হঠাৎ_হাওয়া
পর্বঃ ০১
দুবছর টানা দুবছর হয়ে গেছে এই শহরের বাইরে মায়া কোথাও যায়নি, স্টেশনে এসে ওর একটু বিব্রত লাগছে, কখনোই ও ঢাকায় যেত না যদি না ওর বাবার শরীরটা এতটা খারাপ হতো, মায়া একাই পুরো একটা কেবিন নিয়ে যাচ্ছে,ট্রেন ধীরে ধীরে তার গতি বাড়াচ্ছে মায়াও ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে ওর অতীতের দিকে, ট্রেনে এটা ওর চতুর্থবারের মত ওঠা প্রথমবার ওর ট্রেনে ওঠার অভিজ্ঞতা ছিলো ওর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ের একটা, স্বপ্নের মত মায়া কিছুক্ষণ বই টই ঘাটাঘাটি করলো কিন্তু মন বসাতে পারলো না ওর ঘুরেফিরে পুরোনো কথাই মনে পড়তে লাগলো ও হালকা করে চোখ বুঝে মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো
তুমি আমার ক্ষণে ক্ষণে নেওয়া
দীর্ঘশ্বাসের করুণ সুর….
তুমি আমার হঠাৎ হাওয়া
খুব মন খারাপের একলা দুপুর।
মুহুর্তেই হঠাৎ খানিকটা হাওয়া ট্রেনের জানালা দিয়ে ভেতরে এসে মায়ার মুখে লাগলো একে একে পুরোনো সব স্মৃতি, এরকমই একটা ট্রেনের কেবিনে ওর দুনিয়া খুজে পাওয়ার স্মৃতি জড়িয়ে ধরতে লাগলো। মায়া চোখ বন্ধ অবস্থায়ই ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো কি বিব্রতকর অবস্থাটা ছিল!
বেনারসী পড়া এক মেয়ে টিটির সাথে কিছু একটা নিয়ে তর্ক করছে,বেশ কিছু লোক জড়ো হয়েছে, নিশ্চয়ই মেয়েটার সাজের জন্য,কথা টয়লেট থেকে ফিরছিল ও কিছুটা আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেল,এবার বুঝল মেয়েটা তর্ক করছে না ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বকা শুনছে, যা বুঝল কথা তার সারমর্ম এই যে মেয়েটা টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠে পড়েছে এবং সে যতই বলছে সামনের স্টেশন এ নেমে যাবে টিটি তা মানতে নারাজ,তাছাড়া মেয়েটা যে বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে এটাও সবাই বেশ বুঝতে পারছে এবং আকারে ইঙ্গিতে মেয়েটাকে অপমান করতেও ছাড়ছে না,কথা একবার মেয়েটার দিকে তাকালো মেয়েটা কে দেখতে যথেষ্ট ভদ্র এবং সম্ভ্রান্ত ঘরেরই লাগছে বেশ দামী একটা বেনারসি পড়েছে। আশেপাশের সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই মজা দেখতে ব্যাস্ত তারা মেয়েটার হয়ে কথা বলবে বলে মনে হচ্ছে না,এবার আর চুপ থাকতে না পেরে কথা বলল,
—ও আমাদের সাথে এসেছে,
অন্য সবাই সহ মেয়েটিও বেশ অবাক হয়ে কথার দিকে তাকালো,কথা সামান্য এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির পাশে দাড়ালো তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—আমরা এই লেনের সামনে গিয়ে ডানদিকের প্রথম কেবিনটায় আছি ও আমাদের সাথেই এজন্যই ওর কাছে টিকিট নেই,
টিটি একটু দমে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই কথা বলল,
—আপনারা প্লিজ এখন যার যার কাজে যেতে পারেন এখানে ভীড় না করে।আর আপনি, আপনি যে যাত্রীদের সাথে মিসবিহেভ করেছেন তার জন্য আপনার বিরুদ্ধে একশন নিতে বাধ্য করবেন না আশা করি,
এবার টিটি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
—সরি আপনারা যেতে পারেন।
কথা মায়াকে নিয়ে ওদের কেবিনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
—এরপর থেকে টিকিট ছাড়া উঠবেনা কেমন?সবসময় তোমাকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না, এসো এইদিকে,শোনো আমরা বন্ধুবান্ধবেরা মিলে জাফলং যাচ্ছি এই ট্রেনে , ওরা এখন তোমাকে দেখে অনেক রকম প্রশ্ন করতে পারে তুমি তৈরি তো?
মায়ার তেমন কোনো ভাবান্তর হলো না
কথা ওদের কেবিনে ঢুকতেই সবাই হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে অবশ্য ওর দিকে না ওর সাথে থাকা মেয়ের দিকে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।কথা,আবির,ধ্রুব, নিরব,পুষ্প, হিমালয় ওরা সবাই সিলেট যাচ্ছে ঘুরতে মাঝে মাঝেই ওরা বন্ধুরা মিলে ঘুরতে বের হয়ে যায় এরকম হুটহাট বের হতে ওদের হাজার বাধা তবে কেউ থেমে থাকে না একবার প্রকৃতি ডাকলেই ওদের আর আটকানো যায় না।
সবার আগে ধ্রুব লাফিয়ে উঠে কিছু একটা বলতে যাবে, কথা ওকে হাতের ইশারায় থামতে বলে, মায়ার হাত থেকে ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে একপাশে রাখলো তারপর ওকে জানালার পাশে বসতে দিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসল,
—নে তোরা এবার তোদের প্রশ্ন শুরু কর
পুষ্প চিৎকার করে বলল,
—প্রশ্ন শুরু কর মানে কি!এই মেয়ে কে, তুই তো টয়লেটে গেছিলি, তাহলে একে পেলি কোথায়? টয়লেটে গিয়েও তোর বন্ধুত্ব করতে হয়?কার বউ কে ভাগিয়ে এনেছিস?
আবির এবার ধমকে বলল,
—তুই থামবি? এত কথা বলিস কেন?
—আমি বেশি কথা বলি? তুই দেখতে পারছিস না? কথা কি ব্লান্ডার করেছে!কার না কার বউকে ধরে নিয়ে এসেছে? এবার তো পুলিশ কেস হয়ে যাবে,আমরা সিলেট যেতে পারব তো!
হিমালয় ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে মুখ করে আছে এখনো পর্যন্ত ও কথা বলার প্রয়োজন মনে করছে না
ধ্রুব কথার সামনা সামনি বসে ছিল,ও সামান্য ঝুকে এসে বলল,
—এই একমাত্র মেয়েকে আমি দেখলাম যে পুরো ট্রলি ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে,ফুল প্রুফ প্লান,মেয়েটা বেশ বুদ্ধিমতী,
আবির এবার বলল,
—মেয়েটার নাম কি কথা?
—জানিনা তো এখনো শোনা হয় নি।
নিরব বরাবরই শান্ত বেশি কথা বলতে পছন্দ করে না,সবাইকে তুমি তুমি করে ভদ্রভাবে কথা বলে, এবার নিরবও নিরবতা ভেঙে বলল,
—তুমি ওকে চেনো না! তাহলে ওকে আনলে কেন?
কথা এবার কিছুক্ষণ আগে ঘটা সব ঘটনা খুলে বলল,ওর বন্ধুরা সবাই কথার দিকে চেয়ে আছে,
পুষ্প চেচিয়ে বলল,
—ওরে আমার জননেত্রী কথামনিরে , তোরে কে বলছিল সেধে ঝামেলা ঘাড়ে নিতে?
—প্লিজ পুষ্প মেয়েটা বিপদে পড়েছিল আমি চুপ থাকতাম কি করে?
—যে মেয়ে নিজের বিয়ে থেকে পালায় সে বিপদে পড়ে না সে বিপদ নিয়ে ঘোরে তুই এই মেয়েকে এক্ষুনি বিদেয় করবি কি না বল
—না করব না, আর তোদের যদি খুব সমস্যা হয় তবে বলে দিস পরের স্টেশনে আমি ওকে নিয়ে নেমে যাব
মেয়েটি এবার অবাক হয়ে কথার দিকে তাকিয়ে আছে,কথার বন্ধুরাও সবাই এবার যেন একটু দমে গেলো।
—লাইট টা অফ কর প্লিজ আমার মাথা ধরেছে খুব।বলেই কথা লাইটটা অফ করে দিল,খুব জোৎস্না বাইরে জানালা বেয়ে ট্রেনের কামড়াতে একটা ঘোরলাগা পরিবেশ তৈরী করছে সবাই চুপচাপ ঘন্টা খানেক হয়ে গেছে, হয়তো ঘুমিয়ে গেছে,কথা হালকা করে মেয়েটিকে নাড়া দিয়ে বলল,
—ঘুমিয়ে পড়েছ?
—উহুহ
—নাম কি তোমার?
—মায়া
কথা চমকে তাকালো,এই প্রথম মেয়েটার মুখে কথা শুনলো একটা শব্দই উচ্চারণ করেছে কিন্তু মেয়েটার কন্ঠটা মারাত্মক সুন্দর, এতক্ষণ মেয়েটাকে দেখে কথার যতটা না মায়া হচ্ছিল ওর নাম শুনে ওর উচ্চারিত শব্দ শুনে তা আরো বেড়ে গেছে কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক থেকে কথা বলল,
—তুমি আমার বন্ধুদের কথায় কিছু মনে করো না প্লিজ, ওরা তোমার হঠাৎ আসাটাকে এখনো মানিয়ে নিতে পারে নি, মন থেকে কিন্ত ওরা সবাই খুব ভালো।
—আমি কিছু মনে করি নি,আমি জানি ওনারা সবাই খুব ভালো,তা না হলে একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়ে যার নামটাও কেউ জানে না তাকে থাকতে দিত না,মনে মনে ওনারা সবাই আমাকে করুণা করেছে,
মেয়েটার কণ্ঠটা চমৎকার অন্ধকারে তা আরো সুন্দর শোনাচ্ছে এই মেয়েটার কথায় ধার আছে বেশ বোঝা যাচ্ছে,
—মায়া
—হু
—বাড়ি থেকে পালিয়েছো কেন? বিয়েতে মত নেই? অন্য কোনো পছন্দ আছে?
মায়া এবার অনেক্ষণ চুপ করে আছে কথা মায়াকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
—বলতে না চাইলে জোর করব না, কোনোকিছু না জেনেই আমি তোমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করব,জানিনা কেন তোমার প্রতি আমার এক অদ্ভুত মায়া জন্মে গেছে
মায়া আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
—আজ আমার বিয়ে ছিল টানা ১৫ দিনের অনুষ্ঠান শেষে আজ সেই দিন ছিল,ছোটবেলা থেকে সাজানো হাজার স্বপ্ন আজ সত্যি হওয়ার দিন,কিন্তু আজ সকালেই জানতে পারি যাকে ঘিরে আমার এত্ত স্বপ্ন সে আমাকে ভালোবাসে না, যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে সম্পর্কে আমার ফুপাতো ভাই হয়, ফুপিই বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন বাবা কিছুতেই রাজি নন এখনই আমায় বিয়ে দিতে মাত্রই কয়েকমাস হলো আমি ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছি, কিন্তু ফুপিই বাবাকে বোঝালেন যে বাবার শরীর ইদানীং ভালো যাচ্ছে না, তনয় ভাইয়াও খুব ভালো মানুষ ভালো একটা জবও পেয়েছেন সবকিছু মিলে বাবাও অমত করে নি,আর আমিও বাবাকে খুব ভালোবাসি তাই বাবার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি মাম্মাম মারা যাবার পর বাবা ই আমাকে বড় করেছেন আমার জন্যে বিয়েও করে নি,বাবা আর আমি একদম বন্ধুর মতো,
আজ সকালেই তনয় ভাইয়া আমার সাথে দেখা করে বলেন,
—দেখ মায়া তুই খুব ভালো মেয়ে ছোট বেলা থেকে আমি তোকে খুব পছন্দ করি
—তুমি কি এখনো আমায় তুই করে বলবে তনয় ভাইয়া?
—তুইও তো ভাইয়া বলছিস,
—দেখ মায়া কিছু সম্পর্কের একটা আলাদা জোন থাকে সেখানেই সেটা মানায়, আমি জানি কথাটা বলতে আমি খুব দেরি করে ফেলেছি কিন্তু তোকে অনেকটা ঠকিয়েছি কিন্তু না বললে তোকে সারাজীবন ঠকানো হবে
—তুমি এসব কি বলছ আমি বুঝতে পারছি না
—মায়া তুই এখনো খুব ছোট, তোর সামনে এখনো অনেক পথ বাকি হয়তো এখন তুই আমাকে ভুল ভাববি কিন্তু একদিন তুই ঠিক সবটা বুঝবি দেখ মায়া আমি একজন কে ভালোবাসি তোকে আমি কখনো বোনের বাইরে কিছুই ভাবি নি, ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যেটা হয়ে যায় আর যাকে প্রতিরোধ করা যায় না আমি তিন্নি কে ভালোবাসি আমাদের ৩ বছরের সম্পর্ক আমি কিছুতেই ওকে ভুলতে পারব না।
—তুমি এসব কি বলছ তনয় ভাইয়া আর এগুলো এখন কেনো বলছ? ফুপি কি এসব জানে?
—মা সব জানে মায়া মা জোর করে আমাকে এই বিয়েটা করাতে চাচ্ছে তোদের সম্পত্তির লোভে, মা খুব ভালো করেই জানে মামার অবর্তমানে সমস্ত সম্পত্তির মালিক তুই আর তোর সাথে বিয়ে হলে আমি,কিন্তু বিশ্বাস কর মায়া আমি এসব কিচ্ছু চাই না আমি তিন্নি কে চাই
—আমি এখন কি করব তনয় ভাইয়া?
—জানিনা মায়া আমি কিচ্ছু জানিনা তুই যাই কর শুধু এই বিয়েটা হতে দিস না প্লিজ এতে তিনটে জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।মায়া তুই পালিয়ে যাবি প্লিজ?
—তুমি এসব কি বলো তনয় ভাইয়া, আমি এমন কিছু করলে বাবা মরেই যাবে
—তুই তো আমার মাকে চিনিস কেমন জেদী মা কিছুতেই বিয়েটা আটকাতে দেবে না, শুধু তুই পালিয়ে গেলে বিয়েটা ভেঙে যাবে মায়ের কিছু করার থাকবে না, আর আজই আমি তিন্নি কে বিয়ে করব মায়ের ও কিছু বলার থাকবে না, প্লিজ মায়া আমার এই উপকার টুকু কর আমি সারাজীবন তোর কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব,আমি তোকে কথা দিচ্ছি এক সপ্তাহ, এক সপ্তাহ সময় তুই আমাকে দিলে আমি সবটা গুছিয়ে নেব আর মামাকেও সবটা বুঝিয়ে বলব প্লিজ মায়া।
—ব্যাস আমিও পার্লারে সাজতে যাওয়ার নাম করে পালিয়ে এলাম সাথে কাজিনরা ছিল তাই সাজতেই হলো, একসময়সুযোগ বুঝে আমি ওদের পাঠিয়ে দিলাম এই বলে যে তনয় ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে আর আমি বেরিয়ে পড়লাম। আমার তেমন কোনো দুঃখ নেই এক জীবনে মানুষ সবটা পায় না পেতে নেই, শুধু বাবার জন্য চিন্তা হচ্ছে বাবা আমাকে সবচেয়ে ভালোবাসে বিশ্বাস করে অথচ আজ জানবে তার মেয়ে বিশ্বাস ঘাতক।
মায়া এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে দম নিলো,কিন্তু অদ্ভুত শক্ত মেয়েটা কাদছে না পাথরের মতো নির্জীব হয়ে আছে! কথা কি বলবে খুজে পাচ্ছে না যদিও ওর প্রতি কথার একটা টান অনুভব হচ্ছিল তবুও মনে মনে ওর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসাটাকে ভালো চোখে দেখে নি,হঠাৎ কেবিনের লাইট জ্বলে উঠল,নিরব ধ্রুব বাঙ্কার থেকে নেমে আসলো, সবাই একরকম গোল হয়েই বসে আছে পুষ্প অবাক চোখে চেয়ে আছে মায়ার দিকে,
—তোরা সবাই ঘুমাস নি? আমি তো ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছিস,
হিমালয় এই প্রথম মায়ার দিকে তাকালো মেয়েটাকে এতক্ষণ ও খেয়ালই করে নি, বেশ মোহনীয় লাগছে মেয়েটাকে
ধ্রুব কথাকে উপেক্ষা করে,মায়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
—মায়া, তারমানে তুমি এখন কোথায় যাবে তা জানোনা?
মায়া হালকা করে ঠোট বাকিয়ে হাসলো মেয়েটার হাসি নিঃসন্দেহে সুন্দর,
—কত কিছুই তো জেনে শুরু করছিলাম শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয় নি,হঠাৎ হাওয়ায় সবটার মোড় ঘুরে গেছে,এখন থেকে না হয় না জেনেই শুরু করি?
হিমালয় কিছু বলল, তবে খুব আস্তে তবে সবাই শুনলো
—সিলেট যাবে মায়া?
মায়ার নজর এবার হিমালয়ের দিকে পড়ল শুরু থেকেই চুপচাপ ছেলেটা কিছু একটা বলেছে মায়াও শুনেছে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মায়াও খুবই আস্তে বলল,
—কি জানি!জানি না।
হুট করে কিছুটা হাওয়া জানালা দিয়ে আসলো মায়া হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো, তারপর ট্রেনে সবার দিকে ঘুরে,এক গাল হেসে বলল,
—যদি আমি জাফলং যাই?
কি জানি সবার কি হলো মাত্র ঘন্টা চারেকের পরিচয় অথচ সবাই খুশি হয়ে গেলো,
ধ্রুব লাফিয়ে উঠে বলল,
—বেশ হবে এদের সাথে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছি সুন্দরী মেয়ের সঙ্গ পেলে মন্দ হবে না
মায়া মুখ টিপে হেসে বলল,
—কি জানি নাম মেয়েটার চুমকি?
ওমনি সবাই হেসে ফেলল।
ধ্রুব হাত বাড়িয়ে মায়াকে বলল,
—আমি ধ্রুব,
মায়া হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে গেলেই ধ্রুব হাত সরিয়ে নিয়ে বলল
—ওহ, নেভার মাইন্ড বেটার ট্রাই নেক্সট টাইম
মায়া কিছুক্ষন বোকা সেজে বসে থেকে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো,ওমনি আপন মনে মুচকি হাসল।
আবির কিছুটা মুখ গোমড়া করে আছে হয়তো ও খুশি না মেয়েটাকে সাথে নেওয়া হচ্ছে বলে,পুষ্প কথাকে ঠেলে সড়িয়ে মায়ার পাশে গিয়ে বসলো,
—এই মায়া, এতক্ষনে সবার নাম তো তুমি জেনেই গেছো আমি তোমায় সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ওই যে দেখতে পাচ্ছ গোল চশমা ঝাকড়া চুল ক্যাবলা কান্ত এইটা হচ্ছে আমাদের গ্রুপের সবচেয়ে নিরীহ বান্দা তুমি দেখবে ওর নামের মতোই ও তোমার সাথে শুধু পরিচয় হতেই ওর এক সপ্তাহ লাগবে এটাই আমাদের নিরব অতিরিক্ত ব্রিলিয়ান্ট আর কি যাকে বলে, সে যাই হোক এক দিক দিয়ে ভালোই ওর পেছনে বসেছিলাম বলেই টেনেটুনে পাশ করে গেছি সেদিক থেকে বলতে গেলে,, এই নিরব শোন,তোকে থ্যাংকস।
নিরব হা হয়ে পুষ্পের কথা শুনছিল এবার হয়তো জবাবে কি বলতো তার আগেই পুষ্প আবার শুরু করল,
—আর ওই যে দেখছো গোমড়া মুখো ওইটা আবির ওর জন্য আমার একটাও বয়ফ্রেন্ড হচ্ছে না ওর মতে আমরা ৬ জন বাদে এই দুনিয়ার সব ছেলে মেয়েই খারাপ এই যে তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছ এইটা কিন্তু ও মানতে পারছে না বিশ্বাস না হলে শুনে দেখো,
আবির কড়া চোখে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বলল,
—এই তুই থামবি? কত কথা বলিস?
—এই তুই চুপ কর তো আমায় বলতে দে
পুষ্প বকবক করেই যাচ্ছে এর আর কোনো থামাথামি নাই,আবির ধমকে উঠে বলল,
—চুপ এবার লাইট নিভিয়ে না ঘুমালে কিন্তু আমি স্টেশন থেকেই ব্যাক করব।
সবাই জানে আবির এক কথার মানুষ পুষ্প মায়ার কানে কানে বলল বাকি কথা পরে বলব, এখন তুমি রেস্ট নাও,
বাতি বন্ধ হয়ে গেলো,
মায়া খুব বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল কেন জানি খুব হালকা হালকা লাগছে পা দুটো তুলে, সিটে হেলান দিয়ে জানালার দিকে মুখ করে রইলো,লাইফটা যে এভাবে মোড় নেবে কখনোই ভাবে নি এখন কান্না পাচ্ছে খুব কান্না পাচ্ছে অথচ মায়া তো স্ট্রং ওর কেন কান্না পাবে?
চলবে…..
সামিয়া খান মায়া