হয়তো_ভালোবাসি Part_20

0
1816

হয়তো_ভালোবাসি
Part_20
#Writer_Eshetaq_Nora

বডিগার্ডঃ স্যার নেশা ম্যাম মারা গেছে।

লোকটিঃ হোয়াট?

বডিগার্ডঃ জি স্যার ম্যাম সুইসাইড করেছে।

লোকটিঃ ওহহ এখন নেশা কোথায়?

বডিগার্ডঃ স্যার ম্যামকে কবর দেয়া হয়ে গেছে।।আমি সেখান থেকেই আসলাম।

লোকটিঃ আর নীড়?

বডিগার্ডঃ ওনাকে ওইখানে দেখিনি।।যত দুর শুনেছি ম্যাম এর মৃত্যুর খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছে।।আর জ্ঞান ফিরেনি।

লোকটিঃ ওকে তুমি যাও।

বডিগার্ডঃ স্যার নীড় স্যারের খুনের ব্যাপার টা?

লোকটিঃ ওটা পরে দেখা যাবে তুমি এখন যাও।

বডিগার্ডরা চলে গেল।।লোকটি গিয়ে নেশার ছবির সামনে দাড়ালো। পুরোটা রুম জুড়েই নেশার ছবি।

লোকটিঃ তুমি এটা ঠিক করলে নাহ নেশা।।আমাকে ছেড়ে গিয়ে তুমি ঠিক করলে নাহ।।কি ভেবেছো তুমি মরে গেলেই আমি নীড়কে ছেড়ে দিবো।।ভুল নেশা।।যে তোমাকে আমার থেকে আলাদা করেছে তাকে আমি কিভাবে ছাড়ি।।তাকে তো আমি আরো আগে মেরে ফেলবো।।কিন্তু এখন নাহ।।এখন নীড়কে মারলে তো হবে নাহ।।তোমার মরার কারনে আমি যতোটা জ্বলছি ওতোটা ওকেও জ্বলতে হবে।। তাহলে আমার শান্তি।। মারলেই তো খেলা শেষ।।এতো তাড়াতাড়ি মারবো নাহ।।আগে ভিতর থেকে মরুক তারপর বাইরে থেকে মারবো।।কি বলো সুইটহার্ট

নেশার ছবির সামনে দাড়িয়ে কথা গুলো বলেই বাঁকা হাসলো লোকটি।।




১ বছর পর-

আজ নীড়ের বিয়ে।পুরোবাড়িতে আনন্দে বন্যা বয়ে যাচ্ছে।।চারপাশে মেহমানরা গিজগিজ করছে। হিয়া আর রিয়া মিলে কনেকে সাজাচ্ছে। হঠাৎ রুমে প্রবেশ করলো কথা।কনের হাতে একজোড়া বালা পড়িয়ে দিলো।

কথাঃ এগুলো নীড়ের বাবা নিয়ে এসেছে। কনের জন্য।।বালা গুলো সবসময় নিজের হাতে পরে রাখবে কেমন।

কনেঃ জি মামনি।

কথাঃ তোমায় কিছু কথা বলি।।তুমি তো জানোই নীড় এই বিয়েতে রাজি নাহ।।আমার জোড়াজুড়িতে রাজি হয়েছে।।বাট নেশার মারা যাওয়ার পর নীড় নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছে।।আমি চাই তুমি নতুন করে ওর জীবন সাজিয়ে তুলো।।পারবে তো তুমি নিহা।

[জি নীড়ের সাথে নিহার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।নেশার মরার কিছু দিন পরই নিহা ফিরে এসেছে।।কারন ওইছেলে নিহাকে ধোকা দিয়েছে।।তাই নীড়ের বাড়ি এসে সবার কাছে ক্ষমা টমা চায় আরকি।।আর সবাই ক্ষ্মা করে দেয়
।নতুন নায়িকা এনে টাইম নষ্ট করার দরকার কি।।তাই ভাবলাম পুরানোটাই চালায় দেই???।]

নিহাঃ হ্যা মামনি আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো নীড়কে আগের নীড় করে তোলার।।তোমরা যে আমায় এতো বড় ভুলের পর আবার বিশ্বাস করেছো এইটাই তো অনেক।।আমি তোমাদের বিশ্বাসের ভরসা রাখবো। কথা দিলাম।।

কথাঃ শুনে খুশি হলাম।।আচ্ছা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।।আমি দেখি নীড় রেডি হলো কিনা।

নীড়ের রুমে-

কথা রুমে ঢুকে দেখলো নীড় খাটে বসে নেশার ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে।।আজ আর সে কাদছে নাহ।।হয়তো চোখের পানি গুলো শুকিয়ে গেছে এতোদিনে।।
চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।।দাড়িগুলো বড় হয়ে গেছে।।কথা অনেক চেষ্টা করেও কাটাতে পারেনি।।ছেলেটা আজকাল কোন কথাই শুনে নাহ।।কারো সাথে কথাই বলে নাহ শুধু চুপ করে রুমে বসে থাকে।কথা এসে নীড়ের পাশে বসলো।।কিন্তু নীড়ের খবর নেই।। সে একমনে ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।।

কথাঃ নীড় বাবা রেডি হয়ে নে।।একটু পর তো বিয়ে।

নীড়ঃ হুম।

কথাঃ বাবা আর কতো দিন এইভাবে থাকবি।। আজ তো একটু হাসো।।তুই কেন বুঝিস নাহ তুই এভাবে থাকলে আমাদের কতোটা কষ্ট হয়।

নীড়ঃ বুঝছি তো মামনি।।তাই তো বিয়ে করছি তোমাদের খুশির জন্য।

কথাঃ নীড় এই সব কিছু তোর খুশির জন্য হচ্ছে নীড়।।

নীড়ঃ আমার খুশি কিসে তা তোমরা জানো মামনি

কথাঃ জানি কিন্তু নীড় এইভাবে আর কতোদিন।।নীড় যে চলে গেছে তাকে তো আর ফিরিয়ে আনতে পারবো নাহ।।নতুন করে সব শুরু করা যায় নাহ।

নীড়ঃ আমি রেডি হয়ে আসছি তুমি যাও।

কথা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চলে গেল। এই ছেলেকে কিছু বলেই লাভ হবে নাহ।।

কথা চলে যাওয়ার পর ও নীড় নেশার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।

নেশা বেচে থাকার সময় একদিন নীড় নেশাকে বলেছিল নেশাকে ছাড়া ও বাচবে নাহ।।উত্তরে নেশা বলেছিলো

নেশাঃ এইটা ভুল নীড়।।কাউকে ছাড়া কেউ বাচবে নাহ এইটা মিথ্যা।। দেখুন আমিও তো ভেবেছিলাম মামনি বাবাইকে ছাড়া আমি বাচবো নাহ।।দেখুন আমি দিব্বি বেচে আছি। মানুষের বাচার কোন না কোন লক্ষ্য ঠিকই এসে যায়।

সত্যিই তো নীড় এখনো বেচে আছে নেশাকে ছাড়া।।কিন্তু বেচে থাকার লক্ষ্য তো পায়নি।।মা-বাবার চাপে পরে আজ আবার বিয়েতে রাজি হতে হচ্ছে তাকে।কতো বার নেশার কাছে চলে যেতে চেয়েছে।।এইনিয়ে হয়তো ৮ বার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।।কিন্তু প্রতিবারই কোন নাহ কোন ভাবে বেচে গিয়েছে।নেশাকে বাচাতে পারলো নাহ অথছ আমাকে দিব্বি বার বার বাচিয়ে তুলছে।।।ব্যাপারটা নীড়ের কাছে খুব অবাক লাগে।।।

নীড় চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই কে যেন পিছন থেকে মাথায় বাড়ি দিলো।নীড়ের আর কিছু মনে নেই।

জ্ঞান ফিরার পর নীড় দেখলো সে একটা রুমের মধ্যে বন্দী। সামনে সেই লোকটি বসে আছে।

লোকটিঃ হেই নীড় হোয়াটস আপ ম্যান

নীড়ঃ কে আপনি।।আর আমায় এখানে কেন এনেছেন?

লোকটিঃ ওয়েট ওয়েট এতো প্রশ্ন একসাথে।।

নীড়ঃ ফাজলামো করছেন আপনি।।আমাকে এখানে কেন এনেছেন।

লোকটিঃতোমায় মারতে।

নীড়ঃ মারতে?।।প্লিজ কিল মি।।অনেকদিন ধরে মরার চেষ্টা করছি।।কিন্তু কোন না কোন ভাবে বেচেই যাচ্ছি।।আপনি ও ট্রাই করুন।।

লোকটিঃ মরতে তোমায় হবেই নীড়।।আমাকে জ্বালিয়ে তুমি বিয়ে করে সুখে থাকবে তা কি করে হয়।

নীড়ঃ মানে?

লোকটিঃ ভেবেছিলাম তুমি নেশার মৃত্যুতে কষ্টে থাকবে অথছ তুমি তো বিয়েও করে নিচ্ছো।।তা কি করে হয়।।আমাকে কষ্টে রেখে তোমাকে আমি সুখে থাকতে দেই কি করে

নীড়ঃ কিসের কষ্টে রেখেছি।।আমি তো আপনাকে চিনিই নাহ।।আর নেশার মরার সাথে আপনার যোগা সুত্র কি?

লোকটিঃ তুমি তো দেখা যায় তাহলে কিছুই জানো নাহ মি.নীড়।

নীড়ঃ কি জানবো??

লোকটিঃ নেশা কেন মরেছে জানো?

নীড়ঃ আমার সাথে রাগ করে!

লোকটিঃ ??নাহ নীড়। তোমায় বাচাতে।

নীড়ঃ মানে?

লোকটিঃ উফফ নীড় তুমি তো দেখা যায় কিছুই জানো নাহ।।আচ্ছা আমি তোমায় সব বলছি।।মরার আগে এইসব জানার অধিকার আছে তোমার।।আমি হলাম আবির।।আবির চৌধুরী।। লর্ড অফ ওল্ফ গ্রুপ।।
নেশার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় সিডনিতে ৩ বছর আগে।

।।।
।।।

।।।

চলুন আমরা ও যেনে নেই

৩ বছর আগে।
নেশা যখন সিডনিতে গিয়েছিলো আকাশের সাথে তখন আবিরের সাথে দেখা হয়।।আকাশ একজন বড় মাফিয়া হলেও আবিরের তুলানায় কিছুই নাহ।।আবির তার থেকেও বড় মাফিয়ার একজন।।কিন্তু আবিরের সাথে আকাশের ভালো বন্ধুত্ব ছিলো।তারা প্রায় সময়ই একে অন্যের বাড়ি যেত।।একদিন আকাশ নেশাকে আবিরের বাড়িতে নিয়ে যায়।।সেদিনই নেশাকে আবিরের ভালো লেগে যায়।।কিন্তু নেশা তাকে ভয় পেত।।নেশার বাবা মা মারা যাওয়ার পর নেশা এমনিতেই সবাইকে ভয় পেত।। আকাশ তাকে নর্মাল করার জন্য তার সাথে নিয়ে ঘুরতো।।আকাশ আবিরের সাথে নেশার সব কথাই শেয়ার করলো।আবির নেশাকে দেখে ভালো লাগে তাই আকাশকে বলে সে নেশাকে ট্রেইনিং দিতে চায় তার সকল ভয় দুর করার জন্য।।আকাশও তাকে বিশ্বাস করলো।।আর নেশাকে প্রতিদিন পাঠাতো।।আবির নিজের হাতে নেশাকে বন্দুক চালানো,চাকু চালানো সব শিখিয়েছিলো।। নেশাও খুব তাড়াতাড়ি সব শিখে গিয়েছিলো।কিন্তু সে আবিরকে খুব ভয় পেত।।আবিরকে সে অনেক বার খুন কর‍তেও দেখেছে।।সব কিছুর ভয় কাটিয়ে উঠতে পারলেও আবিরের প্রতি ভয় টা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। যতোটা সম্ভব তার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করতো।। কিন্তু কয়েকদিনে আবির নেশার প্রতি আরো দুর্বল হয়ে যায়।।নেশার প্রতি সে অদ্ভুত মাদকতা লাগতো।।সে নেশাকে বুঝাতো যে তার নেশাকে ভালো লাগতো।।কিন্তু নেশা তাকে এতোটাই ভয় পেত যে কথা তো দুরের কথা তার সামনে থাকলেই কাপাকাপি শুরু করতো।। আবির আকাশের সাথে কথাগুলো বলতে যাবে তার আগেই আকাশ আবিরকে তার ভালোবাসার কথা জানায়।।সে যে নেশাকে ভালোবাসে তা আবিরকে জানায়।।আবির আর নিজের কথা বলতে পারে নাহ।।নিজের বন্ধুত্বের কারনে নেশাকে আকাশের জন্য ছেড়ে দেয়। নেশা আবির আর আকাশের কথা আড়াল থেকে শুনতে পায়।।আর তখনই জানতে পারে যে আকাশ নীড়ের বাবা মা কে খুন করেছে।।সে দিন থেকেই নেশার নাটক শুরু হয়।। আকাশকে ভালোবাসার নাটক।।
সেদিনের পর থেকে আবির আর তাদের সাথে যোগাযোগ রাখে নি।।।কিন্তু যখন জানতে পারে আকাশ মারা গেছে তখন আবির আবার নেশার জীবনে ফিরে আসে।।আর পরের সব কিছু তো আপনারা জানেনই।।

নীড় সব কিছু শুনে অবাক।।

নীড়ঃ তারমানে ওইদিন নেসগার বার্থডে তে আপনি ওই গিফট টা দিয়েছিলেন।

আবিরঃ হুম আমিই ছিলাম।আসলে আমার নেকড়ে খুব পছন্দ।। আমার অনেক গুলো নেকড়ে আছে।।আর আমার গ্রুপের নাম ও ওল্ফ গ্রুপ।

নীড়ঃ তাহলে নেশা পিঠে ওই টেটুটা?

আবিরঃ হ্যা ওইটা আমারই আকা।।আমি জানতাম নাহ আকাশ ওকে ভালোবাসে।।তাই একদিন ওর পিঠে আমি ওটা একে দেই।ভেবেছিলাম ওকে আমার রাজ্যের রানি বানাবো।।ও হবে আমার কুইন।যদি ও নেশা তখন জানতো নাহ।।ওকে আমি অজ্ঞান করে নিয়েছিলাম।ও পরে জানতে পারে।।

নীড়ঃ তারমানে নেশা আপনার জন্য মরেছে?

আবিরঃ ইয়েস।।ও ভেবেছে ও মারা গেলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো।কিন্তু ও জানে নাহ আমি যখন বলেছি তোমার জান নিবোই?

নীড়ঃ তার মানে তুই আমার নেশার খুনের জন্য দায়ী।

আবিরঃ আরে কুল কুল।।এতো রাগলেও কিছু করতে পারবে নাহ।।তোমার বডিপার্টস আধা ঘণ্টার জন্য অবশ হয়ে থাকবে।।আর তার আগেই তুমি মরে যাবে।।?

বলেই নীড়ের দিকে বন্দুক তাক করলো।

আবিরঃ বায় বায় নীড়।।পরকালে সুখে থেকো।

বলেই বন্দুকের ট্রিগার টিপতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কেউ একজন আবিরের হাতে গুলি লরে দেয়।।আবিরের হাত থেকে বন্দুক টা পরে যায়।আবির আর নীড় দুইজনেই খুব অবাক।।আবর ভেবেছিলো কেউ জানে নাহ।।তাই কোন বডিগার্ড সাথে আনেনি।।কিন্তু কে নীড় কে বাচাতে এসেছে ভেবেই পিছনে তাকালো।।নীড় ও তাকালো।।

সামনে বন্দুক হাতে দাড়িয়ে আছে একজন।।য়ার সাথে কয়েকটা বডিগার্ড। ফেস টা দেখা যাচ্ছে নাহ।।ধীরে ধীরে সামনে এলো।।নীড় আর আবির দুইজনেই অবাক।।এটা কিভাবে সম্ভব।
সেই চিরোচেনা চোখ।।কিন্তু এই লুকে একদম অন্যরকম লাগছে।।মোটা করে কাজল দেয়া চোখে।।কয়েকজনকে ইশারা করলো তারা আবিরকে ধরে নিয়ে গেল।

মানুষটি কিছুক্ষণ নীড়ের দিকে তাকিয়ে চলে গেল।।যেন নীড়কে সে চিনেই নাহ।।

নীড়ঃ ননননেশায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া

চলবে?

( কিছু কইতাম নাহ।।সবার মনোভাব শুনমু)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে