হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-৪
লেখাঃ sharix dhrubo
(শরীরটা একটু খারাপ, তাই পর্বটা একটু ছোট হলো)
ডাইরেক্টর স্যারের অফিসের সামনে এসে দাড়ালো ওরা তিনজন, রাফি এবং দুই অফিসার। একজন অফিসার ভেতরে উঁকি দিয়ে রাফিকে ইংগিত করলো ভেতরে যাওয়ার জন্য।
রাফি – আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ডাইরেক্টর – (ফোনে কথা বলতে বলতে) ওয়ালাইকুমুস সালাম, ভেতরে এসো রাফি।
রাফি গিয়ে চুপচাপ স্যারের সামনে গিয়ে বসলো। স্যারের ফোনালাপ চলতে চলতে রাফি ঝট করে একনজরে দেখে নিলো। পরিপাটি সাজানো রুম। একপাশ দেখতে অনেকটা সরকারী কর্মকর্তার অফিস ডেস্ক হলেও অন্য সাইডটা সম্পূর্ণ আলাদা। একটা ছোট লাইব্রেরীর সাথে আল্ট্রা হাই টেক কনফারেন্স হল।
ডাইরেক্টর – দুঃখিত রাফি(ফোন রাখতে রাখতে), হম রাফি বলো? কেমন লাগলো আজকের টাস্ক কমপ্লিট করতে?
রাফি – অনেক বেশী হালকা লাগছে.
ডাইরেক্টর – ( কিছুটা কৌতুহল নিয়ে) হালকা লাগছে! ?
রাফি – জ্বী, আজ আমার অনেকদিনের স্বপ্নের একটি ধাপ পূরন করতে পেরে খুব হালকা লাগছে। আপনাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে অসম্ভব ভালো লাগছে।
ডিরেক্টর – বাহ। তোমার দেশপ্রেমের তারিফ করতে হয়।
(এর মধ্যে অফিসার ১ রুমে আসার পার্মিশন চাইলো, স্যার পার্মিশন দিতেই সে রুমে এসে স্যারের সামনে কিছু ডকুমেন্টস সহ একটা ক্লিপবোর্ড রাখলেন)
ডাইরেক্টর সেই অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বললেন সব ঠিকঠাকভাবে নিয়ে এসেছে কিনা?
অফিসার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
ডাইরেক্ট স্যার ডকুমেন্টসগুলোর উপরে চোখ বোলালেন আর তারপর একে একে সবগুলো পেপারে সাইন করে দিলেন। তার মধ্য থেকে একটি কাগজ সরাসরি রাফির দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
ডাইরেক্টর – নাও রাফি পড়ে দেখো।
কাগজটা নিতে নিতে রাফির বুকটা আবার ঢিপঢিপ করতে শুরু করলো, না জানি আবার কোন নতুন টাস্কের অর্ডার এলো।
কিন্তু কাগজটার দিকে চোখ পড়তেই রাফির চোখ চকচক করে উঠলো বোল্ড করা দুইটা শব্দ দেখে।
Appointment Letter! !!!!!
প্রচন্ড উত্তেজনায় রাফি কাঁপতে শুরু করলো। বাকীটা না পড়েই রাফি স্যারকে ধন্যবাদ দিতে চাইলো কিন্তু ডিরেক্টর স্যার রাফিকে পুরোটা পড়ার জন্য ইংগিত করলেন। তাই কিছুটা কৌতুহল মিশ্রিত উত্তেজনা নিয়ে রাফি পড়তে থাকলো।
এপয়েন্টমেন্ট লেটার অনুযায়ী রাফিকে তথ্য মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে ICT ডিপার্টমেন্টের একজন সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ডাইরেক্টর – এটা তোমার কভারআপ এপয়েন্টমেন্ট লেটার। তোমাকে যেন NSA সম্পর্কিত কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য। তোমার হাজিরা, বেতন সবকিছু NSA হয়ে তথ্য মন্ত্রানালয়ে রেকর্ড হবে।
স্পেশাল অপস ট্রেনিং এর জন্য তোমাকে টানা ৬ মাস পুরোপুরি তোমার চিরায়ত দুনিয়ার বাইরে কাটাতে হবে। No communication, no contact. তোমার অবর্তমানে তোমার পরিবারের সকল নীড পূরন করবে আমাদের দুইজন অফিসার। যে কোন ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন তারা হ্যান্ডেল করবে কিছু এক্সেপশন ছাড়া যেগুলো তুমি ছাড়া আর কেউ ফিলআপ করতে পারবে না, I think you understand what I mean.
রাফি বুঝতে পারলো যে তিনি Death emergency র কথা বোঝাচ্ছেন।
কিছুক্ষণের জন্য রাফি মাথা নীচু করে বসে রইলো। দেশের জন্য কিছু করতে চাইলে কিছু সেক্রেফাইস তো করতেই হবে।
রাফি – (মাথা তুলে) I understand and I am ready for duty, sir.
হয়তো এতটা দ্রুত এই উত্তর আশা করেছিলেন না ডাইরেক্টর, তাই বিষ্ময়ের সাথে রাফির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন।
ডাইরেক্টর – আজ থেকে ৭ দিন পর তোমার ট্রেনিং শুরু। সবার সাথে দেখা করে কথা বলে নাও কারন ৬ মাস তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে তোমাকে। Good luck, see you in 7 days.
ডাইরেক্টর স্যারের সাথে হাত মিলিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো রাফি। আর ভাবতে থাকলো কতটা কঠিন হতে চলেছে তার সাদামাটা জীবন।
সামনের ৬ মাসের নিঃসঙ্গতার কথা ভেবে ৭ দিনের পুরোটা সময় পরিবার বন্ধুবান্ধব আর আপনজনদের সাথে কাটাতে চাইলো রাফি। ৭ দিন টানা সাইবার জগৎ থেকে বাইরে থাকায় মাফিয়া গার্লের প্রতি চিন্তাটা কিছুটা ফিকে হয়ে গেলো রাফির।
৭ম দিনে সবার কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নিলো রাফি। মোবাইলটা ইচ্ছা করেই সাইলেন্ট মোড অন করে বালিশচাপা করে গেছে যেন সবাই ভাবে হয়তো ভুলে মোবাইলটা রেখেই চলে গেছে। যাওয়ার পথের বার বার ফিরে দেখছিলো সবাইকে, বলা ত যায় না, আল্লাহ না করুন ৬ মাস পর যদি আর দেখা না হয়।
——————————–
এদিকে প্রায় বছরখানেক ধরে সাইবার দুনিয়ায় নতুন এক প্রিডেটরের আবির্ভাব হয়েছে, কোডনেম মাফিয়া গার্ল। এতো অল্প সময়ে এতোটা ট্রেন্ডিং হওয়া একদমই ছেলেখেলা নয়। ইম্পসিবল কে পসিবল করা মাফিয়া গার্লের দাপট আর পারদর্শীতা সাইবার ওয়ার্ল্ডের সবাইকে মানতে বাধ্য করেছে যে মাফিয়া গার্ল এই সাইবার দুনিয়ায় রাজত্ব করতে এসেছে।
মাফিয়া গার্ল সম্পর্কে সবচেয়ে মজার ব্যাপর হলো এক বছর আগে মাফিয়া গার্লের কোন সাইবার হিস্ট্রি ই নেই। যেন খুব নিপুন ভাবে নিজেকে একটা Ghost এ রুপান্তর করে রেখেছে। এমনকি মাফিয়া গার্লের কর্মকান্ড তখনই মানুষের চোখে পড়ে যখন সে নিজ থেকে তা চোখে ফেলতে চায়। কমবেশি সব মারকুটে ওয়েব ডেভলপার আর ফায়ারওয়্যাল এক্সপার্টকে নিদারুণ নাকানিচুবানি খাইয়ে ছেড়েছে এই মাফিয়া গার্ল। কেউ কেউ তো মনে করে মাফিয়া গার্ল মায়ের পেট থেকে কমপ্লেক্স কোডিং শিখে সোনার CPU মুখে নিয়ে জন্মেছে। হাস্যকর হলেও আপনার সারা জীবনের সাইবার হিষ্ট্রি আর সাথে সকল অনলাইন একাউন্টের (সোস্যাল মিডিয়া, ব্যাংক, টপ সিক্রেট (!) ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য) ইউজার নেম ও একসেস কোড এমনকি ভুল করে দেয়া গুগোল সার্চ হিষ্ট্রিসহ সমস্ত ইনফরমেশন খুজে বের করতে মাফিয়া গার্লের সময় লাগবে কয়েক মুহুর্ত। রিয়েল লাইফে আপনি যদি ভয়ানক ইন্ট্রোভার্ট ও হয়ে থাকেন , সাইবার জগতে মাফিয়া গার্লের কাছে আপনি একটা ডিকোডেড ওপেন বুক।
হাসি উড়ে গেল তো?
মাফিয়া গার্ল এর ভয়াবহ ছোবলটা সাইবার ওয়ার্ল্ডের সামনে আসে পৃথিবীর নামিদামি একটা ব্যাংকের ঘটনা থেকে। ব্যাংকটাকে বলা যায় সারা দুনিয়ার সব কালো টাকার সুরক্ষিত লকার। মাফিয়া গার্ল বেছে বেছে কয়েক শো একাউন্ট হোল্ডারের অনলাইন একাউন্ট হ্যাক করে, তাদের একাউন্ট থেকে বিপুল অংকের টাকা সারা পৃথিবী জুড়ে নামিদামি চ্যারিটেবল ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট একাউন্টে ট্রান্সফার করে দেয়। মাফিয়া গার্ল তার কোডিং এতটা সূক্ষ্ম ভাবে তৈরি করেছে যে, ট্রানজেকশন কনফার্মেশন কল ও এস এম এস ট্রেস করে তা একাউন্ট হোল্ডারের মোবাইল থেকে ক্লোন করে একাউন্ট হোল্ডারের পূর্ববর্তী ট্রানজেকশন কনফার্মেশন কল এর রেকর্ডিং শুনিয়ে দেয় ও বর্তমান OTP ( one time password) ইনপুট করে দেয় যাতে করে ব্যাংক ও ট্রানজেকশন কনফার্ম করে দিতে পারে। এই পুরো বিষয়টিতে একাউন্ট হোল্ডারের কোন আঁচ পর্যন্ত লাগে না এই ট্রানজেকশনের ব্যপারে। সর্বশেষ ট্রানজেকশন কনফার্মেশন মেসেজটিও মোবাইল পর্যন্ত পৌঁছাতে দেয় না এই মাফিয়া গার্ল। মোট টাকার অংকটি লিখতে মিনিমাম ১১টি শুন্যের দরকার পড়ে। এত বড় ঘটনা ঘটাতে মাফিয়া গার্ল সময় নিয়েছিলো মাত্র ৯ দিন আর এই ঘটনার ভিকটিম কয়েক লাখ একাউন্ট হোল্ডার। একাউন্ট হোল্ডারদের বেশীরভাগই বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। ব্যাংক এবং একাউন্ট হোল্ডারগন তাদের মাস শেষের ট্রানজেকশন হিস্ট্রি ও প্রেজেন্ট এমাউন্ট দেখার আগ পর্যন্ত টের ও পায় নি যে তাদের মূল ব্যালান্স থেকে কয়েকজোড়া করে শুন্য কমে গেছে। ব্লাক মানি হবার কারনে এদের কেউই আইনের সাহায্য নিতে পারে নি।
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ অবশ্য মাফিয়া গার্ল এর এই তুখোড় বিচক্ষণতার সাথে সাইবার দুনিয়ায় দাপিয়ে বেড়াতে পারার একটা কারন আন্দাজ করতে পেরেছে।
হয়তো মাফিয়া গার্ল একটা নেক্সট জেনারেশন হাইব্রিড মাল্টি হেডেড ওয়ার্ম (হাইড্রা) কম্পিউটার ভাইরাস তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে যা এখন পর্যন্ত কোডার এবং হ্যাকারদের কাছে স্বপ্ন আর সাইবার সিকিউরিটি ও ফায়ারওয়্যাল এক্সপার্টদের জন্য একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন।
হাইড্রা এমন এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বা ভাইরাস যা সিমুল্টেনিয়াসলি কানেকটেড নেটওয়ার্কের সকল সার্ভার, আইপি এড্রেস, অনলাইন ডিভাইস, সহ সবকিছুর সিকিউরিটি এনক্রিপশন ভেঙ্গে ডিরেক্ট অথরাইজ একসেস করে দেয়। সহজভাবে বলতে হলে ধরে নিন এই পুরো সাইবার নেটওয়ার্কটি একটা আবাসিক এলাকা যার প্রতিটি ঘর এক একটি পার্সোনাল অথবা ডিভাইসের অথবা সার্ভারের আইপি এড্রেস এবং প্রতিটি ঘরের লক হলো ফায়ারওয়াল অথবা মাল্টিপল সিকিউরিটি সিষ্টেম। এমন একটি আবাসিক এলাকায় হাইড্রা হলো এমন একটা মাষ্টার কী যা দিয়ে খোলা যাবে না এমন কোন ডোর, উইনডো বা ব্যাকডোর লক এই আবাসিক এলাকায় নেই এবং সেজন্য মাফিয়া গার্লকে দরজায় নকও করতে হবে না। হাইড্রা এমনই ভয়ংকর কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা Nuclear lunch code ক্রাক করে lunch command initiate করতে সক্ষম।
কতটা ব্রিলিয়ান্সি আর কোডিং মিশ্রিত নিউরন নিয়ে জন্মালে এমন দুর্ধর্ষ আর ভয়ংকর একজন মাফিয়া গার্ল হওয়া যায় তা এখনো চিন্তাসীমার বাইরেই রয়ে গেছে।
এদিকে জংঙ্গী সংগঠনটি টের পেয়ে যায় তাদের ওয়েবসাইটটি হাতছাড়া হবার বিষয়টা। কিন্তু এতটা স্ট্রং ফায়ারওয়্যাল তুলে দিয়া হয়েছে ওয়েবসাইটটিতে যে সি প্যানেলের অথরাইজড ডেভলপার ও ইউজাররা তাদের মাষ্টার কী দিয়েও ওয়েবসাইটি একসেস করতে পারছে না। যখন সব জংগীগুলো যবুথবু হয়ে নিজেদের সকল হার্ড ইভিডেন্স নষ্ট করে গ্রেফতার এড়াতে ব্যস্ত ঠিক তখন জংগী সংগঠনটির প্রধান একটা আননোন সোর্স থেকে কল পেলো।
একটা কম্পিউটার জেনারেটেড ফীমেল ভয়েস
-(শান্ত গলায়) I can save you all, and also your website. But I want something in return.
-(ভয় আর উত্তেজনা নিয়ে)IF YOU CAN SAVE US, WE SHALL GIVE YOU ANYTHING YOU WANT, EVERYTHING YOU WANT.. …..
– (মুচকী হেসে কৌতুহলী হয়ে) Anything!?
-(উত্তেজনার সাথে) YES, YES, ANYTHING … WHATEVER YOU ASK.
– (অট্টহাসিতে) Ha Ha Ha Ha….
ভাল, খারাপ যেটাই হোক জানাবেন। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।