হঠাৎ_হাওয়া (১০)
হিমালয়ের হসপিটালের বাইরে মায়া দাঁড়িয়ে আছে…ওর সাথে আছে দিহান আর ধ্রুব কাল রাতের সব কথা ওদের জানিয়েই এখানে নিয়ে এসেছে,সব কথা শুনে দিহান একগাল হেসে বলল,
—হিমালয় তো খুব এডভান্স আমাকে একটা চান্স ও নিতে দিলো না!
ওরা তিনজনই হেসে ফেললো,ধ্রুব মায়াকে বলল,
—এবার বলো তোমার প্লান টা কি?
সেটা ভেতরে গেলেই দেখতে পাবে তুমি শুধু একটু কষ্ট করে সবাইকে ডেকে এক জায়গা করবে আর মহারাজ কে বলবে না আমি এসেছি।ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে বলল
—যো হুকুম মহারানী
হসপিটালের প্রায় সব ডাক্তার নার্স স্টাফদের একজায়গায় দেখে হিমালয় একটু ভ্রু কুচকে তাকালো, পাশেই পুষ্পকে বললো
—কি ব্যাপার বলতো হয়েছে টা কি?
—বুঝতে পারছি না,তুই বেরোচ্ছিস নাকি?
এপ্রোন খুলে হাতে নিতে নিতে হিমালয় বললো
—হ্যা রে কাজেম আঙ্কেল কে একটু দেখতে যাবো
—কথার আব্বু? কেন অসুস্থ নাকি?
পাশে আবির আর নিরব আসতে আসতে বললো
—কথা আর ধ্রুব কে তো দেখছি না
হিমালয় বলল,
—কথা দুপুরেই চলে গেছে কাজেম আঙ্কেল একটু অসুস্থ, বাবাও সকালে শুনলাম যাবেন দেখতে বলছিলো।আর ধ্রুবই তো দেখছি সবাইকে ডেকে ডেকে আনছে।
সবাই একজায়গায় আসতেই ধ্রুবও এসে দাড়ালো।হিমালয় ধ্রুবকে ডেকে বললো
—কি হইছে তোর বিয়ে করবি নাকি?
—হ, কার্ড ছাপানোর টাকা নাই তাই সবাইকে এভাবে ইনভাইট করব।
ভীড় ঠেলে মায়া এসে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে চেচিয়ে বলল,
—এটেনশন প্লিজ…
হিমালয় মায়াকে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লো, সারাদিন ও মায়াকে কল করেনি ও ভেবেছিলো হয়তো মায়াই ওকে কল করে দেখা করার কথা বলবে, কিন্তু এই মেয়ে তো ডাইরেক্ট হসপিটালে চলে এসেছে!
মায়া হিমালয়ের সামনে এসে দাঁড়ায় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে
—আমি সত্যি খুব দুঃখিত আমি জানি আপনারা সবাই খুব ব্যাস্ত সবারই দায়িত্ব আছে আলাদা আলাদা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোনো ইনটেনশন আমার নেই আমি যাস্ট দু মিনিট সময় নেব।
মায়া ভ্রু নাচিয়ে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়।হিমালয় পুরো ভড়কে যায় এ মেয়ে করবে টা কি!
—মিঃআহমেদ আপনি বাস্তবিক আমি ওতোটা বাস্তবিক নই খুবই আবেগী আহ্লাদী একটা মেয়ে, অনেক কিছু বুঝি না বেশিরভাগ কাজই করি না বুঝে এই ধরুন খুশির ঠ্যালায় ঘোরেতে, বিয়ে থেকে পালিয়ে যাই, গান শুনে প্রেম প্রেম পায়,ঘুমের ঘোরে কথা বলি, খাবার না গুছিয়ে দিলে খেতে পারি না, অল্প কথায় আমি কথা শেষ করতে পারি না তাই বড় করেই বলছি। এই এক ঘর, সরি সরি এক হসপিটাল লোকের সামনে বলছি আমি ভালোবাসি আপনাকে যদি আপনার সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাই আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না একদিনও না কিছুতেই না।আপনাকে না পেলে আমি কাদব,আপনাকে পেলে পাওয়ার খুশিতে আমি কাদব, আমি খুব আকড়ে ধরা টাইপ মানুষ মহারাজ একবার যদি আমি আপনাকে আকড়ে ধরি আমার ভালোবাসার যদি শিকড় গজিয়ে যায় তবে কিন্তু আমি আর সেই শিকড় উপড়ে ফেলে বাচতে পারব না।আপনি ডাক্তার হতে পারেন তবে মনে রাখবেন আমার শরীরের থেকে বেশি অসুখ হয় মনে, হুটহাট আমার মন খারাপ হয় অকারণে আমার খুব রাগ হয় অযথাই আমি রেগে যাই তখন কিন্তু আপনার পেসক্রাইব করা ওষুধে আমার রোগ সারবে না, খুব অসুখ করলে আমায় কিন্তু খসখস করে কাগজে কলমে লিখে ওষুধ দিতে পারবেন না ভালোবাসা দিতে হবে পারবেন?সবার সামনে বকতেও পারবেন না।
মায়া হিমালয়ের হাত ধরে এক হাটু গেড়ে বসে পড়ে,
—এবার বলুন বিয়ে করবেন আমায়?ভালোবাসবেন আমায়? ভালোবাসার ওষুধ দিয়ে বাচিয়ে রাখবেন আমায়?আমার মনের ডাক্তার হবেন আপনি?
হিমালয় মিটিমিটি করে হাসছে ওর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে অদ্ভুত ভালোলাগায় ওকে কাবু করে ফেলেছে। বুকের ভেতর চিনচিন একটা ব্যাথা হচ্ছে এই পাগল মেয়ে টা যে ওর সামনে নত হয়ে আছে সারাজীবন ওকে বুকের মধ্যে গেথে রাখতে চায়।
হসপিটালের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে সবাই অপেক্ষা করছে হিমালয়ের জন্য ও কি বলবে শোনার তীব্র আগ্রহ সবার মধ্যে। নিরব এতক্ষণে টের পেলো পুষ্প ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে শক্ত করে বাহু খামচে দাড়িয়ে আছে।
মায়া উঠে দাড়ালো সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মায়া একগাল হেসে বললো,
—এখনই কিছু বলতে হবে না, আপনি বরং ভাবুন ভেবে আমায় জানাবেন। আমি আসছি,
মায়া পা বাড়িয়ে চলে যেতে চাইলেই হিমালয়ের অন্য ছেলে কলিগরা বলে উঠলো
—না!
হিমালয় অবাক হয়ে তাকালো,তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো
—ডক্টর আহমেদ আপনি কোনো ভাবাভাবির সময় পাবেন না এখুনি আপনি যদি ম্যাডামকে জবাব না দেন তাহলে কিন্তু এই ম্যাডামের বাসায় আমি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো
দিহান বলে উঠলো
—এহ আমি সিরিয়ালে আগে আছি
ধ্রুব দিহানের দিকে তাকিয়ে বললো
—এহ তুমি কি আমার আগে আছো নাকি!?
সবাই হেসে ফেললো।
হিমালয়ও হেসে মায়াকে হাতধরে টেনে একদম কাছাকাছি নিয়ে এসে বললো
—তোমাকে তো ছেড়ে দেওয়া হেব্বি রিস্ক হবে কি করি বলো তো
—ধরে থাকুন,
হিমালয় মায়ার কপালে চুমু খেয়ে বললো
—এই ধরলাম আর কখনোই ছাড়বো না
সবাই হাতে তালি দিলো,হিমালয় মায়াকে বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিলো,মায়ার শরীর অবশ হয়ে এলো।
—মায়া,এই মায়া?শুনতে পাচ্ছো?
পুষ্প এগিয়ে এসে বললো
—কি হয়েছে!?
হিমালয় হেসে ফেললো,
—সেন্সলেস হয়ে গেছে।
বলেই হিমালয় মায়াকে কোলে তুলে নিলো।
চলবে….
সামিয়া খান মায়া