Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"মিঠা রোদমিঠা রোদ পর্ব-৫১+৫২+৫৩

মিঠা রোদ পর্ব-৫১+৫২+৫৩

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

তোশামণি কবীর শাহ সিনড্রোমে ভুগছে।তামাটে পুরুষটির সব ভালো লাগে তার।এইযে অসুস্থতায় মলিনতা ভরা চেহারায় যে গাম্ভীর্য ভাবখানা ফুঁটে উঠেছে এটাও তোশার কাছে ভালোবাসাময় লাগছে।এই অপ্রতিরোধ্য সিনড্রোমের কথা কবীরকে জানালে সে সবথেকে মিষ্টি সুরে হেসে বলল,

“তাহলে তুমি অবসেসড আমার প্রতি?”

“হ্যাঁ।সব ভালো লাগে আপনার।”

“তোমারও সব ভালো লাগে আমার।লাল শাড়ীতে সুন্দর পুতুল লাগছে।তুমি বিয়ের পর রোজ শাড়ী পরবে।”

তোশা লাজুক হাসে।কোমড়ে শাড়ীর আঁচল গুঁজে পুরো রুম ঘুরে।গুণগুণ করে গানে ভেসে যায় বাতাবরণ।কবীরের সুবিন্যস্ত রুমটাকে অহেতুক এলেমেলো করলো সে।আবার নিজেই গুছাতে লাগলো।কবীর মায়া ভরে মেয়েটিকে দেখছে।সব ঠিক থাকলে আজকে কী সে তোশাকে কাছে রাখতে পারতো না?বুকের ভেতর মিশিয়ে দিতো একদম।কবীর পুরুষ মানুষ।যা তার কঠোর ব্যক্তিত্ব অস্বীকার করলেও ভেতরে নরম ভঙ্গুর মনটা স্বীকার করতে বাধ্য।সে নিজের ভেতর চলতে থাকা উত্তাল ঢেউকে দমিয়ে রেখেছে বহু বছর ধরে।এই প্রায় একুশ বছরের তরুণ ফুলকে সে মলিনতা নিয়ে কখনো স্পর্শ করেনি।

“বাসায় তো আহনাফ ও কাজের খালা বাদে কেউ নেই।তুমি ঢুকলে কীভাবে?”

“আহনাফ ঢুকিয়েছে।”

“বেশ।তাহলে বাবাকে প্রেমে সাহায্য করছেন তিনি।”

“হু।”

“তোমাকে কী বলে ডাকে?মা?”

তোশা চকিতে কবীরের দিকে তাঁকালো।ভাবনায় বিমূঢ় হয়ে বলল,

“এখনও বলেনি।ইনফ্যাক্ট আমাদের সম্পর্কটাকে কীভাবে নেয় সেটা বুঝতে একটু সময় লাগছে আমার।আপনার রুমে ওটা কীসের দরজা?”

“আমার ছোটখাটো নিজস্ব একটি জিম আছে।একদিন ঘুরিয়ে দেখাবো।”

তোশা আরো কতোক্ষণ বিচ্ছিন্ন ঘুরে কবীরের পাশটায় বসলো।হসপিটাল থেকে লোকটা ফিরেছে গতকাল।আজ তোশা দেখা করতে আসতে পেরেছে।পরন্ত বিকেলের সময়।কুসুম রঙা হলদেটে আলোয় উদ্ভাসিত পুরো কক্ষ।

“কবীর শাহ।”

তোশা লোকটার বৃহৎ হাতটি নিজের করপুটতলে নিয়ে নেয়।চোখে একরাশ মায়া ফুটিয়ে বলল,

“আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি।যাই হোক শুধু সেটা মনে রাখবেন।”

“আজ এতো সিরিয়াস?কারণ কী ছোট পাখি?”

কবীর বহুদিন পর তোশাকে নতুন নামে ডাকলো।মানুষটা ভিন্ন নামে ভিন্ন অনুরাগ দেখায়।

“কারণ কিছু নেই।জানেন উল্লাসের বিশেষ একটি নাটক আজ রাতে প্রচার হবে।গত দুদিন ধরে খুব প্রমোশন চলছে।আপনি দেখবেন না?”

“দেখবো।ও কল করেছিলো সকালে।পরিবার সহ দেখতে বলেছে।এখন জিজ্ঞেস করলাম রোমান্টিক বা ইরোটিক কিছু কীনা?উত্তর দিলো না।অদ্ভূত কিছু হলে মা,বাবার সামনে লজ্জা পাবো।”

“আমি জানি কী সেটা।”

“কী?”

“আপনি ঠিক বলেছেন।অদ্ভূত কিছু।তবে দেখার আগে বলে দিলে কী মজা?”

তোশার কথায় প্রহেলিকা জুড়ে আছে।কবীর এতোক্ষণ পর নিজের প্রেমিকাকে ভালো করে অবলোকন করলো।পরিপাটি সাজ ও পুতুল চেহারার পিছনে খুব সন্তপর্ণভাবে ক্লান্তিকর,ভীত এক দুঃখী চেহারা লুকানোর চেষ্টা করেছে সে।

“কী হয়েছে তোশা?কেউ কিছু বলেছে?তোমাকে ভীষণ মিস্টিরিয়াস লাগছে এখন।”

“নাহ তো।আপনার অসুস্থতা আমাকে দূর্বল করে দিয়েছে।”

“এদিকে এসো।”

তোশা বাধ্য মেয়ের মতোন কবীরের সাথে মিলেমিশে বসে।পুরুষটির শরীর থেকে আসা সুগন্ধ তার মস্তিস্কের নিউরন গুলো সজাগ করে দেয়।ঠিক প্রথম দিনের মতোন মনে কম্পন তৈরী করে।মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে কবীর বলল,

“তুমি অনেক বোকা সেটা জানো লিটল চেরী?”

“এমনটা মনে হলো কেন?”

“হলো।এমনকি একটুও ম্যাচুরিটি নেই।তা নয় আমাকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে না?”

“বলছেন ম্যাচিওর কোনো মেয়ে আপনার প্রেমে পড়তো না?”

“তোমার বয়সী।”

“কী করবো বলেন আপনি তো ভীষণ সুন্দর তাই এই হার্টে ব্যাথা হয়।সেটা কমানোর জন্য ভালোবাসি।”

তোশা বুকের ডান পাশে হাত রেখে হার্টের ব্যাথাকে নির্দেশিত করলো।কবীর আস্তে করে মেয়েটির হাতটি তুলে বলল,

“হার্ট বামপাশে থাকে।”

“উহু,বামপাশে যেটা থাকে তা হলো রক্ত সঞ্চালনকারী একটা যন্ত্র।ডানপাশে যেটা আছে তা হলো ভালোবাসার জন্য সুন্দর মন।ডক্টররা সেটা খুঁজে পায়না।অদৃশ্য অঙ্গ।”

কবীর উচ্চ শব্দে হেসে ফেললো।মেয়েটির এহেন বহু বোকা বোকা কথা প্রায় শুনতো আগে।কিন্তু মাঝে এতোটা কী নিয়ে চিন্তিত ছিল কে জানে?

“তোশা তুমি মাঝেমধ্যে খুব বাচ্চার মতোন কথা বলো। অবাক হয়ে যাই আমি।তোমার সাথে প্রেম করছি।”

থমথমে মুখে তোশা শুধালো,

“আমি কী কুষ্ঠো রোগী?আমার সাথে প্রেম না করলে কী এমন হতো আপনার?”

“বিয়ে।এতোদিনে হয়তো দুটো বাচ্চা হয়ে যেতো।”

“সত্যি বলছেন?”

“অবশ্যই।কেন মনে নেই তোমার আন্টির সাথে বিয়ের কথা হয়েছিল।যদি না মন তোমার কাছে থাকতো তাহলে হয়তোবা..।”

কবীর যা বলছে হয়তোবা সত্যি।কিন্তু তোশার মেনে নিতে বড় কষ্ট হচ্ছে।স্মরণ হলো সেই দিনের কথা।যেদিন কবীর তার আন্টিকে দেখতে গিয়েছিল। বিয়েটাও ঠিক হয়েছিল।তখনকার অনুভূতির কথা মনে হতে তোশার মনটা কেঁদে উঠলো।সে অভিমানে উঠে দাঁড়ালো।

“চলে যাচ্ছি আমি।”

“হঠাৎ কী হলো?”

“জানিনা।”

তোশার বড় খারাপ লাগছে।কতোটা ভালোবাসা নিয়ে সে এসেছিল তা কী পা’ষা’ণ পুরুষটি জানে?তোশা দরজায় কাছে চলে যাচ্ছে দেখে অকস্মাৎ বিছানা থেকে উঠে প্রায় কয়েক লাফে মেয়েটিকে ধরে ফেললো কবীর।হাতটা ব্যাথায় কেমন করে উঠলো।তোশাকে দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের ব্যাথাকে সহ্য করে নিলো।জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।উষ্ণ শ্বাসে শিহরণ জাগে তোশার।একটু ধাতস্থ হয়ে তোশার চোয়াল চে’পে ধরলো কবীর।

“তোমার মনে হয়না তোশা একটু বেশী রাগ করো?আমি এখন যা বলেছি তাতে ভুল নেই।তুমি যখন স্কুলে ছিলে দিশা কোন জিনিসটা বলে বেশী য’ন্ত্র’ণা দিয়েছে তোমাকে?আমার আগ্রাসী ভালোবাসার কথাগুলো তুলে।তাইতো?সেই পুরুষ যখন একাকিত্বে ছিল তখন একটা টিনেজ মেয়েকে পছন্দ করে তার কষ্ট হবে দেখে কোনো পার্টনার গ্রহণ করেনি।তুমি কী ভেবেছো তোমাকে ম্যানিপুলেট করা কঠিন?বরং অনেক সহজ।যদি আমি না নিজেকে সামলে নিতাম তবে এতোদিনে..।”

কবীরের ভারী অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে।এতোগুলো গভীর কথা সে বলছে অথচ তোশা নির্বিকার।কবীর নিজে সাধারণ মানুষ।সহজাত বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে তার সবদিক থেকে সঙ্গী পাওয়ার কথা ছিল।অথচ সেই সময়টা সে ত্যাগ করেছে বিশ বছরের প্রেমিকার জন্য।হঠাৎ তোশার উপর ভীষণ রাগ হলো তার।একটু মাথা ঝুঁ’কে ফর্সা চিতল মাছের পেটের মতোন গলায় কা’ম”ড় দিলো।তোশা চোখ বন্ধ করে অনুভূতি হজম করে নিলো।ক্ষণবাদে কবীর ছাড়লো।মেয়েটির ঘাড়ে নাক ঠেকিয়ে সুবাসে মাতোয়ারা হলো।জড়ানো তবে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলল,

“আই লাভ ইউ তোশা।আই লাভ ইউ।নেভার লিভ মি।আই উইল গিভ ইউ অল দ্য হ্যাপিনেজ অব লাইফ।মাই লাভ,নেভার লিভ মি।”

কবীরের ভেতর জ্ব’ল’ন্ত উন্মাদনা প্রথমবারের মতোন উপলব্ধি করতে পারলো তোশা।কতো ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছিল মানুষটা নিজের মধ্যে।যেখানে কামুকতা নেই।আছে শুধু স্বার্থহীন এক চাওয়া।

(***)

রাত আটটায় উল্লাসের বহুল আলোচিত নাটকটি শুরু হবে।সাধারণত উল্লাস নাটক করেনা।তবুও হঠাৎ এতো গোপনে কী স্ক্রিপ্টে নাটক করলো তা সকলের মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে।বাড়ীর সবাইকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে কবীর।বৃষ্টি ও তার মা ভারী উত্তেজিত।পক্ষান্তরে আহনাফ চুপচাপ বসে ড্রয়িং করছে।ওদিকে কবীর বিকালে কাঁটানো মুহুর্ত গুলো থেকে নিজেকে বের করতে পারছেনা।তোশা কী রাগ করেছে তার উপর? যাওয়ার আগে এতোটা নিশ্চুপ কেন ছিল?বৃষ্টির উত্তেজনা বশত চিৎকারে ভাবনা থেকে ফিরে এলো কবীর।শুরু হচ্ছে নাটকটি।একই সাথে ইউটিউবেও সম্প্রচার হবে।

নাটকের শুরুতে খুব সুন্দর করে লেখা বাস্তব ঘটনার উপর নির্মিত।

শুরুর পাঁচ মিনিটে একজন কিশোরীকে দেখা যাচ্ছে যে বিয়ে বাড়ী থেকে হুট করে উধাও হয়ে গিয়েছে।মেয়েটির মা বেশ চিন্তিত হয়ে কাওকে কল করছে।কবীরের মনে হলো খুব কাছ থেকে ঘটনাটি দেখেছে সে।তার মনে একটা অদ্ভূত ভাবনা তৈরী হলো।সেটা বাস্তব রুপ নিলো যখন স্ক্রিনে উল্লাস ত্বকের রঙ তামাটে ও পোশাকের ভাবভঙি অবিকল কবীরের মতোন করে সামনে এলো। কবীরের মা তো বলেই ফেললো নায়কটাকে তার ছেলের মতোন দেখাচ্ছে।এখন কবীর কীভাবে বলবে তার হবু বউ যে কীনা দস্যুদের জাহাজের কান্ডারী সে তার আর নিজের প্রেমিকের প্রেমকথা সকলের সামনে নাটকের সামনে উপস্থাপন করছে হয়তো।এই কারণে সে চায়নি উল্লাসের সাথে পরিচয় হোক মেয়েটির।কারণ দুটো মানুষই পাগল।উদ্ভট কান্ড করে।এখন সকলে জেনে যাবে বিষয়টি।তাতে কবীরের ভয় নেই।কিন্তু জানার ধরণটা ঠিক নয় এটা যা তাকে ভাবাচ্ছে।

হুট করে কবীরের বুকটা ভীষণ ব্যাথা করছে।মনে মনে সংকল্প নিলো,”বিয়ের পর এই মেয়েকে ছয় মাস বাবার বাড়ীতে রাখবে সে।থাকবে মায়ের দু’ষ্ট মেয়ে মায়ের কাছে।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমি তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।এইযে মাঝেমধ্যে বলে না পশ ফ্যামিলির সন্তান।রিচ কিড।আমি সেরকম একজন মানুষ।অনেকটা বনেদি পরিবারে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম।মজার ব্যাপার হলো আমার মায়ের বয়সের অর্ধেক আমি।অতি সুন্দর ভাবে যেদিন আম্মুর বিশ বছরের জন্মদিন ছিল সেদিন আমার জন্ম।আরে তখন আব্বুর বয়সও তো বিশ বছর ছিল।”

কথাটি বলার সঙ্গে অদ্ভূতভাবে হাসলো তোশা।দীর্ঘ পয়তাল্লিশ মিনিটের নাটকের পর তাকে এখন স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে।পরনে বিকেলের সেই হাসিটা।কবীর এতোক্ষণে মেয়েটির এতোটা ক্লান্ত থাকার কারণ খুঁজে পেলো।

“আমার মা-বাবা ভালোবেসে খুব অল্প বয়সে বিয়ে করেছিল।এটাও নিয়েও তো এক সময় কথা উঠেছিল।তবে আমার মায়ের যোগ্য ও পিওর সন্তান আমি।কারো কথায় কী আসে যায়?দুটো মানুষ খুব অল্প বয়সে বিয়ে করেছিল।কতোটা ভালোবাসা ছিল তাদের মধ্যে।আমি সবার আদরের তোশামণি।ছোটবেলার নিজের ছবি দেখে পুতুলের মতো লাগে।তাহলে এমন কোনো পা’ষা’ণ ব্যক্তি হয়তো ছিলনা যে আমাকে পছন্দ করেনি।সুখী একজন মেয়ে তোশা।কিন্তু সব সুখে গ্রহণ লাগা যেন আবশ্যক।বয়সের একটা সময়ে আম্মু-আব্বুর ডিভোর্স হয়ে গেলো।আব্বু চলে গেলেন কানাডা।আমার ছোট্ট আম্মু আমাকে আঁকড়ে থেকে গেলেন এখানে।তোশামণির দুনিয়া ছিল রঙিন।রোজ সকালে মা চুমু খেয়ে ঘুম থেকে ওঠায়,নানা আদর করেন।নানী বসে গল্প শোনান।খালামণি বাহিরে ঘুরাতে নিয়ে যান।মেকআপ শেখান।মামা দেশের সব প্রান্ত থেকে গিফট এনে দেয়।বছরের এক সময় কানাডায় থাকা বাবার থেকে ভারী রকমের গিফট বক্স আসে।যেখানে থাকে দামী ব্রান্ডের কাপড়,বারবি,খেলনা কতোকিছু।

পড়াশোনাতেও প্রথম তোশামণি।সকলের প্রিয়।স্বপ্নে মোহিত একজন মেয়ে।এতো কিছু পাওয়া মেয়ের জীবনে হুট করে একজন পা’ষা’ণ পুরুষের আগমণ ঘটে।আমার মায়ের বন্ধু,বাবার বন্ধু কবীর শাহ।বাজপাখির মতোন মানুষটাকে প্রথম দেখায় নিজের স্বপ্নের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললাম।ওইযে স্বপ্ন দেখতে ভালোবেসেছি।কবীর শাহ কে দেখলে আমার বুকের ভেতর অদ্ভূত অনুরাগ তৈরী হতো।পনের বছরের তোশামণি যার কারণ খু্ঁজে পায়না।এক পা দুই পা করে সময় যায়।বুঝে গেলাম বাজপাখি নরম মনের ছোট্ট তোশাকে বহু পূর্বে নিজের করে নিয়েছে।মানুষটা অবশ্য তা মানতে নারাজ।

বাকী কাহিনী আপনারা দেখলেন।জেনেছেন।আমি জানি কিছু মানুষ তেঁতো মনোভাবে লম্বায় এই পাঁচ ফুট পাঁচ রোগা শরীরটিকে দেখছেন।মনে হচ্ছে কী মেয়ে নিজের বাবার বয়সী লোকের সাথে প্রেম করে?হ্যাঁ করেছি।তাকে ভালোবাসি।তিনিও আমাকে ভালোবাসেন।একটি সুন্দর সম্পর্ক আছে আমাদের।এই বলে আমি তার সুগার গার্ল নই।কবীর শাহ এর খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে আমি এমন মন্তব্য বহুবার পেয়েছি।দুঃখিত হয়েছিল মন।কিন্তু আমি ওমন মেয়ে নই।এই কথাটা চাইনা কেউ বলুক। আমার মা কষ্ট পাবে।এখন বলতে পারেন কাজটা এমন করলে কেন যাতে মা কষ্ট পাবে?তাদের কাছে একটি প্রশ্ন নির্জন অন্ধকারে দ্বীপে আলোর দেখা পেলে আপনি কী করবেন?উল্টো পথে দৌড়ে পালাবেন নাকী আলোতে উদ্ভাসিত করবেন জীবন?আমি আলো পেয়েছি সেই বাজপাখির মধ্যে।

কাওকে ভালোবাসা দোষের না যতোক্ষণ না সেটা অন্যায় করে পাওয়া হয়।কবীর শাহ চমৎকার একজন মানুষ।সেই চমৎকার মানুষটিকে আমি তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা ভালোবাসি।এতে কারো ক্ষ’তি হয়নি।অন্যায় হয়নি।কিংবা দেশের ইকোনমি সিস্টেমও ধ্বসে পড়েনি।তবে সেখানে দুটো মানুষকে কেন এভাবে জাজ করবেন?নিজের এই ঘটনাটি দেখানোর উদ্দেশ্য হলো সবাইকে জানিয়ে দিলাম আমি তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা এমন একজনকে নিজের করে চাই যাকে চাওয়ার বৈধতা সমাজ দেয়নি।তবুও আমি তাকে চাই।এবং সে আমাকে চায়।

কথাগুলো ব্যক্ত করতে গিয়ে তোশার নিশ্বাস উঠে গিয়েছে।খুব করে হয়তো কান্না আঁটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।নিজের অধর দং’শন করে পুনরায় বলল,

“আমি যদি কারো কাছে দো’ষী হয়ে থাকি তা আমার মায়ের কাছে।আম্মু সরি।আব্বু সরি।কিন্তু আমি..।”

তোশা থেমে পুনরায় বলল,

“আমি কবীর শাহ কে ভালোবাসি। এবং কবীর শাহ যিনি আমার থেকে বয়সে দ্বিগুণ সে ও আমাকে ভালোবাসেন।”

করুণ সুরের মাধ্যমে তোশার কথাগুলো শেষ হয়ে গেলো।কবীর খেয়াল করেছে মেয়েটি বহু প্রাণপণে নিজের কান্না থামানোর চেষ্টা করেছিলো।হুট করে বাড়ির পরিবেশ কেমন থমথমে হয়ে গেলো।কবীরের মনে হলো প্রত্যেকে যারা এই নাটকটি দেখছিলো নিজেদের ঘরে বসে তাদের সবার মুখ থমথমে।কবীরের বাবা পরিবেশটি হালকা করতে বলল,

“তোশাকে অনেক সুন্দর লাগছিলো তাইনা?”

সেলিমের প্রাণপ্রিয় স্ত্রী যে কখনো তার উপর চড়াও হয়ে কথা বলেনি সে অদ্ভূত চিৎকারে শুধালো,

“আপনি কীভাবে ওকে সুন্দর বলতে পারেন?”

“সুন্দরকে সুন্দর বলবো না?”

“সব জানতেন তাইনা?কবীর কীভাবে নিজের বন্ধুর মেয়ের সাথে?”

মায়ের কণ্ঠের অবজ্ঞা কবীরকে নাড়াতে পারলো না।ওদিকে ফোনে অনবরত ভাইব্রেটে কারো কলের জানান দিচ্ছে।গম্ভীর শ্বাস নিয়ে স্ক্রিনে দেখতে পেলো তাহিয়ার নামটা।কবীরের অন্ত:করণে তীব্র বে’দ’না ফুঁটে উঠলো।এই কলটাকে সে ভয় পাচ্ছে।আশ্চর্য কিন্তু এমন কিছুর মুখোমুখি তো হওয়ার ছিল একদিন।অদ্ভূত উপায়ে যদিও বা তাদের বিষয়টা সকলে জানলো।সেতু আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো।কবীর হাত বাড়িয়ে থামতে বলল।

“তাহিয়া।”

“কবীর আমার মেয়ে কোথায়?”

তাহিয়ার কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে দীর্ঘ সময়ের মুসাফির সে।অনেক দূর থেকে কথা বলছে।যার শব্দে প্রাণ নেই।কবীর ঘড়িতে দেখলো।রাত্রি প্রায় অনেকটা বাজে।

“বিকেলে এসেছিল আমার কাছে।মায়ানের বাসায় হয়তোবা।আমি ফোন করছি তাহিয়া।”

“ও কোথাও নেই কবীর।দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট ধরে খুঁজে চলেছি।কোথাও নেই।ওর বাবা,বান্ধুবী কারো কাছে নেই।আমার মেয়ে কোথায় কবীর?তোশা কোথায়?ও খুব ছোট একটা বাচ্চা।কখনো এভাবে বাহিরে থাকেনি।কোথায় আমার মেয়ে।”

“তাহিয়া শান্ত হও।ফোন করছি ওকে আমি।”

“ওর ফোন বন্ধ।কবীর তুমি কীভাবে পারলে আমার ছোট্ট মেয়ের সাথে।কীভাবে?আমাকে মেয়েকে এনে দাও।”

“শান্ত হও তাহিয়া।”

তাহিয়া ফোনটা রেখে দিলো।কবীর তৎক্ষনাৎ তোশার নাম্বারে ফোন করলো।আশ্চর্যভাবে মেয়েটা উবে গেলো নাকী?

(***)

কবীরের প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে।কিন্তু কোনোমতন অসুস্থতার দোহায় দিয়ে নিজের রুমে এসেছে সে।সেতু আবার ছেলে বলতে পাগল।তাইতো বেশী রাগারাগি করেনি।কবীর উল্লাসের নাম্বারে ডায়াল করলো।কারণ সেই একমাত্র ব্যক্তি যে জানে তোশা কোথায়।দীর্ঘক্ষণ রিং হওয়ার পর ফোনটা ধরলো উল্লাস।

“বিয়েটা তবে কোথায় করবেন কবীর শাহ?সিলেটে আমার সুন্দর একটা বাড়ী আছে।”

“এমনটা কেন করলে?”

কিছুক্ষণ নিরব থেকে উল্লাস বলতে শুরু করলো।ধীর, স্থির রহস্যময় কণ্ঠ তার।

“মায়ান চৌধুরী দীর্ঘ অনেক বছর পর দেশে আসার উপলক্ষে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।সেখানে তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু কবীর শাহ হুট করে তার মেয়েকে বিয়ে করে নিজেদের ভালোবাসার কথা জানাবেন।স্বাভাবিক কেউ পছন্দ করবেনা এবং সেদিন রাতে ইংল্যান্ডে উড়িয়ে নিয়ে যাবেন নববধূকে।সেখানে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ীর পরিচর্যা বেশ কয়েক মাস ধরেই করছেন।দিন যাবে একদিন তোশার বাবা-মা মেয়ের জন্য সব মেনে নিবে।কিন্তু আপনি এটা কখনো ভাবলেন না যে ঝামেলা করার আগে বিয়েটা করলে তোশাকে কোন লেভেলে নামিয়ে আনবে সমাজ?ও মিডিয়া জগতের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছে।তাছাড়া ওর মাকে মানুষ কী বলবে?মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে।”

“দেখো আমি যেভাবে ভেবে রেখেছিলাম সেটা হয়তোবা..।”

“কবীর শাহ এদেশে কখনো আপনাদের ভালোবাসার মূল্যায়ণ হবেনা।তাছাড়া আপনার উপর প্রশ্নও উঠতো না।সব দোষ আমার সখীর হতো।”

“উল্লাস,তোশা কোথায়?”

“সুস্থ আছে।বাট ভয় পেয়েছে।একটু দূরে থাকুক সকলের।এবং ভয় পাবেন না।মিডিয়াকে আমি ঘুরিয়ে দিবো।আপনাদের ক্ষ’তি আমি চাইনা।আর এটাও জানি নিজের বেলাডোনাকে বাজপাখি ভালোবাসে।তবে ওই পদ্ধতিটা খুব খা’রাপ ছিল।”

“তোশাকে বলো ওর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।কিংবা আমার সাথে।”

“আপনি কথা বলবেন?”

“হ্যাঁ।”

কবীরের কণ্ঠে আকুলতা।সময় যাচ্ছে মেয়েটির কণ্ঠ শোনার ইচ্ছা বাড়ছে।অথচ বিকেলেও তো তারা একসাথে ছিল।নিজের তামাটে ত্বকে তোশার উষ্ণতা এখনও আছে।অবশেষে দীর্ঘ এক মিনিট পর ওপাশ থেকে মিহি কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো,

“কবীর শাহ।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“কেমন মেয়েকে ভালোবাসো তুমি যে সবার সামনে এতো দিনে গড়া সম্মান মিশিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে?কবীর তুমি রাজা।এভাবে নিজের সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিও না।”

দিশার কথাকে বালুকণা পরিমাণ পাত্তা না দিয়ে কবীর মিষ্টি করে হাসলো।দুটো রুট বিয়ারের ক্যান খুলে টেবিলের উপর রাখলো।মানুষটা যেন দৃঢ় ইস্পাত।লম্বা চওড়া দেহ দেখে বয়সের অনুমান করা কঠিন।হাতে আ’ঘা’তও যাকে টলাতে পারেনি।

“তোশা যেখানে আছে সুস্থ আছে।মেয়েটা ছোট যা কিছু হচ্ছে সেসব গ্রহণ করতে পারবেনা।”

“মনে তো হয়না ছোট।বাবার বন্ধুর সাথে।”

“দিশা,আমার পরিচয় কী শুধু মায়ানের বন্ধুর?তোশা আমাকে পুরুষ হিসেবে দেখেছে।”

“আমাদের ছেলের উপর কী যাচ্ছে সেটা খেয়াল করেছো একবার?মা হিসেবে আমাকে বাধ্য করবেনা আবার আইনের আশ্রয় নিতে।তোমার উচিত তোশার সঙ্গে সব বন্ধ করে মিডিয়া থেকে অতি দ্রুত ড্রামাটা সরানোর।”

কবীর হালকা তরল গলা:ধকরণ করে জবাব দিলো,

“উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।কিন্তু মেয়েটাকে আমি ছাড়ছিনা।দেখো তো কতো কঠিন প্রেমিকা ও।”

“তুমি ম্যানিয়াকের মতোন আচরণ করছো।বুঝেছো নিশ্চয় কীসের কথা বলছি?শরীর সব নয় কথাটা বুঝো মি.শাহ।”

“টগর,তোমার উচিত আমার জীবনে এতো দখলদারি না করার।বিয়ে করছো না কেন?সামনে কিন্তু আমি বিয়ে করবো।”

কবীরকে এহেন সোজাসাপ্টা কথা বলতে অনেকদিন শুনেনি দিশা।টগর নামটাও অনেকটা সময় পর ডাকলো।কবীরের মুখমণ্ডল ঈষৎ উজ্জ্বল হয়ে আছে।অসুস্থতা,টেনশন কিছুই তো মুখের রঙটাকে মলিন করতে পারেনি।

“তুমি সিরিয়াস তোশাকে বিয়ে করা নিয়ে?মায়ান -তাহিয়ার কথা একবারও ভাবছো না?”

“আমার ওদের সাথে এখনও কথা হয়নি তোশাকে নিয়ে। যদিও টেনশন করছে দুজনে।তবে দুজন মানুষ আমাকে এখনও ভরসা করে।তাইতো মেয়ের খোঁজ না জানলেও ভয়ে নেই।”

দিশার মুখবিবরে আক্রোশের ছায়া ফু্টে উঠলো।পা দিয়ে মেঝেতে শব্দ করে বলল,

“সেই তাহিয়ার বিশ্বাস ভাঙলে।এটা নিয়ে হালকা অনুতাপ যদি করতে।”

কবীর সেই প্রসঙ্গে গেলো না।ল্যাপটপ থেকে কিছু একটা বের করে দিশার সামনে তুলে ধরলো,

“দেখো তো।ছেলেটিকে পছন্দ কীনা?লন্ডনে আছে।আমাদের থেকে এক কী দুই বছরের বড় হবে।”

“তাতে আমার কী?”

“তোমার জন্য পাত্র দেখছি।এবার বিয়ে দিয়ে ছাড়বো।”

“মাথা খারাপ কবীর?”

“আমি কনসার্ন করে পাত্র খুঁজে চলেছি।আর তুমি মাথা খারাপ বললে?”

“আমার পার্সোনাল লাইফে তোমাকে এতো কনসার্ন করতে কে বলেছে?ভুলে যেওনা তুমি প্রাক্তন।”

হুট করে বাতাসে মুক্তো ছোঁয়ার মতোন করে কবীর বলল,

“তাহলে তুমি কেন ভুলে গিয়েছো যে আমরা প্রাক্তন?”

দিশা সহসা শব্দ খুঁজে পেলো না কিছু বলার জন্য।কিন্তু কথায় পুরোনো আমলের দড়িটা ফের টান দিলো যেন।

“তোশা তোমার বন্ধুর মেয়ে।মায়ানকে কতোবার তুমি ভাই বলে ডেকোছো।”

“ওর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক না।তোশার সাথেও না। আমি মেয়েটাকে ওয়াদা দিয়েছি বিয়ের।তোমার মনে হয় কবীর শাহ সেরকম মেরুদণ্ডহীন পুরুষ যে একটি মেয়েকে এমনি বিয়ের কথা বলবে?”

“তুমি নও।কিন্তু বিষয়টা কেউ মেনে নিবে না।”

“আমাদের পরিবার নিলে হবে।”

হাতের তালু ঘেমে যাচ্ছে দিশার।শক্ত কাঁচে উপর হাতটা ঘসে শুধালো,

“আমি তোমার পরিবার নই?”

“নাহ।সেই সম্পর্ক বহুকাল পূর্বে দুজনে নিজ হাতে শেষ করেছি।তুমি এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন।আমিও।বারবার সেখানে কথা তুলে বিব্রত করো না।তাছাড়া যে ব্যাপারটা চলছে আমি মিটিয়ে নিবো।”

“বেশ।একটা কথা বলার ছিল।”

“বলো।”

“মার্চে আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।হয়তো চিরতরে ডেনমার্কে।আহনাফকে কখনো আমার কাছে যাওয়ার অনুমতি দিবে?”

“আমার ছেলে যথেষ্ট সেন্সিবল ও বুদ্ধিমান।সে যদি নিজ মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় তবে অবশ্যই দিবো।”

“আচ্ছা।”

দিশা পাশের চেয়ার থেকে ব্যাগটা উঠিয়ে কাঁধে তুলে নিলো।হঠাৎ বুকে ভীষণ ভারী অনুভব হচ্ছে।কবীরের সঙ্গে এটা তার শেষ দেখা।সে কখনো আর তোশার ব্যাপার হয়তো বলবেনা।কোনো রকম বিদায় সম্ভাষণ না করে হাঁটা আরম্ভ করলো।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হঠাৎ পিছন ফিরে বলল,

“সন্তানটা আমারও কবীর।কিন্তু তুমি আমাদের কেন বললে না?তুমি হয়তো তোশার স্বামী হবে।কিন্ত তোমার প্রথম সন্তান আহনাফের মা সবসময় দিশা থাকবে।সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আমাদের শব্দটা ব্যবহার করবে।”

কবীর নিশ্চুপ থাকলো।এক কালে ভীষণ পরিচিত মানুষ ডিভোর্স শব্দটায় অচেনা হয়ে উঠে।

(***)

অনেকক্ষণ ধরে তাহিয়ার মাথা ব্যাথা করছে।তীব্র যন্ত্রণায় পৃথিবী দুলে উঠছে।তার মা একটু আগে এক গ্লাস দুধ এনে দিয়েছিল।সেটা ছোট করে একটা চুমুক দিলো।অকস্মাৎ তার সামনে কেউ একটা কাগজ রাখলো।তাহিয়া চোখ তুলে দেখলো তার বাবা নেয়ামত দাঁড়িয়ে আছে।

“এটা কী বাবা?”

“তোমার সারা জীবনের অর্জন।সেসব ফিরিয়ে দিলাম।”

“হঠাৎ কেন?”

নেয়ামত অদ্ভূত করুণভাবে হাসলো।

“মানুষ কখন সবথেকে কষ্ট পায় জানো?যখন সারাজীবনের অর্জনে কেউ আ’ঘা’ত করে।”

নেয়ামতের বয়স হয়েছে।কথা অনেক থেমে থেমে বলে।মেয়ের পাশে বসে পুনরায় বলল,

“আমি খুব সুন্দর একটা মেয়ের বাবা হয়েছিলাম।কতো স্বপ্ন ছিল তাকে পড়াবো,সুন্দর করে বড় করে তুলবো।কিন্তু স্বপ্ন ভেঙেছিল আজ থেকে একুশ/বাইশ বছর আগে।কী যে বুকে য’ন্ত্র’ণা হয়েছিল আমি এই নেয়ামত আজও কাওকে তা বোঝাতে পারিনি।সেই মেয়ে আবার কিছু বছর পর তালাক নিয়েও চলে এলো।তখন ভেবেছিলাম এর শোধ তুলবো।তোমার অর্থ নিয়ে সংশয় তৈরী করে ভেবেছিলাম এইতো আমার প্রতি’শোধ শেষ।কিন্তু সৃষ্টি কর্তা ভিন্ন কিছু ভেবে রেখেছিলো তাহিয়া।আজ তুমি সেই জায়গায় যেখানে দাঁড়িয়ে আমি..। ”

নেয়ামত দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।তাহিয়া উদাসভাবে বাবাকে দেখছে।

“এজন্য ভাবলাম এই অর্থ দিয়ে আর কী করবো?ফিরিয়ে দিলাম।”

“লাগবেনা বাবা।”

“কেন?মেয়েকে তুমি ছেড়ে দিয়েছো?ভালোর জন্যও এটা করবেনা।তোমার মায়ানকে পাওয়ার অধিকার থাকলে তোশারও আছে।”

“আমাকে অনেক ঘৃ’ণা করেন বাবা তাইনা?”

মেয়ের কণ্ঠে একরাশ কান্নার সুর খুঁজে পায় নেয়ামত।আস্তে করে ক্ষয়ে যাওয়া কাঁধে তাহিয়ার মাথাটা রাখলো।

“তুমি কী তোশামণিকে ঘৃণা করো তাহিয়া?”

“একদম না বাবা।মেয়ের জন্য মনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।আমি জানি কবীরের কাছে ঠিক আছে ও।বাহিরে যা হচ্ছে তা মেয়েটার আসলেও দেখা উচিত না।কিন্তু..।”

“তাহলে আমার কথার জবাব পেয়ে যাবে তাহিয়া মামুনি।তোমার প্রতি অনুভবটা আমার কেমন।”

বাবার মুখে বছর বছর পর মামুনি ডাক শুনতে পেলো তাহিয়া।হঠাৎ পুরোনো স্মৃতি গুলো ফিরে এলো।আজ এতো বছর পর মায়ানের ও তার বাবার দুঃখটা সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলো।

(***)

তোশার দিনগুলো কয়েক দিন ধরে খুব অলস কাঁটছে।সারাদিন কথা বলার জন্য কেউ নেই।ফোনটাও দেয়নি উল্লাস।বলেছে কী যেন সারপ্রাইজ আছে।সেটা তৈরী হলে দিয়ে দিবে।তোশা বিরোধিতা করেনি।কবীর উল্লাসের পরামর্শ মতোন চলতে বলেছে।এই কথাগুলোও বলেছিল আজ বেশ কয়েক দিন হয়ে গেলো।নাহ মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারছে না কবীরের সঙ্গে।মুখে তেতোমিঠা ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়ালো তোশা।নির্জন এই ফ্ল্যাটটির কিছু ভালো লাগেনি।শুধু একটা জিনিস বাদে।সুন্দর একটি মেয়ের ছবি বড় করে ড্রয়িং রুমে টাঙানো।আবার ছবির নিচে লেখা “রসে ডুবানো মধুর মৌমাছি”

লেখাটা ভারী অদ্ভূত।তোশা ভেবেছে উল্লাসকে জিজ্ঞেস করবে মেয়েটা কে?টুংটাং শব্দে কলিং বেল বেজে উঠলো।তোশা নিজেকে বিন্যস্ত করে দরজাটি খুলে দিলো।অপ্রত্যাশিত ভাবে ওপাশে কবীর দাঁড়িয়ে আছে।কেমন মন ভুলানো রঙের স্যুট পরেছে মানুষটা।কালোতে যা ফু়টে উঠে।ফর্মাল পোশাকে মানুষটাকে দেখে সবসময় পাগল হয়ে যায় তোশা।কিন্তু নিজের মনের ঝড়কে এক পাশে রেখে বলল,

“প্রবেশ করতে পাসওয়ার্ড বলতে হবে?জানেন আপনি মি.শাহ।”

কবীর মুগ্ধ চোখে নিজের প্রেমিকাকে দেখছে।দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো সে।তেতো কোলনের মাদকময় সুগন্ধে তোশার পেটের ভেতর প্রজাপতি উড়ে গেলো।

“জানি।বললে ভেতরে ঢুকতে পারবো?সুন্দর ফুলটাকে নিতে।”

তোশা ভালোবাসায় সম্মতিতে মাথা দুলায়।কবীর জড়ানো কণ্ঠে বলল,

“পাসওয়ার্ড হচ্ছে ভালোবাসি বেলাডোনা।ভালোবাসবো বেলাডোনা।”

চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ