হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-৫

0
1622

হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-৫

লেখাঃ sharix dhrubo

আরো কিছুক্ষণ ফোনে কথা বললো জংগী প্রধান। সেকেন্ড ইন কমান্ড কে ডাকলেন নিজের রুমে।
প্রধান – আমাদের সাইবার সেলের কি অবস্থা? কতটুকু একটিভ আছে।
কমান্ডার – অনেকদিন এক্টিভ ছিলো না তবে সবসময়ই প্রস্তুত আছে।
প্রধান – এক্টিভেট করো সবাইকে। আরো ব্লাক হ্যাট হায়ার করো। we have works to do.
কমান্ডার – নতুন কোন মিশন?
প্রধান – Yes. Lets prepare for war, Cyber war.
কমান্ডার – কিন্তু আমাদের ওয়েবসাইট তো কমপ্রোমাইইজড হয়ে গেছে। আমাদের সবার জীবন এখন ভয়ংকর বিপদে ঝুলছে। এর মধ্যে এমন একটা ডিসিশন নেওয়াটা।…….?
কমান্ডারকে ইশারায় থামিয়ে দিয়ে।
প্রধান – ওটা নিয়ে এখন না ভাবলেও হবে। She called. She’ll handle everything.
কমান্ডার – (অবাক হয়ে) She! Who!?
প্রধান – Mafia Girl.
কমান্ডার – The Mafia Girl!
প্রধান – Yes. Now go. Prepare for war.
NSA এর ডাইরেক্টরের কাছে একটা ইনফর্মেশন এলো, কে বা কারা অতি সন্তর্পণে রাফির হ্যাক করা ওয়েবসাইট ও তাতে থাকা ইনফার্মেশন রিলেটেড সকল ফাইল বের করে নিয়ে গেছে। কোনরকম এলার্ট ছাড়া এ তো একপ্রকার অসম্ভব। ডাইরেক্ট স্যার কিছুক্ষণের জন্য হলেও রাফির প্রয়োজন অনুভব করলেন।
ডাইরেক্টর – কিভাবে এতবড় একটা ঘটনা ঘটলো। আমি কোন কথা শুনতে চাই না। যেভাবেই হোক খুজে বের করো কে এই কাজ করেছে। জলদি।!!!
২ দিন পর,
জংগী প্রধানের প্রিন্টারটি অটোমেটিক রান করে কিছু একটা প্রিন্ট শুরু করলো। প্রিন্ট হতে হতে প্রধানের মোবাইলটা বেজে উঠলো। আননোন সোর্স।
কম্পিউটার জেনারেটেড ফীমেল ভয়েস
– (শান্ত গলায়) Did you got the list?
প্রিন্টার থেকে বের হওয়া কয়েকটি কাগজ তুলে নিলো প্রধান। বেশ কয়েকটা ওয়েবসাইটের একটা লিষ্ট। প্রিন্টারটি ঘরের ৮ টা ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের সাথে প্রাইভেট ওয়্যারলেস কানেকশন এ আছে। প্রধান ভাবলেন হয়তো ঘরেই আছে যার সাথে সে কথা বলছে সে। দৌড়ে সবাইকে বলতে যাবা ঠিক তখনই।
– (শান্ত গলায়) Don’t bother. I am not in your house but I know where you are. Did you get the list.?
-(ভয়ার্ত গলায়) Yyeess, yes.
– (কনফিডেন্টলী) Good. Then you know what to do. Start digging.
-(উৎকন্ঠা নিয়ে) WHAT ABOUT OUR WEBSITE? WE ARE FINISHED IF THE GOVERNMENT HAS IT.
– (শান্ত ভাবে) I got your website and other additional data from the source. Don’t worry. Now finish my job or I will finish you.
-(উৎকন্ঠার সাথে) Oookay, Consider it done.
লাইনটা কেটে যায়।

রাফি তো সম্পূর্ণ নতুন একটা জগতে এসে পড়ে। ট্রেনিং সেন্টারের কলেবর আর অবস্থান দেখলে কে বলবে যে এখনেই দেশের রাষ্ট্রীয় সাইবার যোদ্ধা তৈরী হয়। দরজার সামনে দিয়ে হেটে গেলেও মনে হবে না এখানে একটি ট্রেনিং সেন্টার আছে। সাইবার জগতের বাইরে হাজার লোকের ভীড়ে এমন লুকোচুরি করা যায় তা রাফির জানা ছিল না। ট্রেনিং সেন্টারের ৭০% আন্ডারগ্রাউন্ডে আর প্রবেশদ্বার কোন একটি রাষ্টায়াত্ব ব্যাংকের ২য় লকারের দরজা।
একজন মানুষকে যত ধরনের শারিরীক ও মানুষিক চ্যালেঞ্জ দেয়া সম্ভব, মোটামুটি সবই রাফিকে দেয়া হলো। Higher IQ র কারনে রাফিকে মানুষিক চ্যালেঞ্জগুলো টপকাতে বেশী বেগ পেতে হয় নি। তবে পুরা ট্রেনিং সেশনে রাফির সবচেয়ে পচ্ছন্দের কাজটি ছিলো লাইব্রেরীর বইগুলো পড়ে শেষ করা। দেশবিদেশের নামি দামী ও বেনামী লেখকের লেখা কোডিং ও হ্যাকিং সম্পর্কিত অপ্রকাশিত অসংখ্য বই যা ব্যান করে দেয়া হয়েছে। রাফি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় নি।
এই ৬ মাসে রাফির সাথে সাইবার দুনিয়ার সম্পর্কে ছিল না বললেই চলে আর রাফি আন্দাজ ও করতে পারে নি যে ট্রেনিং শেষে কি অপেক্ষা করছে তার জন্য।
সাইবার দুনিয়ায় নতুন করে ঝড় উঠলো, উষ্কানীমূলক হ্যাকিং শুরু হলো। এক এক করে ভারতের ৩০ টি উগ্রবাদী সাইট হ্যাক হলো। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কোন দেশ বা কোন হ্যাকার গ্রুপ এই দায়ভার স্বীকার করলো না। একইভাবে মায়ানমারেরও প্রায় সমপরিমাণ সাইট ডাউন হয়ে গেলো আর কোন গ্রুপই এর দায় নিলো না। এভাবে বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েকটি হামলা হলো কিন্তু কেউ দায় দায়িত্ব না নেয়ায় সবাই চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে থাকলো। এতগুলো হামলা অথচো কোন স্বীকারোক্তি কোন দায়ভার ছাড়া করার কোন কারন কেউ খুজে পেলো না। অবশেষে সবাই ধারনা করে নিলো হয়তো কোন একটি শক্তিশালী সংগঠন এই সকল আক্রমণ চালিয়েছে। এক এক বারে এক এক দেশ আক্রান্ত হয় এই সাইবার এ্যাটাকে। টানা মাসখানেক ধরে চলে বিভিন্ন দেশে এমন উদ্দেশ্যবিহীন সাইবার আক্রমণ। মাসখানেক বিরতী নিয়ে আবারো শুরু হয় সাইবার হামলা। আগেরবারের মত একই সিকুয়েন্সে দেশগুলো আক্রান্ত হতে থাকে কিন্তু সাইটের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। এবার প্রায় দুইমাস ধরে চলে এই তান্ডব। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও জানা গেলো না এসব কারা করলো, কি উদ্দেশ্য নিয়ে করলো। জল্পনার জট আর খুলতেই চাইলো না।

অবশেষে শ্বাসরুদ্ধোতর ৬ টি মাস শেষ হলো। ট্রেনিং শেষে NSA র মেরিট লিষ্টে নিজের জায়গা করে নিলো রাফি। One of the most brilliant Cadet on NSA history.
শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রাফি। কতদিন পর বাড়ি যাবো, কেমন আছে সবাই? এটা সেটা ভাবতে ভাবতে মাফিয়া গার্লের কথাও মনের কোনায় উকি দিলো। না জানি আবার কোন কান্ড বাধিয়ে রেখেছে সাইবার দুনিয়াতে।।।

বাসায় যাওয়ার পথে তাকে অফিসের গাড়ি রাস্তা থেকে পিকআপ করে নেয়। গন্তব্য, হেডঅফিস।

অফিসে এসে সবার প্রথমে ডাইরেক্টর স্যারের রুমে গেল।
রাফি – আসতে পারি স্যার?
ডাইরেক্টর – (খেয়াল না করে ফাইল ঘাটতে ঘাটতে) Come in.
রাফি – আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ডাইরেক্টর – ( খেয়াল করে ফাইল বন্ধ করতে করতে) আরে রাফি।। তোমাকেই খুঁজছিলাম মনে মনে , কনফারেন্স হলে চলে যাও (বলে অফিসের অপর প্রান্তে ইশারা করলেন).
ডাইরেক্টর – (টেলিফোনে) ইমার্জেন্সি টিম মিটিং। ৫ মিনিটের ভেতর আমার রুমে। Fast।
রাফি বুঝতে পারলো সিরিয়াস কোন ইসু তৈরী হয়েছে। তাই চুপচাপ গিয়ে কনফারেন্স টেবিলে গিয়ে বসলো। টেলিফোন রেখে ডাইরেক্ট স্যার ও চলে এলেন কনফারেন্স হলে।

ডাইরেক্টর- সবাই আসার আগে কিছু কথা সেরে নেয়া দরকার। তোমাকে যে ওয়েবসাইটটা হ্যাক করতে দেয়া হয়েছিলো সেই ওয়েবসাইটটি আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে আর সাথে ওই রিলেটেড সকল ডাউনলোডেড কপি ও। কে বা কারা এই কাজ করেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। এমনও হতে পারে এই প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কেউ ও এ কাজ করতে পারে। so trust no one untilled you finds out. Do you understand my point Mr. Rafi?

রাফি – Yes sir. Understood.
টিম মিটিং এ পুরো টিম ওয়েবসাইটির অবস্থা, ডাউনলোডেড ফাইল লোকেশন রিলেটেড সার্ভারের অবস্থা সহ ততকালীন ফায়ারওয়্যাল কন্ডিশন ও রাফিকে বুঝিয়ে দিলো।
একজন BCCAO (Bangladesh Cyber Crime Analysist Officer) হিসেবে রাফিকেই Executive Decision নিতে হবে।
রাফি সরাসরি চলে গেলো একসেস প্যানেলের ব্যাকডোর সার্ভারে যেখানে কে কখন কিভাবে কোথা থেকে কোন সার্ভারটা কখন ব্যাবহার হয়েছে এবং কি কি ফাইল একসেস হয়েছে তা চেক করতে। রাফি ভাবে এখানে অবশ্যই কিছু থাকার কথা। হ্যা এটা আছে যে ওই দিন কেউ একজন সার্ভারটি একসেস করেছিলো কিন্তু কে ও কিভাবে বা কোথা থেকে তার কিছুই এখানে নেই। একদমই ফাকা। কিভাবে সম্ভব…! যেন কেউ ইনটেনশনালী কাজটা করে সব লগ মুছে দিয়েছে।
“মাফিয়া গার্ল নয় তো?” মনে মনে বেজে ওঠে রাফির। জলদি গিয়ে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে রাফি, আজ টানা ৬ মাস পর নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে বসলো রাফি।
ঘাটতে ঘাটতে পেয়ে যায় একটা ক্লু। দেখতে MORSE কোডের মত লাগছে তাই রাফি ডি‌কোড করা শুরু করে।
ডিকোডেড রেজাল্ট ছিলো কয়েকটা ওয়ার্ড,
#Useless,won’t help
#cracking for you.
#Mafia girl
এটা দেখে রাফির মাথা আরো বিগড়ে গেল।
কেনই বা রাফিকে হেল্প করতে চায়? হেল্প করতে চায় বলে কি যা খুশি তাই করবে! একদম NSA সার্ভার হ্যাক!
হঠাৎ MORSE কোডে কিছু পরেবর্তন শুরু হয় যা নজর এড়ায় না রাফির। “এমন পরিত্যাক্ত ট্রাকের উপরও কন্ট্রোল রয়েছে মাফিয়া গার্লের? নাকি ডি‌কোড করার কারনে সিক্রেটলি মাফিয়া গার্ল টের পেয়ে গেলো আমার উপস্থিতি” রাফি ভাবতে ভাবতে ডিকোডিং শুরু করে। বেশ চমক দেয়া একটা মেসেজ পেলো রাফি।
#Welcome_back
#Here is your welcome back gift
#123.45.**.**.***

রাফি বুঝতে পারলো না মাফিয়া গার্ল ওকে আইপি এড্রেস কেন পাঠালো। কিন্তু আইপি এড্রেসটা পরিচিত লাগলো রাফির। ভালোভাবে দেখে রাফি পুদোদন্তু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। যে সার্ভার থেকে ওয়েবসাইটের ডিটেলস চুরি করা হয়েছিলো সেই সার্ভারের এড্রেস এটা । মানে মাফিয়া গার্ল এখনো বসে আছে NSA এর সার্ভারে। বাধ্য হয়ে সব সার্ভার সিস্টেম অফলাইন করার নির্দেশ দেয় রাফি। তারপর আইপি এড্রেস টাতে সার্ভার লিংক দিয়ে ঢুকলো রাফি। সেখানে Present নামে একটা নতুন ফাইল ।।। অবাক কান্ড। সকালে রাফি যখন এসে চেক করছিলো তখনও ছিলো না ফাইলটা। ফাইলটার ক্রিয়েশন টাইম ১ মিনিটস এগো অর্থাৎ মাত্র ১ মিনিট আগে ফাইলটা তৈরি হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন চলার কারনে সার্ভারটি আইসোলেট করা হয়েছিলো কিন্তু অফলাইন নয়। রাফি কিছুটা ভড়কে যায়। ফাইলটার স্ট্যাটাস ও বেশ বড়সড়। যাইহোক ফাইলটার ডিটেইল এনালাইসিস করে কোনরকম থ্রেট খুজে পেল না রাফি। ওপেন করলো ফাইলটা,, প্রায় ৫০ টার উপর ফোল্ডার আর ফোল্ডারগুলোর নামও এক একটা দেশের নামে। চোখ বুলিয়ে নিজের দেশের নামটাও দেখতে পেলো রাফি। কপাল কুচকে ফোল্ডারটা ওপেন করলো রাফি। খুলেই চোখ কপালে, যে জংগী ওয়েবসাইটটা নিয়ে এত তুলকালাম সেই ওয়েবসাইটের সব ছোট বড় ডিটেলস সহ ওই জংগী সংগঠনের দেশীয় হোতাসহ দেশীয় জংগী সাইবার সেলের সবব সদশ্যদের আসল নাম ও ছবি, বর্তমান ঠিকানা, ব্যবহৃত স্যাটেলাইট ফোন নাম্বার সহ সবধরনের পার্সোনাল ডিটেইলস। ৫০ টা ফোল্ডারে এমন কয়েক হাজার জংগী ও ব্লাক হ্যাট হ্যাকারদের ডিটেলস রয়েছে যা এক বিশাল ব্রেকথ্রু। আরো ঘেঁটেঘুটে কিছু নথি পেলো রাফি যা এই পুরো সংস্থাটির বৈদেশিক শাখার সাথে কানেকশন প্রমান করে। মানে এই ৫০ টির মতন দেশে এই একটা জংগী সংগঠন বিভিন্ন নামে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে কিন্তু এরা আসলে অভিন্ন কোন উগ্রপন্থী নয়! একটাই জংগী সংগঠন! তাহলে এদের মুল হোতা কারা!!!!!

আরো চলবে?
N, nxt, next, ন, f শুধু এগুলো কমেন্টে দিয়েন না। কিছু নিজের মন্তব্য লিখেন। এত কছু লেখার পর শুধু ওগুলো দেখলে লেখকের মন ভাড়ি হয়ে যায়। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে