Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তিমিরে ফোটা গোলাপতিমিরে ফোটা গোলাপ পর্ব-৫৬+৫৭+৫৮

তিমিরে ফোটা গোলাপ পর্ব-৫৬+৫৭+৫৮

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৫৬
Writer তানিয়া শেখ

ভাঙা পুরাতন একটি বাড়ির সামনে এসে থামলেন মাদাম আদলৌনা। তাঁকে বেনাসের বাড়ির ধোপানি এখানে নিয়ে এসেছে৷ বলেছে এই বাড়িতে এক কবিরাজ থাকেন। যার কবিরাজির গুনে অনেক লোকের মহাব্যাধি সেরে গেছে। ধোপানির সাথে বেশ কিছুদিন হলো পরিচয় হয়েছে। ব্যক্তিগত অনেক ব্যাপারই ওর সাথে আলোচনা করেছেন মাদাম আদলৌনা। একদিন নিজ কক্ষে নিয়ে এসেছিলেন। মাতভেইকে দেখে ধোপানি বলেছিল,

“এ তো কবিরাজ মশাইয়ের বা’হাতের কাজ। এমন কত পঙ্গু তিনি সুস্থ করেছেন।”

মাদাম আদলৌনা তাই বিশ্বাস করেছেন৷ ধোপানি জং ধরা বন্ধ দরজার কাছে গিয়ে ডাকল,

“কই এসো।”

পশ্চিম আকাশে সূর্যটা ডুবে গেছে। সিঁদুর রঙ ছড়িয়ে আছে সেখানে। দিন রাতের সন্ধিক্ষণের সেই সময়ে মাদাম আদলৌনা আশপাশটা আরেকবার দেখে নিলেন৷ লোকালয় থেকে বেশ নির্জনে স্থানটি। এমন পরিত্যক্ত নির্জন স্থানে এসে মাদামের মন কেমন যেন কু গাইছে৷ মাতভেইর মুখটা মনে পড়তে কু চিন্তা দূর করে দরজার দিকে পা বাড়ালেন। ধোপানি দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। ওর আচরণে বোধগম্য এ স্থানে প্রায়ই আসা যাওয়া হয়। মাদাম ওর পথ অনুসরণ করেন। ভেতরের জানালা বন্ধ। দরজার বাইরের মৃদু আলোতে ভেতরটা আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। পুরোনো ভাঙা আসবাবপত্র এলোমেলো পড়ে আছে। ভেতরটা ধুলোপড়া, ঝুলে ভরা। দেওয়ালে মাকড়শা অবাধে বিচরণ করছে। নাকে ভ্যাপসা গন্ধ এসে লাগতে হাতায় নাক ডেকে ফেললেন মাদাম। ধোপানির সাথে তাল মিলিয়ে সামনে এগোতে লাগলেন। বাইরের মৃদু আলো এ পর্যন্ত এসে পৌঁছাচ্ছে না। কালো অন্ধকারে ঢেকে আছে সামনেটা। ধোপানি থামল এবার। পাশের ঘুনে ধরা মিটসেফের ড্রয়ার হাতরে কিছু খুঁজল। একটু পরে দিয়াশলাইয়ের আগুন জ্বলে উঠল অন্ধকারের মধ্যে। ড্রয়ার থেকে বের করা মোমটা জ্বালিয়ে বলল,

“কবিরাজ মশাই সিদ্ধপুরুষ। সাধারণের মতো জীবনযাপন করেন না তিনি। এই যে বাড়িটা এখানে একাই থাকেন। দিনের বেশিরভাগ সময় নিজের ঘরে ধ্যান করে কাটান।”

“তাঁর পরিবার পরিজন নেই?”

ধোপানি শব্দ করে শ্বাস ছাড়ল। তারপর বলল,

“না, নেই।”

ধোপানির মুখের মলিনতা মোমের আলোতে স্পষ্ট চোখে পড়ল মাদামের। হঠাৎ এই মলিনতার কারণ কী? খুব বেশি বয়স না ধোপানির। আর্লি থার্টি হবে। মাদাম আদলৌনা মুখ ফসকে বলে ফেললেন।

“তুমি কী করে চেনো তাঁকে?”

“কাকে?”

“কবিরাজ মশাইকে।”

ধোপানি হাসার চেষ্টা করে বলল,

“তাঁকে এ তল্লাটে কে না চেনে৷”

মাদামের মুখ দেখে বোঝা গেল এখনও তাঁর কৌতূহল দমেনি। ধোপানি চট করে ঘুরে সামনে হাঁটা ধরে বলল,

“যে কাজে এসেছি তা না করে কী সব বকবক করছি। চলো তাড়াতাড়ি তাঁর সাথে তোমার দেখা করিয়ে দিই। নয়তো বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে।”

ভেতরের তিনটে দরজা পেরিয়ে একটা ছোট্ট স্যাঁতসেঁতে ঘরে এসে থামে ধোপানি৷ পেছনে মাদাম আদলৌনা। ধোপানি বা’দিকে আলো ধরে বলল,

“ওই যে তিনি।”

একগাল হাসি দেখা দিলো ওর মুখে। মোমের স্বল্প আলোয় চেয়ারে বসা মানুষটার পিঠ দেখা গেল। কাঁচাপাকা সোনালী চুলগুলো উসকোখুসকো। মাথাটা চেয়ারে হেলে পড়েছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে ঘুমিয়ে আছে লোকটা।
ধোপানি মাদামকে দাঁড়াতে বলে আলো হাতে এগিয়ে গেল কবিরাজের দিকে। তাঁর কানের কাছে ফিসফিস করে কিছু বলতে নড়ে উঠলেন। সোজা বসে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালেন। মোমের আলোয় তাঁর ধূসর চোখজোড়া জ্বলজ্বল করতে লাগল। আপাদমস্তক দেখলেন মাদামকে। তাঁর ভাবলেশহীন কঠিন মুখে এক চিলতে হাসি দেখা দিলো। বড্ড অস্বস্তি হলো মাদামের। মন বলল পালিয়ে যেতে। কিন্তু পা নড়ল না। কবিরাজ উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর পরনের কালো আলখেল্লা ময়লা তেল চিটচিটে। মুখভর্তি অযত্নে বেড়ে ওঠা দাড়ি গোঁফের কারণে বয়স বেশিই লাগছে। মাদামের অস্বস্তি বোধহয় টের পেলেন তিনি। আন্তরিকভাবে মুচকি হেসে বললেন,

“ভয় পাবেন না মাদাম। আমি আপনাদেরই একজন। আসুন, এখানে এসে বসুন।”

কক্ষের অন্যপাশে বসার গদি। ময়লা কাপড়ে সেটা ঝেড়ে নিলেন কবিরাজ। মাদাম বসতে তিনি একটু আগে বসা চেয়ারটাতে গিয়ে বসলেন। মাতভেই সম্পর্কে খুঁটিনাটি প্রশ্ন করতে করতে কী যেন খুঁজছেন। মাদাম খেয়াল করলেন সামনের টেবিলের অনেকগুলো বড়ো ছোটো বোতল, কাগজের বান্ডিল, দোয়াত কালি পড়ে আছে। বোতলে অনেক গাছ-গাছরা আর কীসব যেন রাসায়নিকে মিশিয়ে কাচের বোতলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ধোপানি চেয়ারের পাশেই দাঁড়িয়ে রইল। একদৃষ্টে কবিরাজকে দেখছে ও। মাদামের এবার সন্দেহ হলো ধোপানি তাঁকে মিথ্যা বলেছে। কবিরাজের সাথে কিছু তো সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে ওর। ওর চোখের ভাষা অকপটে বলে দিচ্ছে সেই সত্যতা। মাদাম এই ঘরে চোখ বুলিয়ে নিলেন। এই গদি আর চেয়ার টেবিল ছাড়া আর কোনো আসবাব নেই এখানে৷ ঘরটাতে একটাও জানালা নেই। পুরো ঘরে অদ্ভুত বিশ্রী গন্ধ। গুমোট গন্ধ নয়। গন্ধটা যে ঠিক কীসের বুঝতে পারলেন না।

“ওহো! সেই ঔষধি ফুলটা শেষ হয়ে গেছে দেখছি।”

কবিরাজের হতাশ গলা শুনে মাদাম সচকিত হলেন। ধোপানির দিকে তাকাতে ধোপানি জিজ্ঞেস করল,”এখন তবে কী হবে? উনি যে বড়ো আশা নিয়ে এসেছেন আপনার কাছে। কিছু একটা করুন কবিরাজ মশাই।”

কবিরাজ বললেন,

“সামান্য ব্যাপার হলে এক্ষুনি একটা উপায় করে দিতাম। তুমি বলেছ ছেলেটার পা’টা একেবারে অকেজো হয়ে আছে। অজেকো অঙ্গ ঠিক করা সহজ কথা নয়। তা ছাড়া এই কাজে যে ফুলটার দরকার সেটা সাধারণ কোনো ফুল না৷ বেজোড় পূর্ণিমার রাতে ফোটে ফুলটা, এখান থেকে অনেক দূরের গহীন অরণ্যে। ভীষণ সুগন্ধি ফুলটার ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে ওটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে বিষাক্ত সাপেরা। পথে আরো অনেক বিপদের আশংকা তো আছেই।”

মাদাম আদলৌনা অনুনয়ের সুরে বললেন,

“আমার ছেলেটাকে সুস্থ করে দিন কবিরাজ মশাই৷ বিনিময়ে যা চান তাই পাবেন।”

“আমি অর্থের লোভে কবিরাজি করি না।”

“তবে?”

“আমি মানুষের সেবা করাকে ধর্মকর্ম মানি। দুস্থ অসহায়কে সাহায্য করলে মনে শান্তি পাই। জগতে মনের শান্তির বড়ো অভাব। আপনার ছেলের চিকিৎসা আমি এমনিতেই করে দিবো, কিন্তু তার জন্য যেই ফুলটা দরকার ওটা আপনাকে এনে দিতে হবে।”

“ওই ফুল আমি কোথায় পাব? আমি তো ফুলটা দেখিওনি কবিরাজ মশাই।”

কবিরাজ কিছুক্ষণ চুপ করে বললেন,

“ওই ফুল পর্যন্ত আপনাকে পৌঁছে দিলে আনতে পারবেন তো?”

মাদাম নির্দ্বিধায় বললেন,

“অবশ্যই পারব। আপনি শুধু আমাকে পথটা দেখিয়ে দিন।”

“ঠিক আছে। আগামীকাল বেজোড় পূর্ণিমার রাত। ধোপানিকে আমি বলে দেবো কখন, কোথায় আসতে হবে। আজ তবে আসুন।”

মাদাম উঠে দাঁড়ালেন। ধোপানি এক পলক তাকাল কবিরাজের দিকে। তাঁর নির্লিপ্ত মুখে রহস্যময় ক্ষীণ হাসি খেলে গেল। তারপর চেয়ারে বসে মাথা এলিয়ে দিলেন। ধোপানি মুচকি হেসে এ ঘরের বাইরে পা বাড়ায়। মাদাম আদলৌনা চুপচাপ ওকে অনুসরণ করছে। তাঁর ভাবনারা অস্থির। ফুলটা কি আনতে পারবেন তিনি? সফল হবেন এবার মাতভেইকে সুস্থ করতে? পারতেই হবে তাঁকে। ছেলে দু’পায়ে দাঁড়ালে মাদাম আদলৌনা মরেও যে শান্তি পাবেন।

গভীর রাত। মাতভেই আর মাদাম আদলৌনা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল ইসাবেলার। গত এক বছরে এমন অনেকবার হয়েছে। রাশিয়াতে মাদামের বাড়ির সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা, ভ্যালেরিয়ার মৃত্যু এবং তারপরে ঘটে যাওয়া দুঃসহ সকল স্মৃতি দুঃস্বপ্ন হয়ে রাতের ঘুম বিনষ্ট করে। আজ ইসাবেলা দেখেছে নিকোলাসের প্রাসাদের সেই গত হওয়া সেই দিনটি। যেদিন আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল নিকোলাসের কফিনে। নিকোলাসকে পুড়তে দেখা আজ ওর কাছে দুঃস্বপ্ন। নিকোলাসের ক্ষতি হোক ও চায় না।
তখন রাগের মাথায় চড় দিয়েছে, ঘৃণা করে বলেছে। ইসাবেলার মন জানে ওসব মিথ্যা। নিকোলাসকে চাইলেও ও আর ঘৃণা করতে পারবে না। ও যেমন তেমনই ভালোবেসেছে। পিশাচ, স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর জেনেও মনে ঠাঁই দিয়েছে। মন দেবে না, দেবে না বলেও মন দিলো। ভালোবাসা হয়ে যায়। ইসাবেলারও নিকোলাসের প্রতি ভালোবাসা হয়ে গেছে। অথচ, নিকোলাস দূরে ঠেলে দিতে চায়। ওর ভাগ্যটাই বুঝি মন্দ। কেউ চায় না ওকে। প্রথমে পিটার ছেড়ে গেল। আর এখন নিকোলাস। ইসাবেলার খুব কান্না পায়। বালিশে মুখ গুঁজে নীরবে কাঁদল কতক্ষণ। মিনিট খানেক পরে উঠে বসল বিছানা ছেড়ে। গলা শুকিয়ে এসেছে। হাতের কাছের বোতলটাতে পানি নেই। নিঃশব্দে রুমের বাইরে এলো। কিচেনে গিয়ে পানি পান করে বোতলটা ভরে নেয়। রুমের দিকে ফিরবে ভেবেও সিদ্ধান্ত পালটে ফেলে। বাড়ির পেছনের দরজার কাছে বোতলটা রেখে দরজা খুলে বাগানে পা রাখে। হাঁটু সমান বরফে আবৃত বাগানটা। আপেল, পিচসহ সকল গাছগাছালি শাখা প্রশাখা তুষারে ঢেকে গেছে। ইসাবেলা বরফ মাড়িয়ে বাগানের মাঝের ছাউনির ভেতর গিয়ে বসল। পরনের ফ্লোরাল সুতি ফ্রকের ওপর পাতলা একটা সোয়েটার। ঠাণ্ডায় দাঁতে দাঁত বাড়ি খায়। ইসাবেলা তবুও বসে রইল সেখানে।

আকাশের চাঁদটা মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে। চারপাশে ঘন কুয়াশা। এই কনকনে ঠাণ্ডায় উপভোগ করার মতো অবস্থায় নেই ইসাবেলা। ওর মস্তিষ্ক সতর্ক করে বলছে,”ঘরে যা, ঘরে যা।”

ইসাবেলা জেদ করে বসে রইল। শরীর কুঁজো হয়ে এলো। ঠোঁট কালো হয়ে যায়। আর পারছে না বসে থাকতে৷ বেশ শাস্তি দিয়েছে নিজেকে। এর বেশি হলে মরবে। মরবে! ইসাবেলা মনে মনে হাসল। মরণ এত সহজে হবে না ওর। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে দুহাতে নিজেকে জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়ায়। ছাউনির বাইরে পা রাখবে তখনই থমকে গেল। বাতাসে সোঁদা মাটির গন্ধ ভাসছে। জমে যাওয়া কালো বর্ণ ধারণ করা ঠোঁটের কোণ বেঁকে যায়।হাঁটু ভেঙে সেখানে বসে পড়ল। খুব বেশিক্ষণ কষ্ট করতে হলো না। মিনিট খানেক পরেই গায়ে ভারি গরম কাপড় অনুভব করে। কমে এলো দেহের কাঁপুনি। দুবাহু ধরে ওকে টেনে তুললো নিকোলাস। রাগত গলায় বলল,

“মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? এত ঠাণ্ডায় এই সময়ে কী করছিলে এখানে?”

ইসাবেলা মুখ তুলে তাকায় ওর দিকে। ওর চোখ ছলছল করে ওঠে।
“অপেক্ষা। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমি নিকোলাস।”

“আমি আসব বলেছি?”

“না, আমার মন বলেছে তুমি আসবে। দেখো, তাই হয়েছে। তুমি এসেছো।”

“আমায় তো ঘৃণা করো তুমি। তবে কেন এই অপেক্ষা বেলা?”

ইসাবেলা মুখ নামিয়ে নেয়। নিকোলাস ওর থুতনি তুলে দেখল চোখের জলে মুখে ভেসে গেছে।

“কাঁদছ কেন বেলা?”

“আমি কি খুব খারাপ নিকোলাস? আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না? এতটাই ভালোবাসার অযোগ্য আমি?”

“বেলা!”

ইসাবেলা সরে দাঁড়ায়। নাক টেনে বলে,

“আমি আজ বুঝেছি নিকোলাস। আমার বোন ঠিক ছিল। আমি সত্যি এই যুগে বেমানান। মহল্লার মেয়েরা ঠিকই বলেছে, আমার মতো মেয়েকে কোনো পুরুষ চায় না। আমি কারো যোগ্যই না। বড়ো অসুন্দর, সেকেলে আমি। তুমি যাও নিকোলাস। আর আমি অপেক্ষা করব না। আর তোমায় করুণা করে আসতে হবে না।”

ইসাবেলা এক হাতে মুখ চেপে কান্না রুদ্ধ করে দৌড় দেয় বাড়ির দিকে৷ কিছুদূর যেতে নিকোলাস ওকে ধরে ফেলে। দু’বাহুতে জড়িয়ে ধরল। ইসাবেলা ওর বুকের কাপড়ে মুখ গুঁজে কাঁদছে। নিকোলাস আঁজলা ভরে ওর মুখটা তুলে বলে,

“তাকাও আমার দিকে। এই চোখে চেয়ে বলো, তুমি অসুন্দর, অযোগ্য? না, বেলা, তুমি অমূল্য সম্পদ আমার কাছে। ভোরের শিশির দেখেছ বেলা? বসন্তের কচি কিশলয়? কিংবা চাঁদনি রাত, বৃষ্টি শেষের রংধনু? আমি তোমার মাঝে ওই সুন্দর, প্রীতিকর মুহূর্তগুলো দেখি। পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য তোমার দু’জোড়া বাদামী চোখ, গোলাপি ঠোঁটের মাঝে খুঁজে পাই৷ তুমি বলছ, তুমি অসুন্দর। আমার চোখে সুন্দর বলতে কেবলই তুমি, বেলা। তোমাকে যেমন করে চাই তেমন করে কখনও কিছু চাইনি আমি।”

“তবে কেন দূরে ঠেলে দিতে চাইছ?”

“তোমার ভালোর জন্য। আমি পিশাচ, অভিশপ্ত, বেলা। তখন দেখলে তো কী করলাম। আমি তোমার ক্ষতি করে বসব। তা ছাড়া আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নেই। আমার সঙ্গ তোমাকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে।”

“তুমি ছাড়া আমার পৃথিবীটাই আঁধার নিকোলাস।”

“আমি তোমাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারব না, বেলা।”

“তুমি ছাড়া পুরো জীবনটাই কষ্টের হবে, নিকোলাস।”

“না, সময় সব ভুলিয়ে দেয়। আমাকে ভুলে যাবে একদিন। চেষ্টা করলেই পারবে।”

ইসাবেলা রেগে গেল। দু’হাতে ওর বুকে আঘাত করে বলে,

“তুমি ভীরু, কাপুরুষ। ভালোবাসতে ভয় পাও বলে এসব বলছো। চাই না তোমাকে। যাও তুমি, যাও।”

ইসাবেলা বাড়ির দিকে ঘুরতে নিকোলাস পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

“বেলা, প্লিজ বোঝো আমাকে।”

“তুমি তো বুঝতে চাইছ না আমাকে। তবে কেন আশা করছো তোমাকে বোঝার? জোর করে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছো। আর আমার মতের কী?”

ইসাবেলা ঘুরে দুহাতে নিকোলাসের বুকের কাপড় খামচে ধরে। পায়ের পাতায় ভর করে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রাখল। তীব্র সে চাহনি। দৃঢ় কণ্ঠে বলে,

“তোমার প্রেম বিষ,
আমি সানন্দে সেই বিষ সর্বাঙ্গে ধারণ করতে চাই।
তুমি পাপ,
আমি স্বেচ্ছায় পাপী হতে চাই নিকোলাস।”

দুবাহুতে নিকোলাসের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে গাঢ় চুম্বন দিলো। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে ইসাবেলাকে দুবাহুতে বেষ্টন করে শূন্য তোলে নিকোলাস। এরপরে ইসাবেলাকে দূরে ঠেলে দেওয়া অসাধ্য হয়ে যায় ওর জন্য। সব মান-অভিমান ভুলে আবারো নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয় দুজন।

চলবে,,,

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৫৭
Writer তানিয়া শেখ

পরদিন ধোপানি এসে জানাল কবিরাজ মশাই মাদাম আদলৌনাকে সন্ধ্যার পর সেই বাড়িটার সামনে থাকতে বলেছেন। আজ আর ধোপানি মাদামের সাথে যেতে পারবে না। তার কী এক বিশেষ কাজ রয়েছে। কাজ শেষ করে বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরে গেল সে। একা যেতে একটু ভয় ভয়ই করছিল মাদামের। একবার ভাবলো ইসাবেলাকে সাথে করে নেবেন। শেষমেশ ভাবনাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেন। বেনাস পত্নীর মেজাজ চড়ে আছে। ইসাবেলা এবং মাদাম দুজন একসাথে বাইরে গেছে শুনলে রক্ষে থাকবে না। মাতভেইও রুমে একা। কখন কী প্রয়োজন পড়ে যায় ওর। সুতরাং মাদাম আদলৌনা একাই যাবেন বলে মনস্থির করলেন। কবিরাজের বলা ফুলটার কথা এখনো তিনি ইসাবেলা কিংবা মাতভেইকে বলেননি। মাতভেই এসব মোটেও বিশ্বাস করবে না। উলটো তাঁকে বাধা দেবে। তবে ইসাবেলাকে জানাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে কী ভেবে বললেন না আর।

কবিরাজ মশাইকে বাড়ির সামনে পেয়ে গেলেন মাদাম আদলৌনা। কাঁধে মোটা চামড়ার থলে নিয়ে প্রস্তুত হয়েই দাঁড়িয়ে ছিলেন দুয়ারে। গায়ে গতকালের পোশাক। মাদামকে দেখতে তাঁর মুখে দীর্ঘ হাসি ফুটে ওঠে। এগিয়ে এসে অধৈর্য গলায় বললেন,

“চলুন যাওয়া যাক।”

এই লোকটার সান্নিধ্যে এলে মাদামের অস্বাভাবিক কিছু অনুভব হয়। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সতর্ক বার্তা বুঝেও গ্রাহ্য করেন না তিনি। সন্তানের সুস্থতা ওপরে সব যেন উপেক্ষিত তাঁর কাছে। কিছুদূর পরেই কালো রঙের একটা ফিটন চোখে পড়ে। কোচওয়ান আপাদমস্তক কালো হুডে আবৃত। মাদাম ওর মুখটা দেখতে পেল না। কবিরাজ তাঁকে জানালেন এতে করেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবেন। কবিরাজ ফিটনে উঠে বসলেন। মাদামের মাথায় আকাশ পাতাল ভাবনা। তাঁর পা যেন বারংবার থেমে যায় অজানা শঙ্কায়। ফিটনের মুখে এসে থেমে রইলেন। কবিরাজ মশাই তাঁর মুখের ভাব বুঝে কিঞ্চিৎ ভুরু কুঁচকে তাকালেন। এদিক ওদিক সতর্কে চেয়ে কোচওয়ানকে ফিসফিসিয়ে বললেন,

“পথ পরিষ্কার তো?”

কোচওয়ান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। কবিরাজ পুনরায় মাদামের দ্বিধান্বিত মুখে চেয়ে মুচকি হাসলেন। খুব সহজে এই মহিলাকে ফাঁদে ফেলেছেন তিনি। এখন লক্ষ্য পর্যন্ত ভালোই ভালোই যেতে পারলে হাঁপ ছাড়েন। তিনি গলা ঝাড়তে মাদাম আদলৌনা সচকিত হলেন। বিব্রতবোধ করলেন নিজের অন্যমনস্কতার কারণে। কবিরাজ মশাই বললেন,

“আর বিলম্ব করলে পরে বিপদ হবে। তাড়াতাড়ি আসুন।”

মাদাম আদলৌনা উঠে বসলেন কবিরাজের সামনের সিটে। পুরো রাস্তা মাদামকে কবিরাজ স্থানটার বর্ণনা দিলেন। এখান থেকে মাইল খানেক দূরে এক পাহাড়ি জঙ্গল। জঙ্গলের একেবারে গহীনে বৃহৎ এক বটবৃক্ষ। তারই কোটরে দ্বিবীজপত্রী লতানো একটি গাছ জন্মায়। প্রতি বিজোড় পূর্ণিমার আলোতে সেই গাছের কুড়ি থেকে লাল রঙের একটি তীব্র সুগন্ধি ফুল ফোটে। ফুলটা দেখতে কতকটা ডেইজি ফুলের আকৃতির মতো। এর তীব্র সুগন্ধের কারণে আশেপাশের বিষাক্ত অনেক প্রাণী আকৃষ্ট হয়। বট তলার সর্বত্র তখন এদের বিচরণ। কবিরাজ কিছু রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে এসেছেন প্রাণীগুলোকে তাড়াতে। মাদামকে তিনি অভয় দিলেন। বললেন, তিনি থাকতে মাদামের চিন্তা নেই। মাদাম আড়চোখে তাঁকে দেখলেন। পৃথিবীতে এমনও নিঃস্বার্থ মানুষ হয়? নিশ্চয়ই হয়। এই তো তাঁর সামনে জলজ্যান্ত প্রমাণ। তবু কোথাও যেন খটকা থেকেই যায়।

ফিটন এসে থামল জঙ্গলের মুখে। জানুয়ারি মাসের তীব্র তুষার পাতে রাস্তার ওপর বরফের পুরু আস্তরণ পড়েছে। এইটুকু আসতে মূল সময়ের অধিক লেগে গেল। রাত বেশ গভীর হয়েছে৷ নেমে দাঁড়ালেন মাদাম। পূর্ণিমার আলোয় বিধৌত সামনের ঘন জঙ্গল। কবিরাজ কোচওয়ানকে অপেক্ষা করতে বলে সামনে এগোলেন। মাদাম একপলক কোচওয়ানের দিকে চেয়ে কবিরাজকে অনুসরণ করেন। এক হাঁটু বরফ মাড়িয়ে সামনে চলাটা বেজায় কষ্টসাধ্য হচ্ছে। তার ওপর হাড় কাঁপানো শীত। শরীর শক্ত হতে লাগল। লম্বা লম্বা পত্র ঝরা সরু গাছের ভিড় ছাড়িয়ে বনের গহীনে প্রবেশ করলেন তাঁরা। সামনের পথটাতে সামান্য বরফের আস্তরণ। নানান আকৃতির বৃক্ষ গুল্ম শ্বেত শুভ্র তুষারে জড়ানো। সাবধানে এগোতে লাগলেন। অনেকদূর হেঁটে হাঁপিয়ে উঠেছেন দুজন। সামনে একটা বৃহৎ বৃক্ষের শেকরের ওপর তুষার ঝেড়ে বসলেন মাদাম। কবিরাজ পাশের একটি গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর দৃষ্টি স্থির নেই। সাবধানি চোখে আশপাশ দেখছেন। একটুখানি জিরিয়ে উঠতে তাড়া দিলেন মাদামকে। আবার চলতে শুরু করেন দুজন। বেশ কিছুদূর চলতে কবিরাজ উচ্ছ্বাস করে উঠলেন।

“ওই তো ফুল গাছ।”

দৌড়ে গেলেন সামনে। সেখানে গিয়ে অসাধারণ এক দৃশ্য অবলোকন করলেন মাদাম আদলৌনা। রক্ত বেগুনি রঙের রশ্মির ছটা সামনের ঢালু স্থানটিতে। উড়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য রঙ বেরঙের প্রজাপতি৷ জোনাকির টিমটিমে হলদে আলো তাতে যেন সৌন্দর্যবর্ধক। কবিরাজ মশাই ইশারা করলেন আস্তে আস্তে নিচে এগোনোর। মাদাম আদলৌনার চোখে তখনো এই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মোহ পুরোপুরি কাটেনি। বিমুগ্ধতার আবেশে জড়িয়ে আছেন। তাঁর এই বিমুগ্ধতা ভীতিতে পরিবর্তন হলো সেই আলোর উৎসের কাছাকাছি গিয়ে। কবিরাজের বলা বটবৃক্ষ মোটেও সাধারণ বটবৃক্ষ নয়। দানব ভেবে প্রথমে আঁতকে উঠেছিলেন মাদাম৷ দূর থেকে হঠাৎ দেখলে পত্রঝরা বটবৃক্ষটাকে তাই মনে হয়। কবিরাজ আঙুল তুলে বললেন,

“ওই যে গাছটা।”

দানবাকৃতির গাছটার কোটরের ফাঁকে অনিন্দ্য সুন্দর সেই ফুলটা দেখতে পেলেন মাদাম। ফুল মাত্রই সুন্দর, কিন্তু এই ফুলটিকে সুন্দর বললেও তা কম বলা হবে৷ চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য ফুলটির। একে ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে এই অসাধারণ আলোক দ্যুতি। মাদাম সম্মোহিত হয়ে গেলেন। পা বাড়ালেন সামনে।

“মাদাম, থামুন।”

চাপা একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো মাদামের গলা দিয়ে। ফুলটির সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে মাদাম সামনের বিপদ খেয়াল করেননি। বটবৃক্ষের দু গজ দুরত্ব পর্যন্ত বৃত্তাকারে বিচরণ করছে বিষধর সাপ, পোকামাকড়। এত সাপ একসাথে কখনও দেখেননি মাদাম। সামনে যেন সর্পসাগর। কবিরাজ মাদামকে নিয়ে গেলেন গাছটার ডান পাশে। এদিকে ছোট্ট নীল জলের ঝিরি। থলি থেকে রাসায়নিক দ্রব্য বের করে ওই জলের পানিতে মিশিয়ে কিছু একটা তৈরি করলেন কবিরাজ। মাদামের দিকে বোতলটা এগিয়ে বললেন,

“এটা ধরুন।” মাদাম কাঁপা হাতে বোতলটা নিলো। তাঁকে আর প্রশ্ন করতে হলো না। কবিরাজ নিজে থেকে বললেন,

“এই ঝিরি নিরাপদ। এটা পার হলে অল্প কিছু পথ থাকে ফুল পর্যন্ত পৌঁছাতে৷ এই দ্রব্যের মিশ্রণ যেখানে ফেলবেন সেখানে আপনাতেই পথ তৈরি হবে আপনার জন্য।” কবিরাজ ঝিরির ওপারের সাপের বিচরণের স্থানটার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলে,

“ওদের ওপর এই দ্রব্য ফেলতে ওরা পথ ছেড়ে দেবে। সহজে ফুল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন। কিন্তু সাবধান। ওরা খুবই শক্তিধর। পাঁচ মিনিটের বেশি ওদের দুর্বল করে রাখতে পারবে না এই দ্রব্য। এই সময়ের মধ্যে ফুলটা তুলে ফিরে আসতে হবে। মনে রাখবেন। ওই ফুলের নিরাপত্তা কেবল সাপগুলো করছে না। ফুলে হাত দিতে দৃশ্য, অদৃশ্য নানান শক্তি আপনাকে বাধা দিতে আসবে। ফুলটা যতক্ষণ আপনার হাতে আছে কোনো শক্তি আপনার ক্ষতি করতে পারবে না। তাই যতদ্রুত পারবেন ফিরে আসবেন ফুলটা নিয়ে।”

ভয়ে মাদামের হাত পা অসাড় হয়ে এলো। কবিরাজ তাঁকে অভয় দিলেন। সন্তানের কথা স্মরণ করিয়ে তাঁর ভয়টা দূর করার চেষ্টা করলেন। সফল হলেন কিছুটা। মাদাম একবুক ভয় নিয়ে ঝিরির দিকে পা বাড়ায়। এই ঠাণ্ডাতেও ঝিরির জল কবোষ্ণ। চাঁদের পূর্ণ আলো পড়েছে ঝিরির জলে। মাদামের সাথে সাথেই চলল চাঁদটা। ঝিরির পাড়ে এসে মাদামের গলা শুকিয়ে এলো। সাপের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে মাদামের কর্ণকুহর ঝা ঝা করে ওঠে। কাঁপা হাতে বোতলের ছিপি খুলে রাসায়নিক দ্রব্যটি সামনের সাপের ঢেউয়ে ফেললেন৷ আশ্চর্য! মুহূর্তে সেগুলো গড়াগড়ি করতে করতে সরে গেল। রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে সাপের চামড়া পুড়ে ধোঁয়া সৃষ্টি হয়। ওদের যন্ত্রণাকাতর ছটফটনি দেখে অপরাধবোধ জন্মালো মাদামের। তিনি থেমে আছেন বলে পেছন থেকে কবিরাজ চিৎকার করে এগিয়ে যাওয়ার হুকুম করেন। মাদাম আদলৌনা এগিয়ে যান। সত্যি এই রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে সাপগুলো তাঁর পথ ছেড়ে দিয়েছে। ফুলটার একদম কাছে চলে এলেন। সবুজ পাতার মাঝ থেকে ছিঁড়ে নিলেন হাত বাড়িয়ে। সাথে সাথে ভূতুড়ে সব কাণ্ডকারখানা শুরু হলো। প্রচণ্ড জোরে বাতাস বইতে শুরু করে। আচমকা গায়েবি গলায় মেয়েলি সুরে কেউ আহাজারি করে ওঠে, বটবৃক্ষ সত্যি সত্যি দানবে পরিণত হয়। ঝুঁকে এলো আক্রমণ করতে। বনের হিংস্র সব প্রাণীর গর্জনে আকাশ ভারি হয়ে ওঠে। কবিরাজ মাদামকে ফিরে আসতে বলেন। মাদাম নিজেকে সামলে নিয়ে ছুটে চলে এলো ঝিরির এপারে। কাছে আসতে কবিরাজ ফুলটা ছোঁ মেরে নিতে চায়। মাদাম আদলৌনা ফুলটা লুকিয়ে ফেললেন পেছনে। কবিরাজ রুষ্ট মুখে তাকায়। তখনই গায়েবি গলাটি কর্কশ কণ্ঠে বলে ওঠে,

“আজ তুমি যে পাপ করলে তার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। মরবে তুমি। অভিশপ্ত হবে তোমার বংশের কন্যারা। যে ব্যথা আমায় দিলে তার হাজারগুন পাবে তোমার বংশের কন্যারা। ধ্বংস হও তুমি, ধ্বংস হও।”

এই অভিশাপে মাদাম ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন। তিনি ক্ষমা চাইতে যাবেন কিন্তু তার পূর্বে কবিরাজ তাঁর হাত ধরে সেখান থেকে পালাতে শুরু করে। পেছনে সেই বিষাক্ত সাপ, আর পোকামাকড় তেড়ে আসছে। গায়েবি কণ্ঠে এবার রাগত পৈশাচিক অট্টহাসি। মাদাম কাঁদতে লাগলেন। তাঁর মন বলছে ওই অভিশাপ ফলে যাবে। তাঁর বংশে কোনো কন্যাসন্তান নেই। এদিক থেকে তিনি স্বস্তি পেলেও নিজের মৃত্যুর কথা ভেবে ভেঙে পড়েন। ফিটনের কাছাকাছি আসতে দম নেন কবিরাজ। পেছনে এখনো বিপদ তাড়া করে আসছে। চট করে ফিটনে উঠে পড়লেন দুজন। পথে নানা ভাবে ফুলটা নেওয়ার চেষ্টা করে কবিরাজ। মাদাম কিছুতেই ফুলটা হাতছাড়া করলেন না। কবিরাজের বাড়ির সামনে এসে ফিটন থামল। দু’জনই নেমে দাঁড়ালেন। কবিরাজ বললেন,

“এবার ফুলটা আমায় দেন। এ থেকে তৈরি ঔষধই আপনার ছেলের পা ঠিক করবে।”

মাদাম ভয় পাচ্ছে ফুলটা হাতছাড়া করতে। ফুলটার দিকে চেয়ে কবিরাজের চোখ দুটো লোভে চকচক করছে। হাত বাড়িয়ে বললেন,

“দেন।”

মাদাম ফুলটা দিতে কবিরাজ আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। যেন ফুল নয় সাত রাজার ধন পেয়েছেন। এই মাত্রাধিক খুশির কারণ মাদাম বুঝে ওঠেন না। মাদামের ভুরু কুঞ্চিত মুখ দেখে কবিরাজের মুখ বদলে গেল। ফুলটা থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মিতে স্পষ্ট দেখতে পেলেন সেই অস্বাভাবিকতা মাদাম। ফুলটাকে সাবধানে বুক পকেটে রাখলেন কবিরাজ। ক্রূর হাসি তাঁর ঠোঁটের কোণে। মাদাম কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে কেউ ছুরিকাঘাত করল তাঁকে। ব্যথায় আর্তচিৎকার করে উঠলেন। হতবিহ্বলতা কাটিয়ে পেছন ফিরতে কোচওয়ানের পোশাক পরিহিত মানুষটাকে দেখতে পেলেন। মানুষটা আর কেউ নয় ধোপানি। এগিয়ে এসে এবার ও মাদামের বুকে ছুরি বসিয়ে দিলো। তারপর ঠেলে ফেলে দেয় নিচে। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন মাদাম। এতবড়ো ধোঁকা কল্পনাও করেননি। এরা তাঁকে ফুলটা পেতে ব্যবহার করেছে। তাঁর বিশ্বাসের, অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছে। মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে মাদাম ছেলের মুখ মনে করে অঝোরে কাঁদছেন। তাঁর বুক আর পিঠের ক্ষত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে। শ্বাস ভারি হয়। সে শুনতে পাচ্ছে ধোপানি কবিরাজকে বলছে,

“অবশেষে সফল হলাম আমরা। কিন্তু এখনও আমি বুঝতে পারছি না, এই সামান্য একটা ফুল তোমাকে ধনী আর ক্ষমতাধর কী করে করবে?”

“মূর্খ নারী, এ কোনো সামান্য ফুল না। আসলে এ কোনো ফুলই নয়।”

ধোপানি হতবুদ্ধি হয়ে বলল,

“কী যে বলছ! আমি পরিষ্কার চোখে দেখছি ওটা কেবলমাত্র একটা ফুল।”

কবিরাজ স্মিত হাসেন। বলেন,

“সাধারণ চোখে তাই মনে হবে। এই পৃথিবীতে এমন কিছু আছে যা মানুষের দৃষ্টিতে স্বরূপে ধরা পড়ে না। অনেকসময় সাধারণ দৃষ্টিতে তাদের দেখাও যায় না। এই ফুলটা হচ্ছে আমাদের চোখের ধোঁকা। রাত পোহালেই এই ধোকা কেটে যেত৷ ও ফিরে যেত আপন মুল্লুকে।”

“ও?”

“পরীর দেশের রাজকুমারী ও।”

“কী বলছ!” ধোপানি বিস্ফোরিত চোখে ফুলটার দিকে তাকায়। কবিরাজ আলতো করে ফুলটা ছুঁয়ে মাথা নাড়ালো। বহু বছরের সাধনা সফল হয়েছে তাঁর। আগামীকাল সূর্য উঠতেই রাজকুমারী স্বরুপে ফিরবে৷ কবিরাজ তখন পরী রাজকুমারীকে বন্দি করবেন। ওর ডানাজোড়া কেটে ফেলে জোরপূর্বক বিয়ে করবেন৷ পরীর শক্তি কাজে লাগিয়ে তিনি হয়ে উঠবেন পৃথিবীর ক্ষমতাধর ব্যক্তি এবং ধনীলোক। ধোপানিকে এখন আর তাঁর প্রয়োজন নেই। মূর্খ রমনী ভেবেছে কবিরাজ ওকে বিয়ে করবে? ধোপানির বিস্ময়তা কাটে কবিরাজের হাতে পিস্তল দেখে। গলা শুকিয়ে যায়।

“কী করছ তুমি?”

“তোমাকে এখন আর আমার প্রয়োজন নেই। আলবিদা।”

হাসতে হাসতে ধোপানির বুকে গুলি চালিয়ে দেয় কবিরাজ।

“আমায় তুমি ধোঁকা দিলে? ছাড়ব না তোমাকে আমি।” গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঝাপিয়ে পড়ে কবিরাজের ওপর। হাতের ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে লাগল। কবিরাজ ওর হাতের ছুরি কেড়ে ফেলে দেয়৷ কিন্তু ততক্ষণে শরীরের কয়েক স্থানে আঘাত পেয়েছেন। ধোপানির আহত শরীর নিচে ফেলে ওর ওপর উঠে বসেন। শ্বাসরোধ করতে লাগলেন গলা টিপে। মাদাম আদলৌনা বহুকষ্টে উঠে দাঁড়ায়। ধোপানির ছুরি পড়ে আছে সামনে। হাতে তুলে নিলেন সেটা। কবিরাজ তাঁকে দেখেনি। তিনি যখন ধোপানিকে মারতে ব্যস্ত সেই সুযোগে মাদাম পেছন থেকে তাঁর ঘাড়ের রগবরাবর ছুরি চালিয়ে দেন। ধোপানির নিস্তব্ধ দেহের পাশে লুটিয়ে পড়েন কবিরাজ। ব্যথায় আর্তনাদ করে ওঠেন। অবাক হলেন মাদামকে জীবিত দেখে৷ পরক্ষণেই রেগে আক্রমণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এবার তাঁকে সফল হতে দেয় না মাদাম। পড়ে থাকা পিস্তল তুলে তাঁর কপালে শ্যুট করে দিলেন। সাথে সাথে মরে যায় কবিরাজ। কিন্তু ওর বিস্ফোরিত খোলা চোখে তখনো পৈশাচিকতা চকচক করছে। মৃত্যুর যন্ত্রণা নেই ওতে।
মাদাম পিস্তল ফেলে কবিরাজের পকেট থেকে ফুলটা তুলে নিলেন। ঝাপসা চোখে ফুলটার দিকে তাকালেন। কবিরাজের কথা স্মরণ হলো। এ কী সত্যি পরী রাজকুমারী? পরী রাজকুমারী ফুল হলো কী করে? কী করবেন ভেবে পেলেন না মাদাম। তাঁর ভীষণ অনুতাপ হচ্ছে ফুলটা ছিঁড়ে। ফুলটা হাতে নিয়ে অনেক কষ্টে উঠে বসেন ফিটনের কোচওয়ানের আসনে। এখান থেকে বেনাসের বাড়ি বেশি দূরে নয়। ফিটন চালিয়ে দ্রুতই পৌঁছে গেলেন। কিন্তু তার শরীরে শক্তি ফুরিয়ে আসছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দেহ দুর্বল হতে লাগল। বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে তিনি কোনোরকমে ভেতরে ঢুকলেন। হল ঘরের ঘড়ির পেন্ডুলাম বেজে ওঠে। জানান দেয় মধ্যরাত হয়েছে। থমকে দাঁড়ালেন বাড়ির ভেতরের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে। হলঘরে আসবাবপত্র ভাঙাচোরা। মাদাম আদলৌনা দেওয়াল ধরে ধীর পদে নিজের কক্ষের দিকে এগোলেন। সামনে যেতে যেতে হলঘরের মাঝে বেনাসপত্নী ও কয়েকজন ভৃত্যের মৃতদেহ নজরে পড়ল। মাতভেই আর ইসাবেলার চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠলেন তিনি। অবশিষ্ট শক্তি ব্যয়ে নিজ কক্ষের দরজার সামনে হাজির হলেন। আর পারছেন না তিনি। নেতিয়ে পড়লেন দরজার সামনে। দুর্বল গলায় ডাকলেন,

“ইসাবেল, ইসাবেল।”

খুট করে দরজা খুলে গেল। ইসাবেলা মাদামের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে কেঁদে ওঠে,

“মাদাম, এই অবস্থা কী করে হলো আপনার?”

মাদামকে দ্রুত ভেতরে নিয়ে এলো। মাতভেই মায়ের মুমূর্ষু দশা দেখে হুমড়ি খেয়ে নিচে পড়ে।

“মা!”

হামাগুড়ি দিয়ে মায়ের কাছে এলো ও। মাদামের মাথাটা ইসাবেলার কোলে। মাতভেইর গলার রোজারির দিকে চেয়ে রইলেন মাদাম। অশ্রুসজল কণ্ঠে বললেন,

“মাতভেই, মা তোমাকে বুঝি আর রক্ষা করতে পারল না বাবা।”

“এমন কথা বোলো না, মা। আমাকে ছেড়ে যাবে না তুমি। তোমাকে বাঁচতে হবে। বেল, আমার মা’কে হাসপাতালে নেও।”

মাদাম ছেলের মুখে হাত রেখে কাঁদতে লাগলেন। হাতের ফুলটা বের করতে মাতভেই ইসাবেলা বিস্মিত হয়। এই ফুলের সৌন্দর্যে চমকিত, মুগ্ধ হয় ওরা। মাদামের কেন যেন মনে হয়েছে এই ফুলে মাতভেইর পা ঠিক হবে। সেই বিশ্বাসে ফুলটাকে মাতভেইর হাড়জিরজিরে পা’টাতে ছুঁয়ে দিলেন। ফুলটার রশ্মি পায়ের ত্বক ভেদ করে প্রবেশ করল ভেতরে। ধীরে ধীরে পা’টা সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মাদামের চোখে আনন্দ অশ্রু ঝরল। তাঁর সন্তান অবশেষে দু’পায়ের ওপর দাঁড়াবে। ইসাবেলা ও মাতভেই তখনও অবাক চোখে চেয়ে আছে সুস্থ পা’টার দিকে। মাদামের গোঙানিতে চেতনা ফিরল ওদের। মাতভেই সব বুঝতে পেরেছে। ওর মা ওকে সুস্থ করার জন্য নিজের জীবনটা বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠা করেনি। মাদাম শেষ সময়ে ইসাবেলাকে বলেন,

“ইসাবেল, আমার ছেলেকে তুমি দেখো।”

“মাদাম প্লিজ, আমাদের ছেড়ে যাবেন না।”

“আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে ইসাবেল। এবার যে আমাকে যেতেই হবে।”

মাদাম মাতভেইর কপালে চুমো দিয়ে ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। মায়ের প্রাণহীন দেহ জড়িয়ে ধরে মাতভেই চিৎকার করে কাঁদে। ইসাবেলার কান্না গলায় আঁটকে যায় মাদামের হাতের নির্জীব ফুলটাকে ক্রমশ শূন্যে উঠতে দেখে৷ ধীরে ধীরে ওটার পাপড়ি ভাঙছে। ছড়িয়ে যাচ্ছে শূন্যে। ম্লান রশ্মির বিচ্ছুরণ হচ্ছে পাপড়িগুলো থেকে। ঠিক মাতভেইর মাথার ওপর ঘুরপাক খাচ্ছে ওগুলো।

চলবে,,,

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৫৮
Writer তানিয়া শেখ

গতরাতে বাড়ি ফেরেনি ভিক্টোরিজা। এই ঘটনা নতুন নয়। এমন অনেক রাতেই আগে ও বাড়ি ফিরত না৷ বার, ক্লাবে মেতে থাকত। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। এখন চারিদিকে যুদ্ধের দামামা বেজেছে। বাইরে কারফিউ। এর মাঝে রাতভর মেয়ের বাইরে কাটানো দুশ্চিন্তার ব্যাপার বটে জাস্টিনা বেনাস নীলসনের জন্য। বেনাস মেয়ের আচার আচরণে খুব বেশি সন্তুষ্ট থাকেন না। কিন্তু মেয়ের রূপকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক অনেক রাঘববোয়ালদের তিনি বশে এনেছেন। এই কারণে ভিক্টোরিজার অনেক ঔদ্ধত্যকে তিনি ছাড় দেন। আজ ভিক্টোরিজা যেন সকল ঔদ্ধত্য ছাড়িয়ে গেছে কারফিউর মাঝে বাড়ির বাইরে পা রেখে। স্ত্রী কাছে সব শুনে তৎক্ষনাৎ লোক পাঠালেন মেয়েকে খুঁজতে। বহু খোজাখুঁজির পরও কোথাও মেয়েকে পেলেন না। স্বামী স্ত্রী দুজনই চিন্তায় পড়লেন। বেনাস ওপর মহলের সাহায্য নিলেন মেয়েকে খুঁজতে। মেয়ের চিন্তায় জাস্টিনার মেজাজ সপ্ত আসমানে চড়ে আছে। রেগেমেগে জুজানিকে চড় কিল দিলেন। দোষটা যেন সব জুজানির। বেচারি জুজানি নিজেও মিসের নিখোঁজে চিন্তায় ছিল। গৃহকর্ত্রীর প্রহারে কাঁদতে কাঁদতে এসে বসে রইল নিজ রুমে। খাবার টেবিলে এই প্রথম রান্না ভালো হয়নি বলে খুব কটু কথা শোনালেন মাদাম আদলৌনাকে জাস্টিনা। মাদাম নীরবে শুনে গেলেন। ইসাবেলা আজ আর জাস্টিনার সামনে আসেনি। মাদাম ওকে মাতভেইর কাছে থাকতে বলেছিল। সন্ধ্যার প্রারম্ভে মাদাম কবিরাজের সাথে দেখা করবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। তাঁর বেরিয়ে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে জুজানি এসে জানালো ভিক্টোরিজা বাড়ি ফিরেছে। ইসাবেলা স্বস্তি পেল। ভিক্টোরিজা নিখোঁজ শুনে ওরও চিন্তা হচ্ছিল। জুজানি আরো বলল, গৃহকর্ত্রী রাতের খাবার গরম করে টেবিলে পরিবেশন করতে বলেছেন। ইসাবেলা রান্নাঘরে এলো। মাদাম আদলৌনা রাতের খাবার তৈরি করে গেছেন। ইসাবেলা সেগুলোকে গরম করে টেবিলে পরিবেশন করে। তারপর আবার রান্নাঘরে এসে দাঁড়ায়। ডাইনিং-এ বেনাস ও জাস্টিনার গলা শুনতে পাচ্ছে। তাঁদের গলার স্বর চিন্তিত। ভিক্টোরিজা এসেই শুয়ে পড়েছে। মুখটা ক্লান্ত, ফ্যাকাশে। জাস্টিনার অসংখ্য প্রশ্নের জবাবে নিরুত্তর থাকার পর একসময় ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেছে ভিক্টোরিজা। মেয়ে বাড়ি ফিরেছে তাতেই বেনাস, জাস্টিনা খুশি।দুজনে চুপচাপ খেতে লাগলেন। বেনাসের মনে নানান প্রশ্নের উদয় হলো। এই শহর তন্নতন্ন করে খুঁজেছিলেন মেয়েকে। কোথাও পাননি। পুরো একটা রাত এবং দিন ভিক্টোরিজা ছিল কোথায়?
বেনাসের মনে কীসের যেন শঙ্কা কাজ করছে। প্রথমে ভিক্টোরিজার লাপাত্তা হয়ে যাওয়া তারপর হুট করে বাড়ি ফেরা তাঁর মনে কেন যেন সন্দেহ সৃষ্টি করছে? মেয়ের মুখটা তিনি দেখেছেন। মেয়েকে ওভাবে আগে কখনো দেখেননি। সন্দেহের কারণ ঠিক ওটাই। খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। জাস্টিনা জুজানিকে আদেশ করেছে, রাতে ভিক্টোরিজার ঘুম ভাঙলে কিছু খাইয়ে দেওয়ার জন্য। স্বামীর পিছু পিছু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলেন। তাঁদের থাকার রুম ডান দিকে। কিন্তু বেনাস বা’দিকে পা বাড়ায়। ওদিকটাতে ভিক্টোরিজার রুম। জাস্টিনা বললেন,

“এখন ও ঘরে না গেলেই কি না? সকালে যেয়ো।”

“আমি ওকে জাগাব না। তুমি রুমে যাও আমি আসছি।”

জাস্টিনাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হেঁটে চলে এলো মেয়ের দরজার সামনে। দরজাটা ভেজানো ছিল। নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকলেন বেনাস। মনের সন্দেহটা কাটানো দরকার। ভিক্টোরিজার রুমের হ্যারিকেনটার সলতে একেবারে কমিয়ে রাখা। ম্লান আলোয় মেয়ের বিছানার দিকে এগোলেন। চিৎ হয়ে শুয়ে আছে ভিক্টোরিজা। হাত দুটো বুকের ওপর ভাঁজ। নিস্প্রভ আলোয় ওর মুখটা ভীষণ সাদা লাগছে। জানালার বাইরের তুষারের স্তুপের ন্যায়। মানুষকে এত সাদা বড্ড বেমানান লাগে। বেনাস মেয়ের শিওরের পাশে এসে দাঁড়ালেন। কেন যেন মৃত মানুষের মতো মনে হচ্ছে ভিক্টোরিজাকে। সত্যি ভয়টার তাঁর পেয়ে বসল এবার। গত পরশুদিনের আগে এমনটা ঘটলে হয়তো সন্দেহ জাগত না, ভয়ও পেতেন না।

তাঁর এক কাছের বন্ধু গত পরশুদিন কল করেছিল। বেশ ভীত মনে হয়েছিল ওঁর গলা। কী হয়েছে জানতে চাইলে বললেন,

“বেনাস, আমি বুঝি আর বাঁচব না। ওরা আমাকে মেরে ফেলব বন্ধু।”

“কারা?”

“ভ্যাম্পায়াররা।”

“কী যা তা বলছ? ওসব বাস্তবে আছে না কি?”

“আছে আছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি। ঠিক এই কারণে ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না। আমি তোমাকে সাবধান করতে কলটা করেছি।”

“আমাকে সাবধান করতে?”

“হ্যাঁ, সবচেয়ে ভয়ের কথা কি জানো বেনাস? ওরা অবিকল আমাদের মতো দেখতে। আমাদের মাঝে মিশে গেছে। সাধারণ চোখে ওদের আলাদা করা যায় না। তুমি বোধহয় জানো না, সেদিন তোমার বাড়ির ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানে ওদের কয়েকজন ছিল।”

বেনাস চমকে ওঠে। কম্পিত কণ্ঠে বলেন,

“তুমি ওদের নাম জানো?”

টেলিফোনের লাইনের ওপর পাশে বন্ধুর চিৎকার শুনতে পেলেন। তারপর কঠিন নিস্তব্ধতা নামে। বেনাস বারকয়েক বলেন,

“হ্যালো, হ্যালো?” কোনো জবাব নেই। পরদিন সকালে খবর এলো সেই বন্ধুটির লাশ পাওয়া গেছে বাড়িতে। লাশটা বড়ো বিভৎস অবস্থায় ছিল। পুলিশের ধারণা জংলী কোনো পশুর আক্রমণে মারা গেছেন তিনি৷ বাড়ির চাকরবাকরেরা রাতে জংলী প্রাণীর গর্জন শুনেছিল। সুতরাং এ নিয়ে আর তেমন কথা ওঠেনি। কিন্তু বেনাসের ভয়টা বেড়ে যায়। কাওকে এ ব্যাপারে বলেননি তিনি। আজ যখন নিজের নিখোঁজ মেয়ে ফিরে এলো এবং ওর ফ্যাকাশে, অবসন্ন মুখটা দেখলেন, ভয়টা হু হু করে জেগে উঠল মনের মধ্যে। একটু আগেও মনে হয়েছিল অকারণেই ভয় পাচ্ছেন। ভিক্টোরিজা হয়তো কোনো প্রেমিকের বাড়িতে ছিল। মনের ভয় দূর করতে মেয়ের রুমে এসেছেন তিনি। ভ্যাম্পায়ার নিয়ে গত পরশু থেকে বেশ জেনে নিয়েছেন। মেয়েকে একটু পরীক্ষা করলে দোষ কোথায়? তিনি তর্জনী ভিক্টোরিজার নাকের সামনে ধরলেন। অনেকক্ষণ পরও হাতে কোনো উঞ্চতা পেলেন না। শুকনো ঢোক গিললেন বেনাস। তাঁর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। কাঁপা হাতে মেয়ের কপাল ছুঁতে আঁতকে দুগজ দূরে সরে গেলেন। ভিক্টোরিজার কপাল বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা। এমনটা কেবল মৃত মানুষের বেলাতেই সম্ভব। আচমকা ভিক্টোরিজার জানালার কবাট খুলে যায়। উন্মাদ বাতাসে রুমের সবকিছু উড়তে লাগল। বাতাসে হেলেদুলে নিভে গেল হ্যারিকেনের আলো। বেনাস ধড়ফড়িয়ে উঠে দরজার কাছে যেতে দরজাটা সশব্দে বন্ধ হলো। বেনাস পেছনে কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছেন। ভয়ে তাঁর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে। ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরাতে একটা অশরীরী তাঁকে আক্রমণ করে বসল। মৃত্যুর পূর্বে সেই অশরীরী মানবীয় রূপ তিনি দেখতে পেলেন। তাঁর সুশ্রী মেয়েটি ভয়ংকর ডাইনিতে পরিণত হয়েছে।

স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন জাস্টিনা। মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙল। পাশে ফিরে দেখলেন বেনাস এখনও ফেরেননি। বিছানা ছেড়ে নেমে রুমের বাইরে বেরিয়ে এলেন। স্টাডি রুমে গিয়ে দেখলেন সেখানেও নেই বেনাস। মনে পড়ল, শেষবার মেয়ের রুমে গিয়েছিলেন। ভিক্টোরিজার রুমের দিকে যাবেন হঠাৎ জুজানির কান্না শুনে থমকে দাঁড়ালেন সিঁড়ির মুখে। কড়িডোরের ল্যাম্পটা হাতে নিয়ে হলঘরে নেমে এলেন। কান্নার শব্দটা আসছে হলঘরের দক্ষিণ দিক থেকে। ওদিকটা গেস্ট রুম। জুজানি গেস্ট রুমে কী করছে?

“জুজানি?”

জাস্টিনা ডাকলেন। ক্ষীণ কান্নার শব্দটা মিইয়ে গেল একটুখানি। তারপর আবার আগের মতো কাঁদতে লাগল। রাতদুপুরে এভাবে কেউ কাঁদে? জাস্টিনা বিরক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন ফিরে যাবার জন্য। কাজের লোক কাঁদছে তাতে তাঁর কী? কাঁদুক হতচ্ছাড়িটা। সকালে হলে এই কারণে ওকে আচ্ছা মতো বকবেন তিনি। দু কদম এগোতেই কান্নার গলা বদলে গেল। এখন গলাটা তাঁর মেয়ে ভিক্টোরিজার মনে হচ্ছে। আশ্চর্য! একটু আগে স্পষ্ট জুজানির কান্নার গলা শুনেছিলেন। মুহূর্তে গলাটা বদলে গেল কী করে? তাঁর কি হ্যালুসিনেশন হচ্ছে? জাস্টিনা মন দিয়ে শুনলেন। না! মোটেও হ্যালুসিনেশন নয়। ভিক্টোরিজাই কাঁদছে। শুধু ভিক্টোরিজা একা নয়, জুজানিও। মাঝ রাতে দুজনে এমন মরাকান্না কাঁদছে কেন? জাস্টিনা এগিয়ে গেলেন গেস্ট রুমের দিকে। যত এগোচ্ছেন ততই মনে হচ্ছে কান্নার সুরটা টানছে তাঁকে। এখন চাইলেও আর ফিরতে পারবেন না। ভয় পেয়ে বসল জাস্টিনাকে। সম্মোহিতের মতো গেস্টরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন। এই রুমটা অস্বাভাবিকরকমের ঠাণ্ডা। সামনের ফ্রেঞ্চ জানালার কবাট খোলা। বেপরোয়া ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে সবকিছু উড়িয়ে নিচ্ছে। এত ঠান্ডায় জাস্টিনার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। কুসংস্কারমুক্ত আধুনিকা রমণী জাস্টিনা। অশরীরী কোনো কিছুতেই তাঁর বিশ্বাস নেই। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসও লোক দেখানো। তবুও ভয়টা কিছুতেই কাটানো গেল না। ভীত গলায় মেয়েকে ডাকলেন,

“রিজা?” প্রত্যুত্তরে কান্নার গুনগুনানি ছাড়া কিছু এলো না। জাস্টিনার হাতের ল্যাম্পের আলো বাতাসে নিভু নিভু করছে। রুমে একনজর বুলাতে সামনের খাটের এককোণে মেয়েকে দেখতে পেলেন। পিঠ এদিক করা, পিঠময় ওর সোনালি চুল উড়ছে। শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে কান্নার তোড়ে। জাস্টিনা এদিক ওদিক ল্যাম্পটার আলো নিয়ে জুজানিকে খুঁজলেন। কোথাও নেই ও। জাস্টিনা মেয়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন।

“কাঁদছ কেন সুইটহার্ট?”

ভিক্টোরিজার কাঁধে হাত রেখে প্রশ্ন করলেন তিনি। গুনগুনিয়ে কান্নার শব্দ থেমে গেল, কিন্তু ঘুরে তাকাল না সহসা ও। জাস্টিনা ল্যাম্প ঝুঁকে ধরতে যা দেখলেন তাতে তাঁর গলা দিয়ে আর্তচিৎকার বেরিয়ে এলো। ভিক্টোরিজা পৈশাচিক হাসি হেসে মায়ের দিকে তাকাল ঘাড় ঘুরিয়ে। ওর মুখময় তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এক লাফে দূরে সরে গেলেন জাস্টিনা। জুজানির রক্তশূন্য মৃতদেহ পড়ে আছে ভিক্টোরিজার সামনে। মেয়ের এহেন ভয়ংকর রূপ দেখে কিছুক্ষণ থ মেরে রইলেন। এই দৃশ্য বিশ্বাস করতে সময় লাগল তাঁর। রাতে তাঁর স্বামীর রুমে না ফেরার কারণ এতক্ষণে বুঝলেন। বেনাস বেঁচে নেই, একমাত্র মেয়ের এই দশা। জাস্টিনার বুক ফেটে কান্না এলো। ভিক্টোরিজা উঠে দাঁড়ায়। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা রক্ত চেটে দাঁত বের করে হাসে। গা শিউরে ওঠা সেই হাসি। জাস্টিনার সর্ব শরীর থরথর করে কাঁপছে। হাত থেকে ল্যাম্পটা লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে। কোনোরকমে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে এলেন। হলঘর এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন কিছুতে বেঁধে। ক্ষীণ আলোয় দেখতে পেলেন এ বাড়ির ভৃত্যদের লাশ পড়ে আছে নিচে। একটু আগে এসব খেয়াল করেননি। জাস্টিনা ভয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলেন। ছুটলেন ইসাবেলাদের রুমের দিকে। ওই ঘরে এখনও বাতি জ্বলছে। রুমের কাছাকাছি যেতে বাড়ির পেছনে ঘোড়ার খুরের শব্দ কানে এলো তাঁর। থামলেন জাস্টিনা। সেদিকে এগিয়ে যাবেন তখনই অদৃশ্য কিছু এসে তাঁকে হল ঘরের দিকে টেনে নিয়ে গেল। চাপা একটা আর্তনাদ মুহূর্তে বিলীন হয়ে যায় সেই স্থানে।

নিকোলাস বিশেষ কাজে জার্মানি গেছে। ফিরবে পরশুদিন। সুতরাং ইসাবেলা আজ বাড়িতেই ছিল। ঘুম আসছিল না ওর। মাতভেইও মায়ের না ফেরাতে চিন্তিত। দু’জনই রুমের বাইরের চাপা আর্তনাদ শুনতে পায়। মাতভেই চকিতে সোজা হয়ে বসল খাটের ওপর। ইসাবেলা কান পেতে শুনল হিংস্র গর্জন। এই গর্জন ওর চেনা। বুকটা কেঁপে ওঠে আতঙ্কে। দ্রুত থলিটা খুঁজে রোজারিও বের করে। আজ আর ওটা নিজে পড়ল না। পরিয়ে দিলো মাতভেইর গলায়। নিজের কোমরে গুঁজে নেয় কাঠের চৌকা মাথার টুকরো। বাকি জিনিসগুলো হাতের কাছে রেখে ত্রস্ত পায়ে দরজার দিকে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পরে পরিচিত গলার ডাক শুনে দ্রুত দরজা খুলে দিলো। সামনে রক্তাক্ত শরীরে মাদাম বসে আছেন। ইসাবেলা কেঁদে ওঠে,

“মাদাম, এই অবস্থা কী করে হলো আপনার?”

গতপর্বের পর থেকে………

ইসাবেলা উর্ধ্বমুখে তাকিয়ে ছিল ছিন্ন পাপড়িগুলোর দিকে। ওদের থেকে বেরোনো দ্যুতি ক্রমশ আরো ম্লান হচ্ছে। ফুলের পুষ্পবৃন্ত, পরাগদন্ড, গর্ভদন্ড একত্রে আছে বিচ্ছিন্ন পাপড়িগুলোর মাঝে। পুষ্পবৃন্তের সাথের পরাগদন্ড আর গর্ভদন্ড নেতিয়ে যেতে লাগল। ওগুলো যত নেতিয়ে যায় পাপড়িগুলোর দ্যুতি ততই ম্লান হয়। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন হলো। বিদ্যুৎস্ফুরণ আছরে পড়ল এই রুমের জানালায়। দেখতে দেখতে ঝড় উঠল বাইরে। প্রচন্ড জোরে জানালার কাচে আঘাত করছে বাতাস। সাথে হিংস্র নেকড়ের গর্জন শোনা যাচ্ছে। মাতভেই মায়ের লাশ কোলে নিয়ে সজল চোখে তাকাল ইসাবেলার দিকে। ইসাবেলা বলল,

“খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলছে মাতভেই। সাবধান হতে হবে আমাদের।”

ইসাবেলা দরজার দিকে তাকায়। দরজা খোলা। তাড়াতাড়ি উঠে দরজা বন্ধ করতে গেলে প্রবলবেগে ধেয়ে আসা বাতাস ওকে উড়িয়ে ফেলে দেয় জানালার দিকে। ওটা বাতাস নয়, অন্য শক্তি। জানালার বাড়ি খেয়ে মেঝে পড়ে ব্যথায় গোঙাতে লাগল ইসাবেলা। ওর দেহের আঘাতে জানালার কাচে ফাটল ধরে। বাতাসের দাপটে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় জানালার কাচ। ছুটে এসে ওর শরীরের ওপর পড়ল।

“ইসাবেলা!”

মাতভেই বহুদিন পর দুপায়ের ওপর দাঁড়িয়েছে। আনন্দ আর নেই এখন ওর। ইসাবেলাকে টেনে বসাল। উদ্বিগ্ন গলায় বলল,

“ঠিক আছো তুমি?”

“ঠিক আছি আমি। মাতভেই আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে। চলো এক্ষুনি।”

ইসাবেলা দাঁড়াতে গিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা জানালার কাচের টুকরো ঢুকে গেল পায়ের তলায়। ব্যথায় ককিয়ে উঠল। মাতভেই দেখল ইসাবেলার দেহের অনেক জায়গায় কাছের টুকরোর আচর লেগেছে। ওকে কোলে তুলে বিছানায় বসাল। এই ফাঁকে রসুনের মালাটা অজান্তেই ছিঁড়ে পড়ে গেল নিচে। বিছানায় বসিয়ে পায়ের তলার কাচের টুকরো বের করে আনে মাতভেই। দাঁতে দাঁত কামড়ে ব্যথা গোপন করার চেষ্টা করে ইসাবেলা। কিছুটা ব্যর্থ হয়। মাতভেই ফার্স্ট এইডের বক্স খুঁজতে লাগল। ইসাবেলা দেখল জানালা দিয়ে কালো ধোঁয়ার কুন্ডলি ঢুকছে। নাকে এসে লাগল অপরিচিত একটা গন্ধ। অপরিচিত! ঠিক অপরিচিতও নয়। তবে পরিচিত প্রিয় সেই সোঁদা মাটির গন্ধ এটি নয়। আর্ত কণ্ঠে মাতভেইকে বলল,

“মাতভেই চলো এখান থেকে, তাড়াতাড়ি চলো।”

“তোমার পা ব্যান্ডেজ করতে হবে আগে। এই অবস্থায় এক পা হাঁটতে পারবে না তুমি।”

ফার্স্ট এইডের বক্স খুঁজতে খুঁজতে বলল মাতভেই। ওর মাথার বেশ ওপরে এখনো একইভাবে চক্রাকারে ঘুর্নায়মান বিচ্ছিন্ন ম্লান আলোর ফুলটা। ইসাবেলা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে পায়ে। সামনে চেয়ে আর্ত হয়ে ওঠে। ধোঁয়ার কুন্ডলি একটা অবয়বের রূপ নিচ্ছে। সম্পূর্ণ মানবীয় রূপে আসতে ইসাবেলা ভীত গলায় বলল,

“আন্দ্রেই!”

চলবে,,,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ