হয়তো_ভালোবাসি
Part_16
#Writer_Eshetaq_Nora
নীড় জামা পাল্টে নেশার রুমে এসে দেখলো নেশা খাটে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।।চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে।
নীড়ঃ এই নেশা কি ভাবছো।।তোমার চুল থেকে তো পানি পড়ছে।।ভালো করে মুছোনি।
নেশার ভাবনায় ছেদ পরলো নীড়ের কথায়।নীড়ের দিকে তাকালো।
নেশাঃ একি আপনি।।জামা পাল্টালেন কখন
নীড় ভ্রু কুচকে নেশার দিকে তাকালো।
নীড়ঃ লাইক সিরিয়াসলি। ১ ঘন্টা হয়ে গেছে আমি এইখান থেকে গিয়েছি।
নেশাঃ ওহহ
নীড়ঃ কি হয়েছে নেশা।কিছু কি ভাবছো তুমি[ নেশার পাশে বসে]
নেশাঃ আপনি ওই সময় আমায় ছেড়ে দিলেন কেন
নীড়ঃ মানেহ??
নেশাঃ কি মানে।।বলুন নাহ ছেড়ে দিলেন কেন। ?
নীড়ঃ আরে বোকা কাদছো কেন।।দেখ বিয়ের আগে এইসব ঠিক নাহ।।এতে তোমারই ক্ষতি হতে পারে।
নেশাঃ তারমানে আপনি আমায় ছেড়ে দিবেন?
নীড়ঃ আরে আমি ওইটা কখন বললাম।আচ্ছা এখন জমা রাখি।বিয়ের পর লাভে আসলে শোধ করে দিব?
নেশাঃ হুম।
নীড়ঃ লাইক সিরিয়াসলি। আমার রোমান্স এর জন্য মুড অফ করে বসে আছো।।হাও কিউট?
নেশাঃ আমি ঘুমাবো। গুড নাইট।
নীড় হেসে লাইট অফ করে রুম থেকে চলে গেল।
নীড় ভাবছে নেশা তাকে কাছে পাওয়ার জন্য কথা বলছে।কিন্তু নেশা তো এইটা ভেবে জিজ্ঞাসা করেনি।ও মনে করেছে নীড় কিছু বুঝে গেছে তাই ওইসময় ওকে ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে।কিন্তু তাতো আর নীড় জানে নাহ।
।
।
পরেরদিন
সকালে সবাই ঘুরতে গেল।।সায়ানদের বাড়ির সামনের একটা পার্কে।
নীড় খেয়াল করলো কয়েকজন লোক তাদের সাথে তাদের পিছনে পিছনে আসছে।নীড় গিয়ে লোক গুলোকে ধরলো।
নীড় খেয়াল করলো লোকগুলো দেখতে কেমন যেন।।একটি বডিগার্ড টাইপের।
নীড়ঃ এই আপনারা এতোক্ষণ ধরে আমাদের পিছন পিছন আসছেন কেন???
নেশাঃ আমি ওদের নিয়ে এসেছি নীড়।
নীড়ঃ কেন!!
নেশাঃ ওরা আমার বডিগার্ড। ওরা আমাদের প্রোটেকশন দিবে।
নীড়ঃ কিন্তু কিসের প্রোটেকশন। এইখানে আমাদের কি হবে।
নেশাঃ জানি নাহ।।কিন্তু আমার মন হচ্ছে কিছু একটা গন্ডগোল আছে।
নীড়ঃ উফফ নেশা কুল।।এতো টেনশন কেন নিচ্ছো।।এইখানে কে আমাদের ক্ষতি করবে।।আর ওদের এইখানে থাকতে হবে৷ নাহ।।সবাই একসাথে ঘুরতে এসেছি।এমন বডিগার্ড সাথে থাকলে কেমন যেন লাগে।
নেশাঃ নীড় আপনি বুঝার…..
নীড়ঃ কোন কথা নাহ।।আমি যা বলেছি তাই হবে।
[ বলেই নীড় চলে গেল]
নীড়ঃ মনে মনে- কই ঘুরতে এসেছি বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করবো তা নাহ সারাদিন নাকি বডিগার্ড পিছন পিছন ঘুরবে। হুহ?
নেশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবাইকে চলে যেতে বললো।
তারপর নীড়ের পাশে গিয়ে বসলো।নীড় পার্কের ছোট ডোবার সামনে চেয়ারে বসে আছে।
নেশাঃ ওদের চলে যেতে বলেছি।
নীড়ঃ ওহহ[ ডোবার দিকে তাকিয়ে]
নেশাঃ আপনি কি কিছু ভাবছেন?
নীড়ঃ কই নাহ তো
নেশাঃ তাহলে কি রাগ করেছেন
নীড়ঃ আরে নাহ।।রাগ করবো কেন।।আসলে পরিবেশ টা অনেক সুন্দর তাই চুপ করে ফিল করার চেষ্টা করছি।তুমি ও করো।
নেশাও চুপ করে দেখতে লাগলো।সত্যিই পরিবেশ টা অনেক সুন্দর আর শান্ত।ডোবার মধ্যে ছোট ছোট সাদা রাজ হাস ভেসে বেড়াচ্ছে।আর সাথে দুইটা বড় রাজহাস। হয়তো তাদের বাবা মা হবে?।
নীড় হঠাৎ কোথায় যেন যেতে নিলো-
নেশাঃ একি আপনি কোথায় যাচ্ছেন
নীড়ঃ তুমি বস আমি যাবো আর আসবো।
নেশাঃ নাহ আমি ও আপনার সাথে যাবো।
নীড়ঃ আমি ওয়াশরুমে যাবো।
নেশাঃ তো কি চলুন।
নীড়ঃ তুমি কি আমার সাথে ওয়াশরুমেও যাবে
নেশাঃ তো কি হয়েছে ?
নীড় হেসে চলে গেল।।নেশা ব্যাপার টা বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেল।
আসলে নীড় গেছে একটা ফোন করতে তার বাড়িতে।।আজ নেশার বার্থডে কিন্তু নেশার তা মনে নেই।।তাই বাড়িতে সবাইকে জানিয়ে পার্টির ব্যবস্থা করলো।কিন্তু নেশাকে জানালো নাহ সারপ্রাইজ দিবে বলে।
নীড় বাড়িতে ফোন করে সবাইকে সব বুঝিয়ে দিলো।
তারপর নেশার কাছে ফিরে এলো।
নীড় আজ একটা ব্যাপার খেয়াল করলো। নেশা সবসময় তাকে চোখে চোখে রাখছে।নীড় যেখানেই যাচ্ছে নেশা সেখানেই যাচ্ছে।
নীড়ঃ নেশা তোমার কি কিছু হয়েছে
নেশাঃ কি হনে আবার।
নীড়ঃ তাহলে আমার পিছনে পিছনে ঘুরছো কেন।
নেশাঃ কই ঘুরছি।
নীড়ঃ ঘুরছো নাহ।আমার তো মনে হচ্ছে আমাকে পাহাড়া দিচ্ছো।
নেশাঃ আপনার যতোসব আজগুবি কথা।
নেশাঃ মনে মনে- দেখে যে আপনাকে রাখতেই হবে নীড়।।আমার যে খুব ভয় করছে।।কেন জানি মনে হচ্ছে নতুন কোন ঝড় আসছে।
নীড়ঃ এই নেশা কি ভাবছো।
নেশাঃ নাহ কিছু নাহ।
সারাদিন সবাই মিলে খুব মজা করে যে যে যার যার বাড়ি ফিরে গেল।।এইদিকে নীড়ের বাড়ি ফিরার কোন নাম নেই।সেই কখন থেকে গাড়ি নিয়ে এইদিক সেদিক ঘুরে যাচ্ছে।
নেশাঃ কি করছেন নীড়। বাড়ি যাবো তো।। রাত হয়ে যাচ্ছে তো।
নীড়ঃ হোক রাত। কিন্তু ৮ টার আগে বাড়িতে যাওয়া যাবে নাহ।।
নেশাঃ কেন ৮ টায় কি
নীড়ঃ মনে মনে- এইরে সব বলে ফেলেছি?।
নীড়ঃ ননাহ ককিছু নাহ।।আসলে বাড়িতে কেউ নেই তো তাই।।
নেশাঃ বাড়িতে কেউ নেই মানে।কোথায় সবাই।।আর আপনি এমন তোতলাচ্ছেন কেন।
নীড়ঃ উফফ এতো কথা কেন বলছো তুমি। দেখছো নাহ ড্রায়বিং করছি।
নেশাঃ হুহ?
নেশা গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।নীড় বুঝতে পেরেও কিছু বললো নাহ।কারন এখন এর রাগ ভাঙতে গেলে সব কথা বলতে হবে।।
ঠিক ৮ টায় নীড় নেশাকে নিয়ে বাড়িতে গেল।সব লাইট অফ।
নেশা ঘরে ঢুকতেই সব লাইট জ্বলে উঠলো। আর সবাই একসাথে হেপি বার্থডে বলে উঠলো।
পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে। আর সায়ান,ইমা,নিসু,রাফি ওরাও এসেছে।
নেশা তো মহা অবাক।।আজ যে ওর বার্থডে তা নেশার মনেই ছিলো নাহ।
নেশা সবার সামনে গিয়ে দাড়ালো।।সবাই একে একে ইউশ করলো।।।নেশা সবাইকে ধন্যবাদ দিলো।
কথাঃ ধন্যবাদ দেয়ার হলে নীড়কে দাও। ও সব করেছে।।আমরা তো জানতাম নাহ যে আজ তোমার বার্থডে।
নেশা নীড়ের দিকে তাকালো।এইজন্যই নীড় ৮ টার আগে বাড়িতে আসতে চায়নি।
নেশা কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলো।।খাওয়াদাওয়া করে সবাই সবার বাড়িতে চলে গেল।
নেশা নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাটে বসলো।খাট ভরা গিফট।
একে একে সবার গিফট খুলতে লাগলো।সবাই খুব সুন্দর সুন্দর গিফট দিয়েছে।কিন্তু একটা গিফট বক্সে কোন নাম নেই।।নেশা ভাবলো হয়তো নীড় দিয়েছে।।নেশা মুচকি হেসে বক্সটা খুললো।আর খুলেই হাসি উধাও হয়ে গেল। একটা লকেট বক্সটায়।আর সাথে একটা চিঠি। নেশার হাত কাপছে লকেটটা দেখে।।এইরকম গিফট যে শুধু একজনই দিতে পারে।।
নেশা কাপা কাপা হাতে চিঠি টা খুললো।।আর চিঠি টা দেখেই নেশা চিৎকার দিয়ে উঠলো
সবাই নিজে তাই কেউ নেশার চিৎকার শুনতে পায়নি।।কিন্তু নীড় উপরে ছিলো।।নেশার জন্য গিফট নিতে এসেছিলো রুমে।।নেশার চিৎকার শুনে দৌড়ে তার রুমে গেল।
নীড়ঃ এই নেশা কি হয়েছে??
নেশা তো কিছু বলার অবস্থায় নেই।প্রচন্ড ভয় পেয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
নীড়ঃ নেশা কি হয়েছে আমায় বলো।।
নেশাঃ নননীড়ড়ড় উউননি এএসে গগে…
আর বলতে পারলো নাহ অজ্ঞান হয়ে গেল।
নীড় নেশার কাছে ছুটে এলো।
নীড়ঃ এই নেশা কি হলো তোমার চোখ খুলো।।এই নেশা।
হঠাৎ নীড়ের চোখ গেল নেশার হাতে থাকা চিঠির দিকে।।চিঠিটা নীড় হাতে নিলো।একটা নেকড়ের ছবি আকা।আর নিচে কিং লেখা।নীড়ের মাথায় কিছুই ঢুকলো নাহ।এইটা কেমন চিঠি।আর কেই বা দিলো।
নীড় ওইদিকে মাথা না ঘামিয়ে নেশার চোখমুখে পানির ছিটা দিলো।।নেশার জ্ঞান ফিরলো।আস্তে আস্তে চোখ খুললো।
নীড়ঃ নেশা তুমি ঠিক আছো এখন(নেশার গালে হাত দিয়ে)
নেশাঃ হুম[ উঠে বসার চেষ্টা করে।নীড় উঠতে সাহায্য করলো]
নীড়ঃ কি হয়েছিলো নেশা। তুমি অজ্ঞান হয়ে গেলে কেন।
নীড় খেয়াল করলো নেশা এখনো চুপচাপ হয়ে আছে।।চোখমুখে এখনো ভয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
নীড় আর নেশাকে জোর করে কিছু জিজ্ঞাসা করলো নাহ।।
নেশা আস্তে আস্তে লকেট টা হাতে নিলো।
নীড় খেয়াল করলো।।লকেট টা দেখতে কেমন যেন।।খুব অদ্ভুত লাগছে।।মনে হচ্ছে কোন জন্তুর দাঁত দিয়ে লকেট টা বানানো হয়েছে।
নীড়ঃ এটা কে দিয়েছে নেশা?!!
নেশাঃ জানি নাহ।
নীড়ঃ মানে!!তাহলে এটা তোমার কাছে কিভাবে এলো?
নেশাঃ ওই বক্সটায় ছিলো।
নীর বক্সটা দেখলো।কোন নাম লেখা নেই।।তাই কে দিয়েছে বুঝা যাচ্ছে নাহ।
নীড়ঃ আর কিছু দেই নি।
নেশাঃ হুম। ওই চিঠি টা দিয়েছে।
নীড় খুব অবাক হলো। একতো এমন অদ্ভুত একটা চিঠি তার উপর এমন অদ্ভুত একটা লকেট।।
নীড়ঃ হয়তো কেউ মজা করেছে তোমার সাথে।
নেশাঃ হয়তো।( নেশা নীড়কে কিছুই বললো নাহ। যদিও নেশা খুব ভালো করেই জানে কাজটা কার)
হঠাৎ নীড়কে কথা ডাক দিলো।
নীড়ঃ নেশা তুমি বসো আমি আসছি।
নেশাঃ হুম।
নীড় চলে গেল।
নেশা এখনো লকেট টা হাতে নিয়ে বসে আছে।।কি করবে সে এখন।। যদি সত্যিই ও ফিরে আসে তাহলে যে নেশাকে নিয়ে যাবে।। ওকে যে আটকানো সম্ভব নাহ।আর আটকাবেই কিভাবে। আর নীড়ের যদি কোন ক্ষতি করে দেয়।।।নাহ নেশা কিছু ভাবতে পারছে নাহ।।কি করবে সে।।
রাত ১১ টায়।
নীড় নেশাকে নিয়ে ছাদে বসে আছে।নীড় নেশার দিকে তাকিয়ে আছে।।কিন্তু নেশার সেদিকে খেয়াল নেই।।সে তো আকাশের তারা দেখতে বিজি।।আজ সে যে কাজটা করতে চলেঁছে সেটা যে হবে তাতো নেশা কখনো ভাবেনি।কিন্তু এতেই যে নীড়ের ভালো হবে।
কথা গুলো ভাবছিলো নেশা।তার ঘোর কাটলো নীড়ের ডাকে।।নীড় তার সামনে হাটু গেড়ে বসে আছে।।হাতে আংটি নিয়ে।
নীড়ঃ নেশা তুমি কি আমায় আমায় তোমার জীবনের একটা পার্ট হতে দিবে।।তোমার সকালের ঘুম ভাঙার কারন হতে দিবে।তোমার সকল হাসির কারন হতে দেবে।।কথা দিচ্ছি আগের যতো কষ্ট দিয়েছি তার সব কিছু ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিবো।।কখনো তোমায় কষ্ট দিব নাহ।
নেশা তো যাস্ট থ।।কি বলবে সে এখন।
নীড়ঃ will you marry me Nesha
নেশাঃ কি বলছেন আপনি এগুলো নীড়
নীড়ঃ কেন কি বলছি তুমি বুঝছো নাহ।।প্লিজ এক্সেপ্ট মি নেশা।
নেশাঃ পাগল হয়ে গেছেন আপনি।।আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো নাহ।
নীড়ঃ কি সব বলছো তুমি নেশা।।বিয়ে করতে পারবো নাহ মানে কি( অবাক হয়ে)
নেশাঃ আপনাকে আমি কেন বিয়ে করবো।
নীড়ঃ মানে কি নেশা।।তুমি তো আমায় ভালোবাসো তাহলে বিয়ে করতে প্রবলেম কি।
নেশাঃ কে বলেছে আমি আপনাকে ভালোবাসি।।আমি আপনাকে হয়তো আগে ভালোবাসতাম।।কিন্তু এখন আর আমি আপনায় ভালোবাসি নাহ।
নীড়ের কথা গুলো যেন বিশ্বাস হচ্ছে নাহ।।কি বলছে এইসব। নেশা ওকে ভালোবাসে নাহ
নীড়ঃ তাহলে এ কয়দিন যা ছিলো ওগুলো কি।
নেশাঃ এগুলোকে আপনি ভালোবাসা মেনে নিলেন??।।আপনি আমায় সেই কবে থেকে ভালোবাসেন। তাই আপনার উপর আমার মায়া হয়েছিলো।।তাই এইকয়দিন আপনি কাছে আসলেও আমি আপনাকে বাধা দেইনি।।তাই বলে যে আমি আপনাকে ভালোবাসি তা আপনি কিভাবে ভাবলেন।।আর বিয়ে তো প্রশ্নই উঠে নাহ।
নীড় যাস্ট শক।।নেশা যে এগুলো বলতে পারে তাতো নীড় ভাবেই নি।।নীড় ভেবেছে নেশা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।।কিন্তু আজ কি বলছে এগুলো নেশা
।
।
চলবে?
( এহেম এহেম এহেম ?।।হাউ মাউ খাউ।রহস্যের গন্ধ পাই?)