি?”
এই মুহুর্তে ঈশিকার আমানের মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। কি অসভ্য ছেলে! নিজে আমার ঠোঁটের হাল বেহাল করে দিয়ে এখন আবার রসিকতা করা হচ্ছে? ঈশিকা নাক ফুলিয়ে দাঁত চেপে মনে মনে আমানকে ভয়ংকর কয়েকটা গাকি দিলো ।
আমান জলের গ্লাস আর ঔষধ এনে ঈশিকার সামনে এনে বললো,
—-” গালি দেওয়া হয়ে গেলে এটা মুখে নাও।”
—-” খাবো না।” মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে।
—-” ঈশু জেদ করোনা…না খেলে পায়ের ব্যাথা বাড়বে।”
—-” বাড়ুক…আপনার এতো দরদ দেখাতে হবে না।”
—-” বা রে…আমার বউ আমি দরদ দেখাবো না তো কে দেখাবে? পাড়ার লোক নাকি?”
—-” কে আপনার বউ?! শুনুন…আপনি যদি ভেবে থাকেন এসব করলে বললে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবো তাহলে ভুল ভাবছেন। আমি আপনাকে বিয়ে করছি না না না।” জোর গলায়।
আমান এবার হো হো শব্দ করে হেসে উঠলো। ঈশিকা অবাক হয়ে রেগে বললো,
—- ” আশ্চর্য! এভাবে দানবের মতো হাসছেন কেনো?”
—- ” হাসবো না তো কি করব? কতবার আমাকে বিয়ে করবে বলোতো ঈশু? বিয়ে তো একবার হয়েই গিয়েছে।”
—-” মানে!!”
—-” মানে হলো এই তখন তুমি যে পেপার এ সাইন করেছো সেটা বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো। আর এখন থেকে তুমি আমার বউ। বাচ্চা বউ। বুঝেছো ঈশু মনি?” হেসে বললো আমান।
ঈশিকা যেনো বিষ্ময়ে একেবারে বোবা বনে গেছে। হা করে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে।
—-” আরে হা করেছো তো আর একটু বড় হা করো না। ঔষধটা মুখে টুপ করে পুরে দেই।” দুষ্টু হাসি মুখে বললো আমান।
এবার যেনো ফেটে পরলো ইশিকা।
—-“মানে কি! কিসের বিয়ে? আপনি আমাকে ভয় দেখিয়ে জোর করে সাইন করিয়েছেন। পড়তে নিলে পড়তেও দেননি। আমি মানিনা এই বিয়ে৷”
—-” না মেনে উপায় নেই। আইন মোতাবেক এখন তুমি আমার স্ত্রী। আর তা কাগজে কলমে প্রমাণিত।
—-“কিসের আইন? আমি…আমি পুলিশের কাছে যাবো। বলবো আপনি আম…উম্মম…
—-” আপনি….আপনি আবার আমাকে…
—-” কি? কি আমি তোমাকে?” ঈশিকার দিকে ঝুকে।
—-” আপনি কথায় কথায় এতো ঠেসে ধরে চুমু খান কেনো আমাকে?” চেঁচিয়ে।
—-” নইলে তো তোমার মুখ বন্ধ হয়না। আর আমার বউ কে আমি চেপে ধরে চুমু খাই আর যাই করি তাতে তোমার কি? এগুলো হলো দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার আদর বুঝলে?”
—” আর শোনো মিস উম না….মিসেস ঈশিকা…এটাই সত্যি যে তুমি এখন আমার স্ত্রী। আর তুমি তা না মানলেও কোনো সমস্যা নেই। আমার একার মানাই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। আর রইলো থানা পুলিশের কথা? সে তুমি যেতেই পারো…বরং গেলে এতে আমারই লাভ। আমিও বলবো এই মেয়ে আমার সাথে প্রেম করে আমাকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে এখন আমাকে অস্বীকার করছে। আর সাক্ষী হিসেবে জাহিদ (পি.এ.) আর বাহাদুর তো ছিলোই সাইন করার সময়। আমি যেভাবে বলবো সেভাবেই কিন্তু ওরা স্টেটমেন্ট দেবে । তোমার প্রমাণ ছাড়া কথা কিন্তু কেউ শুনবেও না বিশ্বাস ও করবে না। উলটে সারাজীবন আমার কাছে থাকতেই বাধ্য হবে। তাই এসব আজাইরা চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।”
—“এবার কথা বাদ দিয়ে চুপচাপ মেডিসিন টা খাও।” গম্ভীর ভাবে বললো আমান।
কান্না গলায় এসে দলা পাকিয়ে আটকে যাচ্ছে ঈশিকার৷ বলার মতো ভাষা মুখে নেই। কি ভয়ংকর ছেলে! তুলে এনে অজান্তে বিয়েও করে ফেললো। আবার এখন আবার বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলে সব দোষ তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে। অদ্ভুতভাবে সে ভয় ও পাচ্ছে কারণ তার কথা বিশ্বাস করানোর মতো যথার্থ প্রমাণ নেই তার কাছে। এখন সে নিরুপায়। পায়ের ব্যাথাটাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাই না পেরে মেডিসিন খেয়ে নিলো। আমান চোরা হেসে মনে মনে বললো, “ঔষধ কাজে দিয়েছে তাহলে।”
—-” গুড গার্ল!” বলে হেসে আমান এঁটো প্লেট নিচে রাখতে চলে গেলো। প্লেট রেখে এসে দেখলো ঈশিকা খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাথরুমের দিকে যাচ্ছে।
—-” এই…এই কি করছো? পায়ে চাপ ফেলছো কেনো! আবার ব্লিডিং হবে তো।”
দৌড়ে এসে ঈশিকাকে ধরে।
—-” গোসল করব আমি। অসহ্য লাগছে।” বিরক্তি নিয়ে বললো ঈশিকা।
—-” একদম না…পায়ের ব্যান্ডেজ ভেজানো যাবে না। আর অবেলা হয়ে গেছে। এখন গোসল করলে ঠান্ডা লেগে যাবে। হাত মুখ ধুয়ে চেঞ্জ করো। দাঁড়াও…”
ঈশিকাকে কোলে তুলে বাথরুমে বসিয়ে কাবার্ড থেকে
নিজের একটা টি শার্ট আর একটা ট্রাউজার আনলো আমান। তারপর ঈশিকার হাত মুখ ধুয়িয়ে মুছিয়ে দিয়ে টি শার্ট আর ট্রাউজারটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
—-” নাও…চেঞ্জ করো।”
—-” এগুলো কার?”
—-” কার আবার…আমার।”
—-” আমি আপনার জামা পরবো?” ভ্রু কুচকে।
—-” তাছাড়া কি পরবে? এখানে তোমার জামা পাবে কিভাবে? আর আমার জামা পরলে কি সমস্যা? রেসিস্ট নাকি তুমি!?” ভ্রু কুচকে বললো আমান।
ঈশিকা কিছুক্ষন আমানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে তারপর হাত থেকে টি শার্ট আর ট্রাউজারটা নিয়ে নরম গলায় বললো,
—-” বাইরে যান।”
—” কেনো? আমি তো এখন তোমার হাসবেন্ড ই। আমার সামনে চেঞ্জ করতে লজ্জা কিসের? ট্রাস্ট মি! আমি কিন্তু একটুও লজ্জা পাবো না।” দুষ্টু হেসে চোখ মেরে বললো আমান।
উত্তরে ঈশিকা আগুন চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে নিলে আমান তড়িঘড়ি করে বললো,
—-” আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি…।” বলে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে এলো।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর