হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ২২
জামিয়া পারভীন তানি
“ জীবন, রঙ বদলায়।
প্রেম, বারবার কাঁদায়। ”
সজীবের কথায় সাইমা হাসে, আর বলে,
“ আচ্ছা তাইইই! সেজন্যই বুঝি বারবার পাল্টি খাও।”
“ কথা টা আসলেও এমন না সাইমা, যেমন টা তুমি মিন করছো!”
“ তাহলে কেমন?”
“ জীবনের টানাপোড়েন এ কখনো কখনো মানুষ ডিপ্রেশন এ ভুগে। তুমি কখনো আমাকে ডিপ্রেশন কাটাতে সাহায্য করোনি। ”
“ তাহলে আমি শুধু তোমায় কষ্ট দিয়েছি এটাই বলছো?”
“ সেটাও বলছিনা, ভালোবাসার মানুষ থেকে কষ্ট পাওয়া টাই স্বাভাবিক। যারা কাছাকাছি থাকে তাদের মাঝেই তো ঠুকাঠুকি বেশী হয়। আবার সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলে দুটো মানুষ পাশাপাশি দিব্বি চলতে পারে।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
“ যাই হোক, তোমার ছেলে কে দেখে রাখো। আমি রান্না করে রেখেছি, টেবিলে সাজাই আগে।”
°°°
শিম্মি কানে চুমু অনুভব করে, পিছনে ঘুরে দেখে আলিফ দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। শিম্মির মুখ লাল হয়ে যায়, আলিফ তখন বলে,
“ হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে, হুহহহ!”
“ মজা করতে এসোনা, যাও ওর কাছে। ওকে গিয়ে হাজার টা চুমু খাও। আমার তাতে কি!”
“ পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। ওহহ তাইতো বলি আমার শিম্মির বুকের ভিতর টা পুড়ে যাচ্ছে। কই দেখি একটু…” বলেই শিম্মির আঁচল টা সরিয়ে দেয়। শিম্মির গলায় ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।
মাঝরাতে আলিফ খেয়াল করে বুক টা ভেজা ভেজা লাগছে। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে খেয়াল করে শিম্মি চোখের পানি আলিফ কে ভিজিয়ে দিয়েছে। আলিফ শিম্মি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, আর কপালে অজস্র চুমু দেয়।
“ কতটা কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা, জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে শুধু কষ্ট ই পাচ্ছে। ”
আলিফের খুব কষ্ট হয়, মেয়েটার প্রতি মোহ বেড়ে যাচ্ছে। ওকে কিছুতেই কাঁদতে দিতে চায় না, তবুও পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে। আর সুপ্তি কে ওর স্বাভাবিক লাইফে ফিরিয়ে দিতে হবে। সুপ্তি সুস্থ হয়ে গেলে নিজ থেকে সরে যাবে আলিফ সেটা ভালো করে ই জানে।
°°°
সুপ্তি পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছে, রেহান গাছের সাথে ঝুলছে। রেহান পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে মুখ টা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে সুপ্তি কে বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে রেহান। সুপ্তি উপর থেকে ভয়ে চিল্লাচ্ছে আর রেহান কে উপরে ডাকছে। হটাৎ সুপ্তি কে কেউ ধাক্কা দেয়। সুপ্তি পড়ে যায় রেহানের উপর, এবার একসাথে দুজনেই ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যায় মাটিতে। দুজনের মাথা দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ হতে হতে একসময় রেহান নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আর সুপ্তি রেহান কে গলা ফাটিয়ে ডাকতে থাকে। বারবার রেহান রেহান চিৎকার শুনে আলিফ আর শিম্মি ছুটে আসে। সুপ্তি কে ডাকতে আলিফ বুঝতে পারে সুপ্তি স্বপ্ন দেখছে। সুপ্তি ঘুম থেকে উঠে আলিফ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, আর বলতে থাকে,
“ আমায় ছেড়ে যেও না রেহান। ”
অনেকক্ষণ এমন ভাবে ধরে রেখেছে সুপ্তি, আলিফ কিছুতেই ছাড়াতে পারছেনা সুপ্তি কে। শিম্মি আস্তে করে সরে যায় সুপ্তির রুম থেকে। আলিফ নিজেকে ছাড়াতে না পেরে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আর বলে,
“ মাঝ রাতে ন্যাকামি করছো কিসের জন্য? ” সুপ্তি ভালো করে চোখ মুছে আলিফের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর বললো,
“ তুমি রেহান না, আমার রেহান কোথায়? তুমি মেরে ফেলেছো ওকে?”
আলিফের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো কথা টা শুনে। সুপ্তি কে একটা চড় মেরে দেয়, আর বলে,
“ যাকে এতক্ষণ রেহান বলে জড়িয়ে ধরে আছো তাকে রেহানের হত্যাকারী বলতে লজ্জা লাগে না? ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ যেনো ধাঁধার মাঝে থাকে। একেবারে চুপচাপ, যেনো একটা মুর্তি বসে আছে। আলিফের কিছুটা ভয় লাগে। আস্তে করে সুপ্তি কে ধাক্কা দেয়, সুপ্তি নড়েচড়ে বসে। সুপ্তি বললো,
“ আপনি কে?”
“ সেন্স আসলো তাহলে?”
“ কি বলতে চাচ্ছেন? ”
“ তুমি আমাকে চিনোনা?”
“ হ্যাঁ চিনি, সাইমা ভাবীর এক্স বয়ফ্রেন্ড। ”
“ আর তোমার হাজবেন্ড। ”
“ মানে? আপনি কেনো আমার হাজবেন্ড হবেন? রেহান আমার হাজবেন্ড ।”
“ রেহানের মৃত্যু শোকে পাগল হয়ে গেছিলে! আবার সেন্স ফিরেই রেহান কে খুঁজছো!”
সুপ্তি আলিফের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেনো নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছেনা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললো,
“ আমি প্রতিদিন স্বপ্ন দেখতাম রেহান মারা যাচ্ছে, আর আজ পুরো টা দেখেছি, রেহানের সাথে সাথে আমিও মারা যাচ্ছি। রেহান কে ছাড়া আমার বাঁচা সম্ভব না। আমি পাগল ছিলাম না, রেহানের শোকে হয়তো পাগল হয়ে গেছিলাম। তার মানে এই না যে আপনার সাথে এক ঘরে থাকতে হবে। ”
আলিফ সুপ্তির সামনে তুড়ি মেরে বললো,
“ এই যে মিস, আমি এতদিনে আপনাকে ছুঁলেও এক বেডে কখনো থাকিনি। বুঝতে পারছেন আশা করি কি মিন করছি। আর আমি শিম্মি কে ভালোবাসি, আপনার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আপনি সুস্থ হয়ে গেলে আপনার ভাইয়ের কাছে যেতে পারেন। ”
“ হ্যাঁ যাবো, চলেই যাবো। তবে ভাইয়া এখানে পাঠিয়ে কাজটা ভালো করেনি। ”
“ আর হ্যাঁ, এখন যেতে পারবেনা তুমি। কারণ ইসলামি মতে আমার বৈধ স্ত্রী। যেতে হলে তালাক দিয়ে যেও। ”
সুপ্তি এবার হুহু করে কেঁদে ওঠে। কেনো এমন হলো তার সাথে। কিসের পাপ করেছিলো সে যার জন্য এতো বড় শাস্তি দিলো আল্লাহ। আলিফ এর খারাপ লাগ্লেও বললো,
“ আল্লাহ কে দোষ দিয়ে লাভ কি? তুমি শান্ত হয়ে ঘুমাও। আর দরজা খবর দার লক করবেনা। তোমার জন্য আমার খুব টেনশন হয়। ঘুমাও এখন প্লিজ। ”
সুপ্তি পাস ঘুরে শুয়ে পড়ে। আলিফ লাইট নিভিয়ে বাইরে এসে দেখে শিম্মি দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি হাসছে শিমমি, হয়তো সুপ্তির সুস্থতা ওর খুশির কারণ। আলিফ শিম্মি কে নিয়ে রুমে আসে। শিম্মি শুয়ে পড়লে আলিফ কি মনে করে উঠে পড়ে। শিম্মি কে বলে,
“ তুমি ঘুমাও, আমি আসছি। ”
“ কোথায় যাবে?”
“ সব প্রশ্নের উত্তর চেও না প্লিজ, ঘুমাও এখন। ”
আলিফ শিম্মির রুমের দরজা বাইরে থেকে লক করে দেয়, তাড়াহুড়ো করে সুপ্তির রুমে ঢুকে। লাইট জ্বালিয়ে আলিফ দেখে সুপ্তি ছুরি হাতে নিয়ে গলায় আঁচড় কাটছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে ধস্তাধস্তি করে ছুরি টা কেড়ে নেয়। আর সুপ্তির ওড়না নিয়ে গলার কাছে চেপে ধরে। সুপ্তি এতো টা পাগলামি করবে আলিফ সেটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলো, কারণ সুপ্তি অনেক জেদি মেয়ে হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি এসেছে বলে সুপ্তি কে রক্ষা করতে পেরেছে, নইলে বড় কিছু হয়ে যেতে পারতো। সুপ্তি তবুও জোর খাটাচ্ছে আলিফের থেকে সরার জন্য। আলিফ বাধ্য হয়ে সুপ্তি কে বেডের সাথে চেপে ধরে, এক হাত দিয়ে সুপ্তির হাত দুটো ধরে, অন্য হাত দিয়ে ওড়না টা চেপে রাখে। সুপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পা ছুড়া শুরু করে, তবুও মুখে কোনো শব্দ করে না।
°°°
শিম্মি মাঝ রাতে সাইমা কে কল দেয়, সাইমা ঘুমে আছে দেখে সজীব ফোন রিসিভ করে। সাথে সাথে শিম্মি বলে,
“ আপনার বোন সুস্থ হয়ে গেছে, ওকে কাল নিয়ে যেয়েন।”
চলবে
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/