#আড়ালে তুমি
পর্ব ১২
লেখকঃ শাহরিয়ার কবীর নীল
রিফাতকে ঘুম পাড়িয়ে শিলা আমাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে গেলো। আজ সে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা জানতে চাই। আমরা গিয়ে বসলাম। শিলা বলল
শিলাঃ মা আজকে তোমাদের সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বলো।
কথাটা শুনার পর শাশুড়ীর চোখে পানি দেখতে পেলাম। উনি পানি মুছে বলতে শুরু করলেন
★শিলার মায়ের কথা★
তোর বাবার কথাগুলো শুনে সেদিন রাতে তোর বাবাকে অনেক বুঝায়। তবে সে কিছুতেই রাজি হবে না। এরপর থেকে উনার সাথে আমারও তেমন কথা হতো না। তোর মুখের দিকেও তাকানো যাচ্ছেনা৷ সবটাই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। যেদিন তুই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাস সেদিন সকালে তোর রুমে গিয়ে দেখি দরজা খোলা। ভিতরে তোকে দেখতে পেলাম না। কিন্তু লক্ষ্য করলাম টেবিলের উপর একটা কাগজ ভাজ করে রাখা। ওটা তোর রেখে জাওয়া চিঠি ছিলো। প্রথমে আমি পড়ে খুশি হয়েছিলাম যে তুই এই নরক থেকে পালিয়েছিস৷ কিন্তু আবার নীল আর তোর ছেলের জন্য চিন্তা হয়।
তবে আমি ভেবেছিলাম তোর বাবা চিঠির কথাগুলো পড়লে হয়তো সে নিজের ভুল বুঝতে পারবে। তাই আমি তাকে ডেকে তার কাছে চিঠিটা দেই। তোর বাবা চিঠি পড়া শুরু করে
প্রিয় বাবা মা,
বাবা চোখে আর সেই প্রিয় বাবার মর্যাদা নাই তোমার। বাবাই বা বলছি কেনো? তুমি আমার বাবা হবারই যোগ্যতা হারিয়েছ। আমার তাজ্য করে দিয়েছো। জানো বাবা তারপরও আমি প্রতিদিন তোমার কথা ভাবতাম। একটা ভুল হয়তো করে ফেলেছি তবে আমি খুব সুখে ছিলাম বাবা। আর বাবা মায়ের কাছে তো নাকি সন্তানের সুখটাই আগে। তারপরও যেহেতু ভুল করেছি তাই রাগ করাটা স্বাভাবিক। এতো কিছুর পরেও হাল ছাড়িনি৷ আমার বিশ্বাস ছিলো আমার সন্তান হলে সবাই মেনে নিবে। কিন্তু মেনে নেওয়া দূরের কথা একটাবার দেখতেও আসলেনা৷ তবুও মা এসেছিলো এতেই একটু প্রশান্তি পেয়েছিলাম৷ আমি আমার স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক বেশি ভালো ছিলাম৷ তবে জানিনা সে সুখটা কেনো তুমি সহ্য করতে পারলেনা।
যেদিন তুমি আমাকে ফোন করো সেদিন আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এবার হয়তো আমাকে মেনে নিবে এবং তুমি বলেছিলে সেটা। আমিও তোমার কথায় বিশ্বাস করে তোমার একবার ডাকাতেই নিজের স্বামীকে মিথ্যা বলে তোমার কাছে গেলাম। জানো বাবা তুমি যখন আমার মাথায় হাত রাখলে তখন মনে আলাদা একটা প্রশান্তি কাজ করছিলো। তবে পরবর্তীতে তুমি যে কাজটা করলে তাতে আমার ভিতর থেকে তোমার জন্য ভালোবাসা চলে গেছে। তুমি আমার সংসার ভেঙে লোভে পড়ে আমাকে বিক্রি করে দিতে চাইছো। এমপির ছেলে একটা ধর্ষক, চাঁদাবাজ এটা সবাই জানে। তুমি সেটা জেনেও আমাকে তার কাছে বিক্রি করে দিতে চাইলে। তোমার তো সব ছিলো বাবা তাহলে কেনো তুমি লোভে পড়ে আমাকে বিক্রি করে দিতে চাইলে? তোমার এই সিদ্ধান্তে আমার নিজেকে পতিতা মনে হয়েছিলো তখন৷
বাবা মা নাকি তাদের সন্তানের জন্য সব কিছু করতে পারে তাহলে আমার বেলায় ভিন্ন হলো কেনো? কি দোষ করেছিলাম? আমার ভালোবাসাটা দোষ ছিলো নাকি সুখে থাকাটা? আচ্ছা একটা মানুষ এতিম বলে কি তাকে ভালোবাসা যায়না? জানো বাবা ছেলেটা এতিম হলেও মনটা পরিষ্কার। তোমার টাকা ওয়ালা বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিলে হয়তো বিলাসবহুল জীবন পেতাম তবে এতটা ভালোবাসা পেতাম না। আমি তো বরাবরই সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করেছি আমার তো এতো কিছুর দরকার ছিলোনা। শুধু একটু সুখ চেয়েছিলাম এবং সেটা পেয়েছিলাম আমি৷ ছোট ঘরে থাকা, স্বামীর জন্য নিজ হাতে রান্না করা, নিজের সংসারটাকে নিজের হাত দিয়ে সাজানোর মতো সুখ হয়তো অন্য কোথাও পাবোনা আমি৷ এতো সুখের পরও আমার কোলজুরে একটা ছেলে আসলো আর সুখটা দ্বীগুন করে দিলো। আসলে মানুষ ঠিকই বলে যে বেশি সুখ কপালে সইনা। তবে আমার সুখ যে আমার বাবাই সইতে পারলোনা এটার জন্য আমার অনেক আফসোস হয়। তোমার জন্য আজ আমার দুধেট ছেলেটাকে ছেড়ে চলে যেতে হলো। জানিনা নীল কীভাবে তাকে একা সামলাবে। তবে ওদের কারও কিছু হলে আমি দুনিয়া ত্যাগ করব।
চলে গেলাম আমি। তবে আমার কসম দিয়ে গেলাম। তুমি যদি নীলের বা আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি করো তাহলে আমি ফিরে আসব তোমার কাছে। তবে লাশ হয়ে৷ আমার নজরে তুমি এমনিতেই মরে গেছো আর নিজেকে ছোট করো না। আর মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। পারলাম না বন্দী হয়ে থাকতে৷ নিজেকে পতিতাদের মতো করে বিলিয়ে দেওয়ার চাইতে ভিক্ষা করব তাও খুশি আমি। নিজের খেয়াল রাখবে৷ বাবা ভবিষ্যতে কোনোদিন দেখা হলে নিজের মেয়ে বলে দাবি করবেনা৷ হয়তো আর দেখা নাও হতে পারে। মা তুমি ভালো থেকো। আমার জন্য একটুও মন খারাও করবেনা।
ইতি
তোমাদের অবাধ্য মেয়ে
আমি ভেবেছিলাম চিঠিটা পড়ে হয়তো তোর বাবা একটু নরম হবে। কিন্তু সেটা ছিলো আমার ভুল ধরনা। সে আরও ক্ষেপে গেলো। সাথে সাথে তার সব লোক দিয়ে তোর খোজ শুরু করলো। নীলের ক্ষতি করবে ভেবে আমি অনেক ভয় পাচ্ছিলাম। তবে জানিনা কিসের জন্য তিনি নীলের কোনো ক্ষতি করেন নি।
এদিকে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছিলো আর তোর বাবাও তোর খোজে দিনরাত এক করে দিচ্ছিলো। তবে ভাগ্য হয়তো তোর সাথে ছিলো। কারণ বিয়ের ১ দিন আগে সেই ছেলেকে ধর্ষণ মামলায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। একটা দুইটা না পুরো ৫ জন মানুষ তার বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা করে। সাথে এমপি কেউ তার পদ থেকে বহিস্কৃত করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে তোর বাবার মনে অনুশোচনা হতে থাকে তবে তারপরও নিজের ইগোর কাছে হার মানে। আমি তোর বাবার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা বলতাম না।
তুই সেদিন সত্যি বলেছিলি যে কারও সুখ ছিনিয়ে নিয়ে কোনোদিন সুখি হওয়া যায় না। তোর অভিশাপ হয়তো সত্যি কাজে লেগে গিয়েছিলো। এসবের পর তিনি সব সময় মনমরা থাকতেন৷ তবে আমি তার পাশে দাঁড়াইনি।
৬ মাস পর একদিন হঠাৎ খবর পাই তোর বাবা এক্সিডেন্ট করেছে। তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে গিয়ে শুনি তার মেরুদন্ডের স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগার ফলে তিনি আর কখনও হাঁটা চলা করতে পারবেন না। ১০ দিন পর তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর তার একমাত্র স্থান হয় হুইল চেয়ার৷ তার জন্য অনেক কষ্ট হতো। আমি সব সময় তার সেবা করতাম। এর মাঝে আবার ব্যবসাতে ধস নামতে থাকে। তবে ম্যানেজার সাহেব কোনো রকমে সবটা সামলিয়ে নেন৷
তোর বাবা সব সময় কান্না করতো। তবে কারণ জানলেও কোনোদিন জিজ্ঞেস করিনি। তোর উপর বা জামাইয়ের উপর তার কোনো অধিকার ছিলোনা। এভাবেই ৪ বছর ৮ মাস কাটে। তোর বাবা চাইতো যাতে তুই একবার ফিরে এসে ক্ষমা চাওয়ার একটা সুযোগ তাকে দিস৷ এই সময়ে শুধু বসে বসে কেঁদেছে। আমাকে যে একবার বলবে তারও সাহস হয়নি। আর বললেও আমার কিছু করার ছিলোনা। সেই এমপিও অসম্মান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলো আর তার ছেলের আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়।
তোর বাবার মারা যাবার ২ মাস আগে আমাকে বলে
তোর বাবাঃ আমার একটা কথা শুনবে?
আমিঃ বলো
তোর বাবাঃ শিলাকে একবার ফোন করে দেখবে?
আমিঃ কোন মুখে করব বলো?
তোর বাবাঃ প্লিজ একটাবার ফোন করে দেখো। এতো বছরে আমি বুকের ভিতর শুধু একটাউ কষ্ট জমিয়ে রেখেছি। ওর সাথে যদি একবার কথা বলতে পারি তবে মরে শান্তি পাবো আমি। আমার মনে হচ্ছে বেশি দিন বাঁচবনা আমি। আমার সব সম্পত্তি আমি শিলার নামে করে দিয়েছি। যদি কোনোদিন দেখা পাও তবে আমার তরফ থেকে ওর পাঁয়ে পড়ে ক্ষমা চেয়ে নিও। আমার পাপের শাস্তি তো অনেক পেলাম।
তারপর আগের সিমটা অন করে তোকে ফোন দেই। তবে নম্বর বন্ধ পাই। অনেকবার চেষ্টা করেও ফোনে পাইনি। ব্যর্থ হয়ে তোর বাবার কাছে গেলে প্রশ্ন করপ
তোর বাবাঃ ফোন ধরছে?
আমিঃ না। ওর নম্বর বন্ধ।
তোর বাবাঃ ওর বলা প্রত্যেকটা কথা আজ সত্যি হলো। ও বলেছিলো যে আমার মরা মুখটাও দেখবেনা আর সেটা মনেহয় সত্যি হবে। হে আল্লাহ একটা বার যদি ওর কাছে ক্ষমা চাইতে পারতাম। ( কান্না করে)।
আমিঃ এখন আর এসব ভেবেই কি লাভ? সময় থাকতে বুঝতে পারনি। তখন তোমার হাত পাঁ ধরেছি। আর আমিও আর কিছু করতে পারবনা। পুরোটা সময় তোমার সেবা করেই কাটিয়ে দিব।
তোর বাবাঃ আচ্ছা জামাইয়ের সাথে একবার কথা বলা যায়না?
আমিঃ কেনো এতিমের বাচ্চার কথার কথা তুলছ? কোনো এতিমের সাথে আমি যোগাযোগ করতে পারবোনা।
তোর বাবাঃ আমার এই অবস্থাতেও একটু দয়া হয়না? একটা বার তার সাথে কথা বলে আমাকে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ করে দাও। আমার নাতির মুখটা একবার দেখতে চাই। ওদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটা সুযোগ দাও।
আমি তোর বাবার এই অবস্থায় আর না করতে পারিনি। নীলকে আমি ফোন দেই তবে ওর ফোন ও বন্ধ দেখায়। আগের ঠিকানায় লোক পাঠায় তবুও নীলের কোনো খোজ পাওয়া যায়নি। শেষ ২ মাসে ওর কান্না আগের থেকে ১০ গুন বেড়ে যায়। চাইলেও শান্তনা দিতে পারিনি। হয়তো সে বুঝে গিয়েছিলো যে তার সময় আর নেই। ২ মাস পর তিনি মারা যান। চারে পাশের অশান্তিতে আমার মনটা পাথর হয়ে গিয়েছিলো। তার মৃত্যুতে আমার চোখ থেকে এক ফোটাও পানি বের হয়নি। আড়ালে যত কেঁদেছি তাতে সব শুকিয়ে গিয়েছিলো। তার জন্য অনেক দোয়া করেছি যাতে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
★বর্তমান★
কথাগুলো শুনে অনেক খারাপ লেগেছিলো। শিলাও অনেক কেঁদেছে তবে বলার মতো কিছু ছিলোনা৷ মা মেয়ে মিলে কান্না করছে। করুক মনটা হালকা হবে৷ একটু পর কান্না থামিয়ে শাশুড়ী বললো
শাশুড়িঃ মারে তোর বাবাকে মাফ করে দিস। বেচারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। হয়তো তোকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে তবে সব সময় কেঁদেছে লোকটা তোর কাছে ক্ষমা চাইবার জন্য। তোকে কষ্ট দিয়ে সে নিজেই তার থেকে কয়েকগুন বেশি কষ্ট পেয়েছে।
শিলাঃ অনেক রাগ, অভিমান আর ঘৃনা ছিলো লোকটার জন্য। তবে তিনি নিজেও তো ভালো ছিলেন না। হয়তো সেদিন আমার অভিশাপ দেওয়ায় ঠিক হয়নি। রাগের মাথায় কত কিছু বলে ফেলেছি। তবে আজ আমার আর কোনো রাগ নাই তার প্রতি। মন থেকে ক্ষমা করে দিলাম তাকে। নামাযে বসে বাবার জন্য দোয়া করব।
শাশুড়ীঃ একটু বস তুই। আমি আসছি।
শাশুড়ী আলমারি থেকে একটা ফাইল বের করলো। তারপর এসে বসলো। ফাইলটা শিলার হাতে দিয়ে বললো
শাশুড়ীঃ মা এইটা তুই রাখ।
শিলাঃ এটা কি মা?
শাশুড়ীঃ তোর বাবার সমস্ত সম্পত্তি। অফিসটা কোনো রকমে চলছে। আমি চাই সেটার দায়িত্ব তোরা দুইজন নিয়ে নে। আর এখানেই থেকে যা তোরা৷
শিলাঃ মা এটা আমি কিভাবে নিবো?
শাশুড়ীঃ মা না করিসনা। তোর বাবার শেষ সময়ে এসে এটা তোর আর জামাইয়ের জন্য দিয়ে গেছে। এটা তোর বাবার শেষ ইচ্ছা ভেবে তোর কাছে রেখে দে।
শিলাঃ আচ্ছা মা। তবে এসবের দায়িত্ব আমি তোমার জামাইকে দিবো। আমি ঘর সংসার করব।
আমিঃ না শিলা এটা হয়না। আমি এসব করতে পারবনা। তাছাড়া রফিক ভাই, বর্ণা আপু এদের কি হবে? ওদের ছাড়া আমি থাকতে পারবনা।
শিলাঃ দেখো নীল বাবাকে ক্ষমা করে দাও। আর দায়িত্বটা তুমি নিয়ে নাও। তুমি যদি সব কিছুর দায়ুত্ব নিয়ে নাও তাহলে মনে করব তুমি আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছো।
আমিঃ( মেয়েরা শুধু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে পারে) আচ্ছা তা নাহয় নিয়ে নিলাম তবে রফিক ভাইয়দের কি হবে?
শিলাঃ কেনো ওনারা আমাদের বাড়িতে থাকবেন। আন্টও আর মা দুজন সারাদিন গল্প করবে, রিফাত সবাইকে জ্বালিয়ে মারবে আর আমি সব কিছু সামলে নিবো।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে কি ওদের এখানেই চাকরির জন্য ডেকে নেই।
শিলাঃ আমি তো সেটাই বললাম৷ তুমি কালকে ফোন দিয়ে ডেকে নিও ওদের। আমি আংকেলের সাথে কথা বলে নিব।
আমিঃ আচ্ছা। মায়ের কাছে থেকে যাও আমি রিফাতের কাছে গেলাম।
শিলাঃ আচ্ছা।
আমি চলে গেলাম৷ সকালে উঠে দেখি শিলা নাস্তা তৈরি করেছে। কাজের মেয়েদের অন্য কাজ করাচ্ছে। আমি নাস্তা করে ছাদে গেলাম রফিক ভাইকে জানানোর জন্য। গিয়ে ভাইয়াকে ফোন দিলাম
রফিক ভাইঃ নীল কেমন আছিস তুই ভাই? আজ ৩ দিন পর ফোন দিলি তুই। একবারও আমার কথা মনে পড়েনি?
আমিঃ অনেক মনে পড়েছে। তাইতো এখন থেকে আমরা একসাথে থাকব।
রফিক ভাইঃ হুম তা কবে আসছিস?
আমিঃ আমরা না তোমরা আসছো।
রফিক ভাইঃ মানে?
আমিঃ মানে হলো………… ( সব খুলে বললাম)
রফিক ভাইঃ শুনে কষ্ট পেলাম তোর শশুরের জন্য বেচারি অনেক বেশি শাস্তি পেয়েছেন।
আমিঃ হ্যাঁ। আচ্ছা ভাইয়া তুমি আসছো কবে?
রফিক ভাইঃ সপ্তাহ দুয়েক দেরি করলে হয়না?
আমিঃ তুমি তাহলে ১০ দিনের মধ্যে আসো। আর কিছু আনার দরকার নেই। এই বাড়িতে সব কিছু আছে। তুমি শুধু দরকারি জিনিসগুলো মানে জামা কাপড় এসব নিয়ে আসো তাহলেই আবে। বাকি সব আসবাবপত্র এখানেই আছে।
রফিক ভাইঃ আচ্ছা। তাহলে আমি রিজাইন দিয়ে বর্না আর মাকে নিয়ে চলে আসবো ৭ দিনের মধ্যে৷
আমিঃ আচ্ছা। আপু কেমন আছে?
রফিক ভাইঃ কথা বলবি?
আমিঃ কথা বললে তো আপুকেই ফোন দিতে পারব। ৭ দিন পর সামনা সামনি দেখা হবে৷ আর ৭ দিনপর বেশি সময় নিলে তোমার সাথে কথা বলবনা।
রফিক ভাইঃ আচ্ছা ভাই আচ্ছা আমি ৬ দিনের মধ্যে আসব। তোর কিছু আনতে হবে?
আমিঃ কিছু জামা কাপড় নিয়ে আসতে পারো।
রফিক ভাইঃ আচ্ছা। আমি নিয়ে আসব।
আমি ফোন রেখে দিলাম৷ যাক আবার হয়তো একটা সুখের সময় আসতে চলেছে। আর ৩ দিন পর শুক্রবার। দেইদিনই ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে।
দুপুরে খাবার পর শাশুড়ী রিফাতকে নিয়ে ঘুমালো। আমি আর শিলা শুয়ে আছি। তখন আমি বললাম
আমিঃ তুমি বসকে সব বলেছো?
শিলাঃ হুম। সবটা বলেছি। ওনি অনেক খুশি হয়েছেন সবাইকে পেয়েছি জেনে।
আমিঃ তাহলে অফিসের বস কাকে বানাবে?
শিলাঃ কেনো সিফাত ভাইকে।
আমিঃ আচ্ছা। আর একটা কথা বলব?
শিলাঃ অনুমতি নিতে হবে?
আমিঃ না মানে বলছিলাম কি বলছিলাম কি বর্না আপু আর তুমি বাসায় থাকবে আর আমি আর রফিক ভাই অফিস সামলাবো এটাই বলতে চাইছিলাম৷
শিলাঃ আচ্ছা অনেক ভালো হবে। সংসার করার সুখটা পাব।
আমিঃ তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?
শিলাঃ এখন থেকে তো তুমিই বস। তুমি যা ভালো মনে করবে তাই করবে।
আমিঃ আচ্ছা।
শিলাঃ আচ্ছা নীল তোমার কি মনে হয়না আমাদের একটা বাচ্চা নেওয়া উচিৎ?
আমিঃ ধুর এই সময়ে কেউ এসব কথা বলে?
শিলাঃ আরে বলোনা৷
আমিঃ এসব পরে ভাবা যাবে। তাছাড়া রিফাতকে আগে মায়ের আদরটা দাও।
শিলাঃ এমন ভাবে বলছ যেনো আরেকটা বাচ্চা নিলে আমি রিফাতকে ভুলে যাবো।
আমিঃ আরে আমি এটা বলছিনা। মানে একটু সময় নাও।
শিলাঃ আচ্ছা।
বিকালে উঠে বাইরে হাটতে গেলাম৷ আগে যেখানে থাকতাম সেই জায়গাতে গেলাম৷ হেঁটে রাতের দিকে বাড়ি এলাম। খাওয়া শেষ করে শুয়ে আছি এমন সময় শিলা রুমের দরজা লাগিয়ে দৌড়ে এক লাফে বিছানায় উঠে পড়লো
আমিঃ এইটা কি ধরনের বাচ্চামি?
শিলাঃ বাচ্চামি না তবে বাচ্চা আনার জন্য যেসব করা লাগে সেগুলোই এখন করব।
আমিঃ তোমার মাথায় ভুত ঢুকেছে।
শিলাঃ তাহলে আদর করে তাড়িয়ে দাও।
আর কিছু বলতে যাবো তার আগেই শিলা নিজেই তার কাজ শুরু করে দিলো। কি আর বলব ভাই সবাই চোখ বন্ধ করেন নাহলে বিয়ে করেন😁
আজ শুক্রবার। তাই সকাল সকাল উঠলাম৷ শিলা জিজ্ঞেস করেছিলো এতো তাড়াতাড়ি উঠেছি কেনো? আমি বলেছি ঘুম আসছেনা। সকালে নাস্তা করে ৯টা ৩০ মিনিটে আমি ডাক্তাদের দেওয়া ঠিকানায় চলে গেলাম। অবশ্য আগের দিন কথা হয়েছে যে কোন জায়গায় উনি দেখা করবেন। আমাকে লোকেশন দিয়ে দিয়েছেন। আমিও সময় মতো পৌছে গিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছি। ১০ মিনিট পর ডাক্তার আসলেন। আমাকে চিনতে না পারলেও আমি তাকে ঠিকই চিনেছি। তাই তাকে ইশারা করে আমি যেখানে বসেছি সেখানে ডাকলাম। তিনি এসে আমাকে বললেন
ডাক্তারঃ সরি আসলে একটু দরকারী কারণে দেরি হয়ে গেলো।
আমিঃ আরে না না। কোনো ব্যাপার না। আপনি বসুন।
ডাক্তারঃ ধন্যবাদ। আচ্ছা আমাকে ডাকার কোনো বিষেশ কারণ?
আমিঃ আসলে আপনার থেকে কিছু জানার আছে।
ডাক্তারঃ কি জানতে চান?
আমি ফোন থেকে তুলা ছবি ডাক্তারকে দেখালাম। দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
আমিঃ এটা কি আপনার কাছে করা রিপোর্ট?
ডাক্তারঃ হুম আমার কাছে করা। ব্রেইন টিউমারের পেসেন্ট দেখছি। কিন্তু এই রিপোর্ট তো অনেক আগের।
আমিঃ জ্বী। এটার জন্যই ডাকলাম। আসলে এই পেসেন্টকে আপনি চিনেন?
ডাক্তারঃ হয়তো মনে আছে। দেখলে হয়তো চিনতে পারব। তবে এরকম পেসেন্ট তো অনেক এসেছে আমার কাছে। তবুও যদি ছবি দেখাতে পারেন তবে কিছু হতে পারে।
আমি আবারও ফোন থেকে শিলার একটা পিক বের করে তাকে দেখালাম। ডাক্তার ছবিটা দেখেই বলে উঠলো
ডাক্তারঃ ওওও এই মেয়েটা? অনেক ভালোভাবে মনপ আছে তাকে। আমি আজীবন তাকে ভুলতে পারবনা। তার জন্যই আজ আমি সুখে সংসার করছি৷ তার কথা গুলো জীবনে কাজে লাগিয়ে অনেক সুখি হয়েছি। যদিও সে আমার ছোট তবে অনেক বড় শিক্ষা দিয়েছেন তিনি আমাকে। আচ্ছা উনাকে আপনি কিভাবে চিনেন?
আমিঃ সব বলব তবে তার ব্যাপরে যা যা জানেন সব কিছু বলতে হবে।
ডাক্তারঃ আপনি তো তার ক্ষতি করার জন্যও এসব জানতে চাইতে পারেন।
আমিঃ আমি উনার স্বামী।
ডাক্তারঃ আচ্ছা আপনিই তাহলে উনার স্বামী? তাহলে আমার বলতে আর সমস্যা নাই।।
আমিঃ জ্বী বলুন।
★ডাক্তারে কথা★
এটা হয়তো আনুমানিক ৫ বছর আগের কথা হবে। আমি একটা অপারেশন করছিলাম। অপারেশন শেষে আমার চেম্বারে আপনার স্ত্রী শিলা আসে। আমার আরেকটা অপারেশন ছিলো তাই আমি তাকে তাড়াতাড়ি নিজের সমস্যাগুলো বলতে বলি। তখন তিনি বলেন
শিলাঃ আসলে আমি গত কয়েকদিন যাবৎ কিছু সমস্যায় পড়েছি। বেশি আলো সহ্য করতে পারিনা মাথা ব্যাথা হয়ে যায়। হালকা মাথা ব্যাথা সারাক্ষণ লেগেই থাকে৷ চোখে ঝপসা দেখি। আর দিন দিন কেমন জানি ঘুমও ভালো হয়না।
আমিঃ আচ্ছা আপনি সিটি স্ক্যান, এম আর আই, এক্সরে তিনটাই করে নিন। ৩ ঘন্টা সময় লাগবে রিপোর্ট পেতে। আর আমার একটা অপারেশন আছে এখন। আপনি গিয়ে পরীক্ষা গুলো করিয়ে নিন আর পারলে রিপোর্টটা দেখিয়ে যাবেন। কালকে আসলেও সমস্যা নাই।
শিলাঃ সমস্যা নাই ম্যাম আমি অপেক্ষা করবো।
এরপর আমি নিজের মতো অপারেশন করতে চলে যায়। ২ ঘন্টা পর শেষ হয়। বাকি সময়টা এমনি সাধারণ রোগি দেখছিলাম। সব শেষে আপনার স্ত্রী আসে রিপোর্ট নিয়ে। আমি রিপোর্ট গুলো দেখে একটু নার্ভাস হই। কারণ সচারচার এসব রোগের কথা শুনে অনেকে ভেঙে পড়ে। তবুও আমি তো মিথ্যা বলতে পারিনা। তাই বললাম
আমিঃ দেখুন আমি জানিনা আপনি কথাটা কিভাবে নিবেন তবে আপনাকে এটা বলতেই হবে।
শিলাঃ কেনো কি হয়েছে?
আমিঃ আপনার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বেড়ে উঠার আগেই অপারেশন করলে ভালো হবার সম্ভাবনা আছে। দেরি করলে ক্যন্সারে রুপ নিতে পারে। তখন বাঁচার আশা কমে যাবে। তবে এখানেও একটা সমস্যা আছে।
শিলাঃ কি সমস্যা?
আমিঃ আসলে বাংলাদেশে এটার ভালোভাবে অপারেশন সম্ভব না। আপনি যদি সিংগাপুরে অপারেশন করান তাহলে সুস্থ হবার অনেক বেশি সম্ভাবনা আছে কারণ এখন প্রাথমিক ধাপে আছে৷ কিন্তু এই রোগের আরেকটা খারাপ দিক আছে।
শিলাঃ কি খারাপ দিক বলুন প্লিজ।
আমিঃ ব্রেইন টিউমার সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হবেনা৷ আপনি সুস্থ হবেন কিন্তু পরবর্তীতে যেকোনো সময় আবার এটা প্রকাশ পেতে পারে। আর দ্বিতীয় বার প্রকাশ পেলে টিউমারে আক্রান্ত কোষ কেটে ফেলতে হয়। রিস্ক থাকে বেশি। সব চেয়ে বড় রিস্ক থাকে স্মৃতি শক্তি কম হয়ে যাবার। কারণ বুঝতেই পারছেন ব্রেইন অনেক সেন্সিটিভ অঙ্গ। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।
সেদিন ওনার চোখে আমি কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় দেখতে পেয়েছিলাম। যাই হোক ওনার ব্যাপরে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কারণ এতো রোগি আসে কাকে রেখে কাকে মনে রাখব? তবে ৩ মাস পর তিনি আবার আসেন। প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে চিনেছি। তিনি আসার পর বলেন যে তিনি সিঙ্গাপুরের অপারেশন করিয়ে এসেছেন ১ মাস আগে। তারপরও তিনি চেকআপ করার জন্য আসেন। আবার তাকে পরীক্ষা দেওয়া হয়। এবার আর কোনো সমস্যা ছিলো না। আমি রিপোর্ট দেখে ওনাকে বলি
আমিঃ আপনার এখন কোনো সমস্যা নেই। তবে আপনাকে ৩-৪ বছর অনেক সাবধানে থাকতে হবে। মানসিক চাপ নিতে পারবেন না। আর প্রতি ৩-৪ মাস পর একবার করে চেকআপ করাবেন।
শিলাঃ ধন্যবাদ ম্যাম। আমি আসি তাহলে।
তিনি চলে গেলেন৷ এরপর ৩ বছর আর কোনো সমস্যা হয়নি ওনার। হঠাৎ ৩ বছর পর আবারও তিনি আসেন। এবারও আসেন সেই প্রথমবারের মতো সমস্যা নিয়ে। আমি এবারও তাকে পরীক্ষা করতে বলি আর এবারও তার টিউমার ধরা পড়ে। তবে এবার টিউমার দ্রুত বাড়ছিলো। আমি তাকে ইমিডিয়েটলি আবারও সিঙ্গাপুর যাবার নির্দেশ দেই৷ এখন আমাদের এখানে প্রাথমিক ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা থাকলেও সেকেন্ডারি টিউমারের কোনো চিকিৎসা ছিলোনা। এবার তিনি বেশ ঘাবরে যান। সেদিন আমি তাকে কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করি
আমিঃ আচ্ছা আপনি বিয়ে করেন নি?
শিলাঃ হুম করেছি।
আমিঃ তাহলে প্রতিবার একা আসেন কেনো? এই সময় মেন্টাল সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। আপনার উচিৎ আপনার স্বামীকে নিয়ে আসা।
আমার কথা শুনে তিনি ফুপিয়ে কান্না করে দেন। তাকে একটু শান্ত করে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বলেন। উনার কথা শুনে আমি নিজেও কেঁদে ফেলি। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করি
আমিঃ আচ্ছা যতই হোক অন্য নম্বর থেকে তো যোগাযোগ করতে পারতেন।
শিলাঃ কিভাবে করব? আমারও অনেক ইচ্ছা হয় ওর সাথে কথা বলার, সব কিছু বলে বুকে মাথা দিতে ইচ্ছা করে। এখন আমি দূরে আছি জানিনা সে কিভাবে আছে তবে ছেলেটার জন্য নিজেকে ভালো রাখবে। কিন্তু ওকে ফোন দিলে ও আমার কাছে আসতে চাইবে কিন্তু আমার যে রোগ আমি যদি ওর চোখের সামনে মারা যায় তখন? আমি না থাকাতেও সুখে নেই তবে ওর চোখে সামনে আমি মরলে ও নিজেও মরে যাবে। জানেন খুব ভালোবাসে ও আমায়। তবে আমি ওকে ওর চাইতেও দ্বিগুন ভালোবাসি। তাইতো আমি চাইনা এই অবস্থায় ও ফিরে আসুক। এই যাত্রায় বেঁচে গেল আর ওকে দূরে রাখবনা। আচ্ছা এইবার অপারেশন করলে বাঁচা মরার ঝুঁকি কতখানি?
আমিঃ ৫০% বাঁচার সম্ভাবনা থাকে, ৩০% মারা যাবার আর ২০% বেঁচে থেকেও মরে যাওয়ার। মানে মেমোরি লস হবার সম্ভাবনা। থাকে।
শিলাঃ যাক শুনে ভালো লাগলে যে বাঁচার চান্স বেশি। আমি কালকেই সিঙ্গাপুর যাবো।
আমিঃ আপনাকে বেষ্ট অফ লাক। আল্লাহ যদি কোনো অঘটন না ঘটিয়ে ফেলেন তাহলে আপনি অবশ্যই আমার সাথে দেখা করে যাবেন।
শিলাঃ ইনশাআল্লাহ।
এরপর তিনি চলে যান। আমি শুধু বসে ভাবতে থাকি যে তার স্বামীর কথা ভেবে তিনি কত কি করছেন। তার ভালোর জন্যই দূরে থাকছেন অথচ আমি সেই সময় কাজের জন্য নিজের স্বামীর সাথে দূরে থাকতাম। ওকে একেবারে সময় দিতাম না৷ এর কারণে আমাদের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ে। ভেবেছিলাম সম্পর্ক শেষ হলে হবে আমি তো নিজের পাঁয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তবে সেদিন বুঝেছিলাম একটা মেয়ের জীবনে কাজের চাইতেও বেশি জরুরি তার স্বামী। সেদিনের পর থেকে আমি আমার কাজ কমিয়ে আমার স্বামীকে সময় দিতে থাকি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেঔ আমাদের সংসারে সুখ নেমে আসে। তার কিছুদিনের মধ্যে আমার গর্ভে সন্তান আসে৷ এই সবকিছু আপনার স্ত্রীর মুখ থেকে আপনার প্রতি ভালোবাসার কথা শুনে হয়েছিলো।
এরপর ৬ মাস পরে আবার উনি আমার কাছে আসেন। আমি নিজের অজান্তেই সেদিন তাকে ঝড়িয়ে ধরেছিলাম। আমার গর্ভে সন্তান থাকার ফলে আমি কিছুদিন পর বিরতিতে যেতাম। তার আগেই উনার সাথে দেখা হওয়াতে আমি অনেক বেশি খুশি হই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি
আমিঃ কেমন আছেন আপনি?
শিলাঃ আলহামদুলিল্লাহ। আজ আমি পুরোপুরি সুস্থ। ২ মাস আগেই সুস্থ হয়েছিলাম। তবে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে সময় দিচ্ছিলাম।
আমিঃ আপনি তাহলে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ?
শিলাঃ জ্বী। দ্বিতীয় বার অপারেশনের সময় আমার টিউমার কোষ কেটে ফেলেছিলো। এতে আমার কিছু সমস্যা হয়। তবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে।
আমিঃ অনেক ভালো একটা খবর শুনালেন। এখন তাহলে আপনি আপনার স্বামীর কাছে ফিরে যান।
শিলাঃ আমি আপাতত কিছু সময় একা কাটাতে চাই৷ নিজেকে একটু গুছিয়ে নি, একটু মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে আমি ফিরে যাব তার কাছে।
আমিঃ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শিলাঃ আমাকে কেনো?
আমিঃ আপনার কারণেই আমার সংসারে সুখ এসেছে। সেদিন যদি আমি আপনার জীবনের কাহিনী না শুনতে চাইতাম তাহলে বুঝতেই পারতাম না যে একটা নারীর জন্য সংসারটাই আসল। স্বামীর ভালোবাসায় সবচেয়ে বড় সম্পদ। আপনার কথাগুলোর জন্য আজ আমি সংসারে যথেষ্ট সময় দেই আর আমার ঘর আলো করে আমার সন্তান আসতে চলেছে।
শিলাঃ অভিনন্দন। তা কি বেবি হবে?
আমিঃ জানিনা আর জানার প্রয়োজন মনে করিনা৷ আল্লাহ যা দিবেন তাতেই খুশি। আচ্ছা একটু বসুন।
তারপর আমি উনার জন্য ২ কেজি মিষ্টি আনতে দেই। উনি না করেন নি কারণ তিনি জানতেন আমি অনেক খুশি ছিলাম৷ তারপর আমার স্বামীর বদলির জন্য আমি রাজশাহী চলে আসি। আমার ফোনটা চুরি হয়ে যাওয়াতে আর ওনাকে ফোন করতেও পারিনি। তবে জানেন কি, আপানি অনেক লাকি যে এমন একটা বউ পেয়েছেন৷ আমি দোয়া করি যাতে সারাজীবন আপনারা সুখে থাকেন।
★বর্তমান★
ডাক্তারের কথাগুলো শুনার পর আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেলো। আজ পর্যন্ত মেয়েটা শুধু আমার জন্য ত্যাগ করেই এসেছে। প্রথমে বাড়ি ত্যাগ করল, তারপর আমার ভালোর জন্যই আমাকে ছেড়ে গেলো, আমার যাতে কষ্ট না হয় তার জন্য নিজে সব কষ্ট সহ্য করলো। নিজেকে আড়াল করল আমার জন্য। সত্যিই তো আমার চোখের সামনে ওর কিছু হলে আমি মরেই যেতাম। আজ সত্যি আমার নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। আমি ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম।
বাড়ি আসার পথে আমি ভাবছি যে তাহলে আমার ধারনাই ঠিক ছিলো। ওর বাবার কারণে নয় আসলে ও আমাকে কষ্ট দিবেনা তাই আমার থেকে দূরে ছিলো। একটু আগেও হয়তো ওর জন্য আমার বুকে কিছুটা রাগ ছিলো। তবে এখন সব ভুলে গিয়ে ভালোবাসার পাহাড় জয়ে গেছে। বাড়ি ফিরার পথে ওর জন্য একটা শাড়ি কিনলাম। বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু না বলে রুমে গেলাম। শিলার সাথে বাড়ি ফিরার পর আর কথা বলিনি। ও অনেক বেশি অবাক হয়েছে। সারাদিন ওকে এড়িয়ে গেছি।
রাতে আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ করে শিলা আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আহা কি ফিলিংস। কিছুক্ষন মজা নিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। এরপর আমি যা করলাম তার জন্য শিলা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। সে আমার থেকে এটা আশা করেনি। খুশি খুশি চেহারাটাতে কালো মেঘের ছায়া নেমে আসলো। কারণ আমি যা করলাম……………
চলবে…………………..