#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৫৬
“আমি বিয়ে করতে পারবো না৷
“বিয়ে করতে পারবো না মানে কি?
” মানে আমি আপনাকে বিয়ে করবো না৷ আপনার বাবা মা যদি আপনাকে আমার হাতে তুলে দেয় তবেই আমি আপনাকে নিজের করে নেবো নয়ত কোনদিন না৷ আপনার বাবা মা জন্মের পর থেকে আপনার জন্য যা, যা করেছে সেসবের বিনিময়ে তাদের অসম্মান আর লজ্জা উপহার দিবেন? বাসায় চলে যান৷
“নয়না বলল,ভাইয়া আপনি একদম সঠিক কথা বলেছেন৷ আগে ফুপ্পিকে রাজি করাতে হবে। তাদের মানিয়ে তবেই বিয়ে৷
” রেজা বলল তাহলে এখন কি করবো?
“কি করবো মানে কি? অনিকেত ভাইয়াকে নিয়ে আমরা সবাই ফুপ্পির বাসায় যাবো৷
” অনিকেত বলল,যদি মানা করে দেয়?
“মানা করলে একশবার যাবেন৷ একবার দুইবার, কতবার মানা করবে শুনি? কাউকে সারাজীবনের মত নিজের করতে চাইলে আঠার মত লেগে থাকতে হয়। যাতে ফিরিয়ে দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে বলে,দিয়ে দিলাম নিজেকে তোমায়।
” নাহিদ বলল,রেজা তুই জিতেছিস। ভাবির মত বৌ পেয়েছিস।আচ্ছা শোন তোরা যা আমাকে বাসায় যেতে হবে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। শোন আপডেট জানাবি কিন্তু ।
“রেজা বলল,শালা তোর ইম্পর্ট্যান্ট কাজ বলতে তো ভাবির ঝাড়ি খাওয়া যাহহহ৷
” ভালো বৌ পেয়েছিস তো তাই বুঝিস না৷ আমার মত বৌয়ের মত বৌ পেলে বুঝতি জীবনে প্যারা কাকে বলে৷
“প্যারা হলেও ভালোবাসা। যাহহ ভাবির কাছে যা৷
” আসি ভাবি। আর হ্যা এরপরের বার আমাদের বাসায় যাবেন কিন্তু।
“জ্বি ভাইয়া ইনশাআল্লাহ যাবো৷
” নাহিদের সাথে সবাই একসাথে বের হলো৷
নাহিদ নিজের গন্তব্যের উদ্দেশে বেরিয়ে পরলো৷
“জিয়ান বলল,তোমরা গাড়ি নিয়ে এসেছো?
” হুম।
জিয়ান চুপচাপ কিছু একটা ভেবে নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ,তুমি শিউর তুমি ফুপিকে রাজি করাতে পারবে?
“কেন আপনি শিউর না? আপনার ফুপু আপনি তো আমার চেয়ে ভালো চিনবেন৷
“তুমি আমাকে আপনি করে কেন বলো!আমি তোমার পার্সোনাল প্রপারটি সো সব সময় তুমি করে বলবে। আর একবার আপনি করে বললে খবর আছে।
” আহাগো এতো বড় এক দামড়া বেডারে আমি তুমি করে বলবো! এই শিক্ষা আমি পাইনি৷ আর কয়টার খবর মিস্টার প্লেন ড্রাইভার?
“আহাগো বাটার মাশরুম। তুমি হাঁটুর বয়সী এমনি এমনি বলি!তোমার কর্মকাণ্ড দেখলে যে কেউ বলবে। শুনো তুমি আমার তিন কবুল পরা বৌ অতএব আমি যা বলবো সব তোমার শুনতে হবে!না শুনলে কিন্তু থেরাপি চলবে চুমু থেরাপি৷
” আপনি তো আমার কবুল বলা ছাড়া হ্যাসবেন্ড আপনার কথা আমি কেনো শুনবো!
“আহারে ময়নার মা। তোমার বাবা নিজে তোমাকে আমার কাছে শপে দিয়েছে৷ এখনো কানে বাজে তোমার বাবার মুখের কথা, আমি মাহবুব তালুকদার আমার একমাত্র কন্যা সুনয়না তালুকদারকে নাজিম চৌধুরির বড়পুত্র জিয়ান রেজা চৌধুরীর সাথে দশ লাখ বায়ান্ন টাকা মোহর ধার্য করিয়া বিবাহ দিচ্ছি।
” তারপর কি হয়েছে?
“তারপর আর কি কাজি সাহেব বলল,বলো বাবা আলহামদুলিল্লাহ কবুল। আমিও বললাম আলহামদুলিল্লাহ কবুল। এইতো তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে গেলে সারাজীবনের জন্য। ওয়েট তুমিও তো পর্দার ওপাশ থেকে কবুল, কবুল বলেছিলে। সো আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে৷
” অনিকেত পাশ থেকে বলল,তোরা তোদের প্রেম বাড়িতে যেয়ে করিস। যেখানে সেখানে পিরিত করার বৈধতা নেই। লজ্জা রাখ শা’লা৷
“নয়না বলল,ভাইয়া জানেন কি হয়েছে?
” কি হয়েছে বনু?
“আমরা তো বাসায় সবাই টেনশন কি হবে নীলাঞ্জনা আপি পালিয়ে গেলো। হঠাৎ আমার বাপ আমার হাত ধরে বলে,তোমার বিয়ে হয়ে গেছে নয়না৷ কিছু নেয়ার থাকলে ব্যাগ গুছিয়ে নাও তোমাকে একটু পর যেতে হবে। আমি তো এইকথা শুনে সব শোক ভুলে হাসিতে ফেটে পরলাম৷ ওই মূহুর্তে এরচেয়ে বড়জোক্স আমার কাছে আর কিছু মনে হয়নি৷
“জোক্সও সত্যি হয়ে গেছে তাই না?
” এরচেয়ে বড় শকড কি ছিলো জানেন?
“কি?
” এই প্লেন ড্রাইভার সয়তান বেডা সবার মাঝখান থেকে আমাকে টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে এসে ফেলেছে৷ গাড়ির দরজা বন্ধ করতেই আমি অজ্ঞান।
“থাক বনু সে-সব আর মনে করতে হবে না। মনে করো ওই ঝড় এসেছিলো তোমাদের এক করতে। সেই ঝড় তোমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে এনেছিলো।
” নয়না আর কোন উত্তর দিলো না৷ গাড়ির গ্লাসের বাহিরে দৃষ্টি স্থীর করলো।
🌿সায়নাদের বাসায় এসে সবাই নাস্তা করলো৷
“জিয়ান বলল,ফুপ্পি ও আমার ফ্রেন্ড অনিকেত মাহমুদ। আমরা ওরজন্য সায়নাকে পছন্দ করেছি৷ তোমার আপত্তি না থাকলে এগোতো পারি৷
” তা বাবা করো কি তুমি?
“ডাক্তার। বিএসএমএমইউ মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালে কর্মরত। আর অবসরে দুটো চেম্বারে রোগি দেখি।
” কিসের ডাক্তার তুমি?
“কার্ডিওলজিস্ট।
“বাবা, মা, ভাই, বোন মানে ফ্যামিলি ব্যাকরাউন্ড কি?
” অনিকেত থমকালো সে এই প্রশ্নটাকেই ভয় পায়৷
“নয়না বলল ভাইয়ার পুরো নাম অনিকেত তালুকদার। আমার বড় ভাই।
” সায়নার মা খুশি হয়ে বলেন তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই এই বিয়েতে৷
“অনিকেত শান্ত স্বরে বলল,আমার বাবা, মা, ভাই,বোন কেউ নেই আমি একা।জানিনা ওনারা পৃথিবীতে আছেন কি না! আমি এতিমখানায় বড় হয়েছি৷ বাকিটা আপনার উপর ডিপেন্ড করছে৷
” সায়নার মা চুপ করে থাকলো কিছু সময় এরপর নিরবতা ভেঙে বলল,তোমরা যাও আমি পরে ভেবে চিন্তে জানাবো।
“অনিকেত বলল,আপনার উত্তর না হলেও আমরার বিন্দুমাত্র মন খারাপ হবে না। আমার সব আছে কিন্তু পিতৃ পরিচয় নেই৷ এই সমাজে আমারা মূল্যহীন। আজ আসি আন্টি কষ্ট দেয়ার জন্য দুঃখিত। অনিকেত উঠে বের হয়ে গেলো৷
” জিয়ান নয়নাও পেছনে পেছনে বের হলো৷
“অনিকেত বলল,রেজা তোর কাজ হয়ে গেছে তুই বের হ৷ আর আমাকে স্বান্তনা দিতে হবে না৷ বাস্তবতা মেনে নেয়ার মত ম্যাচিউরিটি আমার আছে৷ নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল,কিউট বনু তুমি কিন্তু লাকি গার্ল। রেজা ছেলে হিসেবে তো ভালোই তবে হ্যাসবেন্ড হিসেবে বেস্ট। সব সময় একে অপরের ছায়া হয়ে থেকো৷ সম্পর্ক মজবুত রাখে বিশ্বাস, ভরসা। কখনো এই দু’টো হারাতে দিও না।অনিকেত চলে যেতেই জিয়ান নয়নাকে বলে,তাড়াতাড়ি চলো তো।
” আরেহহহ আমরা যাচ্ছি কোথায়?
“হানিমুনে যাচ্ছি।
” আহাগো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আপনি হয়ত ভুলে যাচ্ছেন আপনার প্লেন আপনাকে ড্রাইভিং করতে ডাকছে। সো তার কাছে ছুটে যেতে হবে সে খেয়াল আছে।
“দরকার পরলে তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো৷ হানিমুন হবে বিমানের ককপিটে৷
“আহাগো শখ তো কম না।
” শখ কম হবে কেন শখ তো বহুত।
“চলুন বাসায় যাবো।
” উঁহু বাসায় না। তোমার সাথে নিরিবিলি প্রাকৃতিতে কিছু হৃদয়স্পর্শী কথোপকথন আছে৷ যেখানে শুধু তুমি আমি আর আমাদের হৃদয়ের কথা হবে।
“আপনার বাসার রুফটফ কি কম নিরিবিলি!তাছাড়া সাউন্ডপ্রুফ রুম, রুমের মধ্যে দরজা বন্ধ করে বুঝি হৃদয়ের কথা বলা যায় না!
“উঁহু রোমান্টিক কথা বলার জন্য রোমান্টিক প্লেস লাগে বেব। হাঁটুর বয়সী তো তাই তুমি এসব বুঝবে না৷
“আমাকে হাঁটুর বয়সী না বলে,নিজেকে কাকুর বয়সী বললেই তো পারেন।
” কি বললে আমি কাকুর বয়সী! আঠাশ বছরের যুবক দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম ক্যাপ্টেন জিয়ান রেজা চৌধুরী।
“সতেরো বছরের জলন্ত রূপবতী কিশোরী সুনয়না চৌধুরী।
” উফফ আমিও তোমার রুপে জ্বলতে চাই।
“নয়না কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,ছুঁয়ে দিলেই জ্বলে যাবেন৷আমি আগুন কন্যা।
” জিয়ান নয়নার কাছ ঘেঁষে বলে,দুষ্ট বৌ তুমি ছুঁয়ে দিলে আমি জ্বলন্ত অগ্নিগিরি। আমার উত্তাপে তুমি ভস্ম হয়ে যাবে৷ ছুয়ে দাও বেব।
#চলবে