স্বপ্ন?পর্ব_৩১/৩২/৩৩
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৩১
.
.
.
অনু সিটের সাথে একদম হেলে আছে । ওকে সিট থেকে টেনে উঠাতেই ও পড়ে যেতে নেয় । তখন খপ করে ওকে ধরে ফেলে নীল । নিশির এতক্ষণ অন্য কোনো দিকে খেয়াল ছিল না । অনুকে অন্য কেউ ধরে ফেলেছে সেই কেউ’টা কে দেখতে তার দিকে তাকাতেই দেখে নীল । একটু না অনেকটা অবাক হয় নিশি । নিশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহি এসে নীলের হাতে একটা ওয়াটার পট দিয়ে বলে,
—ভাই আগে উনার মুখে পানির ঝাপটা দে । আর পানি খাওয়া ।
অনু জ্ঞান হারিয়েছে । নীল ভাবে নি যে এতটুকু একটা বিষয়ে ও অনু জ্ঞান হারাবে । তাহলে হয়তো ও এমন কিছু করতে যেত না । বাসের একজন যাত্রী জিজ্ঞেস করলো,
—কি হয়েছে? উনি তখন ওভাবে চিৎকার করলেন কেন?
বাসে একটা গুঞ্জন উঠে গেল যে হয়তো নীল অনুর সাথে কোনো প্রকার বাজে কোনো ব্যবহার করেছে তাই হয়তো অনু ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে । সবাই গোল করে দাড়িয়ে আছে অনুর সিটের কাছে । নিঝুম ওদেরকে সামাল দিতে বললো,
—এটা আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটার । আমাদের প্রবলেম আমরা সল্ভ করে নিব । আপনারা যে যার যার সিটে বসুন গিয়ে ।
তারপর ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— আপনি গাড়ি র্স্টাট দিন।
.
অনুর চোখে মুখে পানির হালকা ঝাপটা দিতেই অনু পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় । তাকিয়ে দেখে কতোগুলো চোখ ওরদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । তার মধ্যে নিশি আযান নিঝুম মাহি আর…।
নীলের কোলে অনুর মাথা রাখা। নিশি অনুকে নীলের কোল থেকে উঠিয়ে পানি খাওয়ায় । পানি খেয়ে অনু নিজের সিটে হেলান দিয়ে বসে । একটা বড় করে শ্বাস নিয়ে বলে,
—আমি ঠিক আছি । তোরা তোদের সিটে গিয়ে বস ।
নিশি অনুর হাত ধরা ছিল । অনুর কাঁধে এক হাত রেখে বলে,
—আমি তোর পাশে বসি? তোর একা…
নিশিকে পুরোটা বলতে না দিয়ে ওর কথা কেটে নিয়ে অনু বলে,
—আমি ঠিক আছি আপি । চিন্তা করিস না । তুই তোর সিটে বস ।
তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয় । নিশি বেশি জোড়াজুড়ি করলো না । কারণ ও জানে অনুকে জোড়াজুড়ি করে কোনো লাভ নেই । তাই চুপচাপ গিয়ে নিজের সিটে বসে পড়ে । অনুর এক সিট সামনেই নিশি নিঝুমের সিট । নিশি আগে জানালার সাইডে বসলেও এখন নিঝুমকে বলে ভেতরের দিকে বসে । একটুপর পর পেছন ফিরে দেখতে লাগলে অনুকে । ভেতরে ভেতরে খুব অস্থির লাগছে নিশির ।
—নিশি…
নিঝুমের ডাকে নিশি দিকে ফিরে তাকায়। নিশি তাকাতেই নিঝুম বললো,
—চিন্তা করো না । অনু ঠিক আছে । তাছাড়া ওর পাশে নীল তো আছেই ।
নিশি এবার নিঝুমের কথা শুনে প্রশ্ন করলো,
—নীলকে তুমি কি করে চিনো?
নিঝুম খানিক মুচকি হেসে নিশির দিকে চোখ রেখেই বললো,
—নীল আমার আপন ছোট ভাই ।
নিঝুমের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো নিশি । এটা কি শুনলো ও ! নীল নিঝুমের ভাই! নিঝুম নিশির দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে দিল ।
.
ফ্যালফ্যাল করে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে অনু । আর নীল মাথা নিচু করে রেখেছে । মাথা নিচু করে রেখেই নীল আস্তে করে বললো,
—সরি…
—আপনি আমার থেকে এই কথাটা লুকিয়ে রাখলেন এতদিন? কেন নীল?
নীল চুপ করে আছে । নীল যে নিঝুমের ভাই এটা নীল কেন লুকালো ওর থেকে সেটাই অনু জিজ্ঞেস করলো । কিন্তু নীল চুপ করে আছে । নীলকে চুপ করে থাকতে দেখে অনু আর কোনো কথা বললো না । সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলো । অনুকে চোখ বন্ধ করতে দেখে নীল মাথা উঠিয়ে তাকালো ওর দিকে । বাসে জ্বালানো লাইটের হালকা আলো এসে অনুর মুখে পড়ছে । বাসের জানালা দিয়ে আসা বাতাসে ওর সামনের কাটা চুলগুলো উঠে এসে মুখে পড়ছে। আবার সরে যাচ্ছে । এভাবেই চুলগুলো খেলা করে যাচ্ছে । চোখ ভর্তি কাজলে আঁকানো । ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিকের ছোঁয়া । যেন এক মায়ার রাজ্য অনুর মুখে । আর সেখান থেকে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে মায়া । নীল হারিয়ে গেল অনুর মায়ায় । গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো ওর মিষ্টি অনুকে ।
.
বিরক্ত । প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে মাহির । এটা হয়তো ওর জীবনের প্রথম ট্যুর যেটাতে ওর বিরক্ত লাগছে । মাহি সাধারণত গল্প করতে পছন্দ করে । কথা বলতে ওর খুব বেশি ভালো লাগে । যেখানেই যাক একজন গল্প করার সঙ্গী জুটিয়ে নেয় । চুপচাপ মুখে কুলুপ এটে বসে থাকা ওর স্বভাবে নেই ।
আযান ওর পাশে বসেছে থেকেই চুপচাপ কানে ইয়ারফোন গুজে বসে আছে । একটা কথাও বলে নি। মাহি নিজে থেকে দু’একটা কথা বললেও সে শুধু হু হ্যাঁ মাধ্যমে জবাব দিয়েই চুপ হয়ে গেছে । যেটা মাহিকে চরম বিরক্তির সীমায় পৌঁছে দিয়েছে । এখন ও ভাবছে যে এত লং একটা জার্নি ও এভাবে চুপচাপ কিভাবে কাটাবে! দুই ভাই কিংবা নিশি অনু কারো সাথেই বসা সম্ভব না । কারণ ভাইদের ডির্স্টাব করতে চায় না ও । আবার এভাবে বসেও থাকতে পারছে না । সাধারণত ও যখন কোনো ট্যুরে যায় তখন বাসে ঘুমায় না । ওর ঘুম আসে না । বাহিরের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আর গল্প করতে করতে যায় । কিন্তু এখন দু’টোর একটাও করতে পারছে না। কারণ আযান জানালার পাশের সিটে বসেছে । তার উপর মুখে কুলুপ এটে বসে আছে । তাই চরম বিরক্ত লাগছে মাহির । মনে মনে ও ভাবছে যে কি করে এই মিস্টার বোবাকে কথা বলানো যায় । অনেক ভেবে চিন্তেও কিছুই পেলো না মাহি । তাই ভেতরে ভেতরে রাগে ফস ফস করতে লাগলো । খাগড়াছড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সকাল হয়ে যাবে । বাস রওনা দিয়েছে বড়জোর একঘন্টার মতো হবে। কি করবে এত সময় ও?
—আপনার কি মন খারাপ নাকি?
মাহিকে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলো আযান । মুখ ভার করে রেখেই মাহি বললো,
—হু।
আযান কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ব্যাগে রাখতে রাখতে বললো,
—কেন??
মাহি আযানের দিকে তাকালো । মাহিকে তাকাতে দেখে আযান বললো,
—না মানে জানতে পারি কি যে কেনো আপনার মন খারাপ? যদি বলতে না চান তাহলে থাক ।
— ” ব্যাটা ফাজিল তুই-ই তো আমার মুডের বারোটা বাজাচ্ছিস । আবার জিজ্ঞেস করছিস?? ”
মনে মনে কথাটা বললো মাহি । কিন্তু এটা তো আর সরাসরি বলা যাবে না । তাই মুখে বললো অন্য কথা,
—আমার জানালার সাইড ছাড়া বসতে ভালো লাগে না । আর বেশিক্ষণ চুপচাপ থাকতে পারি না । এখন চুপচাপ থাকতে হচ্ছে তাই ভালো লাগছে না ।
—আপনি চাইলে আমার সিটে বসতে পারেন ।
আযান মাহিকে নিঝের সিটে বসতে বললেও মাহি ভদ্রতা দেখিয়ে বললো,
—না থাক সমস্যা নেই । আপনিই বসুন ।
—আচ্ছা ।
আযানও আর কথা না বাড়িয়ে মাহির কথা মেনে নিল । এদিকে মাহি ভেবেছিল যে ও না করলেও আযান ওকে আবার বলবে বসতে । একবার বলেই যে আর বলবে না সেটা ভাবে নি । মাহির এখন রাগ উঠে যাচ্ছে ।
দুজনেই চুপচাপ । মাহি চাচ্ছে আযান নিজে থেকে কথা বলুক । কিন্তু আযান যেভাবে রয়েছে দেখে মনে হচ্ছে জীবনেও কথা বলবে না ।
কিছুক্ষণ পর মাহির ভাবনা ভুল করে দিয়ে আযান বললো,
—আপনি আমার সিটে বসুন । প্রবলেম নেই ।
—আচ্ছা ।
এবার আর মাহি না করলো না । কারণ এবারও যদি না করে দেয় তাহলে যদি আর না বলে তখন? তাই আর না করলো না । দুজনে সিট এক্সচেঞ্জ করে বসলো ।
—সাজেক আগে গিয়েছেন??
আযানের প্রশ্ন শুনে মাহি হাসি হাসি মুখে বললো,
—চারবার গিয়েছি । এই নিয়ে পাঁচবার হবে ।
আযান একটু অবাক হয়ে বললো,
—আপনার বয়স দেখে বেশি মনে হচ্ছে না । এর মধ্যেই এতবার ঘুরা শেষ?
মাহি মুখে হাসি ধরে রেখে বললো,
—আমি ট্রাভেল করতে খুব ভালোবাসি । ছোটবেলা থেকে দা’ভাই আর ভাইয়ের সাথে অনেক জায়গায় ঘুরেছি । বলতে গেলে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাই একবার করে ঘোরা শেষ। গত একবছর থেকে একা একা ঘুরতে যাই বিভিন্ন টিমের সাথে জয়েন করে । তাই আর কি।
মাহির কথা শেষ হতেই আযান বললো,
—নাফাখুম, দেবতাখুম, সাতভাইখুম এসব জায়গায় গিয়েছেন??
মাহি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
—হ্যাঁ গিয়েছি ।
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আযান বললো,
—সিরিয়াসলি?
মাহি মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বললো । টুকটাক কথা বলতে বলতে মাহি আযানের সাথে আড্ডায় মেতে উঠে । কোথায় কোথায় গিয়েছে, কিভাবে, নিজের সব অভিজ্ঞতা বলতে লাগলো। সেই সাথে আযানও খুব মনোযোগ দিয়ে সব শুনতে লাগলো ।
একটু একটু করে সময় পেড়িয়ে যেতে লাগলো । ঢাকা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে ওদের গাড়ি । গাড়ির অধিকাংশ যাত্রীই গভীর ঘুমে মগ্ন । জেগে আছে মাত্র কয়েকজন । হঠাৎ……
.
.
.
চলবে??
(বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন এবং ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন)
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
#স্বপ্ন ?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৩২
.
.
.
একটু একটু করে সময় পেড়িয়ে যেতে লাগলো । ঢাকা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে ওদের গাড়ি । গাড়ির অধিকাংশ যাত্রীই গভীর ঘুমে মগ্ন । জেগে আছে মাত্র কয়েকজন ।
সেই কয়েকজনের মধ্যে জেগে আছে নিঝুম । নিশি ওর পাশে বসে ঘুমিয়ে আছে । নিশির মাথাটা বার বার হেলে পরে যাচ্ছে । হঠাৎ গাড়ি গতিরোধক পার হতেই ঝাঁকি লেগে নিশির মাথাটা গাড়ির জানালায় বারি খাওয়া ধরে তখনই নিঝুম নিশির মাথার সাইডে হাত ধরে। যার কারণে নিশির মাথা আর জানালার সাথে বারি না খেয়ে নিঝুমের হাতে বারি খায় । নিশির ঘুম খুব গভীর ঘুম তাই ওর ঘুম ভেঙ্গে নি । নিঝুম নিশির মাথাটা ধরে নিজের কাঁধে রাখে । নিশিও ঘুমের ঘোরে নিঝুমের বাহু আঁকড়ে ধরে আরো আরাম করে বসে । নিশির সুবিধার জন্য নিঝুম একটু নিচু হয়ে বসে । নিশির দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয় । তাকিয়ে থাকে নিশির মুখপানে । আজকে নিশির আসার পরে যখন নিঝুম ওকে প্রথম দেখে দূর থেকে তখন ও হা করে তাকিয়ে ছিল । বেবি পিংক কালার লং ফ্রক গলায় স্কার্ফ ঝুলানো । ঠোঁটে হালকা পিলক লিপস্টিক । চুলগুলো উঁচু করে ঝুটি করা । পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছিল নিশিকে । তখন হুট করে অনুর ফোনে নিঝুমের ঘোর কেটে গিয়েছিল । ওদের সামনে গিয়ে নিশির দিকে ঠিক মতো তাকায় নি নিঝুম । কারণ ওদের সামনে গিয়ে ওভাবে বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকলে কি ভাবতো ওরা । অপেক্ষায় ছিল । সেই অপেক্ষার প্রহর এখন শেষ হয়েছে । তাই এখন মন ভরে নিশিকে দেখছে নিঝুম । ওর স্বপ্নকন্যাকে দেখে তৃষ্ণা মিটাচ্ছে । আর ভাবছে কিভাবে নিশিকে ওর মনের কথা বলবে । কিভাবে বলবে ওর স্বপ্নের কথা আর কিভাবেই বা বলবে, ভালোবাসি আমাার স্বপ্নকন্যা ।
জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে অনু । পাশে বসে সিটে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছে নীল । রাতের নিরব নিস্তব্ধ পরিবেশটাকে দেখছে অনু । রাস্তার পাশের সারি সারি গাছগুলো দ্রুতগতিতে পিছনে চলে যাচ্ছে । আসলে কি গাছগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে?? না নাহ । গাছগুলো পিছাবে কেন? গাছগুলো তো ওদের জায়গাতেই স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে । এগিয়ে যাচ্ছে তো ওরা । আর মনে হচ্ছে পিছিয়ে যাচ্ছে গাছগুলো । জানালা দিয়ে হুর হুর করে বাতাস আসছিল । তাই জানালা লাগিয়ে দিয়েছিল নীল । লাগাতে লাগাতে মানা করে বলছিল,
—বাতাসে ঠান্ডা লেগে যাবে । জানালা খুলো না।
কিন্তু অনু সে কথা শোনে নি । নীল ঘুমিয়ে পড়তেই আস্তে করে জানালা খুলে দেয় । জানালা খোলার সাথে সাথেই এক ধাক্কা দিয়ে বাতাস হুর হুর করে এসে লাগে অনুর গায়ে । ঠান্ডা বাতাস এসে লাগায় চোখ মুখ প্রশান্তিতে জুড়িয়ে আসে অনুর । বড় করে একটা শ্বাস নেয় ও । জানালা দিয়েই তাকিয়ে দেখে রাতের আকাশ । দিনের সেই ঝলমলে আসমানি আকাশটা রাত নামতেই কেমন কালচে নীল হয়ে হয়ে যায় । অনু তাকিয়ে থাকে সেই আকাশের দিকে । কালচে নীল আকাশে জ্বল জ্বল করে জ্বলতে থাকা তারাদের দেখলে মনে হয় আকাশের মাঝে ওরা ফুল হয়ে ফুটে আছে । আর চেয়ে থেকে মুচকি মুচকি হাসছে । চাঁদটা কোথায়? দেখা যাচ্ছে না যে । এই জ্বল জ্বল করে জৃবলতে থাকা তারার মেলার মাঝে চাঁদ ছাড়া যে অসম্পূর্ণ লাগে আকাশটাকে । আজ কি তাহলে চাঁদ উঠে নি? এসব ভেবে চাঁদকে খুঁজতে জানালা দিয়েই হালকা মাথা বের করে আকাশ দেখতে যায় অনু । ঠিক তখনই ওর হাত ধরে এক হেঁচকা টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে আসে নীল । আচমকা এমন টানে ভয় পেয়ে যায় অনু । খিঁচে চোখ বন্ধ করে ফেলে । শরীর কাঁপছে ওর । হাতের স্পর্শটাতেই মনে হচ্ছে অন্য কেউ না নীলই ওকে ধরে রেখেছে । তবুও ওর কাঁপুনি কমছে না । কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার পরেও কোনো সারা শব্দ না পেয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুললো অনু । পিট পিট করে তাকাতেই দেখে নীল ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । সেই দৃষ্টিতে অনুর ভেতরটা আরো একবার কেঁপে উঠে । মাথা নিচু করে ফেলে অনু । কারণ নীলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস ওর নেই । নীলের ঐ গভীর দৃষ্টি ওকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে ।
—বাহিরে মাথা বের করছিলে কেন? যদি কোনো র্দুঘটনা ঘটতো? বোকা নাকি তুমি?
শান্ত কণ্ঠ কিন্তু কঠিন ভাবে বললো নীল । অনু মাথা নিচু করেই রইলো । কোনো জবাব দিল না। তা দেখে নীল আবার বললল,
—চুপ করে আছো কেন?
এবারও অনু কিছু বললো না । ভয়ে ওর আত্মা শুকিয়ে আসছিল নীলের এমন কথা শুনে । তাই চুপ করে ছিল । নীল হয়তো বুঝতে পারলো । হুট করেই অনুকে এনে নিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো । অনু এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না । তাই থ মেরে রইলো কিছুক্ষণ । যখন বুঝতে পারলো ও নীলের বুকের মাঝে তখন লজ্জায় কুঁকড়ে যেতে লাগলো । নীল অনু দুজনেই চুপ । নীলের শরীর থেকে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ পাচ্ছিলো অনু । বুঝতে চেষ্টা করলো ঘ্রাণটা কিসের । পারফিউমের নাকি নীলের । প্রত্যেকটা মানুষের শরীরেই আলাদা একটা ঘ্রাণ থাকে । নীলের শরীরের সেই ঘ্রাণটাই খুঁজে বের করতে চাইছে অনু । ওর খুব ইচ্ছে করছিল একহাতে নীলকে আঁকড়ে ধরে আরেক হাত নীলের বুকের উপর রেখে বুকে চুমু দিতে । কিন্তু সেটা ও কখনোই পারবে না । মনে মনে ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে । আর যেটা ভেবেছে সেটা করতে গেলে তো অনুকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না।
—অনু…
নীল আস্তে করে ডাক দিল । কিন্তু কোনো জবাব দিল না অনু । চুপ করে মিশে রইলো নীলের বুকের মাঝে । নীল একহাতে অনুকে ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে অনুর ডান হাত উঠিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো । সাথে সাথে কেঁপে উঠে অনু । যেন কেউ ওকে কারেন্ট শক্ দিয়েছে । জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের স্পর্শ । নীলের সাথে ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধার পর প্রথম ভালোবাসার স্পর্শ । কিছু কিছু সময় মৌনতাই ভালো । মুখে কথা বলতে হয়না । তখন কথা বল অনুভূতিরা । মন ছুঁয়ে যায় মন । নিরবতার ভাষা হয় হাজারো কথা । যেমনটা নীল আর অনু কথা বলছে………
.
.
.
চলবে???
(বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন এবং ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন)
#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৩৩
.
.
নীলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নীলের থেকে একটু সরে বসলো অনু । মাথাটা ঘুরিয়ে জানালার দিকে মুখ করে বসে রইলো । একবারের জন্যও আর ফিরে তাকায় নি নীলের দিকে । বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরলো । এখনো ধুক ধুক করছে । যেন ভুমিকম্প হয়েছে । নিজেকে শান্ত করার যথা সাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে । কিন্তু পারছে না । এদিকে নীল তাকিয়ে আছে অনুর দিকে । অনুকে এভাবে বেসামাল হতে দেখে মনে মনে হাসছে আর ভাবছে, এতটুকুতেই মেয়েটার এই অবস্থা এর থেকে বেশি কাছে টানলে তখন কি করবে!!! অনুর লজ্জা আর অস্থিরতা দেখে নীলের ইচ্ছে করছে ওকে কাছে টেনে আরো লজ্জা দিতে । কিন্তু সবসময় মন চাইলেই সব করতে নেই । এই ইচ্ছেটা পরে পূরণ করার জন্য লিখে রেখে দিল নিজের ইচ্ছেপাতায় ।
হঠাৎ কারো গরম নিঃশ্বাস মুখে পড়ায় চট করে ঘুমটা ছুটে গেল মাহির । চোখ মেলে তাকিয়ে খানিক সময় লাগলো বুঝতে যে ও কোথায় আছে । পরে মনে পড়লো ও তো সাজেক যাচ্ছে । বাসে আছে । কিন্তু ও ঘুমালো কিভাবে? বাসে তো ওর কখনোই ঘুম আসে না তবে? খেয়াল করে দেখে ও কারো বুকের উপর মাথা রেখে আছে । ঐঅবস্থায়ই মাহি মাথা উঁচু করে তাকালো উপরের । ঠিক তখনই আযানের দীর্ঘ একটা শ্বাস এসে পড়লো মাহির মুখে । কেঁপে ওঠে চোখ বন্ধ করে ফেললো মাহি । তারপর চোখ খুলে ছিটকে দূরে সরে আসে আযানের থেকে । তাতে আযানের গায়েও কিছুটা ধাক্কা লাগে । হুট করে এমন হওয়ায় আযানের ঘুমও ভেঙে যায় । তাকিয়ে দেখে মাহি কেমন ওর থেকে দূরে সরে সিটের মাঝে দূরত্ব রেখে বসে জানলার দিকে মুখ করে আছে । মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে ওর । মনে পড়লো মাহি ওর সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিল । ঘুমের ঘোরেই ওর কাঁধে মাথা রেখেছিল । তার কিছুক্ষণের মধ্যে আযানও ঘুমিয়ে পড়েছিল । আর হয়তো তখন আস্তে আস্তে মাথা নামিয়ে বুকে এসে পড়েছিল । কারণ ও ঘুমের মধ্যেই টের পাচ্ছিল যে ওর বুকের উপর ভারী কিছু একটা আছে । বিব্রতকর একটা অবস্থায় পড়ে গেল ও । কিছু বলতেও পারছে না । চুপ করে ভাবছে কি বলবে ।
মাহি বা হাত দিয়ে ডান হাতের বাহুতে চেপে ধরে আছে । চোখ বন্ধ করে রেখেছে এখনো । হৃদস্পন্দন যেন কয়েকগুন বেড়ে গেছে । নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেছে আর ঘন ঘন পড়ছে । আযানের বুকে যখন মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিল তখন আযান ওর ডান হাতের বাহু ধরে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল । হুট করে এমন কেন লাগছে ওর বুঝতে পারছে না । সামান্য একটু ব্যাপারই তো তাহলে?
—এক্সকিউস মি…
আযানের কন্ঠ শুনে নিজেকে শান্ত করে ওর দিকে ফিরে তাকায় মাহি । মাহি ফিরে তাকাতেই আযান বলে,
—আ’ম সরি ।
মাহি একটু হেসে বলে,
—আমিও সরি ।
আযান পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্য বলে,
—আচ্ছা আপনি তো আরো আগেও ওখানে গিয়েছেন । আরও কতক্ষণ লাগবে?
মাহি বললো,
—এখনো তো খাগড়াছড়িতেই পৌঁছুতে পারি নি । খাগড়াছড়িতে পৌঁছাতে আরো ঘন্টা খানিক সময় লাগবে । তারপর খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে টমটমে করে শাপলা চত্বরে যাব । দ্যান ওখান থেকে চান্দের গাড়িতে করে সোজা মেঘের রাজ্যে ।
এতটুকু বলে মাহি একটা প্রসস্থ হাসি দিল ।
আযান তাকিয়ে মাহির হাসিটা দেখতে লাগলো । মাহি যখন কথা বলে এক টুকরো হাসি ওর পুরো মুখ জুড়ে খেলা করতে থাকে । যেই হাসিতে চাইলে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যাওয়া যায় । প্রকৃতির মতো মাহির মধ্যেও একটা সতেজতা প্রফুল্লতা সবসময়ই দেখা যায় । এই কয়েক ঘন্টার মধ্যে মাহির দিকে খেয়াল করে তাকিয়ে দেখে নি আযান । কিন্তু এখন খুব খুটিয়ে দেখছে যেন । একটা সাদা রংয়ের লেডিস ফুল হাতা ফতুয়া পড়ে আছে মাহি । গলায় সাদা কালো শেড স্কার্ফ । মাঝখানে সিথি করে চুলগুলো পেছন দিকে ছাড়া । মুখে মেকাপের ছিটে ফোঁটাও নেই । কিন্তু তবুও স্নিগ্ধতা ছেয়ে আছে পুরো মুখ জুড়ে ।
রাতের অমানিশা কেটে গিয়ে ধীরে ধীরে ভোরের আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়ছে আকাশের একোণ থেকে ওকোণে । পুরো বাস নিরব । ভোরের আলোতে বাসের ভেতরে অন্ধকার কেটে আবছা আলো ছাড়া রূপ ধারণ করেছে । নিশির কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল নিঝুম । কপালের উপর পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে তাকিয়ে রইলো নিশির মুখের দিকে । কতটা নিঃপাপ লাগছে নিশির মুখটা । ঘুমন্ত অবস্থায় নাকি মেয়েদের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায় । সেটাই আজ সামনাসামনি দেখছে নিঝুম । ভোরেরপ্রথম আলোয় নিশিকে দেখে চোখ জুড়িয়ে নিচ্ছে । ইচ্ছে করছে নিশিকে বুকের মাঝে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে । কিন্তু সেটা এখন সম্ভব না । সেই অধিকার যে এখনো নিশির থেকে নেওয়া হয় নি । নিঝুম আস্তে করে নিশির মাথাটা ধরে ওর কাঁধ থেকে উঠিয়ে সিটের সাথে এলিয়ে দিল । কারণ আর কিছুক্ষণ পরেই ওদের নামতে হবে । তখন নিশি যদি উঠে দেখে ও নিঝুমের উপর তাহলে খুব বেশি লজ্জা পাবে । তারপর হয়তো লজ্জায় কথা বলতে পারবে না । সেটা আরও বেশি পীড়া দিবে নিঝুমকে । তাই নিশিকে সরিয়ে দিল । যখন নিশির সাথে সম্পর্কে বাঁধা পড়বে তখন নিশি বুকের মাঝে নিয়ে রাখবে সবটা সময় । সেই সময়টুকু না আসা পর্যন্ত না হয় অপেক্ষা করুক ।
সকাল সাড়ে ছয়টা ।
খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছে নিঝুম, নীল, মাহি, নিশি, অনু আর আযান । এখান থেকে টমটমে করে শাপলা চত্বর পর্যন্ত যাবে । বড়জোর দশ থেকে পনেরো মিনিটের মতো লাগবে যেতে । একটা টমটম ঠিক করে ওরা উঠে পরে । যেতে যেতে ছয়জন অনেক গল্পই করলো । শাপলা চত্বরেে গিয়ে ওরা একটা হোটেল ঠিক করে সেখানে উঠে । মোট তিনটা রুম নেয় । নিঝুম, নীল আর আযান একটায়। নিশি, অনু একটায় । আর মাহি একটায় । মাহি আর যাই করুক রুম শেয়ার করতে পারে না । তাই ওর জন্য আলাদা রুম নেওয়া হয় । রুমে গিয়ে ওরা জাস্ট ফ্রেশ হবে আর সকালের নাস্তাটা করবে তারপরই আবার বেড়িয়ে পড়বে । রুমের চাবি নিয়ে যে যার যার রুমে চলে গেল । নিশি রুমে আগে ডুকেছিল । তার একটুপর অনু আসে । অনু দরজা খুলে ভেতরে ডুকতেই ওর হাতে হ্যাঁচকা টান পরে । সামলাতে না পরে অনু একবারে পরেই যেতে নেয় । তাও কোনোমতে নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাড়ায় । তারপর…..
.
.
.
চলবে???
(বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন এবং ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন)
.