হৃদয়ের ঠিকানা পর্ব-০৪

0
1190

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৪র্থ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
আমার মামী আমাকে এতো ভালোবাসে তবুও আমি কেন যে মুখ ফুটে বলতে পারিনা, মামী আমি তোমার ছেলেকে ভালোবাসি। কাইফ ভাইয়া তো আমার থেকে একলাইন উপরে। সে তো তার মাকে বলতে পারতো যে সে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু না,
সে কখনো বলেনি আমাকে ভালোবাসার কথা।

মিতু আপুকে পছন্দ করে তো বলেছেই তাহলে আমার এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে। আমি বরং আমার ঘরে যাই।

আমি আমার ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কাইফ ভাইয়া বলে ওঠে,
– ওই ঘরে মিতু থাকবে যে কয়দিন এখানে আছে। তুই কোথায় থাকবি সেটা তো বলেই দিয়েছি। নিজের ঘরে যা এখন।

আমি এই বাড়ির আশ্রিতা, এরা যা বলবে আমাকে শুনতেই হবে, খুশি মনে কিনবা কষ্ট পেয়ে। আমি সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলি,
– আমি এখনি স্টোর রুমে যাচ্ছি কাইফ ভাইয়া।

এই বলে আমি স্টোর রুমের দিকে যেতে লাগলাম। আমার যাওয়া দেখে কাইফ ভাইয়া বলল,
– আমি বললাম আর চলে যাচ্ছিস? তোর বালিস, কাথা, জামা-কাপড় কে নিয়ে যাবে ওই ঘরে? ওইগুলো সহ স্টোর রুমে যা।

আমি ঘুরে আমার ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। মামী আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে দাড় করালো। রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
– তুই যদি ওই ঘর থেকে একটা জিনিস বের করিস আমার মরা মুখ দেখবি।

মামীর এই কথায় ভালোবাসা ছিলো নাকি অন্য কিছু ছিলো আমি ঠিক বুঝতে পারিনি তবে হঠাৎ করেই আমার মনে বড্ড অভিমান জমলো। একজন বলছে যাও একজন বলছে যেওনা, যেন আমাকে নিয়ে মা-ছেলে মজা করছে। আমি অসহায়ের মত চুপ করে দাড়িয়ে থাকলাম। মিতু আপু আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

– সাওদা কেন অন্য কোথাও শুয়ে থাকবে! আমরা দুইবোন এক ঘরে থাকবো। ঠিক বলেছি না সাওদা?

আমি মিতু আপুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে বললাম,

– সবাই যেটা সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেখানেই থাকবো।

মিতু আপু একটু অভিমানী স্বরে বলল,

– আমিই মনে হয় নষ্টের গোড়া। আমিই চলে যাচ্ছি।

মিতু আপুর এমন কথা শুনে কাইফ ভাইয়া আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো, যেন আমি কোনো বড় অপরাধ করেছি। আমার থেকে চোখ ফিরিয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,
– তুই চলে যাবি মানে? যাওয়ার কথা বললে তোর কপালে শনি ডাকবে।

মিতু আপু কাইফ ভাইয়াকে বলল,
– তুই নতুন একটা বাড়ি কেন বানাচ্ছিস না?

– ভাই রে ভাই, আমি এখন পড়াশোনা শেষ করলাম এখনই কিভাবে সব করবো! একটা চাকরি তো করি আগে।

মিতু আপু বলে,
– যে একটা কোম্পানির পার্টনার সে চাকরি করবে। বাহ বাহ! চলো সাওদা আমরা নিজেদের ঘরে যায়।

– ওরে তুই এই অংক বুঝবিনা। একদিন সব বোঝাবো তোকে। এখন যা ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে।

এরপর মিতু আপু আমার হাত ধরে আমার ঘরে নিয়ে আসলো। আমাকে খাটে বসিয়ে আমার পাশে বসে বলল,
– তুমি কি কাইফের কথায় কষ্ট পেয়েছো? ওর হয়ে আমি তোমার কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি।

বাহ বাহ। এতো তাড়াতাড়ি সব হয়ে গেলো। ওর হয়ে আমি মাফ চেয়ে নিচ্ছি! এতোদুর গড়িয়ে গেছে! তারমানে আমি কি তাহলে একটা ফান ম্যাটেরিয়াল ছিলাম। কাইফ ভাইয়া ভালোবাসি ভালোবাসি বলে কি তাহলে আমার সাথে মজা করতো!

আমার চুপ থাকা দেখ্ব মিতু আপু বলল,
– তুমি কি ভাবছো? এখনো ওকে মাফ করতে পারোনি?

বাব্বাহ মাফ চেয়েই শুনবে যে দেখছি। আমি মিতু আপুকে বললাম,
– মাফ চাওয়ার কিছু নেই আপু। এই বাড়িটা তার সে যা বলবে আমাকে তাই শুনতে হবে। একজন আশ্রিতাকে আর কত যত্ন করবে তারা। আমাকে যথেষ্ট কেয়ার করে এ বাড়ির সবাই। মামা দেশে থাকেনা তবুও মামীর কাছে কখনো ভালোবাসার ঘাটতি পাইনি আমি। নিজের সন্তানের মত আগলে রেখেছে।

মিতু আপু বলল,
-তুমি বসো আমি একটু আসছি৷

এরপর সে চলে গেলো। আমি চুপচাপ খাটের উপর বসে রইলাম। হটাৎ মেঘের গর্জন শুনতে পেলাম। হয়তো একটু পর বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টির শুরুর মুহুর্তটাকে আমি মিস করতে চাইনা তাই দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম। আমার মন খারাপ থাকলে বৃষ্টি আমার মন ভালো করে দেওয়ার ঔষধ হিসেবে কাজ করে।

ছাদে পৌছে দেখলাম হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আমি ঠিক মাঝখানটাই যেতেই ঝুম করে বৃষ্টির গতি বেড়ে গেলো। আমি দুই হাত মেলে বৃষ্টিকে স্বাগত জানাতে লাগলাম। আজকে আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। যে কাইফ ভাইয়া আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবনায় থাকতো আজকে সে আমাকে স্টোর রুমে শোয়ার জন্য বলছে। আমাকে যেন সে জেনেশুনেই অবহেলা করতে চায়।

আমার কষ্ট আজকে বৃষ্টির যাথে ধুয়ে যাচ্ছেনা। বরং বেড়েই চলেছে। সিদ্ধান্ত পালটে আবার ঘরে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। আমি ঘরে ঢুকবো তার আগেই আমার ঘরের ভিতর থেকে মিতু আপু আর কাইফ ভাইয়ের গলা শুনতে পেলাম।

কাইফ ভাইয়া একটু রাগীস্বরে বলছে,
– তুই খুব বেশি বুঝিস? ওকে কেন এই ঘরে রাখার কথা বললি বলতো? ও থাকলে আমি কি এই ঘরে আসতে পারবো?

বড্ড হাসি পেলো এই কথা শুনে৷ তবে এই হাসি মজা পাওয়ার হাসি না। বরং তাচ্ছিল্যের হাসি। যে মানুষ আমার বিনা অনুমতিতে যখন তখন এই ঘরে প্রবেশ করতো আজকে নাকি আমি তার বাধা হয়ে দাড়িয়েছি৷ আমার এখন এই ঘরে থাকা উচিৎ না। আমার উচিৎ এখন মামীর ঘরে মামীর কাছে শোয়া৷

আমি এমন একটা ভাব নিলাম যেন আমি কিছুই শুনতে পাইনি। ঘরের ভিতরে ঢুকতেই মিতু আপু বলল,
– একি সাওদা তুমি হঠাৎ ভিজে গায়ে কেন? বৃষ্টিতে ভিজছিলে বুঝি?

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানাই। মিতু আপু কিছু বলতে গেলে কাইফ ভাইয়া তাকে বাধা দিয়ে বলে,
– সাওদা তুই বরং তোর পোশাক নিয়ে আমার ঘরের ওয়াসরুমে যা। আমি আর মিতু একটু গল্প করছি।

আমি কথা না বাড়িয়ে কাভার্ড থেকে আমার পোশাক নিয়ে কাইফ ভাইয়ার ঘরে চলে আসি। ওয়াসরুমে ঢুকেই মনে হলো কেন এই লোকটার ঘরে এলাম। একদিনেই আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে ফেলেছে লোকটা। আমিতো মামীর ঘরের ওয়াসরুমে গেলেও পারতাম। যায়হোক সময় নষ্ট না করে আমি। পোশাক পালটে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এলাম।

ঘর থেকে বের হবো ঠিক তখনই দেখলাম কাইফ ভাইয়ার টেবিলে একটা বই বা ডায়েরি জাতীয় কিছু খুলে রাখা রয়েছে৷ ওটা বন্ধ করে দিতে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম। ডায়েরিই ছিলো ওটা, বন্ধ করতে যাওয়ার আগে হঠাৎ মনে হলো চুপিচুপি কাইফ ভাইয়ার ডায়েরির কিছুটা পড়ি। শুরু থেকে পড়বো নাকি শেষ থেকে ভাবতে লাগলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আজকাল কি লিখেছে সেটা পড়তে হবে। তাই শেষের দিকের পৃষ্ঠা উলটে দেখলাম৷ প্রায় দেড় পেইজ মত লেখা আছে তবে এখবো সম্পুর্নটা লিখে শেষ করেনি। যতটুকু আছে ততটুকুই পড়তে লাগলাম,
‘সাওদা আমাকে মাফ করে দিস। তোকে কষ্ট দিতেই হবে। তুই সব বুঝেও না বোঝার ভান করিস আমি জানি৷ এর এটাও জানি তুই আমাকে কতটা ভালোবাসিস। তুই ভেবেছিস আমি কিছুই জানিনা তোর মনের কথা! কিন্তু তুই ভুল রে। তুই কোনোদিন কিছু না বললেও জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস। কিন্তু সব প্রেমিকের একটা ইচ্ছা থাকে সে তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনবে। আমিও এর ব্যাতিক্রম নই। তুই হয়তো ভাবিস আমার মা এটা মেনে নেবে না৷ কিন্তু তোর মনে হয় এটা জানা নেই যে তোর জন্মের আগেই যখন সবাই জানতে পারে ফুফুর মেয়ে হবে মানে তুই হবি তখন মা ঠিক করে রাখে তোর আর আমার বিয়ে হবে। কিন্তু তুই তোর মনের ভিতর আগাম সবকিছু সাজিয়ে বসে আছিস। এজন্য মিতুকে এখানে আসতে বলেছি৷ আমি জানি তুই ওকে আমার সাথে বেশি বেশি দেখলে সহ্য করতে পারবিনা তাই মনের কথা বলে দিবি৷ আমি জানি তোর মনের কথা তবুও তোর মুখে শুনিবোই কারণ…..

এরপর আর কিছু লেখা নেই বা হয়তো আছে কিন্তু আমার আর পড়ার ইচ্ছা নেই। আমি সব সময় ভুল ছিলাম এখনও ছিলাম। ভাগ্যিস এইখানে এসেছিলাম নাহে হয়তো জানতেই পারতাম না আমাকে নিয়ে মামীর মনে কি চলে। ইশ! বড্ড লজ্জা লাগছে আমার।

কাইফ ভাইয়ার প্লান শুরুর আগেই ভেস্তে গেলো ভাবতেই হাসি লাগছে বড্ড। কি দরকার ছিলো ডায়েরি খুলে রাখার হাহাহা।

বৃষ্টিতে ভিজেও যে কষ্ট কমেনি এইমাত্র এই ডায়েরিটা পড়ে তার থেকে কয়েক গুন বেশি সুখে মনটা ভরে উঠেছে। ইচ্ছা করছে এখনি কাইফ ভাইকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলি, কাইফ ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি।

হয়তো ভালোবাসি বলতে গিয়ে কাপাকাপা গলায় সব কথা ঠিকভাবে বের হবেনা। কাইফ ভাইয়া কি সব কিছু ঠিক ভাবে বুঝে নিতে পারবে!
,
,
চলবে
,
,
রিচেক দেওয়া হয়নি তাই দয়া করে বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে